somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~অজ্ঞতার মুক্তি~

৩১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা-
এই পৃথিবীর সমস্ত বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আমি একটা কথা বার বার বলে যাবো- ‘‘আপনি যতক্ষণ না অজ্ঞতা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন ততক্ষণ আপনি আপনার অজ্ঞতাকে অজ্ঞাত কোনো দৈব শক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন।’’

যেমন ধরেন- ‘‘ডেড সি তে মানুষ ভেসে উঠে কেনো এ প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা নেই তাই আপনি ধরে নিলেন পানির দেবতা তুষ্ট হয়ে মানুষকে সেখানে ভাসিয়ে রাখে। আবার আপনি জানেন না বারমুডা ট্রায়েঙ্গেলের ব্যাখ্যা কি তাই নিজের অজান্তে ই ধরে নিলেন অজ্ঞাত কোনো দেবতা রুষ্ট হয়ে এর উপর দিয়ে চলাচল করা জাহাজ টেনে নিয়ে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিচ্ছে।’’

এসবের সঠিক ব্যাখ্যা আপনার কাছে নেই। আপনার কাছে নেই তাই বলে ধরে নেবেন না বিজ্ঞানের কাছেও নেই।
হ্যাঁ, বিজ্ঞান সব জিনিসের খোলাসা করতে সক্ষম হয়নি। না হওয়ার ই কথা। এই মহাবিশ্বের পরিসর আর বিজ্ঞানের পরিসরের দিকেও তাকাতে হবে। এই মহাবিশ্বের গ্রহ নক্ষত্রের পরিমাণ পৃথিবীর সমস্ত ধূলিকণার চেয়ে ও বেশি। আর বিজ্ঞান মাত্র সভ্যতার আঁতুড়ঘর পেরিয়ে মাথাচারা দিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
মানুষের অজ্ঞতার এই ভ্রমকে যুক্তি বিদ্যায় বলা হয় অজ্ঞতার কুযুক্তি বা ইগনোরেন্স ফ্যালাসি। এই কুযুক্তি সম্পর্কে একটু বলি –‘‘এহ, যেহেতু তুমি জানো না সুরাইয়া তারায় কয়টি পাহাড় আছে তাহলে আমার যুক্তি ই সঠিক মামদু ভূত ই এ পাহাড় গুলো তৈরি করেছে।’’ এখানে সুরাইয়া তারায় পাহাড় থাকা আর মামদু ভূতের এই পাহাড় তৈরি করা ঠিক কোন যুক্তিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা ঠিক বোঝে আসে না।
ইগনোরেন্স ফ্যালাসি সম্পর্কে আমি মাত্র তিনটি উদাহরণ দিয়েছি একটু মাথা খাটালে হয়তো আপনি অসংখ্য অসংখ্য উদাহরণ বের করতে পারেন যার মাঝে হয়তো আপনি নিজেও আটকে আছেন।
মানুষকে অজ্ঞতা থেকে মুক্তি পেতে হলে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। পড়তে হয়, জানতে হয়। আপনি যখন বারমুডা ট্রায়েঙ্গেল, ডেড সি কিংবা সুরাইয়া তারার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে পারবেন তখন অজ্ঞাত দেবতাদের কাল্পনিক ভ্রম আপনার মাথা থেকে সরে যাবে। এর কারণ হলো বিজ্ঞান আপনাকে কোনো কিছু অন্ধ ভাবে গ্রহণ করতে বলে না বিজ্ঞান যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে খোলাসা করে দেয়। যেমন পানিতে অক্সিজেন হাইড্রোজেন আছে সেটা আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে না আপনি বিশ্বাস করলেও পানিতে অক্সিজেন হাইড্রোজেন আছে, না করলেও আছে। এটা বিজ্ঞান প্রমাণ করে দেখিয়েছে। এখন আমি আপনাদের এরকম ই কিছু অজ্ঞতা সম্পর্কে খোলাসা করে দেবো যাকে হয়তো এতোদিন কোনো সুপারন্যাচারাল শক্তির নমুনা হিসেবে ভেবে এসেছেন।

ঘোরের পতন (Hypenic jerk)-
ঘুমের মধ্যে উপর থেকে পড়ে যাওয়া দৃশ্য অবলোপন করেনি এমন লোক খুব কম ই আছে। একে বলা হয় Hypenic jerk বা ঘোরের পতন। একে অনেকে দৈব শক্তির ক্ষমতার নমুনা মনে করেন আসলে এরকম কিছুই নয়। আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি আমাদের গোটা শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসে। মাংসপেশি কার্যক্ষমতা বন্ধ করে শিথিল হয়ে আসে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো শরীরের এই কার্যক্ষমতা বন্ধ হওয়ার ব্যাপারটা মস্তিষ্ক যখন বুঝতে পারে না তখন সে উপর থেকে পড়ে যাওয়া ভেবে ভুল করে এবং এ ভুলের ফলে সে হাত পা’কে শক্ত হবার জন্য প্রস্তুত করে ফেলে। তাই আমরা ঝাঁকি দিয়ে হঠাত ঘুম থেকে জেগে উঠি। এ hypenic jerk বা ঘোরের পতন তখন ই হয় যখন আমরা অনেকক্ষণ ধরে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম না দেই। একটানা পড়াশোনা, অফিসের কাজ, চিন্তা, দুশ্চিন্তা করতে করতে যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন আমাদের ঘুমের মাঝেও এসব চিন্তা চলতে থাকে আর তখন ই ঘটে ঘোরের পতন।

