somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঠগোলাপ

০২ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



: এ্যাই মেয়ে এত ভাব নাউ ক্যান্ হুম?? অলটাইম কি ভাবের দুনিয়ায় থাকো?? দুনিয়ার সব পার্ট মনে হয় তোমার একার ! একটু আগে ফাইনান্স ক্লাসে পেন আনোনি আমার পেনটা নিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত? খুব? রোড এর মাথায় প্রতিদিন কেন দাড়ায় থাকি বোঝনা?? একটা বার কি তাকিয়ে দেখা যায়না যাওয়ার সময়??

রাগে কাঁপতে কাঁপতে হাঁপাতে থাকে রুদ্র। হড়বড়িয়ে এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে ক্লান্ত লাগছে এখন। মাথার উপর রোদের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে আর সেই সাথে রাগটাও। মেয়েটা এখনো কথা বলছেনা। রুদ্র দাড়িয়ে থেকে রোদ দেখে..ঝাঝালো হলদে রঙের রোদ....

মালয়েশিয়ার আবহাওয়া বলতে এমনি..সারাবছর ঘাম ঝরানো উত্তাপ । মাঝে হুট করে কথা নেই বার্তা নেই ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি..অবশ্য সেটা নভেম্বরের দিকে বেশি হয়। অরু বসে বসে ম্যাথ করছিল ভার্সিটির লেক এর পাশে ব্রেঞ্চে বসে। চোখের উপর থেকে চুল সরিয়ে সামনে তাকালো হঠাৎ..

: ইম্মম.. কিছু বললেন আমাকে?
: এতক্ষণ কি বললাম শুনোনাই তুমি?
: না।
: আশ্চর্য!! ক্লাস এ পেন সাধলাম নাওনি কেন?
: পেন? কি কালার?
: কি কালার তা দিয়ে তোমার কি..নাওনি কেন?
: কিছু পেন আছে সবুজ..কিছু নীল..লাল রঙের ও অবশ্য আছে।
: মানে কি এইগুলার??
: মানে কিছুনা।
: কিছুনা মানে ?
: জানিনা।
: কি জানোনা ?
: সেটাও বলতে হবে আপনাকে?? আজব।

এর সাথে আর কথা চালানো সম্ভব না। রুদ্রের মাথা ঘুরতে থাকে..ঘেমে নেয়ে ভিজে গেছে সাদা শার্ট। এতক্ষণ কথা হলো অথচ রুদ্রের দিকে একটু চেয়ে দেখলনা পর্যন্ত! কোন দুঃখে্খ যে এই মেয়েটাকে ভালোবাসলো সে!! ভেতরের যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়ে। কি করে যে অরুকে বোঝাবে ভেবে পায়না রুদ্র।ছিটকে ওর সামনে থেকে এই মুহুর্তে মিলিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। মেয়েটির দেয়া ছোট ছোট এই পেইন গুলাও পাহাড় সমান লাগে তার। সহ্য হয়না কিছুতেই..।

অরুর অর্থহীন আচরণে ভ্যাবাচ্যাকা রুদ্র ঠায় দাড়িয়ে থাকে, পা চলেনা। অরু নির্বিকার। চোখ কচলে, হাই তুলে আধকষা অংকে মন দেয় আবার। রুলটানা মোটা খাতার সফেদ জমিনে কলম চলে সহসা। গবেট ছেলেটা দাড়িয়ে আছে এখনো। থাকুক দাড়িয়ে। ইচ্ছে করে উল্টোপাল্টা কথা বলে রুদ্রের বাড়ন্ত রাগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে সে।

সময় গড়ায়…রুদ্র দাড়িয়ে থেকে অরুর অংক করা দেখে। কোত্থেকে যেন বাতাস বইতে শুরু করেছে। ভ্যাপসা গরমে মন্দ লাগছেনা। রুদ্র চেয়ে দেখে, অরু অংক বাদ দিয়ে কি যেন একটা আঁকার চেষ্টা করছে। ফুলটুল হবে হয়ত। রুদ্রের মনে হলো কাজ দেখিয়ে ওকে এড়িয়ে যাবার নতুন কৌশল ফেঁদেছে অরু। এই মুহুর্তে কঠিন কিছু কথা না বললেই নয়। ইদানিং অকারণেই প্রচন্ড রেগে যাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছে যদিও।

: অরু!!
: উমম?
: অংক করার ভান করে কি করো এইগুলা?
: ফুল আঁকি। কাঠগোলাপ।
: হাহ্‌..কাঠগোলাপের কাঠও তো করতে পারোনাই।
: যা করার আমি ক্লাসেই করেছি।
: কি করেছো?
: কাঠগোলাপ।
: মানে??
: এখন যান তো আপনি ভাগেন। কাজের সময় কথা বলা নিষেধ।

এরপর আর দাড়িয়ে থাকা যায়না। প্রচন্ড রাগে চোখে অন্ধকার দেখে রুদ্র । উদ্ভ্রান্তের মত তবু সেই অন্ধকারেই পা বাড়ায় ও।

ঠোটে এক চিলতে হাসি নিয়ে রুদ্রের হনহন করে চলে যওয়া দেখে অরু। অভিমানী ছেলেটা ঠোট ফুলিয়ে আজ বাসায় গিয়ে দেখবে শার্টের পেছনে চুইংগামের আঠায় কে যেন একটা কাঠগোলাপের পাপড়ি লাগিয়ে দিয়েছে, যেটায় ছোট্ট করে লেখা, "ভালবাসি.. --অরু"।

ঠোটের হাসি প্রশস্ত হয় অরুর..দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করে..রুদ্রের কষ্টে ভরা টকটকে লাল চোখ দুটোর দিকে কখনো তাকাতে পারেনা সে..ব্যথা লাগে বাম পাশে।

"শহরের উষ্ণতম দিনে, পিচগলা রোদ্দুরে..
বৃষ্টির বিশ্বাস, তোমায় দিলাম আজ
তোমায় দিলাম আজ...” -মহীনের ঘোড়াগুলি


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১২
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×