আজকের অপারেশনটা হঠাত্ করেই, আগে থেকে কোন পরিকল্পনা ছিল না। সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশ ছিল আরও কিছুদিন ওদের গতিবিধি লক্ষ্য করে ওদের উপর চূড়ান্ত আঘাত আনা। কিন্তু সকালে যখন হাইড-আউটের মালিক করিম মিয়া কাঁদতে কাঁদতে খবরটা নিয়ে আসে তখনই রফিক সিদ্ধান্ত নেয় আজকে রাতেই অপারেশন করতে হবে, যেভাবেই হোক করিম মিয়ার মেয়েকে উদ্ধার করতে হবে। আজ সকালে রাজাকারগুলো পাকি বাহিনী নিয়ে আসে করিম মিয়ার বাড়ীতে। অনেক মারধর করার পরও সে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন তথ্য না দেয় না। তখন রাজাকারের পরামর্শে পাক-বাহিনী ঘর থেকে করিম মিয়ার মা-মরা মেয়েটাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, সাথে খুটিতে বাঁধা দুইটা ছাগলও। ওরা চলে যেতেই করিম মিয়া ছুটে চলে আসে মুক্তযোদ্ধাদের কাছে, তার মা-মরা মেয়েটাকে বাঁচানো আকুতি নিয়ে। তখনই রফিক সবাইকে প্রস্তুত হতে বলে। সন্ধ্যা হতেই ওরা বেড়িয়ে পড়ে রাতের আঁধারে। আগেই সালামকে দিয়ে সে সব খোঁজখবর নিয়েছে। তারা এখন অপেক্ষা করছে সুযোগের। দূর থেকে হায়েনাদের হাসি-ঠাট্টা শোনা যাচ্ছে। রফিক বুঝতে পারে আর দেরী করা যাবে না। রফিক পাশে থাকা সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দিল আগানোর। সবাই অন্ধকারে আস্তে আস্তে হাটা শুরু করে। মশিউর রেঞ্জে আসলেই ওর এলএমজিটা সেট করে। সবাই কাছাকাছি যেতেই রফিক নির্দেশ দেয় ফায়ার অন করার। সবাই একসাথে ঝাপিয়ে পড়ে। আচমকা আক্রমণে পাকীরা কিছুক্ষণ থমকে গেলেও তারাও ফায়ার অন করে। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে অজস্র গুলি। এর মধ্যে শুয়ে পড়ে, আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় রফিক। পিছন থেকে মশিউরের এলএমজি তাদের কভার দিচ্ছে। এই সময় মধুর ক্যাম্পের পিছন থেকে মর্টার বর্ষণের কথা। সে কি এখনো পৌছায়নি? এমন সময় ক্যাম্পের পেছন দিক থেকে উড়ে আসে একটি মর্টার। এসে পড়ে ঠিক পাক বাহিনীর বাংকারে। উড়ে যায় সেটি। রফিক এবার সবাইকে নির্দেশ দিয়ে গুলি করতে করতে উঠে যায়। না, সেদিন পাক বাহিনী তেমন প্রতিরোধ করতে পারেনি। কিছুক্ষণের ভেতরেই তারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী ধাওয়া করে কিছু পাক সেনাকে সেখানেই মেরে ফেলে, বাকীগুলো কিভাবে যেন পার পেয়ে যায়। আর ধরা পড়ে দুইজন রাজাকার। তাদেরকে পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে আসা হয় হাইড-আউটে। করিম মিয়ার মেয়েকে অক্ষতই পাওয়া যায় স্কুলের এক রুমে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে পৌছে দেয়া হয় করিম মিয়ার ঘরে।
।২।
উপরের ঘটনাটা হয়তো কাল্পনিক। তবে ’৭১ যোদ্ধারা এভাবে অনেক মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছেন পাক হানাদারদের হাত থেকে, অনেককে ফিরিয়ে দিয়েছেন তার স্বজনের কাছে। তেমনি একজন মুক্তিযোদ্ধা আজ কেঁদে পড়লেন আমাদের কাছে। গত ১মাস ২দিন হল তার মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি সবকিছুই করেছেন। পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, পুলিশের কাছে গেছেন, হাসপাতাল-ক্লিনিক সবজায়গায় খোঁজ করেছেন, কিন্তু খুঁজে পাননি। মেয়েটির নাম- মাহী নওরীন সুরভী। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এবং কলেজ থেকে এস.এস.সি. এবং এইচ.এস.সি. দুটোতেই জিপিএ-৫ পেয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু কোন কারণে সে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। গত ২১-১১-২০১০ তারিখে নিজ বাড়ী মিজমিজি, কান্দপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে নিঁখোজ। তার বয়স ১৮, গায়ের রঙ ফর্সা, উচ্চতা ৫’-০১’’। তার পরনে ছিল গোলাপী রং-এর সালোয়ার কামিজ, মাথায় ঘিয়া রং-এর ওড়না, চোখে চশমা। কেউ যদি তার খোঁজ পান তবে নিম্নের ঠিকানায় যোগাযোগ করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানানো যাচ্ছে:
মো: ওয়াজেদ উল ফারুক
১০২, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা-১২১৫
মোবাইল নং: ০১৭১২২৪৬৩২৭, ০১৯২২১৯০৮৪৬, ০১৯২২৫৯৭৬৩১
(নিখোঁজ সংবাদটি ২৬-১১-২০১০ তারিখে 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' এবং ৩০-১১-২০১০তারিখে 'প্রথম আলো'-তে প্রকাশিত হয়েছিল)
[এই লিংকটি সবাই শেয়ার করুন। আপনার বন্ধু-বান্ধব সবাইকে জানিয়ে দেন। তাহলে হয়তো মেয়েটাকে খুঁজে পাওয়া আরও সহজ হবে।]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




