হোক না বাপু গার্লফ্রেন্ড, সেকালেই বউ বউ ডেকে মুখে ফেনা তুলেছি মাইরি! আহা বলছি ভায়া রোষো,,,
সে অনেক কাল আগের কথা, আবার অত বেশি আগেরও না ছাই যে আরবের লোক গুহায় বাস করিবে। এ্যাই বড়জোর অনার্স সেকেন্ড/থার্ড ইয়ারে পড়ি বোধহয়। বউ ফার্স্ট ইয়ারের নবীণ বরণ আর হৃদয় হরন। দু'জনাই কলাভবন। আজিমপুরবাসিনী গফসোনা বউটারে পলাশীর মোড় থেকে তারই রিক্সায় উঠে কর্ডন করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা এবং ক্লাশ শেষে তারই রিক্সায় চড়ে আবার সেই পলাশীর মোড় তক 'সি অফ' করাকে সেই বয়েসেই 'ফরজে আইন'রূপে স্থির করেছিলাম নিজের উপড়।
আরে বাবা হ্যা'রে বাবা, বিবাহপূর্ব পিরিতিকালীন গোটা সময়টাই স্বামী হিসাবে আমি আদর্শই ছিলেম। কি সে মধূমালতি প্রেম আহা। ক্লাশের ফাঁকে 'মল চত্বর', 'অপরাজয়ের বটতলা' আর 'ডাকসু'র ক্যাফেটেরিয়া' কিংবা লাঞ্চে 'এটমিক এনার্জী'র ক্যান্টিন',,,,সারাবেলা সারাক্ষন অণু'খন 'ছায়ায়-মায়ায় পথচলা' মোটামুটি এই-ই ছিলো মোর দিনলিপির দিবসিয় আমলনামা। আর সন্ধ্যা? খেক খেক খেক। লোডশেডিংএর উপকারীতা ও ফজিলত 'কোই মুঝসে পুছে'। সেই সাঁঝ থেকেই শশুরালয় মানে আজিমপুরের এতীমখানার পাশের কলোণী পাড়ায় ঘুরঘুর আর বারবার আকাশপানে চেয়ে আসমানী সাহায্যের আকূতি যে কখন আসিবে সেই পরম আরাধ্য বরকতে টুইটুম্বুর লোডশেডিং! কম'সে কম দু'বার আসবে-যাবে সেতো নিশ্চিতই আর গেলেই মিনিমাম এক ঘন্টার ধাক্কা। সে'কালের বিদ্যূৎ বোর্ডের আজিমপুর কলোণীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের উপড় খোদার নিয়ামত রহমত ঝরে ঝরে পরুক আজীবন। তাদের বদৌলতে কত্ত কত্ত রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমকাব্য অমর আর ফুলেল রঙীন হইয়াছে সে কেবল সেই সকল জুটি আর পরওয়ারদেগারই জানেন।
আরে বাবা বলছি রে সব, বলি অত্ত উতলা হলে চলে?
কারেন্ট গেলেই পুরো এলাকা মিশমিশে অন্ধকার। রাস্তার লোকজন খানিক দাঁড়িয়ে আশপাশের বাড়ীঘরের কূপী-হারিকেন-মোম জ্বালানোর প্রতীক্ষায়। বুঝার যে জো নেই কার সামনে কে হাঁটছে। অযথাই বাঁজখাই কন্ঠে 'হেহ পোলাপান আস্তে যা' ফাঁপরে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেয়া অন্যকে। বউ-ঝি'দের বাতি জ্বালাতে যেটুক যা সময় লাগে সেটুকুনই হলো সুযোগের মাহেন্দ্র'খন। লোকজনের আঁধারের চোখের ধান্দা কাটার আগেই বিল্ডিংএর সামনে আড্ডা দেয়া গফসোনার অকর্মণ্য ষন্ডা দুই ভাই আর তাদের হারামি মিনসে বন্ধুদের চোখ এড়িয়ে সুড়ুৎ করে বিল্ডিংএ ঢুকে পড়াটাই হলো মিশনের মূল যা ডেঞ্জার পার্ট। শুনতে যেমনি ভয়ঙ্কর আর বিপদসঙ্কুল মনে হচ্ছে আদতে সে ডালভাত বানিয়ে ছেড়েছিলেম। আরে বাবা সবই অধ্যাবসায়। গাইতে গাইতে গায়েন আর যাইতে যাইতে 'যা-এন+টার দ্য ড্রাগন' এক্সপার্ট। চলে যাও সিধে টপফ্লোর মানে চারতলার শেষ সিঁড়িতে। কলোণীর বেশিরভাগ বিল্ডিং তখন চারতলাই ছিলো। তারপর সাবেরূন। অপেক্ষার ফল মিঠে না শুধু পুরো রসমালাই মাইরি। সে আসলেই যে আদিরসের সোয়াকোর্স প্রোগ্রাম! ঠোট হাত আর শ্বাসেদের চঞ্চলতা। কিংবা কখনো থোরা বেশি কিছুই(এ্যাই পোলাপান চোখ বন্ধ,খবরদার) আর হরিণী চপল তীক্ষ্ণতায় সচেতন কান পেতে থাকা কেউ আসলো কিনা টের পেতে। গল্পও রেডি, হালকা আওয়াজ শুনলেই শুনিয়ে বউকেই বলা,
'আপা সুজনদের বাসা কোনটা'?
