somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতি মণ ধানে কৃষক ৮০ থেকে ১০০ টাকা কম পাচ্ছেন

০৯ ই জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতি মণ ধানে কৃষক ৮০ থেকে ১০০ টাকা কম পাচ্ছেন: প্রথম আলো
চাষে উৎসাহ দিতে ১০ শতাংশ মুনাফা ধরে ধান-চালের সরকারি সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হলেও কৃষক এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না। খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাবে প্রতি মণ ধানে কৃষক ৮০ থেকে ১০০ টাকা কম পাচ্ছেন। আর প্রতি মণ চালে কম পাওয়ার পরিমাণ ১৬০ টাকা। এই টাকা চলে যাচ্ছে সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়া ১৩ হাজার চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীর পকেটে।
পয়লা মে থেকে সংগ্রহের জন্য সরকার প্রতি কেজি ধান ১৪ ও চাল ২২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। গতকালও দেশের বৃহত্তর ধান-চালের বাজার রংপুর, দিনাজপুর ও নওগাঁয় প্রতি কেজি ধান ১১ থেকে ১২ ও চাল ১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রতি কেজি ধান ১৩ ও চাল ১৮ থেকে ১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি সংগ্রহের পরিমাণ বাজারে ওঠা মোট চালের তুলনায় নগণ্য। সংগ্রহের জন্য সরকার চালকল মালিকদের সঙ্গে ধাপে ধাপে চুক্তি করেছে। ফলে বাজারে কোনো চাপ তৈরি হচ্ছে না; ধান-চালের দামও বাড়ছে না। তাই সরকার-নির্ধারিত দাম পাচ্ছেন না কৃষক। সামনের দিনগুলোতে কৃষক কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাবেন, এমন নিশ্চয়তাও নেই।
কৃষককে কাঙ্ক্ষিত মূল্য দিতে হলে সরকারি সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি মাসে কমপক্ষে ছয় লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করতে হবে। সরকারি গুদামে জায়গা না থাকলে সরকারের বিভিন্ন কারখানার গুদামে রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, না হলে পুরো বছর কৃষক লোকসান গুনবেন। আসন্ন আমনেই কৃষক ধান চাষে উৎসাহ হারাতে পারেন বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি দেশের পাঁচটি ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা পরিদর্শন করে নিজের চোখে কৃষকের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গুদামে জায়গা না থাকায় প্রথমেই সব ধান-চাল ছাড় করা হয়নি। যখন দেখা গেল, কৃষক দাম কম পাচ্ছেন তখনই বেশির ভাগ ছাড় করা হয়েছে। খুব শিগগির কাবিখা ও ভিজিএফ কর্মসুচির মাধ্যমে সরকারি গুদামের চাল ছাড় করা হবে এবং সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও খাদ্যমন্ত্রী জানান।
লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে: চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য ১৪ ও ২২ টাকায় গুদামে সরবরাহ করছেন। অথচ গতকাল সোমবারও দেশের বৃহত্তর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ধান ১২ ও চাল ১৮ থেকে ১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কৃষকের জন্য নির্ধারণ করা দামের পুরো সুবিধা নিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সরকারি হিসাবে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে তিন লাখ ৪৬ হাজার ২১ টন চাল। ধান সংগ্রহ করা হয়েছে ৪০ হাজার ৪২ টন। হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ না করায় প্রতি কেজি ধানে দুই ও চালে তিন টাকা কৃষকের হাতছাড়া হচ্ছে। সেই হিসাবে সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহ করা বাবদ কৃষকের চালে ১০৫ কোটি নয় লাখ টাকা এবং ধানে তিন লাখ টাকা বেহাত হয়েছে।
গত ১ মে থেকে বোরো সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। প্রথমে তিন লাখ টন ধান-চাল কেনার জন্য মিলারদের সঙ্গে চুক্তির অনুমতি দেওয়া হয়। পরে ১৫ মে ছয় লাখ টন ছাড় করা হয়। রোববার ছাড় করা হয়েছে দেড় লাখ টন।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার মোট ১২ লাখ টন ধান-চাল কেনার কথা।
জোগান বেশি: কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলতি বছর বোরো মৌসুমে এক কোটি ৮০ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার আগেই ওই ধানের প্রায় পুরোটাই কৃষকের গোলায় উঠেছে। গত বছর দেশে যে তিন কোটি ৩০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল তার ২০ লাখ টন এখনো কৃষকের গোলায় ও ব্যবসায়ীদের গুদামে রয়ে গেছে।
উৎপাদিত চালের অর্ধেকই বাজারে আসে। সেই হিসাবে প্রতিদিন দেশের বৃহত্তর হাটগুলোতে দুই লাখ টন ধান ওঠে। ধান-চালের হাট ও মোকামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে আসা চালের অর্ধেকও বিক্রি হচ্ছে না। সরকারি সংগ্রহের পরিমাণ কম হওয়ায় চালকল মালিকেরা কম চাল কিনছেন।
সংগ্রহ বাড়ানো উচিত: অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন বলেন, ঘুর্ণিঝড় আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো মেরামতের জন্য সরকারি গুদামের চাল দ্রুত বরাদ্দ দেওয়া উচিত। এতে ধানের দামও বাড়ত, বাঁধগুলোও মেরামত হয়ে যেত।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. উত্তম দেব মনে করেন, সরকার দ্রুত কিনতে পারলে কৃষকেরা আরেকটু লাভবান হতে পারতেন। তবে সরকার যে দ্রুত কিনতে পারবে না এই তথ্য মিলাররাসহ কমবেশি সবাই জানে। গুদামসংকটই এর বড় কারণ। এ পরিস্িথতিতে সরকার বিএডিসির অব্যবহূত গুদাম কাজে লাগাতে পারে। তিনি বলেন, সংগ্রহ ১২ লাখের পরিবর্তে ২০ লাখ করতে পারে। আর কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনার ব্যবস্থাও বাড়াতে হবে।
খাদ্য অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চালকলের সংখ্যা ও ছাঁটাইয়ের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে এলাকা ভেদে চাল কেনার জন্য মিলার নির্ধারণ এবং উৎপাদনের ভিত্তিতে ধান কোন এলাকা থেকে কী পরিমাণ কেনা হবে, তা ঠিক করা হয়। এলাকা ও পরিমাণ নির্ধারণ করে খাদ্য অধিদপ্তর প্রস্তাব পাঠালে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরে তা কার্যকর করা হয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×