somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দু'টি ঘটনা এবং আমি নাদানের কিছু কথা

০২ রা নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম ঘটনাঃকোন একবার দুর্ভাগ্য ক্রমে আমার একবার ন্যদারল্যন্ড যাওয়া পড়েছিল।সেটা সেই ২০০৮ সালে।দুর্ভাগ্য বলছি এই কারনে যে আমি যে কাজের জন্য গিয়েছি তার জন্য আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না।ফলে বাঁদরের হাতে খোন্তা পরলে যা হয়, সেই কাজটির ও আমার দ্বারা তাই হয়েছিল।মোটামুটি কাজটি ধর্ষণ হতে হতে হয় নি।যাই হোক সৌভাগ্য ক্রমে আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি।সৌভাগ্য বলছি এই কারনে যে কোনভাবেই আমাদের বস রাজি হচ্ছিলেন না আমরা একটু বাইরে ঘুরি কিন্তু আমার এই অসুস্থতা সেই ঘুরাঘুরির দ্বার প্রান্তে এনে পৌঁছে দিল আমাকে।বাইরে বের হতে বাধা দেবার কারণ এই যে আমি এমনিতেই সব কাজ পণ্ড করছি অন্যদিকে আমি একজন ছা’পোষা কর্মচারী, যদি এই খানে নেমে আর না ফিরি! X( X( X( কারণ খুবই যুক্তি সঙ্গত।তাই ব্যথিত হলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছিলাম না।সে যাক সুযোগ আসলো সাথে আসলো কিছু শর্ত।আমাকে তাদের একজন এজেনট সাথে করে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আনবে।সো নো ঘুরাঘুরি:((:((:((:((।কারণ ঘুরলেই এজেন্ট সাহেব ঘুরাঘুরির বিল বানাবেন এবং তা আমাদের অফিসকে শোধ করতে হবে।সেই সব শর্তের বোঝা মাথায় নিয়েই চললাম ডাক্তারের কাছে।যে শহরটার কথা বলছি এর নাম রটটারড্যাম।বোঝায় বোঝায় শীপের আনাগোনা এখানে।কি উন্নতি না করেছে দেশটা।এজেন্ট সাহেব নিজেই গাড়ি চালিয়ে আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার উইন্ড মিলের হুইল আর বিস্তৃত সবুজ মাঠের মধ্য দিয়ে।ইউরোপেও যে চাষবাস হয় তা সেদিন ই জানলাম।যতটা উন্নতি ভেবেছিলাম দেখা যাচ্ছে ততটা উন্নতি করে নি দেশটা;););)।সে যাক এজেন্ট মোটামুটি আমাকে উরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন।আমিও উরার প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি এবং মনে মনে যে কয়টা সুরা মুখস্ত তা আওরাতে আরম্ভ করি/:)/:)/:)।একসময় হঠাৎ একেবারে নির্জন রাস্তায় গাড়ির গতি শ্লথ হয়ে কিছুদূর গিয়ে একেবারে থেমে গেল।আমার তখন যায় যায় অবস্থা।হবেই বা না কেন? অপরিচিত দেশ,নির্জন রাস্তা,একটা পাখি পর্যন্ত নেই।সেই জায়গায় গাড়ি দ্বার করিয়ে ভদ্রলোকটি কি করতে চাইছে।খট শব্দ করে গাড়ি থেকে নেমে ভদ্রলোক পিছন দিকে হাটা শুরু করলেন।আমিও তার গমন পথে দৃষ্টি ফেলে রাখলাম এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম তিনি একটি পলিথিন রাস্তা থেকে কুরিয়ে আনছেন।ভাবলাম পলিথিনের বোধহয় এদেশে অনেক দাম।আমাদের দেশে পলিথিন নামক জিনিসের জন্যে রাস্তায় চলা কষ্ট তবুও কেউ নেই না আর তুমি এত ধনী দেশের নাগরিক হয়ে পলিথিন খুটে বেরাচ্ছ:P:P:P!!মনে মনে শান্তি পেলাম যাক এইখানে এদের চেয়ে এগিয়ে আছি দেখা যায়।কিন্ত আমার সমস্ত ধারনা মিথ্যা প্রমান করে সে আবার ব্রেক করে রাস্তার পাশে গাড়ি দ্বার করিয়ে পলিথিন ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসলো।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এমন কেউ কি আমাদের দেশে আছেন যিনি ১০ মাইল দুরের পলিথিন খুটে নিয়ে ডাস্টবিনে এনে ফেলবেন?


