এবার গোলাম আযমকে আনা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে
বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরেরর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শীঘ্র অধ্যাপক গোলাম আযমসহ আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট ট্রাইব্যুনালের প্রধান আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপুর হাতে দেয়া হবে। তদনত্মকারী সংস্থা সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছে, এখন শুধু সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায়। সবুজ সঙ্কেত পেলেই তদনত্মকারী সংস্থা রিপোর্ট প্রদান করবে। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ ৫জন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরম্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যুদ্ধাপরাধীদের বিরম্নদ্ধে তদনত্ম শেষে অভিযুক্তদের রিপোর্ট দেয়া হবে। সংশিস্নষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। আইন প্রতিমন্ত্রী ও ট্রাইবু্যনালের সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী তদনত্মকারী সংস্থা তদনত্ম করে যাচ্ছে। যথাশীঘ্র তা দেখতে পাবেন। বিচার শুরম্ন হয়ে গেছে। এখন পর্যায়ক্রমে যুদ্ধাপরাধীদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, দালাল আইনেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রসত্ম করতে একটি মহল নানামুখী ষড়যনত্ম করছে। বিচার বানচাল করতে বিদেশ থেকে প্রচুর অর্থ আনা হচ্ছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচার শুরম্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মোহাম্মদ কামারম্নজ্জামান, আব্দুল কাদের মোলস্না এবং মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার হচ্ছে। আগামী ১০ আগস্ট ট্রাইবু্যনালে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে হাজির করা হবে। অন্যদিকে অপর চার জনের বিষয়ে তাদের আইনজীবী যে ছয়টি আবেদন জমা দিয়েছে তারও শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমসহ আরও পাঁচ জনের বিরম্নদ্ধে তদনত্মকারী সংস্থা রিপোর্ট দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে তদনত্ম চলছে। সালাউদ্দিনের বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে ।
তদনত্মকারী সংস্থার অন্যতম কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা অধ্যাপক গোলাম আযমসহ অনত্মত আরও পাঁচ জনের বিষয়ে তদনত্ম করেছি। অপেৰা করছি । যে কোন সময় তাদের বিরম্নদ্ধে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে তা ট্রাইবু্যনালের আইনজীবীদের কাছে তুলে দেয়া হবে। আইনজীবীগণ পরবতর্ীতে তা ট্রাইবু্যনালের কাছে জমা দেবেন। তিনি আরও বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিষয়টিও তদনত্ম করা হচ্ছে। তবে তার বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তদনত্ম সংস্থায় তদনত্ম কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়ে গেছে। সে জন্য শীঘ্রই তদনত্মকারী কর্মকর্তাদের কয়েকটি টিমে ভাগ করে দেয়া হবে, যাতে কাজের গতি বাড়ে এবং নির্ভুলভাবে কাজ করা যায়।
চলতি বছরের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য পুরাতন হাইকোর্ট চত্বরে আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে বিচারক, আইনজীবী এবং তদনত্ম কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। প্রথমে তদনত্ম কর্মকর্তা হিসেবে ৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রধান তদনত্ম কর্মকর্তা আব্দুল মতিনের বিরম্নদ্ধে গুরম্নতর অভিযোগ ওঠে । তিনি ৫ মে পদত্যাগ করেন। আরও এক তদনত্ম কর্মকর্তা প্রমোশন নিয়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে তদনত্ম সংস্থায় ৫ জন কর্মকর্তা নিয়েই কাজ চালিয়ে যেতে হয়। এর পর আরেক দফায় ছয় এবং তৃতীয় দফায় আরও ছয় জন কর্মকতর্া নেয়া হয়। এ নিয়ে তদনত্মকারী সংস্থায় বর্তমানে ১৭ কর্মকর্তা কাজ করছেন। তদনত্মকারী সংস্থার পাশাপাশি আইনজীবীগণও তদনত্ম কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বার বার পরীৰা করে সিদ্ধানত্ম নিতে হচ্ছে, যার কারণে একটু সময় বেশি নিচ্ছে।
