somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার SSC পরীক্ষা: ১৯৯৯

০২ রা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার স্কুল থেকে বরাবর ভাল রেজাল্ট হত। আমি ১৯৯৯ ব্যাচের SSC পরীক্ষার্থী ছিলাম। তখন (নৈর্ব্যাক্তিক) ছিল আবার কিছু অংশ লিখিত ছিল। যা হোক আমার প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শেষেই সব বই পড়া শেষ। তারপর টেস্ট পেপার নিয়ে ঘাটাঘাটি। আব্বা বিশাল মোটা একটা বই কিনে এনে দিল। সানরাইজ না কি যেন এক প্রকশনীর। সব বোর্ডের প্রশ্ন পত্র, সাজেশন আবার ব্যতিক্রমী MCQ প্রশ্ন।

প্রিটেস্ট আর টেস্টের আগেই আমার সব পড়া শেষ। ১১টা সাবজেক্টের যেখান থেকেই ধরা হোক, আমি বলতে পারি, অংক জ্যামিতি সল্ভ করতে পারি। এত এত ইক্সারসাইজ প্রাকটিস করেছিলাম যে, যে কোন ধরনের জ্যামিতি বা বীজগনিত নিমিশেই সল্ভ করতে পারতাম। আমার আলাদা নোট ছিল, খুবই সর্টকাট। তবুও যে কেউ বুঝতে পারবে এমনভাবে লেখা।

আমার মনে আছে, আমি কাগজ জোড়া দিয়ে দিয়ে ৫ফুট বাই ৩ফুটের একটা দেয়ালিকা বানিয়েছিলাম, MCQ এর জন্যে। সব কবির নাম, জন্ম তারিখ, মৃত্যু তারিখ, পুরষ্কার বা পদবী, প্রকাশিত কিছু বিখ্যাত বই বা উপন্যাসের নাম... ইত্যাদি ইত্যাদি। কারন কবিদের জন্ম বৃত্তান্ত আমার মনে থাকত না।

রসায়নের জন্যে কিছু নোট বানিয়েছিলাম। টেস্টেও ভাল করলাম যদিও আমার শরীর ভীষণ খারাপ ছিল। টেস্টের আগে থেকে আমার পেট ব্যাথা। বমি করতাম, কিছু খেলেই পেট ব্যাথা। আমি খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিলাম। ৮ম থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত আমি প্রতি বেলায়, মোটামুটি ৪ প্লেট ভাত খেতাম। এত বেশি খেতাম বলে, সবার সাথে খেতে বসতে লজ্জা লাগত। আমি খেতে বসতাম সবার শেষে। সেই আমি এক প্লেট বা আধা প্লেট ভাত খেতাম।

ফুফু মায়াবীকে নিয়ে প্রি টেস্টের পর হঠাৎ একদিন আমাদের বাসায় আসল। আমি তো ভীষণ অবাক। এমনি বেড়াতে আসছে। যাবার সময় শুধু বলল, তোমার স্কুলে টেস্টের প্রশ্নপত্র আর সাজেশনগুলা হাতে পাওয়া মাত্র দিবা। সেদিন কিন্তু মায়াবী থ্রি পিস পড়েছিল। ড্রেসের কালার মনে নেই। মায়াবীর মায়াকারা হাসি সব সময় মুখে লেগেই থাকত। সে মায়ায় আমি আজও পাগল।

টেস্টের পর থেকে রাত দিন বমি আর পেট ব্যথা। ডাক্তার অসুখ ধরতে পারে না। আমি মোটামুটি শয্যাশায়ী। শুয়ে শুয়ে বুকের উপর বই রেখে পড়ার চেষ্টা করি। সেই বই হাত থেকে পড়ে যায়, এতোটাই দুর্বল। শেষে পড়াশোনা বন্ধ।

এক্সরে তে কিছু নেই। আলট্রাসোনোগ্রাফিতে কিছু নেই। শুধু পেটে হাত দিলে এক জায়গায় শক্ত কিছু অনুভব হয়। ডান পাশে হওয়ায় এপেডিসাইটিকস হয়েছে, ভাবল ডাক্তার। অপারেশান হল পরীক্ষার ৯দিন আগে। দেখা গেল এপেনডিক্স ঠিক আছে। আমার ডিউডেনামে বড় সড় একটা টিউমার। ৩০ মিনিটের আপারেশন ৬ঘন্টায় গিয়ে ঠেকল।

আমি ফেব্রুয়ারীর ২৭তারিখ ক্লিনিক (নার্সিং হোম) থেকে ৬দিন পর বাসায় ফিরলাম। তখনও আমার পেটে ২২টা সেলাই। সে সেলাই নিয়ে আমি ৩মার্চ SSC পরীক্ষা দিতে গেলাম। আমার এমন অবস্থা যে রিক্সায় বসে যেতেও কষ্ট হচ্ছিল, মাথা ঘুরছিল।

