প্রায় ছয় ঘন্টার যাত্রার পর মেয়ের ঢাকার বাসায় এসে পৌছলেন হাশেম সাহেব। তার মেজাজ খুবই খারাপ হয়ে আছে। পুরোটা যাত্রা জুড়েই বাসে বাজছিল “ছাম্মাক ছাল্লো”, “মুন্নির বদনম হুয়া” এর মত কিছু বিদ্ঘুটে হিন্দি গান। আরে বাবা, দেশে কি গানের এতই অভাব? আমাদের কী স্বকীয় স্বংস্কৃতি বলে কিছু নেই? তার চেয়েও যে বিষয়টা তার খুব খারাপ লাগল তা হল এসব গানের তালে তালে কয়েকটা জোয়ান ছেলেপেলে নাচানাচি করছিল। তো যা হোক, এতদিন পর মেয়ের বাড়ি গেলেন, তিনি যথাসম্ভব হাসিখুশি থাকবার চেষ্টা করলেন। “বাবা, আপনি গোসল করে আসুন, আমি ভাত বাড়ছি” তার মেয়ে রীমা বলল। তিনি গোসল সেরে বের হয়ে দেখলেন তার নাতি আরিফ স্কুল থেকে এসেছে। সে এসেই কান্না জুড়ে দিল। “Mommy, I failed in Bengali again!” রীমা বলল, “Why my dear? Why don’t you study Bengali?” “Because I hate Bengali... it sucks!” আরিফ বলল। হাশেম সাহেব হতবাক হয়ে গেলেন।
সন্ধ্যা বেলা হাশেম সাহেব আরিফের পড়ার রুমে গেলেন। বইগুলো উলটে পালটে দেখতে লাগলেন। সব বই ইংরেজিতে লেখা... তাও আবার ভারতীয় লেখকদের লেখা তাই মাঝে মাঝে কিছু হিন্দি ও ঢুকে গেছে। “এই রীমা, আরিফ কি ইংলিশ মিডিয়াম এ পড়ে?” “ হ্যাঁ, বাবা।” “বাংলায় দিলি না কেন?” “বাংলা মিডিয়াম বস্তির ছেলেদের জন্য, এত সেকেলে পড়াশোনা ! ইংলিশ মিডিয়াম এ পড়াটাই Smartness” একটু হতাশ স্বরে হাশেম সাহেব বললেন, “ও আচ্ছা”। তিনি ইতিহাস বইটি খুললেন। সারা পৃথিবী নিয়ে লেখা থাকলেও বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ছিটে ফোঁটা লেখা নেই। “আরিফ, বলো তো শহীদ দিবস কবে?” “এত কঠিন Bengali তো বুঝি না, নানাভাই” “আচ্ছা যাও, Language Martyrs’ Day কবে?” “February 21st” “এদিন কী হয়েছিল কেন হয়েছিল বলতে পারো?” “Nothing special, কি নাকি গোলাগুলি হয়েছিল” আবার হতাশ হতে হল তাকে।
আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে এসে তিনি তার শার্ট খুললেন। পিঠে ফোলা ফোলা দাগ। ভাষা আন্দোলনের সময়ে পুলিশের লাঠিচার্জে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিলেন তিনি।
“কিন্তু যে ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে এত সংগ্রাম করলাম, তারা কতখানি মাতৃভাষার মর্ম বুঝেছে? তবে কিসের জন্য এত লড়লাম?”
আশা করি গল্পটা আপনাদের ভাল লেগেছে। কোন ভুল করে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




