আমার প্রার্থনা শোন পঁচিশে বৈশাখ,
আর একবার তুমি জন্ম দাও রবীন্দ্রনাথের,
হতশায় স্তব্ধ বাক্য, ভাষা চাই আমরা নির্বাক
পাঠাব মৈত্রীর বাণী সারা পৃথিবীকে জানি ফের,
রবীন্দ্রনাথের কন্ঠে আমাদের ভাষা যাবে শোনা,
ভেঙে যাবে রুদ্ধশ্বাস সুদীর্ঘ মৌনতা,
আমাদের দুঃখেসুখে ব্যক্ত হবে প্রত্যেক রচনা,
পীড়নের প্রতিবাদে উচচারিত হবে সব কথা।
আমি দিব্যচক্ষে দেখি অনাগত সে রবীন্দ্রনাথ,
দস্যুতায় দৃপ্তকন্ঠ, বিগত দিনের
ধৈর্যের বাঁধন যাঁর ভাঙে দুঃশাসনের আঘাত,
যন্ত্রণায় রুদ্ধবাক, যে যন্ত্রণা সহায়হীনের।
বিগত দুর্ভিক্ষে যাঁর উত্তেজিত, তিক্ত তীব্র ভাষা,
মৃত্যুতে ব্যথিত আর লোভের বিরুদ্ধে খরধার,
ধ্বংসের প্রান্তরে বসে আনে দৃঢ় অনাহত আশা,
তাঁর জন্ম অনিবার্য, তাঁকে ফিরে পাবই আবার।
রবীন্দ্রনাথের সেই ভুলে যাওয়া বাণী
অকস্মাত করে কানাকানি,
দামামা ওই বাজে, দিন বদলের পালা
এলো ঝোড়ো যুগের মাঝে।
নিষ্কম্প গাছের পাতা, রুদ্ধশ্বাস, অগ্নিগর্ভ দিন,
বিস্ফারিত দৃষ্টি মেলে এ আকাশ, গতিরুদ্ধ বায়ু,
আবিশ্ব জিজ্ঞাসা এক চোখেমুখে ছড়ায় রঙীন,
সংশয়স্পন্দিত স্বপ্ন,
ভীত আশা উচ্চারণহীন,
মেলে না উত্তর কোন, সমস্যায় উত্তেজিত স্নায়ু।
ইতিহাস মোড় ফেরে, পদতলে বিধ্বস্ত বার্লিন,
পশ্চিম সীমান্তে শান্তি, দীর্ঘ হয় পৃথিবীর আয়ু,
দিকে দিকে জয়ধ্বনি, কাঁপে দিন রক্তাক্ত আভায়,
রাম রাবণের যুদ্ধে বিক্ষত এ ভারত জটায়ু,
মৃতপ্রায়, যুদ্ধাহত, পীড়নে দুর্ভিক্ষে মৌনমুখ।
পূর্বাঞ্চল দৃপ্ত করে বিশ্বজনসমৃদ্ধ সভায়
রবীন্দ্রনাথের বাণী তার দাবি ঘোষণা করুক,
এবারে নতুন রূপে দেখা দিক রবীন্দ্রঠাকুর,
বিপ্লবের স্বপ্ন চোখ, কন্ঠে গণসঙ্গীতের সুর,
জনতার পাশে পাশে উজ্জ্বল পতাকা নিয়ে হাতে
চলুক নিন্দাকে ঠেলে গ্লানি মুছে আঘাতে আঘাতে।
যদিও সে অনাগত, তবু যেন শুনি তার ডাক,
আমাদেরই মাঝে তাকে জন্ম দাও,
পঁচিশে বৈশাখ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



