somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের কিছু আজাব নামা...পর্ব-৬ ( সিদ্ধান্ত পরিবর্তন She is my life partner....nothings els.)

২৪ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ্যপলো থেকে ফেরার পর আমার এমনিতেই মুড খারাপ.... আর যাই হোক পাবলিকের সামনে বিনা কারনে চড় থাপ্পর খাওয়া বরদাস্ত করা যায় না। তাও আবার মাইয়া মানুষের হাতে...

দুপুরে আবার ফুন দিল জিগাইল আমি খাইছি কি না? কইল দুপুরের খাওয়া যেহেতু হয়েছে তাহলে এখন ঘুমাবা, বিকালে উঠে শুধু মাত্র ছাদে ঘুরতে যাবা... বাহিরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে যাবা না....
আমি মনে মনে কইলাম, তুমার লগে আমার আড্ডা মারা চিরজনমের লাইগা শেষ..... আর কয়টা দিন অপেক্ষা কর....

বিকালে দেখি আবার ফুন দিছে জিগাইল... কি করতাছি? কইলাম বাসায় বইস্যা টিভি দেখি... কইল এইটা ঠিক না, তোমার এখন মন খুব একটা ভাল না, সো একটু বাহিরের আলো বাতাসের দরকার আছে... আমি যেন একটু ছাদে যাই।
কইলাম আমার ছাদে যাওনের অভ্যাস নাই.... একটু খোচা মাইরা কইল ‘তুমি তো ছোটবেলা থেকেই ভাল, ছাদে গিয়া কখনো টাংকি মারো না.... সো আজকে একটু ছাদে যাও... তোমাকে টাংকি মারার পারমিশন দিলাম....;)

জোর কইরা ছাদে পাঠাইল.... কইল ছাদে মোবাইলটা নিয়া যাবা.... আমি তোমার লগে কথা কমু... কি আর করা ছাদে গেলাম... ওই খানে নানান কথা... আমার কি খাইতে মনে চায়, রাতে কি দিয়া খামু... আমি কইলাম আমি তো বাজার করি নাই.. আর রান্নাও করি নাই সো জানি না রাতে কি রান্না হইব।

জিগাইল সাকালে কি দিয়া নাস্তা করুম... কইলাম তুমি তো জানই সাকালে আমার বাসায় কুনু কিছুই তৌরি হয় না। হোটেল থেইক্যা ভাজি পরটা বা রুটি আসে.... কালে ভদ্রে কখনো সকালের নাস্তা তৌরি হয়।
তবে ডাক্তার এখন আমারে একটা চার্ট কইরা দিছে সেইটা মত খাইতে হইব....

কইল ডাক্তার সকালে কি দিয়া নাস্তা করতে বলেছে? কইলাম.. সকালের নাস্তা হিসাবে কনফ্লাক্স বা পাউরুটি জেলি ছাড়া বা পায়েস বা নরম জাও খাইতে কইছে। সারা দিনের একটা চাট কইরা দিছে সেই মত সকালের নাস্তা ৮টায় করতে হইব তারপর ১০ টায় কিছু হালকা খাওন আবার ১২ টায় কিচু ইত্যদি... ২ ঘনটা পর পর হাবি জাবি.. তরিকা মাইন্যা চলতে কইছে...

কইল তুমার চাটটা আমারে একটু কষ্ট কইরা পাঠাইবা... আমি দেখব... কইলাম তুমি কি ডাক্তার ওইটাতে কি ভূল আছে খুইজ্যা বাহির কারবা? কইল এত বেশী কথা কেন বল.. যা বলছি তাই করবা.... মনে মনে কইলাম জ্বি সবই ফাইনাল করার ব্যবস্থা করতাছি... আর কয়টাদিন অপেক্ষা করেন....

