তৃ প্তা শ্রু
তা রি ক আ ল আ জি জ
আমি আমার নাম নিয়ে ভাবি। আমার নাম সজল। পুরো নাম শাহাদাত হোসাইন সজল। শাহাদাত হোসাইন রেখেছিল বাবা। সজল রেখেছিল মেজো মামা। সজল নামেই সবাই আমাকে ডাকে। অনেকে আমার পুরো নাম জানেইনা। সজল মানে কি? যার আছে জল? এরকমই কিছু একটা হবে হয়তো। নামের জলের কথা ভাবতে গেলে আমার কখনো খাবার জলের কথা মনে আসে না। মনে আসে চোখের জলের কথা। দুঃখের জল নয়, যেটা আনন্দের জল। যে অশ্রু আমাকে তৃপ্তি দেয়। তৃপ্তির অশ্রু আমার খুব সহজেই আসে। এই কিছু একটা ভাল দেখেছি, আমার চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। আমি একা থাকলে সেই জল মুছি না। গড়িয়ে পরতে দেই। ভাল লাগে।
একটা ঘটনা মনে হলে আমার খুব ভাল লাগে। তৃপ্তির জল আমার অনেক বেড়ে যায়। আমি পারলে এ সময় একটু একা থাকার চেষ্টা করি। গাল বেয়ে জল গড়াতে দেই। জল গড়িয়ে গড়িয়ে শুকিয়ে গেলেও বসে থাকি। বেশ উপভোগ করি। ঘটনাটা আমার ছোট ভাইকে নিয়ে। ওর নাম কাজল। পুরো নাম সোহানুর রহমান কাজল। ওর নামেরও প্রথম অংশটা বাবার রাখা। কাজল রেখেছে মা। আমার চেয়ে আট বছরের ছোট। ঘটনাটা চার বছর আগের।
সে সময় আমি সবে চাকরীতে ঢুকেছি। আটটা-পাঁচটা অফিস। ব্যাংকের চাকরী তাই খাটুনি বেশী। যাতায়াতসহ এগারো ঘন্টা লেগে যায়। বাসায় এসে ঘুম আর আলসেমি করতেই ভাল লাগে। আমার উপন্যাস পড়ার অভ্যাসও অনেকটা কমিয়েছি। বাবা অবসরে যাওয়ায় পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে আমাকেই হাল ধরতে হয়। যে বেতন পাই তাতে বাসা ঢাকা শহরে থাকা খাওয়া কোন রকমে চলে যায়। মা’ই চালিয়ে নেন। আমি আমার সামান্য হাত খরচ রেখে বেতনের টাকাটা মা’র হাতে তুলে দেই। মা খুব হিসেব করে খরচ করে চালিয়ে নেন। কাজলের প্রইভেটের টাকা, কলেজের টাকা, বাবার অসুধ সব হিসেবমত করেন। আমি পরোক্ষে জানি কাজলের সিগারেটের টাকাও মা হিসেব করে দেন। কাজল অনেক সময় জোড়াজুড়ি করেও যে মা’র কাছে টাকা নেয় তাও বুঝতে পারি। সে কথা আমায় কেউ না জানালেও বুঝতে পারি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, মা অনেক কষ্টে কিছু টাকা বাঁচিয়ে মাঝে মাঝে বাড়তি কেনাকাটাও করেন।
সে সময় আমার খালাতো বোন মিতুর বিয়ের তারিখ পাকা হয়েছে। মিতু আমার খুব ন্যাওটা। মা’রও। মা খুব কষ্টে হাজার পাঁচেক টাকা জমিয়ে রেখেছে। আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে এর চেয়ে বেশী টাকায় উপহার দেয়া সম্ভবও নয়। মিতুর বিয়ের আগের দিনই আমাদের ওদের বাড়িতে যাওয়ার কথা। এর আগেই উপহার’ কিনতে হবে।
বিয়ের দু’দিন আগে আমার অফিসে কাজের চাপ ছিল। পরের তিন দিন ছুটি নিয়েছি বলে কিছু কাজ গুছিয়ে রাখলাম। অফিস থেকে বের হতে পৌনে ছ’টা বাজলো। যথারীতি বাসে চেপে বাসার পথ ধরলাম। কাউকে জানাইনি, আমিও বাড়তি দুই হাজার টাকা জমিয়েছি। বিয়ের বাড়িতে যাচ্ছি, কখন আবার লেগে যায়। মা ঘন্টা খানেক আগে ফোন দিয়ে বলেছিল বাবাকে উপহার কিনতে পাঠিয়েছে। ভালই হয়েছে। গরমে সিদ্ধ হয়ে আবার মার্কেট ঘুরার ঝক্কি আমি নিতে পারতাম না। বাসার কাছেই বাস থেকে নামি। গলিপথ ধরে একটু হাটলে বাসা। সবে গলিতে ঢুকেছি এমন সময় পেছন থেকে আমার নাম শুনে ফিরে তাকালাম। শাওন। ও সিলেটে চাকরী করে। ঢাকায় ওদের নিজস্ব বাসা। ছুটি নিয়ে বাসায় এসেছে বোধ হয়