আরে আর কেউ না, শুশুর সাহেবেরই গুণধর কনিষ্ঠ বদখানার নাম মোবারক 'সুজইন্যা'। আর এভাবেই 'ইশশশমার্টলি' বাঁদরতরো এ'ডাল ও'ডাল যথা চলতো এই সিঁড়ি ঐ সিঁড়ির মাঙ্কি রোমান্স। কি যে মধুর দিনগুলো না না সাঁঝগুলো সব ওরেএএ। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না 'সুখের কপালে ঝাঁটা'! কুট্টিবেলায় সম্ভবত 'হরলাল রায়'এর 'একের ভেতরে পাঁচ'এ পড়েছিলাম 'জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নহে, সুখ চিরস্থায়ি নহে' ব্লা ব্লা ব্লা! সেকালের ভাব সম্প্রসারনের যন্ত্রনার লাইনগুলো আজো ভাব দর্শন হয়ে জ্বালিয়ে যাচ্ছে মাইরি! না না শশুরতনয় 'সুজইন্যা' নয়, সুখ আর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো এক বদখট দর্শন খাঁটি দেশি খলকুত্তা। হ্যা'রে বাবা ঠিকি পড়েছেন। কুত্তাই। কোত্থেকে এ্যাই বাঘা কুত্তা এসে ঘাঁটি বাঁধলো একতলার সিঁড়ি ঘরে! অপরিচিত কাউকে দেখলেই লেজ খাড়া করে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে গোঁওওওওওও করে তেরে আসতো। আর আমায় দেখলেই বেটা পুরো বিষে ভরা নাগীন! গায়ে যেনো বিষ ঢেলেছে কেউ হারামিটার! অন্য কুত্তারা ঘেউ ঘেউ করে পাড়া মাথায় তুলে আর এই হারামী পুরো রাজধাণী! রাজউক'এর খবর হবার যোগার মাইরি! খিস্তি খেউরে আমায় পুরো পাড়া ছাড়া করে ছাড়লো কুত্তায়! তখন দেশে জিপি'র সুলভ মোবাইল বিপ্লব চলছে। মাত্র ২২০০ টাকায় সিম! আর ৪৫০০টাকায় সিমেন্স সি২৫ এর সেক্সি প্যাকেজ। জয়তু গ্রামীন ফোন। দুজনার দুটি সেটের জন্য ৯০০০ যোগাতে 'আক্কেল দাঁতের রুট ক্যানাল', 'এমএস এক্সেল/ফটোশপ টিউটোরিয়াল', 'আঁলিয়াস ফ্রাঁসেস'র ফ্রেঞ্জ ল্যাংগুয়েজ কোর্স' আরো কত্ত কত্ত ভুয়া একনেক প্রজেক্ট যে স্যাংশান করিয়েছে সে আরেক গল্প। আর সবাই'র চোখ এড়িয়ে ফোন ব্যবহারের নিজস্ব গোপন বিধিমালা সে'ও আরেক গল্প বটে। যাই হোক প্রথম দিনের হারামীর তাড়া খেয়ে সাহসে আর কুলোয়নি বাপু দ্বিতীয় প্রচেষ্টার। ছাপরা মসজিদের কোনায় দাঁড়িয়ে প্রবল অভিমানে অপেক্ষা করছি তার ফোনের। ২০মিনিটের বেশি দেরি হলে মিসকল দেবে এটাই ছিলো নিয়ম। সেই ৬টাকা ৯০পয়সার মিনিট প্রতি কল'এর যুগেও ঘন্টার পর ঘন্টা কল দিয়ে কথা বলেছি আমিই স্বয়ং! পকেটমানির সব ঐ গ্রামীন ফোনেই বিলিয়েছি। কত্ত ভালোবাসতাম আহা। কি যে সব সেক্রিফাইস! তাও নাকি আমারই দোষ! আমিই প্রতারক! যাউগ্যা, সে'ও এক ভিন্ন গল্প। কল ব্যাক করে অভিমানের সমস্ত দরদ দিয়ে গাল ফুলিয়ে বল্লাম,