সন্ধার সময় কইল কই মেইল কইরা খাবারের লিষ্ট এর স্ক্যান কপি পাঠাইলা না.. তারা তারি পাঠাও....
কি আর করা খাওনের চাট পাঠাইলাম.....
রাতের বেলা শুইয়া শুইয়া টিভি দেখি আর মনে মনে ভাবি আমি কি পাগল হইয়া গেলাম... নাইলে যে মাইয়া আমরে এত গুলা মানুষের সামনে চড় মাড়ছে তার কথা মত ক্যান খাবারের লিষ্ট মেইল করলাম... তার কথা মত ক্যান কাম কাজ করতাছি.... আমি কি রোবট হইযা গেছি... না আমার ‘অরদিশা’ লাগছে... না আমি যাদু হইয়া গেছি.... বহুত কিছু চিন্তা করতাছি.. মাগার কিচুই বুজতাছি না... মনে হইল আসলেই আমি অসুস্থ না হইলে ক্যান এত উল্টা পাল্টা কথা ভাবতাছি আর করতাছি....
যার লগে সম্পকর্ শেষ করার সাদ্ধান্ত নিছি তারে এত দাম দেওনের কি আছে?.....


ভাবলাম দোস্ত বন্ধু রবিনের লগে একটু আলাপ করি... কিন্তু সমস্যা হইল.. মাগার ছড় থাপ্পর খাওনের কথা ক্যামনে কই....

মাথাটা খারাপ হইয়া গেছে... কিছুই বুঝতাছি না... লাষ্টে না পাইরা রবিনরে ফুন দিলাম... চড় খাওনের কথা কইতে পারলাম না....কইলাম দোষ্ত ধরা তো খাইছি... খুবই মাইন্ড করছিল... তারপর আমরে শত শত পাবলিকের সামেনে ইতর ছোটলোক কইয়া গালা গালি করছে...... দোস্ত আমার মান সম্মান বইল্যা কিছুই রাখে নাই.... ওই আমারে কুনুদিনই ভাল বাসে নাই.... দিলে যদি একটু ভালবাসা থাকতো তাইলে এমনে পাবলিকের সামনে আমারে গালাগালি করতে পারত?.... দোন্তো আমি সিদ্ধান্ত নিছি ওর লগে আর কুনু সম্পকর্ রাখুম না... রবিন অনেক কিছু বুঝাইল... কইল এইগুরা হইল এক ধরনের ভালবাসা...কইলাম গুল্লিমারি ভালবাসার.... মাগার কুনু কিছুই আমি বুঝি না.... কথা ফাইনাল সম্পর্ক শেষ......

রাইতে ১২ টায় ফুন দিল জিগাইল খাইছি কি না, কইল এখন থেকে রাত জেগে আর কোন গল্প হবে না.... সো তারা তারি ঘুমাইয়া পড়.... রাতে মোবাইল বন্ধ রাখবা... কেউ যেন ডিষ্টার্ব না করতে পারে..... কোন জরুরী ফোন আসার দরকার নাই.....
এই কথা কইয়াই ... হু হু কইরা কানতে থাকল.... সে কি কান্দন.... আমি জিগাইলাম তুমি কান্দ ক্যান? অসুখ তো হইছে আমার ... তোমার কি... (চড় খাওয়া) মনের রাগ গুলা ঝাড়া শুরু করলাম....
কানতে কানতে কইল ... ‘তোমার অসুখ মানে .... এইটা আমরও অসুখ....’ এই কথা কইয়া কান্দন বাইর গেল....

মর জ্বালা কই চড় খাওনের জন্য রাগ দেখামু না.... উল্টা কান্দদ শুনা লাগতাছে....

আমি যতই শান্তনা দেই কান্দদ ততই বাড়ে.... আস্তে আস্তে কান্দদ দেখি চিক্কর পাইরা কানতাছে.... আর কইতাছে তুমি না থাকলে আমি কি নিয়া বাচব... তুমি বেচে না থাকলে আমিও মরে যাব...... আমি ও কাল থেকে ভার্সিটি যাব না... আর পড়া লেখা করে কি হবে.... কার জন্য পড়া লেখা কারব... তুমি তারাতারি আমাকে বিয়া কর....

হয় হায় কয় কি... আমি মইরা যামু আর ওই কিনা একটা মরা পুলারে বিয়া করব? মাথা ঠিক আছে তো.....