কাছে এসে আমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা না বলে হোটেলে চা খাওয়ার কথা বললো। আমার যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। ক্লান্ত, শরীর ঘেমে একাকার ছিল। সাদা শার্ট শরীরের সাথে লেগে চামড়া স্পষ্ট হয়েছিল। আরেকটা ব্যাপার হলো টাকা। শুধু চা তো নয়, অনেক সময় বাড়তি কিছুও খেতে হয়। বিলটা যদি আমাকে দিতে হয়। শেষে ওর জোড়াজুড়িতে হোটেলে ঢুকলাম। একটু পেছনে স্বাদ’ নামের রেস্টুরেন্ট আছে। আমাদের এলাকায় এটাই বিখ্যাত।
হোটেলে তিনটা টেবিলের সারি। আমরা বাম সারির কোনায় গিয়ে ফাঁকা এক টেবিলে বসলাম। ঠান্ডা পানি মুখে দিতে গিয়েই চোখ পরলো ডান সারির কোনার টেবিলটায়। ছয়জন। চারটি ছেলে, দুটো মেয়ে। যার একজন আমার ছোটভাই কাজল। ওদের টেবিলে উচিছষ্টসহ প্লেটগুলো তখনও আছে। দেখে বুঝা যায় অনেক কিছু খেয়েছে। ট্রেতে করে ছয়টা কাপ নিয়ে গেলো ওয়েটার। বড় কাপ দেখে বুঝলাম কফি। আমি আমার চেয়ার একটু সরিয়ে নিলাম যাতে আমাকে দেখতে না পায়। দ্বিতীয় সারির পরে থাকা পিলারটা আমার আড়াল হলো। আমাকে দেখলে কাজল বিব্রত হতে পারে। শাওনের সাথে আলাপ জমলো না। কাজলরা যেন আমাকে না দেখে সেদিকেই বেশি খেয়াল। একটু পরেই কফি শেষ করে ওরা উঠে গেলো। কাজলকেই বিল দিতে দেখে আমি হা হয়ে গেলাম। বিল নির্ঘাত কয়েক শ। এত টাকা ও পেলো কোথায়? মা আমাকে লুকিয়ে ওকে কত টাকা দেয়!
আমার হোটেল পর্বও অল্পতেই শেষ হলো। শুধু পুরি আর চা। বিল শাওনই দিল। আমি অনেকটা হনহন করেই বাসায় ফিরলাম। মা’কে কিছু কথা জিজ্ঞেস করার আছে। বাসার সামনে এসে অনেকটা সময় দরজায় নক করতে হলো। মা’ই কিছুক্ষণ পরে এসে দরজা খুললেন। মা’র মুখ শুকনো দেখলাম। কি হয়েছে বোধ হয়। কৌতুহল চেপেই আগে ভেতরে ঢুকলাম। রুমে ঢুকে ব্যাগ রাখতেই মা’কে আমার পেছনে দাঁড়ানো দেখলাম। মা’র কথায় কাজলের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার কথা চাপা পড়ে গেলো। মা একটা সর্বনাশের কথা জানালো। মা বাবাকে বাইরে পাঠিয়েছিল। বাবা টয়লেটে থাকা অবস্থায় পাঞ্জাবির পকেটে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল। বাবা টয়লেট থেকে বেরিয়ে পাঞ্জবি পরে বেরিয়ে যায়। বাসা থেকে নেমে সামনের দোকানেই পান খাবে বলে পকেটে হাত দিয়ে টাকা কম কম মনে হয়। বাবা বের করে দেখে দু’হাজার টাকা আছে, বাকিটা নেই।
