somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংগীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক অজিত রায়ের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভুবনে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব, প্রথিতযশা সঙ্গীতজ্ঞ কিংবদন্তি কন্ঠ শিল্পী অজিত রায়। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। রবীন্দ্রসংগীতের এই নামি শিল্পী গণসংগীতও গেয়েছেন সমান দাপটে। চার দশক কালেরও অধিক সময় ধরে তাঁর দৃপ্ত পদচারণায় মুখরিত ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। বরেণ্য এই সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়কাল হতে তিনি প্রতি বছর ভাষা আন্দোলনের বিশেষ দিন হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে স্মরণ করে একটি করে নতুন গান করে আসছেন। এছাড়াও্ ষাটের দশকে রবি ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা গানটিকে তিনি মাঠে-ময়দানে গেয়ে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। আজ এই বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পীর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবারণ করেন। প্রথিতযশা কন্ঠ শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ অজিত রায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


১৯৩৮ সালেল ২৯ জুন অধুনা বাংলাদেশের রংপুরের উলিপুরে জন্মগ্রহণ করেন অজিত রায়। বাবা মুকুন্দ রায় ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, মা জলপাইগুড়ি জমিদার পরিবারের মেয়ে কনিকা রায় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও স্কুল শিক্ষয়িত্রী ৷ খুব ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে গানে তালিম নেন তিনি। ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন তিনি। মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ষাটের দশকে অজিত রায় চলেআসেন ঢাকায়। কৈশোরেই তবলা বাজানো শিক্ষা গ্রহণ করেন অজিত রায়। তার গান শেখার প্রেরণা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন । পরে টেলিভিশন প্রচলনের পর থেকে সেখানেও গান গেয়েছেন অজিত রায় যার বেশির ভাগই রবীন্দ্রসংগীত। সহকর্মী শিল্পীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে তিনি কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। এসময় তাঁর সতীর্থ হিসেবে ছিলেনঃ আপেল মাহমুদ, আব্দুল জব্বার, সমর দাস, কাদেরী কিবরিয়া, সুজেয় শ্যাম-সহ অন্যান্য শিল্পীরা। এদেরকে আমরা সম্মানার্থে বলি শব্দসৈনিক। এঁরা হয়ত অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেননি, কিন্তু যারা অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে ছিলেন তাদের প্রেরণার বাণী তো এরাই শুনিয়েছিলেন। এরাও তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান যোদ্ধাই।


এ সময়ে তাঁর রচিত ও সুরারোপিত বিখ্যাত গানগুলো রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীসহ সাধারণ মানুষদেরকে স্বদেশকে ঘিরে চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল। পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীতও পরিবেশন করেছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয় গানগুলো হলোঃ ও আমার দেশের মাটি, একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা, আমি যুগে যুগে আসি, বিজয় নিশান উড়ছে ঐ, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি ইত্যাদি। নেপথ্য গায়ক হিসেবে অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অজিত রায় অংশগ্রহণ করেছেন। এগুলো হলোঃ রিপোর্টার, জীবন থেকে নেয়া, যে আগুনে পুড়ি, জন্মভূমি, কোথায় যেন দেখেছি এবং কসাই। তাছাড়াও তিনি সুরুজ মিয়া চলচ্চিত্রে বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৭২ সালে অজিত রায় তৎকালীন বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৯৯৫ সারের ৯ অক্টোবর, চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য ১৯৭২ সালেও বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত গমন করেছিলেন এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। ১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‌১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। সঙ্গীতে অসমান্য অবদানের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন অজিত রায়। এছাড়াও, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন অজিত রায়।


সঙ্গীতশিল্পী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অজিত রায় ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১:০৫ মিনিটে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ফুসফুস সংক্রমণ ব্যাধিতে ভুগছিলেন। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পরে পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটে তাঁকে দাহ করা হয়। তার বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী বুলা রায়, পুত্র রোমাঞ্চ রায় এবং কন্যা শ্রেয়সী রায় মুমুসহ অগণিত ভক্ত-গুণগ্রাহীসহ রেখে গেছেন তাঁর সুরারোপিত গানের এক বিরাট সম্ভার। কীর্তিমানদের মৃত্যু নেই। তারা বেঁচে থাকেন অনন্তকাল তাদের কীর্তি দিয়ে। রাষ্ট্র, সমাজ, সংসারের সর্বত্রই তাদের রেখে যাওয়া কর্মকাণ্ড তাদেরকে উজ্জ্বল করে রাখে। অজিত রায় ছিলেন এমনই একজন কীর্তিমান মানুষ। গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক অজিত রায় তাঁর সংগীতের মধ্য দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বাংলার আপামর জনতার মনে। আজ এই বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পীর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী। প্রথিতযশা কন্ঠ শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ অজিত রায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×