কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য দিতে না পারাকে নিজের ছয় মাসের কর্মকালের একটি ব্যর্থতা হিসেবে স্বীকার করেছেন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যর্থতা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, "এ ব্যাপারে আপাতত সরকারের কিছুই করার নেই। কারণ, খাদ্যগুদামে জায়গার অভাবে সরকার বেশি করে ধান-চাল কিনতেও পারছে না।
"এবার এত বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে যে সরকার যা কিনছে, তাতে বাজারে কোনও প্রভাব পড়ছে না। এভাবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে কৃষকরা ভবিষ্যতে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই সরকারকে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।"
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ছয় মাস কর্মকালের সাফল্য ও ব্যর্থতা তুলে ধরতে রোববার আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য সচিব মোখলেছুর রহমান এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পিউস কস্তা উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, উৎপাদিত পণ্যের মূল্য কৃষকদের দিতে না পারলে সরকারকে বিকল্প ভাবতে হবে।
কৃষকরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদন করে লাভবান হয়ে ভবিষ্যতে উৎপাদনে আগ্রহী হয় সেজন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
রাজ্জাক বলেন, "এক্ষেত্রে কৃষি উপকরণের মূল্য কমানো ও কৃষি উৎপাদনের ব্যয় হ্রাস, উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিশ্চিত করতে আর্থিক সহায়তা এবং কৃষি উৎপাদনে প্রণোদনা সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।"
সরকারিভাবে খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে কৃষকদের পরিবর্তে মিল মালিকদের লাভবান হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, "এক্ষেত্রে সরকারি যে নীতি রয়েছে, তাতে সমস্যা রয়েছে। কারণ সরকারি গুদামে ১৪ শতাংশ আর্দ্রতা ছাড়া কোনও ধান বা চাল নেওয়া হয় না।
"এভাবে কৃষকদের পক্ষ থেকে গুদামে ধান বা চাল দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই সরকারকে মিল মালিকদের থেকে সংগ্রহ করতে হয়।"
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকে ভাবতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "ভবিষ্যতে মিল মালিকদের যে ধান বা চাল সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হবে, তার ৫০-৬০ শতাংশ সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি মূল্যে কেনা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।"
সরকারি গুদামে সংরক্ষিত পুরোনো চাল পচে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সরকারি গুদামগুলোতে বর্তমানে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ৯০ হাজার মেট্রিক টন বোরো এবং ৯০ হাজার মেট্রিক টন আমন চাল রয়েছে।
তিনি বলেন, এসব চাল আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভাল থাকবে। তবে সরকার জুলাই মাসের মধ্যেই এসব চাল বিতরণ সম্পন্ন করবে।
এজন্য ইতিমধ্যে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণ ব্যবস্থা খাতে চলতি অর্থবছরের জন্য সরকারি বরাদ্দের তথ্য তুলে ধরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে দেশে এ খাতে মোট ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৬ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করা হয়েছে।
এ খাতে নতুন অর্থবছরের জন্য এ বরাদ্দকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি জানান, এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হবে প্রায় ২৩ লাখ মেট্রিক টন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে ভিজিএফ খাতে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার, টেস্ট রিলিফ খাতে চার লাখ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) খাতে তিন লাখ ৭৫ হাজার, ভিজিডি খাতে দুই লাখ ৬৫ হাজার, খয়রাতি সহায়তা (জিআর) খাতে ৬৪ হাজার এবং পার্বত্য জেলাসহ অন্যান্য খাতে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে।
খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য দেশে মোট ২৮ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে ১৬ লাখ মেট্রিক টন, বিভিন্ন পর্যায়ের অনুদান আসবে এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন এবং আমদানি করা হবে ১০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও জানান, গত অর্থবছরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আওতায় বাংলাদেশ প্রায় চার লাখ টন খাদ্য সহায়তা পাওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু এ সময় বাংলাদেশ মাত্র ৮০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা পেয়েছে।
কারণ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও উন্নত দেশগুলো এখন বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে সাব-সাহারা ও আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশ এ সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