এমন সময়ে টাকা হারানোয় মা’কে খুব বিধ্বস্ত লাগছিল। মা’র অবস্থা দেখেই হয়তো আমি নিজেকে একটু সামলে নিলাম। পাশের রুমে বাবার কাছে গেলাম। বাবাকে এমনিতেই আমি খুব একটা ঘাটাই না। পরিবারের সব খরচ আমি বহন করি বলে বাবা কেমন জানি আমাকে একটু ভয় ভয় করে। আমি তাঁকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করলেও দুরত্ব যে একটু বেড়েছে তা স্পষ্ট টের পাই। বাবাকে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে কি হয়েছে? টাকা বের করতে গিয়ে পরলো কি না? বাবা টাকা বের করতে গিয়ে পরেনি এটা নিশ্চিত জানালো। কিভাবে হারালো তার কাছেও স্পষ্ট নয় বলে জানালো। পাশের আলনায় হ্যাঙ্গারে ঝুলানো আছে সাদা পাঞ্জাবি। ওটা পরেই বাবা বেরিয়েছি। এমনিই একটু পকেটে হাত দিলাম। পকেটের কাছটা একটু ভাঁজ হয়ে আছে। সুতা উঠে গেলে যেমনটা হয়। মা’কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, ঠিক মত খুঁজেছে কিনা। মা পইপই করে খুজার কথা বললো।
খুব চিন্তা হচ্ছিল। ভাবলাম দুই হাজার টাকা আমি না জমালে কি অবস্থায় দাঁড়াতে হতো? পাশের রুমে গিয়ে একটু হতাশ হয়েই চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম। মা’ও এলো। খানিক বসে আমি কিছু বলছিনা দেখে চলে গেলো। একটু পরেই কাজল এলো। কাজল ঘরে এলো। কাজল আর আমার আলাদা ঘর নেই। এক ঘরে বাবা-মা, আরেক ঘরে আমি ও কাজল থাকি। সামনে দুই ঘরের সামনে ছোট ডাইনিং স্পেস। কাজল এসে কিছু বুঝলো কি না বুঝলাম না। আমি অফিস থেকে এসেছি তাই জিজ্ঞেস করলো বাথরুমে যাব কিনা। আমি ইশারায় না বললে ও বাথরুমে গেলো। টেবিলে ওর ব্রেসলেটটা খুলে রাখলো। সে সময় ব্রেসলেটের খুব চল না থাকলেও কাজল পরতো। যত জটিলই হোক মানুষের চিন্তা এক জায়গায় স্থির থাকে না। আমি ওর ব্রেসলেটটা হাতে নিলাম। হঠাৎ চমকে উঠলাম। ব্রেসলেটের খাঁজে একটা সাদা সুতা আটকে আছে। আমার চট করে বাবার পকেটের কাছ থেকে সুতা উঠা ভাজের কথা মনে হলো। তবে কি কাজলই?
কাজল কি এতটা নীচে নেমেছে? ওকে হোটেলে খেতে ও বিল দিতেও দেখেছি। তবে? আমি ব্রেসলেটটা সেখানে রেখে আবার পাশের রুমে গেলাম। বাবার পাঞ্জাবির পকেটের ভাঁজটা ভাল করে দেখলাম। আমার সন্দেহটা আরো গাঢ় হলো। মাথাটা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করলাম। নন্ডা মাথায়ই পরিস্থিতিটা সামাল দিতে হবে। মা কিচেনে বসে আছে। মা’র কাছে গেলাম। কথাচ্ছলে জেনে নিলাম কাজল কখন বেরিয়েছে। জানলাম ও বাবা বের হবার ঠিত আগ মুহুর্তেই বেরিয়েছে। কাজলকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই আমার কাছে মনে হলো।
আরেকটা দুশ্চিন্তায় পরলাম আমি। ধরলাম কাজলই টাকা নিয়েছে। কিন্তু ওকে জিজ্ঞেস করব কি করে? ও আমার ছোট ভাই। ভাই হিসেবে আমরা খুব কাছেরও নয় আবার দূরেরও নয়। জিজ্ঞেস করলে ও অস্বীকার করলে আমার কি করার থাকবে। সম্পর্কের দূরত্বটাও কি বেড়ে যাবে না? অনেক চিন্তা ভাবনা করে শেষে একটা সিদ্ধান্তে এলাম। আমার ওকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ। ও যদি কোন ভুল করে তাও তো শুধরে দেয়া উচিৎ।
কাজল বাথরুম থেকে বের হলে ওকে একটু ছাদে যাওয়ার কথা বললাম। ও একটু অবাকই হলো। সচরাচর ওকে ছাদে যাওয়ার কথা আমি বলি না। বাড়িওলা ছাদের দরজায় তালা না লাগালেও খিল লাগিয়ে রাখে। ভাড়াটেরা খুব কম ছাদে যায়। কাজলকে নিয়ে ছাদে গেলাম। সন্ধ্যার অন্ধকারটা তখনো বেশ জমেনি। আমি ছাদের এক কোনায় নিয়ে গেলাম ওকে। এমনিতে আমার গলা ভরাট। আমি খুব নরম করে ওর সাথে কথা বললাম।
