আসসালামু আলাইকুম,
দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলিতে নানা রকমের অন্যায্য ঘটনা ঘটিতেছে। শোকর হাজার এই যে সেই সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও হইতেছে। নানান-ধরনের প্রতিবাদ। দিনকয়েক পূর্বে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারী চাঁদ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে অগ্নি-সংযোগের ন্যায় গুরুতর অপরাধের ঘটনা ঘটিলো। যাহা কিনা সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীগণের বুকের পাঁজরা ভাঙিয়া দিয়াছে। কেহ-কেহ কহিয়াছেন :
‘আমরা আমাদের কলেজের ছাত্রাবাসকে নিজের বাসার মতো মনে করি। কেউ তাঁর নিজের বাসা পুড়িয়ে দিতে পারে না। আমরা নিশ্চিত এমসি কলেজে অধ্যয়নরত কোনো ছাত্র ছাত্রাবাসে আগুন দিতে পারে না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা বহিরাগত। ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী। শতবর্ষী এই এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়েনি, পুড়েছে আমাদের হূদয়।’ (প্রথম আলো, ১৩.০৭.২০১২)
সত্য-সত্য উহা একটি হৃদয়-বিদারক ঘটনা। কিন্তু সেইসঙ্গে উহাও মনে রাখিতে হইবে যে এইটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা নহে। উহা সেইখানকার আবাসিক ছাত্রগণের গাফিলতিতে ঘটে নাই কিংবা কর্তৃপক্ষের অনিচ্ছাকৃত দায়িত্বহীনতার কারণেও এই আগুন লাগে নাই। প্রশ্ন হইতেছে : তাহা হইলে এই আগুন কিরূপে একটি ছাত্রাবাসের ৪২ টি কক্ষকে বিনষ্ট করিলো? তাহা ছাই-ভস্মে পরিণত হইলো?
খবরে এইটাও পাঠ করিয়া জানিয়াছি আমাদের শিক্ষামন্ত্রী এই ছাত্রবাসের বেহাল-দশা দেখিয়া ক্রন্দন করিয়াছেন। তিনি কহিয়াছেন :
‘প্রথম ব্লকের এই কক্ষেই থাকতাম আমি। আমার পবিত্র একটি আবেগ এখানে জমা আছে। সেই আবেগ পুড়ে গেছে। এমন ভয়াবহ অবস্থা হবে, তা আমি ভাবতেও পারিনি।’
কমিউনিস্টগণের মনে দয়া-মায়া একটু বেশী থাকিবার কথা। তিনি তো এখন আর কমিউনিস্ট নহেন। দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থাকে যুগোপোযোগী করিবার প্রতিজ্ঞা লইয়া তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগে যেগদান করিয়াছেন। শুধুমাত্র ইহকালে যিনি বিশ্বাসী তাহার পক্ষে এই রকমের লম্ফন-উল্লম্ফন ব্যতিক্রমী কিছু নহে। অতীতেও আমরা নানান প্রকারের নমুনা দেখিয়াছি। ভবিষ্যতেও আরো দেখিবো বলিয়া আশা রাখিতেছি।
এখন কথা হইতেছে যে শিক্ষামন্ত্রী ক্রন্দন করিবেন কেন? বুঝিলাম তাহার দয়ার শরীর। মনের আবেগ তিনি নিয়ন্ত্রণে রাখিতে পারেন নাই। মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখিতে পারেন নাই বলিয়া কি তিনি তাহার দলের ছাত্র-সংগঠনকেও নিয়ন্ত্রণে রাখিতে অক্ষম? এই অক্ষমতা ঢাকিবার জন্যই কি এইরকম ক্রন্দন?
আমরা ন্যয্য-বিচার চাহিতেছি।
অনেকেই কহিবেন, কেন তদন্তের পূর্বেই আমি এই ঘটনার জন্য সরকারী-ছাত্র-সংগঠনকে দায়ী করিলাম। উহা কি ন্যায্য হইয়াছে?
এই বিষয়ে অনেকেই নানা-কথা কহিতে শুরু করিয়াছেন। আগুনকে চাপা দেওয়া যেমন সহজ নহে তেমনই সত্যকে লুকাইয়া রাখা কঠিন। ওই সরকারী ছাত্র-সংগঠনের কোনো কোনো নেতা কহিতে শুরু করিয়াছেন কাহারা এই জঘন্য ঘটনার জন্য দায়ী? তাহা পরও ধরিয়া লইতেছি যে এই ঘটনা সেই প্রতিষ্ঠানের সরকারী ছাত্র-সংঘটন ঘটায় নাই। তাহা হইলে কাহারা ঘটাইলো সেই বিষয়টি খোলাসা করা হউক। আমরা দ্রুত তদন্ত-রিপোর্টের জনঃ অপেক্ষা করিতেছি। শুধু রিপোর্ট প্রকাশ করিলেই চলিবে না। এই অপরাধের শাস্তিও দাবী করিতেছি।
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র-এলাকায় যাহারা আগুন দিয়া থাকে, তাহারা হালাকু খানের বংশধর। দৃষ্টান্ত-সহকারে উহাদের নির্মূল করা ভিন্ন গত্যন্তর নাই।
আমরা শিক্ষামন্ত্রীর ক্রন্দন দেখিতে চাহি না। ইনছাফের দাবী করিতেছি। ন্যায় বিচারের দাবী করিতেছি। একজন অপরাধীও যেন আইনের হাত হইতে রেহাই না পায়।
পরম করুণাময় আমাদিগকে শান্তির পথে পরিচালিত করুন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




