■ আজহার উদ্দিন
পলিথিন বা পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে, এ ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগগুলো পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পলিথিন ব্যাগের ব্যবহারে যেমন আমাদের সুবিধা হয়েছে, তেমনি এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবও উদ্বেগজনক। এই ব্যাগগুলো মাটিতে সহজে পচে না, ফলে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, পলিথিন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পলিথিনের ক্ষতিকর দিকসমূহ:
পরিবেশ দূষণ: পলিথিন শপিং ব্যাগ পরিবেশে শত শত বছর ধরে অবশিষ্ট থাকে এবং মাটির গুণগত মান নষ্ট করে। পলিথিন মাটির পানি প্রবাহ এবং বাতাসের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে, ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়।
পানি দূষণ: পলিথিন ব্যাগ নদী ও সমুদ্রের পানিতে পৌঁছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। জলজ প্রাণীরা পলিথিন খেয়ে মৃত্যুবরণ করে বা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হয়।
স্বাস্থ্যঝুঁকি: পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করলে তা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়, যা বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস ছড়ায়। এই গ্যাস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়।
বিকল্পসমূহ:
পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের বিকল্প হিসেবে আমাদের হাতে কিছু কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব সমাধান রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে আমরা পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।
পাটের ব্যাগ: পাটের তৈরি ব্যাগ পরিবেশবান্ধব এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এই ব্যাগগুলো সহজে পচনশীল হওয়ায় মাটির গুণগত মান ঠিক থাকে।
কাগজের ব্যাগ: কাগজের ব্যাগ পলিথিনের একটি ভালো বিকল্প। এটি সহজেই পচে যায় এবং পরিবেশে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
কাপড়ের ব্যাগ: কাপড়ের ব্যাগ বারবার ব্যবহার করা যায় এবং তা পরিবেশের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
পলিথিন নিষিদ্ধকরণ:
বাংলাদেশ সরকার ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগের বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এটি একটি সাহসী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা আমাদের পরিবেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প সমাধানগুলোর ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন।
আমরা যদি এখনই পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহার শুরু করি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সবুজ ও সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারব। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করি এবং পরিবেশের সুরক্ষায় এগিয়ে আসি।
লেখক: শিক্ষক, প্রযুক্তিবিদ, ও সমাজকর্মী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