কইলাম... আমি যদি মারাই যাই তাইলে আমাকে বিয়া করে তুমার লাইফটা কেন নষ্ট করবা?
ক্ইল... যাকে ভালবাসি তাকে বিয়ে করাটাই বড় সাথকতা, এতে লাইফ নষ্ট হল কোথায়। এতে লাইফ একটা পরিপূনৃতা পাবে..... তুমি আমাকে একটা বেবী দিবা সেটা নিয়ে আমি সারাজীবন বেচে থাকব...... অই বেবীটাই হবে তুমি... তুমি না থাকলেও তাকে নিয়ে আমি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারব....

শত কষ্টের মধ্যেও একটু ফান কইরা কইলাম... ওহ... শুধু আমার একটা বেবী নেওয়ার জন্য তুমি বিয়া করতে চাও... আমাকে চাও না... তুমার কাছে আমার থেকে বেবীটা অনেক বড়..... :) ঠিক আছে তাইল কাইল আইস তুমারে একটা বেবী দেওনের ব্যবসাস্থা কইরা দিমু.... এমন কুপানু দিমু এক বারেই বেবী হইয়া যাইব.... B-)

শত ক্ন্নার মাঝেও হাইস্যা দিল... কইল....'শয়তান মনে শুধু কুমতলব... বিয়া না করে এই সব করা যাবে না... ওই চিন্তা বাদ দেন.... আপনারা ছেলেরা শুধু অই একটা ধান্ধাতেই থাকেন..... '
আরে তুমার বেবীটা তো তুমার মতই হবে... সো বেবীটা অনেক কিউট হবে.... আহ.. সারা দিন আমি কোলে নিয়ে রাখব.... জান বেবীটাকে আমি অনেক অনেক আদর করব.... আচ্ছা বেবীটার নাম কি রাখব... নাম কিন্তু আমি রাখব....আমর পছন্দে হবে ডাক নাম... আর তুমি রাখবা আসল নাম....




(ছবির কিউট বাচ্চাটা আমাদের না, এক বন্ধুর বাচ্চা ধার নিয়া পোজ দিছিলাম .... ;) )

ইত্যাদি গল্প করতে করেত হটাৎ কইল... “আরে তোমাকে না বলছি তারাতারি ঘুমাতে... এখনো জেগে আছো ক্যান?” মনে মনে কইলাম.. আমার ঘুমটা কেডা নষ্ট করতাছে?

এর পর কইল.. সকাল ৭টায় যেন উঠে একটু হাটাহাটি করি তার পর নাস্তা করার প্রস্ততি নেই...
ফোনটা রাখার আগে কইল “একটা কথা সকালে আমি ফোন না দেওয়া পযন্ত নাস্তা করবা না, মনে যেন থাকে..”

ফোনটা রাইখ্যা হটাৎ মনে পড়ল... ঘটনা কি... ফোন না পাওয়া পযন্র্তত নাস্তা না করতে কইল ক্যান? মাথা মন্ডু কিছুই বুঝলাম না.... ঘুমাইয়া পড়লাম....

সকাল ৭টায় দেখি ফোন দিছে, কইল তারাতারি ঘুম থেকে উঠো। উঠে হাত মুখ ধোও... তার পর আমি নেক্টস ফুন না দেওয়া পযন্ত নাস্তা করবা না।
মাথা মন্ডু কিছুই বুজলাম না.... নাস্তা না করতে কইল ক্যান?

৭.৩০ এর দিকে দেখি আবার ফুন দিছে কইল.. কি কর.. কইলাম হাত মুখ ধুইয়া বইস্যা আছি... একটু পর নাস্তা করব....
কইল এক কাজ কর.... বাসার নিচে নামো...
মানে !
মানে হল আমি এখন তোমার বাসার নিচে... সো একটু নিচে নামো...
আমি কইলাম এত সকালে কি করতে আসছ?
কইল নামতে বলছি তারা তারি নিচে নামো... এত কথা বল কেন?

আমার বিশ্বাস হইতে ছিল না... নিচে নাইম্যা দেখি সত্যিই বাসার সামনে গাড়ীতে বইস্যা আছে....
আমারে দেইখ্যা দাত বাহির কইরা কইল 'হ্যালো সোনা মানিক... তারা তারি আসো....'
বাসার দাড়োয়ানের সামনে আমারে 'সোনা মানিক' কইছে শুইন্যা লজ্জা লাগল... আবার রাগও লাগল....
কাছে গিয়া জিগাইলাম... ঘটনা কি? এত সকালে... ?