আব্বা মা নানী দাদী সবাই বলছিল, এ বছর মিস দাও কিছু হবে না। আগে সুস্থ্য হও। সামনের বার দিও। আমি জোর করলাম। আমার পক্ষে শুধু আব্বাই রাজি হল। বলল, দু একটা পরীক্ষা দিক। অভিজ্ঞতা হোক। সামনের বার ভাল সাহস পাবে।

যাই হোক, ১ম পরীক্ষা দিলাম। হাত অনেক ভারি হয়ে গেছে। সব উত্তর জানা স্বত্বেও ফুল এ্যানসার করতে পারলাম না। ১০ মার্কের মত বাদ পড়ল। বাসায় ফিরে পেটে জালাপোড়া হচ্ছিল। ব্যান্ডেজ খুলে দেখা গেল, আমার ২টা সেলাই ফেটে গেছে, মাংস টাইপের কিছু একটা চাপে পড়ে বের হয়ে এসেছে। পরের দিন থেকে আমার হাতের রগ টান ধরল। কারন ডান হাতেই আমাকে ৯টা স্যালাইন দেয়া হয়েছিল। ক্যানোলা দিয়ে সব মেডিসিন ইনজেক্ট করেছিল। মা হেরিকেনে কাপড় গরম করে আমার হাতে দিন রাত ছ্যাক দিচ্ছিল। ছ্যাক দিলে কিছুটা আরাম হয়।

এভাবে কোন প্রিপারেশন ছাড়া একটার পর একটা পরীক্ষা দিয়ে গেলাম। লেখা আমার জন্যে চ্যালেন্জিং ছিল। একটা হাত পুরো সোজা করে শুধু ৩টা আঙ্গুল নড়িয়ে কলম চালানো তাও পুরো ৩ ঘন্টা...এখন ভাবি, কিভাবে সম্ভব?

আমার দাদা নেই। দাদী ফুফু রেজাল্টের আগে আগে বলল, রেজাল্ট যাই হোক মন খারাপের দরকার নাই। আল্লায় দিলে সামনের বার ভাল করে দিও। অসুখ বিসুখের ওপর তো আর কারও হাত নেই। খালারাও তাই বলল।

১৭জুন১৯৯৯ রেজাল্ট আউট হল। আব্বা সহ সবাই ধরেই নিয়েছিল, আমি ফেল করব। তাই রেজাল্টের দিন আব্বা অফিসে মনোযোগ দিয়েছিল। অফিসের পিয়ন বার বার বলছিল, স্যার আপনার ছেলেটার রেজাল্ট দেখবেন না? আব্বা একসময় রাজি হয়ে পিয়ন কে পাঠাল। পিয়নের নাম ছিল, কাইয়ূম। কাইয়ূম কাকা গিলে বলল, স্যার অনেক ভিড়, ঠেলাঠেলি। আমি দেখিনি, একজন কে জিজ্ঞেস করলে বলল, ঐ রোল নং পাশ আছে।

আব্বা পাশের খবর পেয়ে অফিস রেখে স্কুলে যায়। বোর্ডের থার্ড ডিভিশনের চার্টে আব্বা আমার রোল খুঁজতে থাকে। পরে সেকেন্ড ডিভিশনেরটা। দু বার খুজে কোথাও না পেয়ে মন খারাপ করে। পরে ভিড় কমলে ফার্স্ট ডিভিশন, সবশেষে স্টার মার্কের চার্ট। সম্বলিত তালিকাও ছিল। আমার রেজিট্রেশন নাম্বারের পাশে র্স্টার মার্ক দেখে তার চেহারা কেমন হয়েছিল, অথবা বুকটা খুশিতে কতটা ভরে গিয়েছিল জানি না, বাসায় কাইয়ূম কাকা সহ ২ কেজি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হাজির। শহরে নাকি সব মিষ্টির দোকান ফাকা। দেরিতে যাওয়াতে বেশি মিষ্টি পায়নি।

বাসায় ফেরার পথে যার যার সাথে দেখা তাকেই নাকি বলেছে, আমার ছেলে র্স্টার মার্ক পেয়েছে। বাসায় ফিরতে ফিরতে মোটামুটি মিষ্টির প্যাকেট ফাকা। সবাই খুশি। কিন্তু আমার মনটা অতটা ভাল লাগছিল না। আমার প্রিপারেশন অনেক ভাল ছিল। ৩ মাস না পড়ে, হাতের সমস্যা নিয়ে পরীক্ষা দিলাম, না হলে হয়ত বোর্ড স্ট্যান্ড করতাম।

দুপুর ২টায় বাসা থেকে বের হয়ে নিজের চোখে রেজাল্ট দেখলাম। আমি তখনও ঠিকমত হাটতে পারতাম না। পেটে খিল ধরত, হাফিয়ে যেতাম একটুতেই। একে একে সব বন্ধুদের রেজাল্ট দেখলাম। বুকটা মুচড়ে গেল। যারা আমার চেয়ে খারাপ স্ট্যুডেন্ট তারাও আমার মত রেজাল্ট করেছে, সেটা দেখে।

ভাল লাগল যে, সেবার আমার স্কুল থেকে কেউ বোর্ড স্ট্যান্ড করেনি। আমিও না। হা হা হা...

কপালকুন্ড বলে কথা...
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×