
এক গ্রামে ছিল একটি মসজিদ, যার দেয়াল বেয়ে একটি ধুন্দল গাছ বেড়ে উঠেছিল। সময়ের সাথে সাথে গাছে সবজিও ধরতে শুরু করেছিল। মসজিদের পাশেই ছিল এক চায়ের দোকান, যা পরিচালনা করতেন কুদ্দুস মিয়া। তিনি ছিলেন গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ, কিন্তু মসজিদের প্রতি তার গভীর ভক্তি ছিল।
একদিন সকালে এলাকার এক বৃদ্ধা মহিলা মসজিদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। গাছের সবজিগুলো দেখে তার মনে হলো, একটি ধুন্দল তুললে তার রান্নার জন্য কাজ হবে। মসজিদের গাছ, তাই তিনি ভাবলেন কেউ হয়তো বাধা দেবে না।
তবে ঠিক তখনই কুদ্দুস মিয়া মহিলাকে দেখতে পান এবং তাড়াতাড়ি গিয়ে তাকে বারন করেন। তিনি কঠোরভাবে বললেন, “এটা মসজিদের গাছ। এর ফল কেউ নিতে পারবে না। এগুলো মসজিদের সম্পদ।”
বৃদ্ধা কিছুটা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। এর মধ্যে দূর থেকে রিদয় রহমান, গ্রামের এক শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ, ঘটনাটি দেখছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বললেন, “কুদ্দুস ভাই, আপনি কেন এই মহিলাকে ধুন্দল নিতে দিচ্ছেন না?”
কুদ্দুস কিছুটা কঠোরভাবে বললেন, “এটা মসজিদের গাছ, মসজিদের সম্পত্তি। কেউ এর ফল নিতে পারবে না।”
রিদয় রহমান হেসে উত্তর দিলেন, “ভাই, মসজিদ তো আল্লাহর ঘর, আর এই গাছও তো আল্লাহর সৃষ্টি। মসজিদে আমরা সবাই মিলে নামাজ পড়ি, আমরা তো একসাথে আল্লাহর ইবাদত করি। তাহলে আল্লাহর এই দানও কি সবার জন্য নয়? মসজিদ কোনো মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এটি আমাদের সকলের। এই গাছের ফল যদি কোনো গরিব বা ক্ষুধার্ত মানুষ নেয়, তাহলে এতে তো মসজিদের কোনো ক্ষতি হবে না, বরং এর কল্যাণ বাড়বে। আল্লাহর দানকে সবার মাঝে ভাগ করে নেওয়া উচিত।”
কুদ্দুস মিয়া রিদয় রহমানের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর ধীরে ধীরে বুঝতে পারলেন তিনি ভুল ভাবছিলেন। তিনি বৃদ্ধা মহিলার কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন, “মা, আপনি যত খুশি নিতে পারেন। আমি ভুল করেছিলাম।”
বৃদ্ধা হাসিমুখে ধুন্দল নিয়ে চলে গেলেন, এবং গ্রামে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লো। এরপর থেকে সবাই উপলব্ধি করলো, আল্লাহর দান সবার জন্য, আর যতটা সম্ভব তা ভাগাভাগি করে নেওয়াই মানবিকতার পরিচায়ক। রিদয় রহমানের শিক্ষা থেকে সবাই এই দিকটি শিখলো যে, সৃষ্টির কল্যাণকে সবাই মিলে ভাগ করে নেওয়াই আল্লাহর পথে চলার প্রকৃত নির্দেশনা।
# আজহার উদ্দিন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