জানো বউ, তোমাদের কুত্তার জন্যে আজ প্রায় মরতেই বসেছিলাম।
অমা, কিসের কি? নির্বিকার নির্লিপ্ত গলায় বললো,
ও হ্যা তোমায় বলতেই ভুলে গেছি বাঙ্কুর কথা। সুজন ভাইয়া আজ সকালেই এনেছে তাকে!
সাব্বাস! এই না হলে শশুরতনয়! এ কেবল যে ঐ মর্কট সুজনের পক্ষেই সম্ভব!
মনে মনে এমন একটা গালি দিয়েছি সে গালিতে সুজন আর বাঙ্কু দু'জনার কন্ট্রিবিউশনটা অতি অবশ্যই জরুরি। না বাপু, সে আর বলছিনে।
রাগ সামলে ফের মধুর আশায় যষ্ঠি মধুর কমসে কম কেজি পাঁচেক কন্ঠে ঢেলে বল্লাম,
ও জান, আমার জান্টুশ পাখি, তুমিই তবে এসোনা প্লিজ নেমে। আমি কি জেএস২৩ এ(সিক্রেট কোড, বিশেষ লোকেশন) আসবো?
তোমার মাথা খারাপ? এই রাতে কি করে নামি? কোন আক্কেলে এই কথা বলো? আমি কি অমন মেয়ে? জানো না এখন এপিএল(আশেপাশে লোকজন)?
লেব্বাবা!! মধু মুডের সত্যানাশ!!!
সুজইন্যারই তো বইন। কিইবা পারবি আর?(মনে মনে)
বিরস বদনে প্রস্থান। আর সেদিন থেকে মরার এভাবেই চলতে লাগলো বাঙ্কুময় রোমান্সবিহিন প্রেম।
প্রিয়ার গল্লির মুখে অমন হারামি কুত্তা থাকলে আর গালের কালো তিলের তরে সমরখন্দ বোখারা নয়, ওমর খৈয়াম লিখতেন,
''হালার খাড়া লেঞ্জা গোঁ গোঁ খিস্তির ডরে ত্যাগিতে পারি অনায়াসে প্রিয়ার ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ''।
ওমর খৈয়াম নই বলেই লোভে লোভে আরো ক'দিন ট্রাই মেরে তবেই ছেড়েছি প্রিয়ার গল্লি। তাও বউটার কত্ত খোটা,
সামান্য একটা কুকুরের ভয়ে..........ছিহহহ !!!
আহারে ছেমরি, বাঙ্কু যদি সিটি কর্পোরেশন মাথায় তুলে তো তুই বেটি তেলাপোকার ডরে বঙ্গভবন মাথায় তুলিস! কথাটা আর ইথারে ছোঁড়া হয়নি। পুরুষের কত এমনি না বলা বেদনায় টুইটুম্বুর কথারা যে নিরবে নিভৃতে বুকের চিপায় গোমরে কাঁদে বুঝে কে? কিসের তরে কিসের আশায় আর কেনোই বা! কটা'খনের সুখের তরে জিন্দেগীর গোলামি! পরশ বিলাসে পুরুষ খালাশ। আফসোস।
দর্শন তোমায় দিলেম ছুটি। পরশ বিলাসে মত্ত সেই আমারো আর সইছেনা মাইরি। কাঁহাতক যায় সে বরদাশত?