ঘুমে পক্ষাঘাত (sleeping paralysis)-
বোবা ধরা বা বোবা ভূতে ধরা বলে একে এক নামে চেনে সবাই। পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল নাক বরাবর হলে বোবা ভূত ধরে আবার বোবা ভূত জিহ্বা দিয়ে গোটা শরীর পেঁচিয়ে ধরে এমন সব কল্প কথা এই sleeping paralysis ঘিরে গড়ে উঠেছে। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গেলে আমাদের ঘুমের পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করা প্রাসঙ্গিক তাই এখন ঘুমের পর্যায় সম্পর্কে খোলাসা করছি।
আমাদের ঘুমের দুটি পর্যায় আছেঃ
১/ ঘুমের যে পর্যায়ে আমাদের চোখের মণি দ্রুত নড়ে সে পর্যায়কে বলা হয় REM (Rapid Eye Movement) বা ‘রেম’
২/ ঘুমের যে পর্যায়ে আমাদের চোখের মণি দ্রুত নড়ে না সে পর্যায়কে বলে NON REM (Non Rapid Eye Movement)

খেয়াল করুণ, আমাদের ঘুমের মাঝে এ দুটি চক্র পর্যায়ক্রমে আসে। হয়তো দুই মিনিট রেম চলতে পারে তিন মিনিট নন রেম চলতে পারে আবার তিনি মিনিট নন রেম চলতে পারে পাঁচ মিনিট রেম চলতে পারে। এভাবেই চোখের মণি নড়া না নড়া নিয়ে রেম আর নন রেম হয়ে ঘুমের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আর যখন এই দুই প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি অবস্থায় এসে আপনি জেগে যান অর্থাৎ রেম আর নন রেমের মধ্যবর্তী ফাঁকা ঘরে এসে আপনি যদি জেগে যান তাহলে আপনি হাত পা নাড়াতে পারবেন না, কথা বলতে পারবেন না। তার কারণ হলো আমাদের এই জেগে উঠা সম্পর্কে মস্তিষ্ক তখন অবধি সিগন্যাল পায়নি। এ ক্ষেত্রে আমাদের স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট। মস্তিষ্ক যখন বুঝতে পারে আমরা জেগে গেছি তখন আমাদের হাত পা কথা বলা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এখানে একটা জিনিস বলে রাখা জরুরী sleeping paralysis থেকে জেগে উঠে আমরা কোন কিছুর গন্ধ পাওয়া বা কোনো কিছুর দৃশ্য দেখা অস্বাভাবিক কিছু নয় কারণ মস্তিষ্ক তখন স্বপ্নের মতো দৃশ্য তৈরি করে আপনার ভ্রম তৈরি করতে পারে।

ঘুমের ঘোরে হাঁটা (sleep walking)-
ঘুমের ঘোরে মানুষকে হাঁটতে দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। অতি নগণ্য সংখ্যক মানুষের ই এ সমস্যা দেখা দেয়। এখানে কোনো অলৌকিক ক্ষমতার বলে মানুষ হেঁটে বেড়াচ্ছে না। এটা হচ্ছে ঘুমের NON REM পর্যায়ের খেলা। ঘুমের মধ্যে হাঁটা চলা উঠা বসা দৌড় ঝাঁপ ড্রাইভ করা সহ নানা ধরণের হাস্যকর কীর্তিকলাপ করতে দেখা যায়। এটা অস্বাভাবিক কিছু না তবে বলা হয়ে থাকে ঘুমে হাঁটা ব্যাক্তিকে জাগানো উচিৎ নয়। কথাটা একেবারেই উদ্ভট আর ভিত্তিহীন। বরং যত তাড়াতাড়ি জাগানো যায় ততো ই ভালো।

নাক ডাকা-
নাক ডাকা সবার ই কম বেশ হয়ে থাকে। বিশেষত শীতকালে নাক ডাকার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। আগেই বলেছি ঘুমের সময় আমাদের মাংসপেশি শিথিল হয়ে আসে তখন আমাদের জিহ্বা ও গলবিলের পেছনের মাংসপেশি ও শিথিল হয়ে আসে আর সে সময় তা আমাদের শ্বাসনালীর পথরোধ করে। তার ফলে আমরা নাক ডাকি। এখানে বলে রাখা ভালো নাক ডাকা কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ঠিক আছে কিন্তু ঘুমানোর পর ও ঘুম কম হওয়া বা দম বন্ধ হয়ে আসছে এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে জেগে উঠা স্লিপ এপনিয়া রোগের লক্ষণ।

উপসংহার-
উপর থেকে পড়া, বোবা ধরা, ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়ানো এসব এখন বিজ্ঞানের হাতের মুঠোয় এসে পড়েছে। বিজ্ঞান এর যুক্তিসংঘত ব্যাখ্যা প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে। স্বপ্ন এখন প্রযুক্তির জালে ধরা পড়ে গেছে। স্বপ্ন এখন ল্যাবরেটরিতে দেখা যায়। স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করা যায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যায়। স্বপ্ন হাতেনাতে ধরা পড়ার পর মানুষ মেনে নিয়েছে স্বপ্নের উৎপত্তিস্থল মানুষের মস্তিষ্ক থেকে চতুর্মাত্রিক বা দৈব কোনো শক্তি থেকে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×