ওকে পড়ালেখার কথা জিজ্ঞেস করলাম। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম বিকেলে নাস্তা করেছে কি না। ও হোটেলে খাওয়ার ব্যাপারটা চেপে গেলো। আমি আরো অগ্রসর হলাম। ওর মুখটা সন্ধার আলোয় যতদুর দেখা যায় শুকিয়ে গিয়েছে। আমার খুব খারাপ লাগছিল। আবেগে আমার গলা কাঁপছিল। আমি খুব আস্তে আস্তে কথা বলছিলাম। মানুষই তো ভুল করে। কিন্তু যে ভুল করে স্বীকার করে সে কিন্তু নিজেকে শুধরানোর সুযোগ পায়। আমার আবেগ আসলে ওকেও ছুয়েছিল। সরাসরি জিজ্ঞেস করার আগেই ও স্বীকার করলো টাকাটা ও নিয়েছে। এত সহজে ব্যাপারটা হয়ে যাবে আমি ভাবিনি।
কাজল কাঁদতে কাঁদতে অনেক কথাই বললো। ওর বন্ধুদের কথা। ওরা ওকে কত কি দেয়, খাওয়ায়। ও পারে না। বন্ধু মহলে স্ট্যাটাসের একটা ব্যাপার আছে। আমার জীবন থেকে এ সত্যটা আমি বুঝি। আমি আরো কিছু কথা ওকে বললাম। হৃদয় থেকে যতটুকু নীতি কথা শুনানো যায়। আমি বুঝতে পারছিলাম ও খুব মনযোগ দিয়ে শুনছে। আমার কথা ওর মনে দাগ কাটছে। এরপরে ও পকেট থেকে দুই হাজার দুই শ টাকা বের করে দিল। বললো বাকি আটশ টাকার মধ্যে দুইশ চারশ টাকা একজনের কাছে ধার নিয়েছিল শোধ করেছে। বাকিটা খরচ হয়ে গেছে। আমি দুই হাজার টাকা নিলাম। বাকি দুইশ টাকা না নিতে চাইলেও জোর করে ওর হাতে গুঁজে দিলাম।
এরপরে আমি একটা খেলা সাজালাম। আমার জমানো দু’হাজার থেকে এক হাজার নিয়ে তিন হাজার টাকা বাবার রুমে গিয়ে আলনার নীচে গোপনে ফেলে দিলাম। একটু পরে ঘুরে এসে চেঁচিয়ে টাকা পাওয়ার কথা জানান দিলাম। মা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই একটু ধমকালাম। টাকা ঠিক মত বাবার পকেটে দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করলাম। মা একটু আশ্চর্য হলেও আমাকে একটু উগ্র দেখে কিছু বললো না। আমার রুমে এসে দেখি কাজল টেবিলে মাথা রেখে কাঁদছে। আমি দরজা লাগিয়ে দিলাম।
এরপর পাঁচ বছর কেটে গেছে। অনেক পরিবারেই হয়তো এ রকম ঘটে। কে জানে শেষে সমাধানটা কি হয়। এই পাঁচ বছরে আমি বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছি। তারা মারা যাবার আগে অবশ্য আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছেন। আমি সুখী। সে সময়ের এইচএসসির কাজল আজ মাষ্টার্সও শেষ করতে চললো। সত্যি বলছি, এরপরে আমি অনেক ক্ষেত্রেই ওর পরিবর্তন দেখেছি। আমাদের সম্পর্কটা আরো গাঢ় হয়েছে। কোনকিছু চাইবার হলে ও আমার কাছেই চায়। কাজল সিগারেট পর্যন্ত ছেড়ে দেয়। আমার বাবা-মা এ ঘটনা কখনো জানেনি। আমার বউও না।
ঘটনাটা খুব সাদামাটা হলেও আমার কাছে বড়। আমার মনে হলে আনন্দে বুকটা ভরে যায়। চোখ দিয়ে অবিরত তৃপ্তির জল গড়ায়। আমার বউও আমায় মাঝেমাঝে কাঁদতে দেখে। ও মনে করে আমার মন খুবই নরম। পুরনো কোন ঘটনা মনে করে কাঁদছি। আমিও আমার আনন্দের এ অভিবক্তিকে খোলাসা করি না। এই জলের একটা নাম দিয়েছি। তৃপ্তাশ্রু।