আসসালামু আলাইকুম,
১.ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের হস্তে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার রহিয়াছে, সেইখানে আল-কায়েদার ব্যাপক উপস্থিতি, ইরাকে গণতন্ত্র নাই--সেইখানে কুর্দিদের নির্বিচারে হত্যা করা হইতেছে---এইসব কারণ দেখাইয়া মার্কিন-নেতা বুশ আর তাহার তৎকালীণ ব্রিটিশ ডেপুটি ব্লেয়ার মিলিয়া ২০০৩সালের ২০ শে মার্চ তারিখ ইরাকে ব্যাপক হামলার আয়োজন করে। তাহাদের সহিত যোগ দ্যায় আরও বেশ কিছু দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের দাস-দেশগুলির কথা তো বলিতেই হয়।
২. সাদ্দাম পরাজিত হইলো, ধরা পড়িলো, ফাসীও হইলো।কিন্তু জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে দেখা গ্যালো যে ইরাকে নিষিদ্ধ অস্ত্রের ভাণ্ডার তো দূরের কথা সেইখানে রাসায়নিক অস্ত্রের সামান্য নমুনাও মিলিলো না। তাহাতে বুশ-ব্লেয়ার জোট দমিলো না। ইরাকে আল-কায়েদার ঘাটি রহিয়াছে--তাহা আরো জোরো-শোরে প্রচার পাইতে থাকিলো। আর বেশ কিছু পশ্চিমা মিডিয়ার কারণে মার্কিন-মুলুকের বাসিন্দারা এইরকম ধারণা করিতে থাকিলেন যে সাদ্দামের নির্দেশেই সেই দেশে ৯/১১-এর ঘটনা ঘটিয়াছে। এমন কি অনেকেই বিশ্বাস করা আরম্ভ করিলেন এই ঘটনার নেপথ্যে ইরাকি বিমান-সেনারা জড়িত।গণতন্ত্রের কী অবস্থা হইলো?
৩. এখন জানা যাইতেছে যে ইরাকে সাদ্দামের আমলে আল-কায়েদা ঘাটি তো দূরের কথা সেইখানে তাহাদের কোনো শাখাও ছিলো না। কে ফাস করিলো? উইকিলিকস ফাস করিয়া দিয়াছে। তখন বলা হইলো ইরাকি জনগণকে সাদ্দামের একনায়কতন্ত্র হইতে মুক্তির জন্য এই যুদ্ধটা নাকি জরুরি ছিলো। জরুরি ছিলো? মানিয়া নিলাম। ইরাকে গনতন্ত্র নাই। এই অযুহাতে যদি সেইখানে মার্কিন-পেটোয়া বাহিনীর হামলা জায়েজ হইয়া থাকে, তাহা হইলে প্রশ্ন করিতে হয় : সৌদি আরব, কাতার , কুয়েত--উহাদের জনগণ কি গণতন্ত্রের নহরের ধারায় প্রতিদিন গোসল করিতেছে? সেইখানে কী অবস্থা তাহা নিয়া কোনো প্রশ্ন নাই।
৪. সাদ্দাম হোসেন কুর্দিদের উপর অত্যাচার করিয়াছেন--তাহাতে সন্দেহ নাই। সেইখানে কুর্দি-হত্যা চালাইয়াছেন--তাহাতেও সন্দেহ নাই। কিন্তু প্রতিবেশি তুরস্ক যখন কুর্দিশ্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্যদের উপর খুন-ঘুম-জেলসহ নানাধরনের অকথ্য অত্যাচার চালাইতেছে--তখন পশ্চিমা বিশ্ব মুখে কুলুপ লাগাইয়া বসিয়া থাকে।
কুর্দি-বিদ্রোহীদের দমনের নামে গ্রামের পর গ্রাম হেরিকপ্টার গানশিপ দিয়া জ্বালাইয়া দেওয়া হয়--তাহাতে কাহারোই কিছু যায়-আসে না।
