somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম চড়

০৭ ই মে, ২০১৭ রাত ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার দিন কেমন যায় বুঝিনা,বুঝার চেষ্টাও করি না। মাথা ব্যথা করে,শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিই। দিন কাল নিয়ে মাথা ঘামালে আজকাল মেলা ব্যথা করে মাথায়,ঘাম জমে যায়। আমি ভাবি; আমার যদি টাক হত তাহলে মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা জমত। আমার মাথা টাক হোক খুব সখ ছিল ছোটকালে। আমার কাকুর টাক মাথা ছিল; আমি লুকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকতাম। আয়নায় তিনি তাকিয়ে থাকতেন একটানা; আমিও তাঁর স্বভাব পেয়েছি কিনা ভাবছি। হয়ত পেয়েছি। তার আয়না পর্বে বাগড়া হতে চাইতাম না বলে দূর থেকে দেখতাম,একটি দুটি চুল ছিল। আমি এক দুই তিন সবে নতুন গুণতে শিখেছি। গুণে যাওয়া আমার স্বভাব। কাকু ঘুমালে আমি তার মাথার চুল গুণতাম। এক...দুই...তিন...চার...। সম্ভব হত না কখনোই। দূর থেকে চকচকে টাকে চুল কয়েকটি মনে হত কাছে গেলে অনেক হয়ে যেত। কেন হত আমি বুঝতে পারতাম না। স্বতঃসিদ্ধ হয়ে মনকে বুঝ দিতাম; এ এক জাদু বৈ কিছুই না,কোন এক সময় তাসের জাদু কাকু দেখিয়েছিলেন সেই থেকে কাকুর হেয়ালি কাণ্ড আমার কাছে জাদু হিসেবেই প্রাধান্য পেত। সেই জাদুর লব্ধ ধারণা নিয়ে ভেবে কতকাল যে আমি লিচু গাছের তলায় বিলম্ব করেছিলাম জানা নেই। আমার কাছে আস্তে আস্তে সবকিছু জাদু মনে হত।
ঘুমের ঘোরে মাঝে মাঝে খাট কাপত: খট খট,খট খট। আমার মনে হত জাদু। রূপকথার জাদু। ঘুমের জগতের যুদ্ধ হত; ভৈরবীচক্র কে নাশ করত আমার চাঁদের বুড়ির বিকীর্ণ আলো! সেই বাবা-মা'র খাটের খট খট শব্দের ব্যাখ্যা এভাবে দাড় করিয়েছিলাম। সর্ব ক্ষেত্রে জাদু কাজ করত।
সেই জাদু নিয়ে এখনো আমার চলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বড় হয়ে গেছি।
আমার কাছে বড় হওয়ার মানে নেই। মানে খুঁজতে চাইনা।
কাকু প্রসঙ্গে ফিরে যাই।
যদ্দুর মনে পড়ছে তখন দুপুর বেলা (যদ্দুর কদ্দুর জানি না,এটি একটি মৌখিক ভাষা বিশেষ, সাহিত্যে স্থান নেই,সমালোচকদের বাগে রাখতে বিশেষ আয়োজন)। দুপুরের ভাত খেয়ে সবাই বিছানায় কাত। সদ্য এক ফটাস বানাতে বাশ কাটতে গিয়ে হাত কেটে বাড়ি ফিরেছি। হাত কাটার যন্ত্রনা টের পাচ্ছিলাম না,উত্তেজনায় ভোগছিলাম,ফটাস দিয়ে শিহাবে পাছা ফাটাব! ভেবে খুশি খুশি লাগত! বাড়ি প্রবেশের মাথায় দেড়িঘরে (মূল বাড়ি থেকে কিছু দূরে অবিবাহিত পুরুষদের জন্য তৈরি বাড়ি) দেখি কাকু ঘুমাচ্ছেন। তিনি বিয়ে করেন নি। কোন এক রমণী হৃদয়গ্রাহী ছিলেন তাই অবিবাহিত। আমি সুদৃশ্য টাক দেখে পূর্বের চ্যালেঞ্জ নিলাম,সব চুল গুণে শেষ করতেই হবে। শুরু করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর কাকু জেগে গেলেন কিভাবে যেন! আমাকে উনার মাথার পাশে পেয়ে ক্ষেপে গেলেন। কথা নেই বার্তা নেই "ঠাস্ ঠাস্!" দুটি চড় বসালেন।
"হারামজাদা খানকীর পোলা বইসা বইসা আমার মাথা দেখস? যা তোর মার পাছা দেখ, যা কইলাম!"