দ্বিতীয় ঘটনাঃদুই দিন হাঁসপাতালে কাটিয়ে মোটামুটি ঝরঝরে হয়ে আছি।ঝরঝরে হবার আর কারণ অবশ্য আছে।আচ্ছা দু’একটা কারণ বলি।প্রথম কারণ যেটা সেটা হচ্ছে হাঁসপাতালে ছিলাম না বাড়িতে ছিলাম এইটা বুঝতে পারি নি।দ্বিতীয় কারণ আমাকে নারসিং করার জন্য যে ছিল সে;););)।মেয়েটির নাম সুভিস্যা।মেয়েটি মড়কক বংশদ্ভুত এবং মুসলিম।মেয়েটির মুখ ছাড়া আর কিছু দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি কারণ তার মুখ ছাড়া সমস্তই আবৃত :|| :|| :|| ।এইভাবে বললাম কারণ অন্যান্য নার্স এবং মহিলা ডাক্তার দের অনেক কিছুই ছিল অনাবৃত।যে কারনে তাদের অনেক কিছুই ছিল চখুমেয়(অনুমেয় র মত করে বললাম):P:P:P।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তার এই পরিধানের জন্যে তার কোন সমস্যা হয় কি না?সে আমাকে বলেছিল “হ্যাঁ কিছু লোক আমাকে দেখে বাজে কথা বলে কিন্ত অধিকাংশ লোকই সম্মান করে”।যাই হোক পরেরদিন এই মেয়েই আমার একটা পাস রেডি করে পুরো রত্তারড্যাম শহর ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল।তার কল্যাণেই প্রথম পেসেঙ্গার জাহাজ ইউরডাম ২ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল:D:D:D।এই জাহাজটি ইউরোপ টু আমেরিকা ট্রেড করে।আমরা সুভিস্যার নিজস্ব গারিতে করে ঘুরছিলাম।রাস্তা গুলো দেখেও কত ভালো লাগে।সব গুলো ওয়ান ওয়ে রোড।কোন যানজট নেই।হঠাৎ সুভিস্যা একটা লাল বাতি দেখে ব্রেক কশল।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কোন গাড়ি নেই।যে লাইন ক্রস না করার জন্য লাল বাত্তি সেই পাশেও কোন গাড়ি নেই।তাহলে তুমি এখানে দ্বারালে কেন?এমন প্রশ্নের জবাবে সে আমাকে কিছু না বলে শুধু হাসল।আনুমানিক ১মিনিট পড়ে একটা গাড়ি সাই করে আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেল সাথে সাথে জ্বলে উঠল সবুজ বাতি।তখন ও আমাকে বলল এমন নির্জন রাস্তায় এভাবে বেশ কিছুক্ষণ আগেই বাত্তি জ্বালানো হয় কারণ এখানে সবাই হাই স্পিডে গাড়ি চালায়।আমি আবার ও হতভম্ব হয়ে গেলাম।আমার দেশ আবার এই দেশ টার কাছে মার খেয়ে গেলো।আমার দেশের কেউ হলে কি এক মিনিট এভাবে নিরবতা পালন করতো?এও কি সম্ভব! B:-) B:-) B:-)


এখন আমার কিছু কথা
ছোটবেলায় আমরা যারা গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করেছি তাদের ক্লাস শুরু হবার আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মধ্য দিয়ে যেতে হত।অভিযানের অংশ হিসেবে কর্মসূচী গুলো ছিল এরকম স্কুলের আশেপাশের ময়লা আবর্জনা,ঝোপ ঝার,বড় বড় ঘাস পরিষ্কার করা এবং বিভিন্ন মরা ও শুকনা পাতা কুড়ানো।অথচ এই আমারায় শহুরে পরিবেশে নিজেদের কে মানিয়ে নিতে কোট টাই পড়ে শহুরে রাস্তা ময়লা করতে করতে যাচ্ছি।কেউ সিগারেট খেয়ে বায়ু দূষণ তো করছেনই উল্টো সিগারেটের শেষ অংশটিও রাস্তায় ফেলে করছেন রাস্তাটি অপরিষ্কার।কলা খেয়ে ছাল ছুরে ফেলচেন ড্রেন বরাবর যদি ড্রেনে পড়ে তো পড়লো না পরলে রাস্তায়।অদিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময়ই নেই।এভাবেই আমরা আমাদের সুন্দর চারপাশ নষ্ট করে চলেছি অনবরত।তাহলে আমাদের ছোট বেলার সে শিক্ষার কি মুল্য থাকলো।আমরা যদি সুশিক্ষিতর পাশাপাশি স্ব শিক্ষিত না হতে পারি তাহলে সে শিক্ষা দিয়ে কি লাভ?একটু সচেতনতাই পারে আমাদের এই পরিবেশটাকে আর সুন্দর করতে।আপনি যখন সিগারেট খান এমন একটি পরিবেশ দেখে খান যেখানে সিগারেটের জন্য কারর কোন সমস্যা না হয় এবং সিগারেটের শেষ কৃত্যানুশঠান আপনি যথাযত ভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।কলা খেয়ে ছাল আপনার ব্যাগে রাখুন উপযুক্ত ডাস্টবিন দেখে সেখানে ফেলুন।এরকম আর অনেক কিছুই আছে যা শুধুমাত্র দরকার আমাদের সচেতনতা।সরকার কে যদি বেটে খেয়ে ফেলি অথচ আমরা আমাদের কে পরিবর্তন না করতে পারি তাহলে আমরা কি করে একটি সুস্থ স্বাভাবিক জাতি পাব?তাই আসুন নিজেরা পরিষ্কার হই,দেশকে পরিষ্কার রাখি এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:১৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×