কিন্তু ইরাকি কুর্দিদের প্রতি এতো দরদ ক্যানো উপচাইয়া পড়ে? সকল প্রকার দমনই খারাপ। তাহা ইরাকি কুর্দিই হউক আর তুরস্কের কুর্দিদের উপরই হউক। আসল কথা এই যে ইরাকি-কুর্দিস্তানে তৈলের যে খনি আর ভাণ্ডার রহিয়াছে তাহা তুরস্কের কুর্দি-এলাকায় নাই। ফলে দরদ তো বেশি থাকিবেই।
৫. এই যুদ্ধের ফলে ইরাকিরা কী কী পাইলো--একটু নজর দিয়া দেখা যাউক। জাতিসংঘের হিসাব মতে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ইরাকি এখন উদ্বাস্তু। তাহারা সিরিয়া, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবর্ণনীয় কষ্টের ভিতর দিয়া জীবন-যাপন করিতেছে।
ইরাকি শিশুদের ৩৫%ই এখন হয় পিতাহীন অথবা পিতামাতহীন। তাহাদের এখন কোনো অভিভাবক নাই। বিষয়খানা একটু চিন্তা করুন। ইরাকে এখন স্কুল নাই। বিদ্যুৎ নাই। চিকিৎসা-সেবা বলিতে কিছু নাই। শিক্ষা তো নাইই। কিন্তু ''অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম''-এর গালভরা নাম দিয়া সেইখানে মারইকন-ব্রিটি-আর কতিপয় গোলাম ইরাকী নেতা দেশ গণতন্ত্র-গণতন্ত্র বলিয়া গণতন্ত্রের ফসল ফলাইতেছে।
কী রকম ফসল?
৬. ইরাকে শেষ পার্লামেন্ট নির্বাচন হইয়াছে ২০১০ সালের ৭ ই মার্চ। সেই নিরআবচন নিয়াও কম নাটক হয় নাই। আমরা আপাতত সেইদিকে যাইতেছি না। পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসিয়াছিলো ২০১০ সালেরই ১৪ই জুন তারিখ। এইটা হইতেছে অক্টোবর মাস। কিন্তু এখনও আইয়াদ আলায়ি, ইব্রাহিম আল জাফার আর নূর-ই -আল মালিকির নেতৃত্বাধীন দল একটি নতুন সরকার গঠন করিতে পারে নাই।অবস্থাটি একবার চিন্তা করিয়া দেখুন!!! বিনা সরকারেই ইরাক চলিতেছে। কে চালাইতেছে? চালাইতেছে মার্কিন আর ব্রটিশ রাষ্ট্রদূত।সেই সাথে রহিয়াছে বিগত নূরই মালিকির দাস-মার্কা সরকার।
৭. এই হইতেছে ইরাকি গণতন্ত্রের নমুনা। কিন্তু ইরাকে তৈল রহিয়াছে। কাজেই ইরাকে সাদ্দামের প্রয়োজন নাই। সে এক কালে দাসানুদাস থাকিরেও পরে ভীষণ বেয়াদবি করিয়াছে। ইরাকে এখন গণতন্ত্র প্রয়োজন। সেবাদাস-মার্কা। ইরাকি জনগণ তাহা হইলে যুদ্ধ হইতে কী পাইলেন? পশ্চিমা গণতন্ত্র পাইয়াছেন। এখন তাহারা সকাল-বিকাল-রাত্রি সেই গণতন্ত্র দিয়া অনাহারে মারা পড়িতেছে।
তাহাতে কী হইয়াছে!!! আসুন আমরা ওবামা-ক্যামেরুন-মালিকিদের জয়গীত গাহিতে থাকি।
৮. কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী। ভাড় দিয়া কোনো দেশেই গণতন্ত্রের নাটক দীর্ঘস্থায়ী হয় নাই। একদিন আসিবেই যেদিন ইরাকি জনগণ নির্ভার হইয়া নিজেদের দেশে স্বাধীন নাগরিক হিসাবে বসবাস করিতে পারিবেন।বাগদাদ সেই দিন গ্রীনজোন-রেডজোন-ইয়োলোজোনে ভাগ থাকিবে না।সেই দিন ইরাকি জনগণের বিজয় আসিবে।
পরম করুণাময় ইরাকি জনগণকে হেফাজৎ করুন।
সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