বড় ব্যথা পাই,গাল লাল হয়েছে হয়ত।
পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসেছে কি? হয়ত। আমার গালে কখনো পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসেনি,ঐ মুহূর্তে গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ দেখতে কেমন হয় আমার দেখতে ইচ্ছা হল,নাহ্ আগে বিচার দিব আম্মারে।
"আম্মা কাকুয় মারছে"
কান্না আসছিল না তবু কান্নাকাটি ভাব এনে আম্মার কাছে বললাম। আম্মা কিছু একটা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমাকে দেখে আরো রেগে বললেন, "বেশ করছে,আয় দুইটা আমি দেই।"
আমি আর আগাই না। ভাশুরের উপর কথা বলতে তার ডর লাগে। তিনি না বলে আমাকেই বকা দিলেন,মেনে নিলাম আমি।
এবার আয়না নিয়ে দেখার পালা। আশা অনেক গাঢ় দাগ বসবে। বসেনি। আমি আরো ব্যাহত হলাম। তবু চড় খাবার ঘটনা শিহাবকে বলতে হবে। আমি দৌড়ে তার বাড়ি যাই। ও সদ্য চুরি করা এলার্ম ঘড়ি ভেঙ্গে চুম্বক বের করে তা দিয়ে খেলছিল। আমি সব খুলে বলি। শিহাব আমার কাছে বেশ বুঝদার মানুষ লাগত। সব শুনে আমার গালের দিকে তাকায়,ভাল মত দেখে তারপর হতাশ হয়ে বলে,"নারে,আমার মত দাগ পড়ে নি।"
মাস খানেক আগে সুরভী কে প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে শিহাব চার জুড়া চড় খায় স্যারের কাছ থেকে,অর ফর্সা গালে দাগ খুব মানিয়ে যায়। দাগ বসলে আমাকেও সুন্দর দেখাবে! আমারও বাসনা জাগে দাগ বসাতে। বাসনা পূরণের শেষ সুযোগ হার মেনেছিল আমি হতাশ হয়ে আস্তে আস্তে বাড়ি ফিরি।
এবার কাকুর এলার্ম ঘড়িটা হাতাতে হবে,শিহাব বলে দিয়েছিল কখন কি করতে হবে।
শেষতক আর চুরি করিনি।
কেন করিনি মনে পড়ছেনা। স্মৃতির বিশেষ বিশেষ অংশ আমার মনে নেই।
মাথা ব্যথা বেড়ে গেছে। ডাক্তার দেখানো উচিত। আমার এক বন্ধ ডাক্তার। স্টেডিয়াম মার্কেটে দারুণ ব্যবসা করছে। ওর কাছে আমার চারশো টাকা পাওনা,সেই কবে পরীক্ষা ফি দিবে বলে নিয়েছিল আর দেয়নি। আর এখন জমিয়ে ব্যবসা করছে! টাকাটা পেলে মেসের ছোট ভাইকে দিয়ে দিব দুশো, সেদিন ধার নিয়েছিলাম।
কি আশ্চর্য আজকাল ছোটভাইদের কাছ থেকেও ধার নিচ্ছি! এটা কিসের লক্ষণ হতে পারে?
এখন এসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না,ঘুমাতে হবে,ঘুম পাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৭ রাত ২:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×