সত্যিই পিরিতির বাজার ভালো না।
বিরক্তি না চেপে বলেই ফেল্লাম, ও জান, আমার কুটু সোনা, তোমাদের কিন্তু কুকুরটা নিয়ে ভাবা উচিৎ। মানুষজন দেখলেই যেভাবে ছুটে যায় কোন দিন না আবার কোন অনর্থ ঘটায়?
জান পাখীর খুব একটা বিকার আছে বলে মনে হলো না। শুনে কি না শুনার ভান করলো না শুনেইনি জানিনে মশলা মিক্স ক্যাম্পাসের হিট দেবর-ভাবি চানাচুর চিবোতে চিবোতে সে বরং তার পরানের সখি ময়না আর তার পরান মামুনের লাস্ট রুমডেটের রগরগে রমনের কমন কাহিনী বর্ণনে বেশি উৎসাহি!
মনে মনে ফের 'সুজইন্যা'কে সেন্সর্ড আর তার বোনকে আধাশ্লীল কিছু গালি দিয়ে যৌবনের কষ্ট বুকেই গ্রানাইট চাপা দিলাম।
এভাবেই একদিন, দুইদিন তারপর অন্নেএএএএক দিন,
হঠাৎই একদিন সাত সকালে আমার জানপাখী বউমনিটার ফোন।
ধরমর করে উঠে অজানা আশঙ্কায় কাঁপা কন্ঠে বল্লাম হে-হেল-হেল্লো (ভয়তো পাবারই কথা,ফজরের আজানতক যে সারা রাত কথা আর ইয়ে কত্ত কি!)
কাঁদো কাঁদো আল্লাদি কন্ঠে বউটা বল্লো, জানো জান তুমি না ঠিকই বলেছিলে। কি যে ভয়ঙ্কর কান্ড হলো জানো?
সপ্তমের স্কেলে চড়ে দেয়ালের টিকটিকিটাকে চমকে দিয়ে কলজে থেকে আওয়াজ বেরুলো, ক্কি কি হয়েছে জান?
বাঙ্কু না একটু আগে তিনতলার গুল্লুকে কামড়ে দিয়েছে।(জান পাখীর বাবার কলিগ শায়মা আন্টির সাড়ে পাঁচ বছরের ছেলেটা)
রক্তারক্তি কান্ড, তাকে মেডিকেলে নিয়ে গেছে সবাই মিলে। অবস্থা নাকি ভালো না।
বলো কি? আহারে, আগেই বলেছিলাম কুত্তাটার হাবভাব ভালোনা। এমন অনর্থ একটা কিছু হবে আগেই জানতাম। হারামীটা কই?
জানিনা, কামড়েই নাকি পালিয়েছে।
ক্যাম্পাসে আসছো তো?
না জান, আজ আর আসবো না। বাসায় থাকতে হবে। বিল্ডিংএর সবাই খুব আপসেট। আব্বুও অফিস যাবেন না, শায়মান্টির সাথে মেডিকেলে গেছেন। এখন রাখি জান। ভাইয়ারা সবাই জেগে আছে। সুযোগ পেলে কল দেবো। লাভিউ।
'টু থ্রী ফোর' জান। ধুশশ শালা। আমিও যামু না। ঘুমাই।
সকাল দশ ঘটিকা,
টুং টাং রিং টোন, ফের কল। স্ক্রীনে ভেসে উঠলো জান্টুশ বউ।
ক্যাম্পাসে এসেছে কি? কিংবা বাসার সামনে? হঠাৎই বিপি বেড়ে গেলো ঢিপস ঢিপস। ধর রে শালা ফোন।
হে-হেল-হেল্লো
'জানো জান, কলোণীর সবাই না লাঠিসোটা নিয়ে খুঁজছে বাঙ্কুকে। কি যে খ্যাপা সব্বাই! পেলে আর ছাড়বে না। সুজন ভাইয়াদের আরো কি কি যেনো প্ল্যান আছে,,,,,,,,,এ্যাই এখন রাখি রাখি জান। লাভিউ(উম,,,,,,হ)
টু থ্রী ফোর
শালার নামটা শুনে দিন শুরু!