হটাৎ ডর লাগল... অহন তো আবার কইব না... চল বিয়া করি... বাসার সামনে যদি সিন ক্রিয়েট করে....
ওর তো মাথা কুনু কালেই ঠিক ছিল না... যখন যা মনে লয় তাই করতে শুরু করে.... আবার নতুন কুন যন্তনা শুরু করব.... মনে মনে ঠিক করলাম আইজ একটা শিক্ষা দিমু.... এমন শিক্ষা দিমু যে, জনমের শিক্ষা হইয়া যাইব... পাগলামী ছগলামী বহুত সহ্য করছি... পাগলামী ছুটাইয়া দিমু...... আর না... আইজকা বুজামু কত ধানে কত চাইল, আর কত গমে কত আটা...

মিষ্টি কইরা কইল.. গাড়িতে উঠো.... জিগাইলাম কোথায় যাবা? আমি তো এখনো নাষ্তা করি নাই।

খুব রস লাগাইয়া কইল.. “সোনামানিক উঠো না... দুরে কোথাও নিয়া যাব না... এই তো একটু সামনে...”

গাড়িতে উইঠ্যা বসলাম.. কিমুন যানি রহস্য রহস্য লাগতাছে..... আমার চোখ মুক দেইখ্যা কইল... রাতে ভাল ঘুম হইছে?
কইলাম হ্যা...
তারপর কইল.... শুনো মানিক আমি তোমার জন্য সকালের নাস্তা নিয়া আসছি... চল দুইজন এক সাথে নাস্তা করব....
নাস্তা নিয়া আসচো মানে?
হ্যা তোমার জন্য আমি নিজের হাতে একটা নাস্তা বানাইয়া আনছি.... তোমাকে সেইটা খেতে হবে... এবং আমার সামনে...

আমি কইলাম... আমার বাসায় নাস্তা রেডী করা আছে....

এই বার গরম হইয়া উঠল... কইল “বাসায় তোমার নাস্তা তৈরি আছে সেইটা আমি তো জানি... এইটা নতুন আর কি”

তারপর বলল এখন বল কোথায় গিয়া আমরা বসব.... বসার ভাল জায়গা কোথায় আছে? যেখানে আমারা দুজন বসে নাস্তা করতে পরব।

মহা চিন্তায় পইরা গেলাম... এত সকালে তো কুনু ফাষ্ট ফুড খোলা থাকে না.. আবার কুনু হোটেলেও আমাদের বাহিরের নাস্তা খাইতে দিব না....

শেষ মেষ ধানমন্ডি লেকের পাড়ে বইস্যা খাওনের প্লান করলাম..... কইলাম জীবনেও কুনু দিল লেকের পাড়ে নাস্তা করি নাই... মানুষও করে না ... আজ আমরা কারুম..
ধানমন্ডি লেকের পাড়ে ভাল একটা জায়গা খুজ করতে লাগলাম... যেখানে একটু নিরিবিলি দুইজন নাস্তা করুম... মাগার কোন জাইগাই খুইজ্যা পাইতেছি না। আর এত সকালে কোন পুলাপাইন ও লেকের পাড়ে থাকে না... শুধু আমাদের দুইজন লেকের পাড়ে বসা কেমন জানি আবাইল্যা কামের মত লাগে...

অনেক খুজার পর ধানমন্ডি ৩২ নং এর শেখ মজিবের বাড়ির সামনের লেকের বিপরিত দিকে একটা সুন্দর জায়গা পাইলাম.. যেখানে চউড়া ইটের ইউ সেপ এর বসার এটা জায়গা আছে। সেখানে বসলাম।

বসার পর কইল.. তুমি বস আমি গাড়ি থেকে খাবার নিয়া আসি.... আমিও সাথে গেলাম...
গিয়া দেখি গাড়ির ভিতর থেকে দুনিয়ার হটবক্স আর ব্যাগ বাহির করল।

ওইগুলা নিয়া লেকের পাড়ে বসলাম। তারপর একটা একটা কইরা বক্স খুলতাছে... হায় হয় এ তো দেখি মহা হুলুস্তুল ব্যপার....
একটা বক্স এ পায়েস... একটা তে সেমাই...
সেমাইটা বাহির কইরা কইল, "এই সেমাইটা আমার নিজের হাতে রান্না করছি... শুধু তোমার জন্য... বাসার কাউকে এইটা খেতে দিব না... সবটুকু নিয়া আসছি...."

