রি-পোষ্টের জন্য প্রথমে দুঃখিত।
পরীক্ষা শেষ হইছে গত বছর মানে ২০১০ সালে ২১ ডিসেম্বর। এখন টানা ৪০ দিন ক্যাম্পাস বন্ধ কি যে করি। দেশেও গেলাম না। যাইহোক ২১ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ঘুমের উপর ছিলাম। ঘুমাইতে ঘুমাইতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম, এই কয়েকদিন ১৬ ঘন্টার নিচে ঘুমাই নাই। পরে নিজের কাছেই বিরক্ত লাগতে শুরু করল। অনেক দিন ধরে একটা পার্ট টাইম কাজের জন্য চেষ্টা করছিলাম এখানে। অবশেষে হয়ে গেল ৩০ তারিখে ট্রেনিং আর ৩১ তারিখ এ জয়েন। স্যালারী একেবারে খারাপ না। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে ছাত্ররা ফুল টাইম ও করতে পারে। যাই হোক কাজটা কি আর কোথায় কাজ কিরকম কাজ কিছুই ভালভাবে জানতাম না।
৩০ তারিখের ট্রেনিং থেকে অনেক কিছু জানলাম, বুঝলাম এবং শিখলাম। অনেক হলিউড মুভিতে দেখেছি নায়ক ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে মিলিয়ন ডলার জিতে নিয়ে যাচ্ছে। সেইCasino তে আমার জব। এশিয়াতে শুধুমাত্র সিংগাপুরেই ক্যাসিনো আছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বড় বড় গ্যাম্বেলাররা আসে এখানে শুধুমাত্র এই জুয়া খেলার জন্য। যাইহোক ৩১ তারিখে জয়েন করলাম এখানে।আমার সাথে ২ ইন্ডিয়ান বন্ধু ছিল। আমরা একসাথেই জয়েন করলাম ওখানে।
প্রথম দিন কাজ শেষ করে যখন সাইন আউট করতে গেলাম। তখন আমাদের ম্যানেজার রিকুয়েষ্ট করল আজ বছরের শেষ দিন অনেক গ্যাম্বেলারের ভীড় হবে আজ কিন্তু সেই অনুপাতে আজ আমাদের লোক কম তাই তোমরা যদি পার আজ ওভার টাইম কর আরো বেশী পে করব। কি আর করা রাজি হয়ে গেলাম।কাজ শুরু হলো আমার আমার ডিউটি পড়ছে লেডিস ক্লাবে। আমি তো প্রথম থ বনে গেলাম ভিতরের পরিবেশ দেশে। মানুষের কত টাকা থাকতে! কত টাকা আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তির! টাকা কি জিনিস আমি প্রথম দিন থেকেই বুঝে গেলাম এখানে।
প্রথম কয়েক দিন আমি দিনে ডিউটি করেছি তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল জুয়ার আসরের গ্যাম্বেলারদের বিডিং দেখে। ৫০০, ১০০০, ২০০০ ডলার বিড করছে। এক মিনিটের ভিতর সে জিতছে অথবা হারছে এতে তার কোন মাথা ব্যাথা নাই। হারলে অথবা জিতলে তাদের মুখের অবয়বের কোন পরিবর্তন আমার তেমন চোখে পড়ে নাই। যাই হোক দিনে একটু বেশী ক্লায়েন্টস মানে গ্যাম্বেলাররা আসে। ৩ দিন পর তারা আমাকে বলল তুমি চাইলে লাইট শিফট করতে পার। আমি রাজি হয়ে গেলাম ভাবলাম রাতে মনে হয় একটু কষ্ট কম হবে। রাত ১২টা থেকে সকাল ৮ টা আমার ডিউটি। রাত ৩ টা পর্যন্ত মুটামুটি ভীড় থাকে। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিস্ময় মনে হয় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল শেষ রাতের দিকে। এই সময় আসে বিশ্বের বড় বড় গ্যাম্বেলাররা সাধারনত। দেখলাম ১০০০০ ডলার পর্যন্ত তারা বিট করছে এখানে হাসিমুখেই হয় জিতছে নয় হারছে। আবার ধরছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এখানে যারা খেলতে আছে তার ৭০ ভাগ নারী। তাদের বয়স ১৬-২৫ না হলে ৭০-৯০ বছর তবে বেশীর ভাগের বয়স ৭০-৯০ বছর। চোখে দেখে না ভল করে কিন্তু গেম খেলেই যাচ্ছে।
আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে এতো টাকা তারা পায় কই! রাতভর কাজ করে আমরা হয়তো ৮০ ডলার পাচ্ছি আর তারা মিনিটেই ১০০০০ ডলার জিতছে! বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করার সুবাদে আমি দেখেছিলাম টাকা অনেক অনেক টাকা। যা ছিল আমার আপনার বা দেশের সবার।কিন্তু আমি টাকা দেখেছি এখানে। ও আচ্ছা টাকা নয় ডলার। সকালের দিকে যখন সিকুরিটিরা এসে সমস্ত ভল্ট কালেক্ট করে আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। এতো ডলার যে হতে পারে তা আমি কখনো কল্পনাতেই আনতে পারি নাই।
এবার শুনুন ক্যাসিনোর বিজিনেস পলিসি। আপনি এখানে আসলেই আপনাকে ২০ ডলার দিবে এমনিতেই। আপনি ইচ্ছা করলে এই ২০ ডলার নিয়ে চলে যেতে পারেন বাসায়। আপনার প্রথম মনে হতে পারে ২০ ডলার তো এমনিতেই পেলাম এটা ধরে দেখি কি হয়। তার মানে আপনি নিজের পকেট থেকে এবার শুরু করবেন খেলা। আবার যখন গ্যাম্বেলাররা মনযোগ দিয়ে গেম খেলে তাদের মনযোগ যেন নষ্ট না হয় সেই দিকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয় কেন জানেন! যাতে করে তারা আরো বেশি বিডিং করে।
দোয়া করেন আমি যেন কখনো লোভে না পড়ি। অবশ্য আমাদের খেলার সুযোগও তেমন নাই ওখানে। সবচেয়ে বড় কথা টাকা নাই। থকলেও কখনো যেন ওই দিকে না যাই। জব করি সময় কাটাই। ক্লাস শুরু হলে বাদ দিয়ে দিব। ভিতরে হাজার হাজার সিসি ক্যামেরা ফিট করা যার জন্য কোন ছবি দিতে পারলাম না। নেট থেকে কিছু ছবি শেয়ার করলাম।
*************আমি যাষ্ট আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কেউ আমাকে দয়া করে ভুল বুঝবেন না।******************

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