ধুশশশ শালাআআআআ
'সুজইন্যা' মানেই কোনো না কোনো ভেজাল বাঁধবেই আমি নিশ্চিত।
দুপুর বারো কি সাড়ে বারো হবে (আবার পৌনে একও হতে পারে, ঠিক শিউর না)
টুং টাং রিং টোন, জিগার কা টুক্রা ফের
'ও জান জানো, সুজন ভাইয়ারা না বাঙ্কুকে খুঁজে পেয়েছে'
'বলো কি'! তাপ্পর?
'আহা শুনোই না জান'
'বলোই না রে বউটুশ'
'এলাকাবাসি বটচত্বরে (এতীমখানার গেটের ঠিক পরেই) বাঙ্কুকে বেঁধে বিচার করছে এখন!'
'কও কি?' (গোটা শশুরালয়ের সাইকি নিয়ে বিশেষ এক সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলুম নিশ্চিন্তে)
'হুমম, মাশকুর চাচা বিচার করছেন, মনিরা চাচী সোহানী চাচী সব্বাই আছেন। (সোহানী চাচীর ছোট বোনটা যা না ওরেএএএ, একবার বউয়ের সাথে ক্যাম্পাসে এসেছিলো।)
এ্যাই শোনো রাখি রাখি, আব্বু আসছেন। লাভিউ,(উম্ম,,,,,,হহহ)
টু থ্রী ফোর ফাইভ এভাবে মনে মনে উনসত্তরে গিয়ে থেমেছি এবার।
ঠিক আধ ঘন্টা পরেই,,,
সময়ের হিসেবটা গোলমেলে, ঐ যে বল্লাম, একটাও হতে পারে দেড়টাও হতে পারে আবার সোয়া একটাও।
টুং টাং রিং টোন। একই কলার একই বউ (দুই নৌকোয় পাড়া দিইনি কখনো বাপু,ঈমানসে)
এ্যাই জান, কি হয়েছে জানো?
কি গো বউমনিটা?' (প্রচ্ছন্ন শ্লেষ ছিলো, বুঝলেতো খিকজজ, সুজইন্যারই বইন)
বাঙ্কুর বিচারে কি সাব্যস্ত হয়েছে জানো?
কি?
এলাকাবাসি বাঙ্কুকে ফাঁসির রায় দিয়েছে!
এক্কেবারে সব্বাই, হ্যা'রে বাবা সব্বাই মিলে।
ওরা এখন বাঙ্কুকে ফাঁসি দেবে বটগাছে!!
রিপ্লাইয়ে কি বলেছিলাম মনে নেই তবে জ্বালানো সিগ্রেটের আগুনটা খসে আম্মুর নতুন বেডশিট পুড়ে গিয়েছিলো সে খুব মনে আছে। (সেবারই প্রথম আমি সিগ্রেটখোর এ'ব্যাপারে কারো আর কোন দ্বিধা রইলো না। আর বেডশিট পোড়ার নতিজা কি ছিলো সে আরেক গল্প। তবে ঘটনা বড়ই অসম্মানজনক ছিলো)
এরপর যথারীতি কেউ একজন আশেপাশে এলো এবং 'রাখি রাখি' বলে আগের মতন 'ঐ' সব কহিয়া কল এন্ড।
আরো পনেরো মিনিট পরের আজিমপুর চীফ সংবাদদাতার কারেন্ট আপডেট,
বাঙ্কুর ফাঁসি সম্পন্ন হৈয়াছে। তাহাকে ঝুলাইয়া রাখা হৈয়াছে বটগাছে। সারমেয় কি প্রাণীকূলের আর কেহ যাহাতে কোনদিন অমন ধৃষ্টতা দেখাইতে না পারে তাহার তরেই এ্যাই দৃশ্যমান কিয়াস ভিত্তিক ফয়সলা!!
সোহানী-মনিরাচাচীর সহিত কলোণীর কিচিরমিচির ইতি-মিথী-অনিক সওওওব ঝুলন্ত বাঙ্কুর সহিত 'ভি' চিহ্ন দেখাইয়া ফটোসেশন করিতেছে! (উল্লেখ্য তখনো ক্যামেরা ফোন আবিষ্কৃত হয়নি বিধায় স্টিল ক্যামেরা-ই ভরসা)
বেডশিট পোড়ার নতিজা'র আতঙ্ক আর বাঙ্কুর ফাঁসির ঝটকা কোনটাকে রিএ্যাকশনের জন্য প্রাধাণ্য দেবো সে নিয়ে কিয়েক্টা দ্বন্দ্বে ছিলেম সে বেশ মনে আছে আজো!!
