আসসালামু আলাইকুম,
বাল্যকালে রূপকথায় রাক্ষস-খোক্ষসের কাহিনি শুনিতাম। বড় ভালো লাগিতো আবার ভয়ও পাইতাম। সকলেরই এই বিষয়ে অল্প-বিস্তর অভিজ্ঞতা একইরকম।
ভয় পাইলে মুরুব্বীগণ হাসিয়া স্বান্তনা দিয়া কহিতেন : উহা সত্য নহে। উহা কবেল গল্পমাত্র। আর সেইটা যে সত্যি নহে তাহা ভাবিয়া আস্বস্ত বোধ করিতাম। কিন্তু বড় হইয়া জীবন-যাপন করিতে গিয়া দেখিতে পাইতেছি সেই রাক্ষস-খোক্ষসের কাহিনি একেবারেই মিথ্যা নহে। আমাদের রাষ্ট্রে-সমাজে তাহাদের অবাধ বিচরণ চলিতেছে। আর আমরা তাহাদের ভয়ে আধমরা হইয়া রহিয়াছি।কেন আধমরা হইতেছি? সেই কথাটিই একটু সবিস্তারে বলিবার চেষ্টা করিতেছি।
২. আমাদের দেশে দরিদ্র নারীদের নারীদের কথাই ধরা যাউক। খাদ্য-শিক্ষা-চিকিৎসা-আবাসান কোনো বিষয়েই সামান্য অধিকার নাই। রাষ্ট্রও তাহাদের প্রতি বিমুখ। সমাজ বিমুখ। মানবদরদী চিকিৎসক এখন রূপকথার গল্পের মতন। পত্রকায় পাঠ করিলাম েয দেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ ব্যাপক হারে বেশি বেতনের অর্থাৎ অর্থের লোভে সরকারি চাকুরি ছাড়িয়া দিয়া বেসরকারি হাসপাতালে যোগ দিতেছেন।
আমাদের নারীবাদীগণ নারীমুক্তির কথা বলেন বটে কিন্তু গ্রামের দরিদ্র অসহায় নারীগণের কথা তাহারা ভুলিয়া যাইতে পছন্দ করেন। তাহাদের মাথায় কেবল তথাকথিত শহুরে শিক্ষিত রূপসী নারী। মিডিয়ায় নারীকে রূপবতী করিবার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। রূপ বিষয়ে চুল বিষয়ে ত্বক বিষয়ে সচেতন করিবার বিজ্ঞাপন প্রচরা করা হয়। কিন্তু অসহায় দরিদ্র নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করিবার কথা বলা হয় না। উহা কেবল সেমিনার-বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ রাখিতে পছন্দ করিয়া থাকি। েয-দেশের বেশিরভাগ নারী দরিদ্র অসহায় চিকিৎসা সেবা হইতে বঞ্চিত সেই দেশে যখন নারীকে তাহার রূপ-চর্চা বিষয়ে সচেতন করিবার জন্য মিডিয়া হইতে শুরু করিয়া কর্পোরেট পুজির দাসওয়ালাগণ উঠিয়া-পড়িয়া ছুটিতে থাকেন সেই দেশের অসহায় নারীর ভবিষ্যৎ কোথায়?
ভবিষ্যৎ অন্ধকারে।
২. উন্নত চিকিৎসা-সেবা না পাইয়া গ্রামের অসহায় নিরীহ মানুষজন তথাকথিত কবিরাজ আর হাতুড়ে ডাক্তারদের কবলে পড়িতেছে। একদিকে অপ-চিকিৎসা অন্যদিকে উন্নত চিকিৎসার নামে জনগণের পকেট কাটিয়া লওয়া---সবই সমান হারে চলিতেছে। জনগণের স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকার উদাসীন। সরকারি চিকিৎসকগণ ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যবস্থায় মগ্ন। তাহারা গ্রামের সরকারি চিকৎসালয়ে যাইতে নারাজ। গ্রামে থাকিতে তাহাদের বিস্তর আপত্তি। কিন্তু মাসে-মাসে বেতন লইতে কোনো আপত্তি নাই। অধিকাংশ সরকারি চিকিৎসকই দেখিলাম বড়-বড় শহরে থাকিতে চাহেন। তাহারা মানে কি শহরে মানুষগণকে তাহারা চিকিৎসা -সেবা দিতে পছন্দ করিয়া থাকেন?
মোটেই তাহা নয়। শহরে চিকিৎসার নামে ব্যক্তিগত-প্রাকটিস করিয়া পকেট-ভরিবার সুযোগ বেশি। সেইখানে চিকিৎসার নামে লোকদের পকেট কাটিবার অনেক রাস্তা। গ্রামে থাকিলে তো শুধু সরকারি বেতন। তাহাতে কি আর এই মহান সেবাকারীগণের সম্মান থাকিবে? কাজেই শহরে চলো।আর টাকা কামাও। এই হইতেছে আমাদের দেশের সরকারি চিকিৎসকগণের একমাত্র চিন্তা। অথচ গরিবের টাকায় তাহারা চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রায় বিনামূল্যে উচ্চতর পড়াশুনা করিয়াছেন--সেই কথাটি ভুলিয়া বসিয়া থাকেন।
সরকারও এই বিষয়ে নির্বিকার। চিকিৎসকগণও এখন সরকারপন্থী , বিরোধীদলপন্থী--এইপ্রকার নানাভাগে বিভক্ত।
অথচ তাহাদের কেহই মানবিক-পন্থী নহেন। সেবাপন্থী নহেন। এইটাই সবচাহিতে বড় দুর্ভাগ্য।
পরম করুণাময় আমাদিগকে সহজ সরল পথে অগ্রসর হইবার তাওফিক দিন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