একটাতে পাওরুটি...একটাতে ডিম পোছ করা... একটা ছোট ফ্লাক্সে গরম দুধ... একটা কর্ণফ্লেক্স এর প্যাকেট বাহির করল.... লগে কিছু সুগার ব্যাগ.... একটা ছোট বক্স এ ৪/৫টা সন্দেশ.... একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল.. দুইটা গ্লাস.. একটা প্লেট... একটা টিস্যু বক্স.... দুনিয়ার হাবিজাবি...

এত্ত কিছু দেইখ্যা জিগাইলাম.. আর বাকি কি রাখলা? চা টা বাদা পড়ল ক্যান?
দাত বাহির কইরা হাইস্যা দিয়া কইল... আরে আমি এত মন ভূলা না.. এই দেখ... দেখি আর একটা ফ্লাক্স বাহির করছে ওইটাতে নাকি গরম পানি আর সাথে টি ব্যাগ আছে... কইল.. তোমার তো এখন দুধ চা খাওয়া নিষেধ.. সো লেবু চা খাবা... এই দেখ লেবু....

আমি কইলাম.. অনেক দিনের শখ ছিল... মন ভইরা দুধ খামু শালার খাওনের চান্স আওনের আগেই ডাক্তার ওইটাও খাইতে নিষেধ কইরা দিল... :) খালি দেইখ্যই যাইতে হইব খাইতে আর পারুম না... আফসোস... B-)

আমারে কইল আজে বাজে কথা বললে আমি কিন্তু চলে যাব....

তার পর সবকিছু বাহির কইরা সাজানু শুরু করল... প্রথমে প্লেটে সেমাই নিল.. কইল.. এইটা স্পেশালী তুমার জন্য রান্না করছি সো এইটা সবার প্রথমে খাবা... একটা চামচ দিয়া প্লেট থেকে তুলে আমার মুখে তুলে দিল আসল...

হায় হায়... আমার তো দেখি লজ্জা লাগতাছে... দূরে কিছু টোকাই পুলাপাইর বইয়া বইয়া দেখতাছে... এই পাগলেরা কি করে.. ধানমন্ডি লেকের পাড়ে কেউ কোন দিন নাস্তা কারছে এইরকম কখনো শুনি নাই।

আমি কইলাম... দেখ লোকজন দেখতেছে.. তুমি চামচটা আমর হাতে দাও আমি নিজে নিয়েই খাই....

সাথে সাতে একটা চিৎকার দিয়া উঠল... মানে, আমি কি জানি না তোমার হাত আচে.. তুমি নিজের হাতে খাইতে পার.... আমি খাওয়াইয়া দিলে সমস্যা কোথায়?

আমি লজ্জায় মিন মিন কইরা কইলাম... লোকজন দেখতেছে তাই লজ্জা লাগতেছে...
কইল... "আমি খাইয়ে দিলে তাতে লজ্জার কি? কে দেখল না দেখল তাতে কিছুই আসে যায় না...."

তার পর নিজের হাতে সব কিছু খাওয়াইল... এটা খাও, ওইটা খাও... আর একটু নেও না.. প্লিজ সোনা মানিক... তুমি না সেমাই পছন্দ কর.. এইটা আমার নিজের হাতের রান্নাকরা... (মাগার সেমাইটা তেমন জুইতের হয় নাই... রান্না করার অভ্যাস না থাকলে যা হয়... মজা যেহেতু হয় নাই তার মানে সত্যিই নিজে রান্না করছে....)

এইটা মনে হওয়ার সাথে সাথে কেমন যানি কষ্ট লাগতে লাগল.... আমার জন্য এত কিচু করতাচে.... অথচ আমি আর কয়দিন মাত্র বাচমু.... কি লাভ একটা মরা মানুষের জন্য এত কিছু কইরা..... মনটা খুব খারাপ হইয়া গেল... :(

পায়েস টা নেও..এইটা নরম খাবার ডাক্তার তোমাকে নরম খাবার খাইতে বলেছে...
আমি কইলাম ... নরম তো আরো অনেক কিছু আছে.. ওইগুলা খামু দূরে থাক ধইরাই দেখতে পারি না... ;) (মনে হয় বুজে নাই.. কিছুই কইল না...)

