আসসালামু আলাইকুম,
বিখ্যাত রোমান্টিক মার্কিন চলচ্চিত্র ''কাম সেপ্টেম্বরের'' কথা অনেকেরই মনে রহিয়াছে। কৈশোরকালে বিটিভির সৌজন্যে এই চলচ্চিত্রটি দেখিবার সুযোগ হইয়াছিলো। তখন ভালো লাগিয়াছিলো। জানি না এখন এই বয়সে কেমন লাগিবে। তবে মিসরের রাস্ট্রপতি হোসনি মোবারক গতকাল রাষ্টিয় টেলিভশনে জাতির উদ্দেশ্য প্রদান করা ভাষণে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকিবার যে-খায়েশ ব্যক্ত করিয়াছেন তাহা যে ভালো লাগে নাই সেইটাই নির্দ্বিধায় কহিতে পারি। শুধু আমি কেন? মিসরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাহারা রাজপথে নামিয়া আসিয়াছেন তাহাদের কাহারোই ভালো লাগে নাই। সেই কারণেই ভাষণ শেষ হইতে না হইতেই তাহারা রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্য 'ভাগো--- ভাগো--- ভাগো' আওয়াজ তুলিয়াছেন।
২. তিনটি রাষ্ট্রের কারণে আজ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ''মার্কিন-ইসরাইলি গোষ্টী'' অশান্তির আগুন জ্বালাইবার সাহস পাইয়াছে। সেই রাষ্ট্র তিনটি হইতেছে সৌদি আরব-জর্ডান-মিশর। এই তিনটি রাষ্ট্রের একটিতেও গণতন্ত্র নাই। মিসরের রাষ্ট্রপতির বয়স এখন ৮৩ বৎসর। সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ এইবার ৮৭ বৎসরে পা রাখিলেন। আর জর্ডান শাসন করিতেছে আরেক আবদুল্লাহ (২য়), যাহাকে নাবালক বলিলেও কম বলা হয়।
এই তিনটি রাষ্ট্রই মার্কিন-মোড়লের কথায় উঠা-বসা করিয়া থাকে নিজেদের জনগণের কথায় নহে।
৩. এই পথে প্রথম পথ-প্রদর্শক হইতেছেন মিসরের আনোয়ার সাদা'ত। নাসেরের অনেক দোষ-ত্রুটি থাকিলেও এইটা ভুলিলে চলিবে না যে তিনি মিসরকে রাজতন্ত্র হইতে মুক্তি দিয়াছিলেন। শুধু তাহাই নহে। সারা দুনিয়ার বুকে আরবদিগের মাথা উচু রাখিবার প্রেরণা যোগাইয়াছিলেন। তাহার মৃত্যুর পরে ডেপুটি আনোয়ার সাদা'ত মারইকন মদদে ইসরাইলের সহিত ''ক্যাম্প-ডেভিড'' শান্তি চুক্তি সম্পাদন করিয়া আরবদিগের উচু মাথাকে মাটির সহিত মিশাইয়া দিয়াছিলেন।
১৯৮১ সালে সাদা'তের মৃত্যুর পরে ক্ষমতায় আসিলেন হোসনি মোবারক। যাহাকে ১৯৭৫ সালে বিমান বাহিনীর প্রধান হইতে নিজের ডেপুটি হিসাবে নিয়োগ দিয়াছিলেন সাদা'ত। ক্ষমতার নিরঙ্কুশতা বজায় রাখিবার জন্য এই রকম একটি গর্ধভ-মার্কা ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রয়োজন ছিলো। সাদা'দ নিহত হইবার পরে বিনা বাধায় হোসনি মোবারক রাষ্ট্রপতি হইয়া উঠিলেন। আর তার চতুরতা সাদা'তকেও ছাড়াইয়া গিয়াছিলো। রাষ্ট্রপতি হইবার পরে তিনি কোনো ডেপুটিকেই নিয়োগ দেন নাই। তবে এইবার দিয়াছেন। তাহাও আবার জনগণের চাপে। আজব দেশ মিসর। যাহার কোনো উপ-রাষ্ট্রপতি নাই। কে তাহাকে সমর্থন দিয়াছে? গণতন্ত্রপ্রেমি মার্কিন-ব্রিটিশ জোট। অন্যদিকে ইসরাইলের দুশ্চিন্তার শেষ নাই। তাহারা এই গণ-আন্দোলনের ভিতরেও ''মুসলিম ব্রাদারহুডের'' কারসাজি খুজিয়া বাহির করিবার চেষ্টা করিতেছে।আবার কথনো-কখনো ইরানের মতন 'বিপ্লব'-এর ভয়েও ভীত।
৪. গাজার যুদ্ধে ইসরাইলের হাতে যে-পরিমাণ রক্ত লাগিয়াছিলো সেই পরিমাণ রক্ত হোসনি মোবারকের হস্তেও। ইসরাইলের সৈন্যরা যখন অবরুদ্ধ গাজাবাসীর উপর হেলকপ্টার গানশিপের আক্রমণ চালাইতেছিলো তখন প্রাণ বাচাইবার জন্য হাজার-হাজার গাজাবাসী ''রাফা সীমান্তে'' জড়ো হইয়াছিলো। কিন্তু মিসর তখন বেঈমানি করিয়া রাফা সীমান্ত অবরুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলো। গাজাবাসীর আর্তচিৎকারেও সেই সীমান্ত খুলিয়া দ্যায় নাই। কারণ মার্কিন-প্রভুর নিষেধ ছিলো।
৫. এতো কিছু করিয়াও এই স্বৈরাচারের আর ক্ষমতায় থাকিবার উপায় নাই। গতকাল কায়রো-- আলেকজান্দ্রিয়ায় জনতার ঢলে তাহা স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করিবার ধৈর্য্য মিসেরর জনগণের আর নাই। তাহারা মোবারকের ''কাম সেপ্টেম্বর'' নামক রোমন্টিক চলচ্চিত্র দেখিবার জন্য রাজপথে নামে নাই। তাহারা মিসরকে একজন মার্কিন-দাসের হস্ত হইতে মুক্ত করিবার জন্য রাজপথে নামিয়া আসিয়াছেন।
মিসরবাসীর গণতন্ত্রের স্বপ্ন সফল হউক।
পরম করুণাময় আমাদিগকে সহজ সরল পথে অগ্রসর হইবার তাওফিক দিন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