বিকেল পৌনে চার ঘটিকা। (এবেলার সময় নিয়ে পুরোই নিশ্চিত, ক্যান নিশ্চিত সে মনে নেই ঠিক তবে নিশ্চিত)
ফের রিং, ফের বউ আর ফের আপডেট।
(হড়বড়িয়ে বলছে এ'বেলায়, শ্বাসের দ্রুত উঠানামা আর উত্তেজনা স্পষ্ট)
'ও জান, জান্নোওওওওও কি হয়েছেএএএএএএ?
উত্তরের সুযোগ আর পাইনি তার আগেই,
বাঙ্কুর লাশ কবর দেয়ার জন্য নামিয়েছে।
বলো কি??? কবরও দেবে?
'আরে শুনো না,'
লাশটা যেই নামালো অমনি মরা বাঙ্কু না গলায় দড়ি সহ এক ছুটে হারিয়ে গেলো !!
সে কি দৌড় চোখের পলকে!
সব্বাই আতঙ্কে অস্থির, ছুটার সময় তার গলার দড়িতে পা আটকে গিয়াস কাকু দড়াম করে পড়লো রাবেয়া চাচীর উপড়ে। ধাক্কার জোরে চাচীর না সামনের দুটো দাঁত পরে গেছে। আর গিয়াস কাকুর বাম পা ফুলে গেছে।
আরো কি কি সব বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে,,,,,,,
আর আমি?
আপনি ঠিক যা করছেন আমিও তাই করেছিলাম মাইরি!!
এরপর বুড়িগঙ্গার জল আরো আরো অনেক দুষিত হয়েছে। ঋণখেলাপীর সংখ্যা বেড়েছে। খাবারে নয়া নয়া ভেজাল বেড়েছে। সালমান খানের গার্লফ্রেন্ড বেড়েছে।
আর আমরাও সেই আগের মতন স্বন্ধ্যায় লোডশেডিংএ সিঁড়ি রোমান্স করেছি। তবে এরপর যত্তবার উঠেছি নেমেছি প্রতিবারই গা ছমছম করেছে একতলার সিঁড়িঘর পেরুনোর সময়। প্রতিবারই মনে হয়েছে এই বুঝি গোঁওওওওও করে এলো গলায় দড়ি বাঁধা বাঙ্কু!
তবে আফসোস রয়েই গেছে। সেদিন গিয়াস কাকুকে না ফেলে যদি 'সুজইন্যা'রে ফেলতিস রে বাঙ্কু।
ভাবছেন কিসের অত্ত জেদ?
আছে আছে,
যদিও সে ভীন কোন গল্প...........
''ঈদ মোবারক''
উৎসর্গঃ রঙবাজ কবি শিখা রহমান। ক্যান জানি তাঁর মনে হলো আমার গদ্যও ট্রাই মারা উচিৎ! শুধু মনে হলে বাপু ঠিক ছিলো। তাই বলে নীদ হারাম করে দেয়া!! কে বলে তিনি মিষ্টি কবি? তারে ঝাঁঝে জীবন ত্রাহি মাইরি। কবি সম্রাজ্ঞী বলেছেন বলেই লেখা। পুরোটাই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নিদর্শন। গল্পের ছিটেও যদি কারো ভালো লাগে তো(সম্ভাবনা শূণ্যের কোঠায়) সে কবি শিখা রহমানের ক্রেডিট। আর খারাপ লাগার পুরো দায়ভার আলবাৎ 'কিং অব রম্য' আবু হেনা আশরাফ ভাই এবং 'প্রিন্স অব রম্য' গিয়াস উদ্দীন লিটন ভাইয়ের। তাঁরা তাদের উচ্চতায় লিখে লিখে সামুর পাঠকদের রুচীর এমনি হাল করেছেন যে স্বয়ং 'মার্ক টোয়েন' কি 'সমারসেট মম' ব্লগে লিখলেও সেই পানসেই র'বেন পাঠককূলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৫৬