‘মুক্তিযুদ্ধে মেজর জিয়া’ কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই
মনিরুল চৌধুরী:
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই ধরনের লোক অংশ নিয়েছিলেন।
১. পাকিস্তানিদের অত্যাচার নির্যাতন ও বৈষম্যে সৃষ্ট ক্ষোভ এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয় যে, আর ওদের (পাকিস্তানিদের) সঙ্গে নয়, মুক্ত করব আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি, আমাদের ভাগ্য আমরাই নিয়ন্ত্রণ করব। বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা এখানে কাজ করেছিল।
২. যাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না বা ছিল কোনো সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য।
এখন দেখার বিষয় মেজর জিয়া এর কোন অংশে পড়েন। মেজর জিয়া সম্পর্কে যে অভিযোগ প্রতিমন্ত্রী কামরুল সাহেব উত্থাপন করেছেন তার যথার্থতা প্রমাণ করার জন্য কিছু প্রশ্ন তিনি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারতেন যেমনÑ
১. ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর মেজর জিয়া তার সঙ্গের অন্য অফিসারদের সাথে কোনো আলাপ করেছিলেন কিনা, করে থাকলে তা অবশ্যই ছিল তৎকালীন মেজর শওকত, ক্যাপ্টেন অলি ও ক্যাপ্টেন ভূঁইয়াসহ অন্য বাঙালি অফিসারদের সঙ্গে, যাদের অধিকাংশ এখনো জীবিত আছেন তারা কি বলবেন তাদের সঙ্গে কোনো আলাপ হয়েছিল কিনা বা কী আলাপ হয়েছিল?
২. একাত্তরের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে বাঙালি জওয়ানরা বিদ্রোহ করার পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সঙ্গে আর তাদের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন হয়নি, কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় মেজর জিয়া কী প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
৩. ২৫ মার্চ বিকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাসায় নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর কাছে থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের দিক-নির্দেশনা নিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় মেজর জিয়া কেন সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের জন্য চট্টগ্রাম পোর্টে যেতে আগ্রাবাদে জনতার ব্যারিকেডের মুখে পড়েন?
৪. মেজর জিয়া যখন সোয়াতের অস্ত্র খালাসের উদ্দেশে জনতার ব্যারিকেড ভাঙছেন তখন তার অনুপস্থিতিতে তারই ব্যাটালিয়ন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিকরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিদ্রোহ করে বসেন, তরুণ অফিসার শমসের মবিন চৌধুরী (পরবর্তীতে খুনি ফারুক রশিদদের দেখভাল করার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত জে. জিয়ার বিশস্ত সহকারী) ছুটে গিয়ে জিয়াকে খবর জানানোর পর বুদ্ধিমান জিয়া সাধারণ সৈনিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং জ্যেষ্ঠ অফিসার হিসেবে ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব্ দেন। এখানে প্রশ্নÑ যে রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেয়া ও বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনা করল, ইতিমধ্যে জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্ট খালি করে বাঙালি সেনারা বেরিয়ে গেলেন, সেখানে জিয়ার মতো একজন বাঙালি মেজরকে কিসের ভিত্তিতে সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাকিস্তানিরা দিয়েছিল?
৫. ২৭ মার্চ কালুুর ঘাট বেতার কেন্দ্রের কর্মকর্তা বেলাল মোহাম্মদ বেতার কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য মেজর জিয়াকে নিয়ে আসেন, সেখানে যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের ধমক খেয়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন কিন্তু ২৭ মার্চ বিকালে নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান বলে যে ঘোষণা দেন তা কি নেহায়েত ভুল ছিল না ছিল দুরভিসন্ধিমূলক (মাঝপথে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করা)?
৬। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী কেন মেজর জিয়াকে কিছুদিনের জন্য নজরবন্দি করে রাখেন? উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে একে খন্দকার (বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রী) সাহেবের ব্যাখ্যা দেয়া কি উচিত নয়? বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন যখন জাতীয় পার্টির নেতা তখন সংসদে বলেছিলেন যে, জিয়া তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে থাকা বেগম জিয়াসহ তার পরিবারকে মুক্তাঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এটা কীভাবে সম্ভব? হাফিজ সাহেব তখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত একজন সেনাকর্মকর্তা। আর তিনি এসেছেন একজন বিদ্রোহী সেনাকর্মকতা ও সেক্টর কমান্ডারের পরিবারকে নিয়ে যেতে সেটা কি লুকিয়ে নাকি পাকিস্তানিদের অনুমতিতে? নাকি হাফিজ সাহেব তথ্য সরবরাহে জিয়ার দূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন? জেনারেল জিয়া যখন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর হাফিজ তখন জে. জিয়ার এডিসি। ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ যখন অভ্যুত্থান করেন তখনও জে. জিয়ার পক্ষ ত্যাগ করে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মেজর হাফিজ আবার ১/১১-এর পর বিএনপি হাইজ্যাকার নেতা হাফিজউদ্দিন ভোলার উপনির্বাচনে মনোনয়ন পান। হাফিজ কি জে. জিয়া বিষয়ক তথ্য ভাণ্ডার?Ñ এটাই কী এর পিছনে রহস্য?
৭. সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান করেননি কেন? বঙ্গবন্ধু কি জে. জিয়াকে আস্থায় নেননি বা নিতে পারেননি? নাকি বঙ্গবন্ধু আগেই বুঝেছিলেন যে তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে জে. জিয়া বলবেনÑ ঝড় যিধঃ, ঠরপব চৎবংরফবহঃ রং ঃযবৎব (৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিল যখন জে. জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু সংবাদ দিয়ে বলেনÑ ঝরৎ চৎবংরফবহঃ রং ফবধফ তখন জিয়া বলেছিলেনÑ ঝড় যিধঃ ঠরপব চৎবংরফবহঃ রং ঃযবৎব)। বর্তমানে শক্তিশালী মিডিয়ার কাছে জাতির প্রত্যাশা উপরের প্রশ্নগুলোর আলোকে অনুসন্ধানী রিপোর্টের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করবেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাই যারা তখন জিয়ার সঙ্গে ছিলেন এবং ইতিহাসবিদরা সঠিক ইতিহাস উদঘাটন করে তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করবেন।
পরিশেষে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিপূর্ণ তথ্য জানার পরেই জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন।
সূত্র - Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