খাবারের সাথে সাথে হাতে একটা ট্যিসু পেপার নিয়া এক চামুচ মুখে দেয় আর টিসু দিয়া আমার মুখ মুইছ্যা দেয়.... একটু পর পর জিগায় পানি খাব কি না... বোতল থেকে পানি ঢেলে গ্লাস মুখে তুইল্যা দিয়া পানি খাওয়ায়.... আবার মুখের পানি মুইছ্যা দেয়....

সোনা মানিক এইটা আর একটু খাও.. .এইটা কি ভাল লাগে না.. ঠিক আছে তাহলে.. ওইটা খাও.... ইত্যদি .. কত যে আদর কইরা খাওয়াইল.... এত আদর দেইখ্যা আমার মনে মনে খুবই কষ্ট লগতাছিল.... ভাবতেছি... আমি না থাকলে ওর আসলেই কি হইব.... এই মাইয়া বাচব কেমন কইরা....
হটাত কইল.. কি ব্যাপার!! কি খাবতেছ? কইলাম না কিছু না... এমনি...

আমি আবার পাও তুইল্যা বসছিলাম খাওয়া শেষে যাখন বসা থেকে নামতে যামু দেখি তারাতারি আমার সেন্ডেল সু দুইটা পায়ের কাছে আইন্যা দিল...
হায় হায় এইটা কি বরল...!
আমি কইলাম... আরে আরে কি কর... তুমি কেন আমার জুতা ধরে ঠিক করে দিতেছ?

আমারে কইল.. তাতে কি... তোমার জন্য এই কাজটা করতে আমার খারাপ লাগে না... তোমার জন্য আমি যে কোন কাজই করতে পারব.... কোন কাজই আমার জন্য ছোট না...

কথাটা শুইন্যা চিন্তা করতে লাগলাম... এই যুগে বউরাই স্বামীর কোন সেবা করে না...আর ওই গালফ্রেন্ড হইয়া আজ আমার এত আদর যত্ন করতাছে.... সত্যিই আজব এই দুনিয়া....

আর আমি বইস্যা বইস্যা চিন্তা করতাছি.. ওরে কি শাস্তি দিমু.... হায় হায় এইটা আমি কি চিন্তা করতাছি.... এই রকম একটা মানুষ যে তার বয়ফ্রেন্ডকে ভালবাসে তাকে নাকি আমি ছাইড়া য়াওনের চিন্তা করতাছি.... আমি কি মানুষের বাচ্চা? এই রকম একটা মেয়ে তো আমার জন্য আশিরবাদ স্বরুপ.... আমি এমন কি মহামানব যে, আমর সেবা করতে হইব... আমি তো ওরে কুনু কিছু করতে কই নাই....

আমার জন্য নিজ হাতে রান্না কইরা আনছে... কত আদর কইরা লক্ষী সোনা মানিক কইয়া আমরে খাবার মুখে তুইল্য খাওয়াইল.... আমর লাইফে আর কেউ কি ইমুন কইরা খাওয়াইব? জীবনেও না...
ছি ছি ছি... এই রকম একটা মেয়ে কে আমি ছাইরা যাওনের চিন্তা ক্যমনে করলাম....:(

গালফ্রেন্ডের সেবা শশ্রুসায় আমর মনটা একদম গইল্যা গেল.... আমি আর থাকতে পারলাম না....

কিছু ক্ষন চুপ মাইরা রইলাম.... আমি চুপ দেইখ্যা কইল.. কি চিন্তা করতেছ? তোমার কি খারাপ লাগতেছে... আমি কইলা.. না.. আমি ঠিকই আছি...

