somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞানীরা তৈরি করছেন মানুষ

১৬ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানুষের কৃত্রিম জিন আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই কৃত্রিম জিন দিয়েই মানুষ সৃষ্টি করছেন তারা।বিজ্ঞানীদের দাবি, যেকোনো মানুষের ক্লোন বা কপি তৈরি করতে পারবেন তারা। অর্থাৎ এখন থেকে বিজ্ঞানীদের হাতেই তৈরি হবে নতুন মানুষ।প্রাকৃতিকভাবে বাবার শরীর থেকে তার সন্তানের শরীরে আসা প্রাকৃতিক জিনেই মানুষের সৃষ্টি। কিন্তু এখন আর সেটি প্রয়োজন হবে না। আবিষ্কৃত কৃত্রিম জিনের মাধ্যমে তারা নতুন জীবন সৃষ্টি করবেন।

গত সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রায় ১৫০ বিজ্ঞানী, আইনজীবী ও ব্যবসায়ী মানুষের কৃত্রিম জিন আবিষ্কারের বিষয়ে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন।এদিকে বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের এই অগ্রগতিকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আবার অনেক বিশেষজ্ঞ এই বৈঠক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

কেউ কেউ বলছেন তাদের এই গোপন বৈঠকের মানে হচ্ছে হয়তো তারা কৃত্রিম মানুষ তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছেন আর এই নৈতিকতার প্রশ্নে বৈঠক করেছেন। হয়তো এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে না। আর যদি তাই হয় তাহলে পৃথিবীতে একটি ‘বায়োলজিক্যাল আর্ম রেস’ শুরু হয়ে যাবে। যা অত্যন্ত ভয়াবহ এক পরিণতিকে ইঙ্গিত করে।


একজন চিকিৎসক ডিএনএর ধারাবাহিকতা পরীক্ষা করছেন।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড মেডিকেল অব বুস্টনে এই গোপন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কাউকে সেখানে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি উপস্থিত সব অতিথিকে বলা হয়েছে, যেন তারা এ বিষয়ে্ মিডিয়ার কাছে মুখ না খোলে।

গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর জর্জ চর্চ, এনওয়াইইউ ল্যানজন মেডিকেল সেন্টারের ইনিস্টিটেউট অব সিস্টেম জেনেটিক্সের পরিচালক জেফ বোয়েকি, আটোডেস্কের বাইয়ো নানো রিসার্চ গ্র্রুপের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী অ্যান্ডু রাসেল ও ন্যান্সি জে ক্যালি।

এই বিষয়ে এক সাক্ষাতকারে প্রফেসর জর্জ চর্চ বলেন আমরা দীর্ঘ মেয়াদী ডিএনএ আবিষ্কারের জন্য আলোচনা করেছি। যেগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির ডিএনতে প্রতিস্থাপন করা যায়।

আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের কোষের মধ্যে ডিএনএর অবস্থান ও বিভিন্ন কাজ নিয়ে বর্ণনা করেছেন। যেমন ডায়াবেটিস রোগীকে কৃত্রিমভাবে ইনসুলিন ঢোকানো হয়। কৃত্রিম এই জিনগুলো (কোন প্রাণির সব জিনের সমন্নয়ে গঠিত সম্পূর্ণ সেট ডিএনএ) কোন প্রাণির দেহে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। কিন্তু এই কৃত্রিম ডিএনএর আবিষ্কারের উদ্যোগ অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

২।ছবিঃ মানুষের ডিএনএর বিভিন্ন গঠন প্রণালি দেখানো হচ্ছে। কৃত্রিম মানুষ তৈরির জন্য আমাদের বিশ্বাস, আশা-আকাঙ্খা থেকে এর একটি সুষ্ঠু নীতিমালা আছে। কিন্তু এতো বড় একটি বিষয় নিয়ে গোপন বৈঠক হওয়া উচিৎ হয়নি।

স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী প্রফেসর ড্রিউ অ্যান্ডে ও নর্থওয়েস্ট্রান ইউনিভার্সিটির মেডিকেল ইথিকসে এবং হিউম্যানিটিজ বিভাগের প্রফেসর লাউরি জোলোথ বিজ্ঞান ভিত্তিক একটি ম্যাগাজিনকসমস(http://www.cosmosmagazine.com) এ একটি লেখা প্রকাশ করেন।সেখানে তারা বলেন এভাবে মানুষের কৃত্রিম ডিএনএ আবিষ্কার এক ধরনের অনৈতিক একটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যবস্থা।

