: এ্যাই মেয়ে এত ভাব নাউ ক্যান্ হুম?? অলটাইম কি ভাবের দুনিয়ায় থাকো?? দুনিয়ার সব পার্ট মনে হয় তোমার একার ! একটু আগে ফাইনান্স ক্লাসে পেন আনোনি আমার পেনটা নিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত? খুব? রোড এর মাথায় প্রতিদিন কেন দাড়ায় থাকি বোঝনা?? একটা বার কি তাকিয়ে দেখা যায়না যাওয়ার সময়??
রাগে কাঁপতে কাঁপতে হাঁপাতে থাকে রুদ্র। হড়বড়িয়ে এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে ক্লান্ত লাগছে এখন। মাথার উপর রোদের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে আর সেই সাথে রাগটাও। মেয়েটা এখনো কথা বলছেনা। রুদ্র দাড়িয়ে থেকে রোদ দেখে..ঝাঝালো হলদে রঙের রোদ....
মালয়েশিয়ার আবহাওয়া বলতে এমনি..সারাবছর ঘাম ঝরানো উত্তাপ । মাঝে হুট করে কথা নেই বার্তা নেই ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি..অবশ্য সেটা নভেম্বরের দিকে বেশি হয়। অরু বসে বসে ম্যাথ করছিল ভার্সিটির লেক এর পাশে ব্রেঞ্চে বসে। চোখের উপর থেকে চুল সরিয়ে সামনে তাকালো হঠাৎ..
: ইম্মম.. কিছু বললেন আমাকে?
: এতক্ষণ কি বললাম শুনোনাই তুমি?
: না।
: আশ্চর্য!! ক্লাস এ পেন সাধলাম নাওনি কেন?
: পেন? কি কালার?
: কি কালার তা দিয়ে তোমার কি..নাওনি কেন?
: কিছু পেন আছে সবুজ..কিছু নীল..লাল রঙের ও অবশ্য আছে।
: মানে কি এইগুলার??
: মানে কিছুনা।
: কিছুনা মানে ?
: জানিনা।
: কি জানোনা ?
: সেটাও বলতে হবে আপনাকে?? আজব।
এর সাথে আর কথা চালানো সম্ভব না। রুদ্রের মাথা ঘুরতে থাকে..ঘেমে নেয়ে ভিজে গেছে সাদা শার্ট। এতক্ষণ কথা হলো অথচ রুদ্রের দিকে একটু চেয়ে দেখলনা পর্যন্ত! কোন দুঃখে্খ যে এই মেয়েটাকে ভালোবাসলো সে!! ভেতরের যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়ে। কি করে যে অরুকে বোঝাবে ভেবে পায়না রুদ্র।ছিটকে ওর সামনে থেকে এই মুহুর্তে মিলিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। মেয়েটির দেয়া ছোট ছোট এই পেইন গুলাও পাহাড় সমান লাগে তার। সহ্য হয়না কিছুতেই..।
অরুর অর্থহীন আচরণে ভ্যাবাচ্যাকা রুদ্র ঠায় দাড়িয়ে থাকে, পা চলেনা। অরু নির্বিকার। চোখ কচলে, হাই তুলে আধকষা অংকে মন দেয় আবার। রুলটানা মোটা খাতার সফেদ জমিনে কলম চলে সহসা। গবেট ছেলেটা দাড়িয়ে আছে এখনো। থাকুক দাড়িয়ে। ইচ্ছে করে উল্টোপাল্টা কথা বলে রুদ্রের বাড়ন্ত রাগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে সে।
সময় গড়ায়…রুদ্র দাড়িয়ে থেকে অরুর অংক করা দেখে। কোত্থেকে যেন বাতাস বইতে শুরু করেছে। ভ্যাপসা গরমে মন্দ লাগছেনা। রুদ্র চেয়ে দেখে, অরু অংক বাদ দিয়ে কি যেন একটা আঁকার চেষ্টা করছে। ফুলটুল হবে হয়ত। রুদ্রের মনে হলো কাজ দেখিয়ে ওকে এড়িয়ে যাবার নতুন কৌশল ফেঁদেছে অরু। এই মুহুর্তে কঠিন কিছু কথা না বললেই নয়। ইদানিং অকারণেই প্রচন্ড রেগে যাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছে যদিও।
: অরু!!
: উমম?
: অংক করার ভান করে কি করো এইগুলা?
: ফুল আঁকি। কাঠগোলাপ।
: হাহ্..কাঠগোলাপের কাঠও তো করতে পারোনাই।
: যা করার আমি ক্লাসেই করেছি।
: কি করেছো?
: কাঠগোলাপ।
: মানে??
: এখন যান তো আপনি ভাগেন। কাজের সময় কথা বলা নিষেধ।
এরপর আর দাড়িয়ে থাকা যায়না। প্রচন্ড রাগে চোখে অন্ধকার দেখে রুদ্র । উদ্ভ্রান্তের মত তবু সেই অন্ধকারেই পা বাড়ায় ও।
ঠোটে এক চিলতে হাসি নিয়ে রুদ্রের হনহন করে চলে যওয়া দেখে অরু। অভিমানী ছেলেটা ঠোট ফুলিয়ে আজ বাসায় গিয়ে দেখবে শার্টের পেছনে চুইংগামের আঠায় কে যেন একটা কাঠগোলাপের পাপড়ি লাগিয়ে দিয়েছে, যেটায় ছোট্ট করে লেখা, "ভালবাসি.. --অরু"।
ঠোটের হাসি প্রশস্ত হয় অরুর..দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করে..রুদ্রের কষ্টে ভরা টকটকে লাল চোখ দুটোর দিকে কখনো তাকাতে পারেনা সে..ব্যথা লাগে বাম পাশে।
"শহরের উষ্ণতম দিনে, পিচগলা রোদ্দুরে..
বৃষ্টির বিশ্বাস, তোমায় দিলাম আজ
তোমায় দিলাম আজ...” -মহীনের ঘোড়াগুলি
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১২