হটাত কইলাম... আচ্ছা তুমি আমার জন্য এত কিছু ক্যান করতেছ?
কইল.. আজ তুমি অসুস্থ তোমার জন্য যদি কিছু না করি তাহলে এই জীবনে আর কার জন্য করব? তুমি জান আজ সকালে আমি কয়টায় উঠছি? ভোর ৫টায় উঠে তোমার জন্য খাবার তৌরি করছি.... এত সকালে উঠার জন্য মা অনেক অবাক হইছে.... আমাকে জিঙ্গাস করলে আমি বলছি.. লিজা অসুস্থ তাই ওর জন্য কিছু নাস্থা নিয়া হলে যাব... এই কথা বলে তোমার জন্য নাস্থা তৌরি করছি.....

এই কথা শুইন্যা আমি আর থাকতে পারলাম না... আমার চোখে পানি আইস্যা গেছে.... আমি শুধু কইলাম... তুমি আমারে মাপ কইরা দেও.... (সেদিনের ঘটনা মনে কইরা এখনো আমার চোখে পানি আইস্যা পড়তাছে....)

অবাক হইয়া কইল.. তোমার কি হইছে? তোমার শরীর ভাল না, এক কাজ কর তুমি বাসায় চলে যাও... রেষ্ট নেও...

আমি কইলাম না.. আমি এখন তোমার সাথে থাকব....

এর পর আমি ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকাইয়া রইলাম.... আমার মনে হইল... আমি আজ ওরে নুতন কইরা দেখতেছি..... ওরে আমার কাছে একটা নতুন মানুষ মনে হইল.....মনে হইল এই মানুষ না ফেরেস্তা ... কেমন যানি আমি কিছুই ভাবতে পারছিলাম না...

হটাত দেখি আমার দুই গালে হাত দিয়া কইতাছে.. তোমার কি হইছে... সত্যি করে বল.... কইয়া আবার কাইন্দা দিল....

আমি পাথরের মত হইয়া গেলাম... কিছুই কইতে পারলাম না....

কানতে কানতে কইল... "আমি সিদ্বান্ত নিছি আমরা খুব তারাতারি বিয়ে করে ফেলব....
সত্যি বলছি ... আমাদের তারাতারি বিয়ে করা উচিত..... আমি চাই এই অসুস্থ সময়ে তোমার পাশে থাকতে..... তুমি তোমার বাসায় বল... আমি বাসায় বলার ব্যবস্থা করতেছি.... আব্বু রাজি হবে না.... রাজি না হলে আমি বাসা ছেড়ে চলে আসব... এই ব্যপারে আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না.... তুমি আমার থেকে বয়সে ছোট তাতে কি.... ছোট বলে তো বিয়ে করতে আইন বা ধর্মে কোন বাধা নেই...."


এই কথা শুইন্যা আমার হুস ফিইরা আইল.... মনে মনে ভাবলাম... আমার মত এই রকম একটা ক্যান্সার রোগীরে কেডা বিয়া করতে রাজি হইব... উল্টা আরো ভাইগ্যা যাইব গা... আর সেই জায়গায় ওই কি না আমারে বিয়া কইরা সেবা করতে চায়......

নাহ.. গত কাল যা ভাবছিলাম.. তার জন্য অনুতপ্ত হইতে লাগল....
সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনে আর যাই হোক ওরেই আমি বিয়া করুম... এইবার বাচি আর মরি....

চড় খাইয়া মনে মনে ভাবছিলাম শিক্ষা দিমু ওই কথার জন্য তওবা করলাম... আর নতুন কইরা শপথ করলাম... আমার লগে আর যতই খারাপ ব্যবহার করূক না ক্যান ওরে আর জীবনেও ছাইড়া যামু না..... সিদ্ধান্ত ফাইনাল.... She is my life partner....nothings els..

অনেক কথা হল... তারপর আমাকে বাসায় নামাইয়া দিয়া ভার্সিটি চলে গেল....
৫মিনিট পরে ফুন দিয়া জিগাইল.. সকালের ঔষধ খাইছি কি না.....


পুরাতন পর্বঃ

পর্ব-১

পর্ব-২
পর্ব-৩

পর্ব-৫

------------------------------------------------------------
(মনের কিছু দুক্ষের কথা কইতাছি.... কেউ কোন বাজে মন্তব্য করবেন না...যন্ত্রনা কিভাবে শুরু হইছে আইজ তার বয়ান দিমু....)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০০৮ রাত ১১:৫৯
৩৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×