তাদের ভাষ্য, যদি কৃত্রিম জিন আবিষ্কার করা হয় এটাকে ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। তারপর একটা মানুষের অঙ্গে প্রতিস্থাপন করা হবে। এর মানে এই নয় যে, তারা কৃত্রিম জিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। আর যদি তারা কৃত্রিম জিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় তাহলে তারপর কী হবে? উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বিজ্ঞানীরা কী পরিবর্তিত হিউম্যান জিন সংযোজন করতে পারে। যেগুলো সব ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এই কৃত্রিম হিউম্যান জিন সংযোজনটা যেন মানুষের উপকারের জন্য তৈরি করা হয়।কী করে মানব জীবনের সব ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যায়। নাকি এটা জিন আর্ম রেসে পরিণত হবে? আর যদি এমনটাই হয় তাহলে এর পরিণাম কেমন হবে সে বিষয়ে ভেবে দেখার আহ্বান জানানো হয় তাদের লেখায়।

কসমসের ওই লেখায় তারা আরো বলেন, যদি মানুষের এই কৃত্রিম জিন আবিষ্কার করা হয়। তাহলে একটা মানুষের কয়টা ক্লোন করা যাবে। যেমন আইনস্টাইনের ক্লোন যদি কেউ করতে চায় তাহলে কারা এটা করতে পারবে সে বিষয়গুলোকেও তারা তাদের লেখায় তুলে ধরেন।কৃত্রিম হিউম্যান জিন আবিষ্কারে বিজ্ঞানের অনেকগুলো বিষয়ের প্রয়োগ করতে হবে এবং গবেষকরা সে বিষয়ে অনেক যুক্তিতর্ক দাঁড় করিয়েছেন। যেমন কাদের অনেকগুলো কৃত্রিম ক্লোন করা হবে বা কাদের ক্লোন করা সবার জন্য উম্মক্ত থাকবে। আবার যারা স্বেচ্ছায় ক্লোন করাতে চাইবে তাদের ক্ষেত্রে কী হবে সেটি তারা জানতে চান।

অবশ্য তারা আরো যু্ক্তি দেখিয়েছেন, যারা এই কৃত্রিম জিন প্রতিস্থাপনকে সমর্থন করেছে তারা ভাবছে যুগের সাথে বিজ্ঞানীরা কী রকম প্রতিযোগিতা করতে পারে সেটাই মূখ্য। তারা যুগের চাহিদাকে পুরণ করতে পারছে কি না এবং প্রিন্টিং ডিএনএ ফ্রাগমেন্টের খরচটা কমাতে পারছে কিনা সে বিষয়ের দিকেও ইঙ্গিত দেন তারা। প্রিন্টিং ডিএনএ ফ্রাগমেন্ট প্রতিস্থাপনে বর্তমানে ৯০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এটা তৈরি করা হয় তিন বিলিয়ন জীনকে জোড়া করে। কৃত্রিম জিন আবিষ্কারের ফলে সেটার খরচ ১ মিলিয়ন ডলারে নামানো যাবে কি-না সে বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছেন।

ম্যাগাজিন কসমস’র ওই লেখায় লেখক বলেন, হিউম্যান জিন আবিষ্কার তার একমাত্র চাহিদার চালক(Demand driver) না। এমন জিন গবেষকদের আবিষ্কার করা দরকার যা মানুষের রোগ প্রতিরোধক ও প্রতিশোধক হিসাবে কাজে লাগে অন্য কোনো উদ্যোশে নয়। সেইসঙ্গে এই কৃত্রিম হিউম্যান জিন ব্যবহারের উদ্দেশ্য আইনজীবী, নিয়ন্ত্রক, ধর্মতত্ত্ববিদ, দার্শনিক এবং নীতিশাস্ত্রবিদদের সমন্নয়ে গঠিত কিছু পরামর্শ বা নীতিমালা থাকা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।মানব সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মানুষের নতুন জীবন আবিষ্কার হলো। তবে সেটা বাজারজাত হয়নি বা সম্পূর্ণভাবে একটি পুন্যে পরিণত করা হয়নি এখনো।কৃত্রিম মানুষ তৈরির জন্য আমাদের বিশ্বাস আশা আকাঙ্খা থেকে এর সুষ্ঠু একটি নীতিমালা রয়েছে কিন্তু এতো বড় একটি বিষয় নিয়ে গোপন বৈঠক করা উচিত হয়নি বলে অনেকেই মত দিয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:২১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×