যু্দ্ধাপরাধীদের বিচার যখন চলছে তখন এই বিচারকে বাধাগ্রসত্ম করতে নানামুখী তৎপরতা চলছে। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিগণ-এর বিরম্নদ্ধে সজাগ থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সংবিধান সংশোধন বিষয়ক কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় দালাল আইনেও বিচার করা হবে। ২০০৮-এর নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের ও ইতিহাস বিকৃতকারীদের পরাজয় হয়েছে। একটি জাতির ইতিহাসে দু'জন পিতা কিংবা স্থপতি থাকতে পারে না। তিনি শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। অন্যদিকে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রসত্ম করতে একটি বিশেষ মহল নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। এলজিইডি মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উপলৰে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেছেন। অর্থাৎ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঠিক তখন একটি মহল নানাভাবে এর বিরম্নদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল ঢাকা সহায়ক মঞ্চের আহ্বাকয় শাহরিয়ার কবির বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরম্নদ্ধে প্রতিপৰের বহুমাত্রিক চক্রানত্ম চলছে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে তখন থেকেই ৭১-এর ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাদের পায়ের তলার মাটিতে ধস নেমেছে। মহাজোট সরকার ৰমতায় আসায় জামায়াতের বহু কর্মী দলত্যাগ ও দেশত্যাগ করেছে। ধ্বংস অনিবার্য জেনে জামায়াতের নেতাকমর্ীরা এখন উন্মাদের মতো আচরণ করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য জামায়াত তাদের দেশী-বিদেশী মিত্রদের সঙ্গে বহুমাত্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক প্রণীত আনত্মর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবু্যনালস) আইন ১৯৭৩-এর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। এই আইনে অপরাধের সংজ্ঞ, বিচার পদ্ধতি, অভিযুক্তের আত্মপৰ সমর্থনের সুযোগ ও শাসত্মি সম্পর্কে সবই বলা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি, জাপানও ফিলিপিন্সসহ বহু দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এই সব ট্রাইবু্যনালে কখনও চিরাচরিত সাৰ্য আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। প্রচলিত ফৌজদারী আইনে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার বিচার সম্ভব নয় বলেই জার্মানির নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় নু্যরেমবার্গের বিশেষ আদালতে বিশেষ বিধান প্রণীত হয়েছিল। বাংলাদেশের ৭৩-এর আইনে এ বিষয়গুলো সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের আগে পৃথিবীর কোন দেশ মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধ, শানত্মির বিরম্নদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার বিচারের জন্য স্বয়ংসমপূর্ণ নিজস্ব আইন প্রণয়ন করতে সৰম হয়নি।
ট্রাইবু্যনালের বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। বিধিতে পরিষ্কারভাবে তদনত্মকারী সংস্থা, আইনজীবী এবং ট্রাইবু্যনালের ৰমতা ও কার্যাবলী উলেস্নখ করা হয়েছে। অথচ সন্দেহভাজন যে পাঁচ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, তাদের আইনজীবীগণ ট্রাইবু্যনালের গঠনকেই অবৈধ বলে মনত্মব্য করেছেন। ট্রাইব্যুনাল যে ভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। অন্যদিকে সরকারপৰের আইনজীবীদের বক্তব্য: আসামীপৰের আইনজীবীগণ ট্রাইবু্যনালের আইনটি সমপূর্ণ পড়েননি। আইনে সুন্দরভাবে দেয়া আছে কী কী অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধীদের এই ট্রাইবু্যনালের মুখোমুখি হতে হবে। আইনের ৩(২) ধারায় পরিষ্কারভাবে দেয়া আছে কাদেরকে আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের সামনে হাজির হতে হবে। ১৯৭১ সালে নরহত্যা, উচ্ছেদ, ক্রীতদাসতুল্য জবরদসত্মি, ,বিতাড়ন, কয়েদ, অপহরণ, আটক, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ; রাজনৈতিক, গোষ্ঠীগত, উপজাতিগত বা ধমর্ীয় কারণে অপরাধ সংঘটিত হয়েছি। এ সবই মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধ।
শানত্মি-বিরম্নদ্ধ অপরাধের মধ্যে রযেছে_ আনত্মর্জাতিক চুক্তিসমূহ, মতৈক্যসমূহ কিংবা প্রতিশ্রম্নতিসমূহ ভঙ্গ করে যুদ্ধের পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, পদৰেপ নেয়া বা যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। গণহত্যার মধ্যে রয়েছে_একটি জাতি, উপজাতি, নরগোষ্ঠী, ধমর্ীয় কিংবা রাজনৈতিকভাবে সমপূর্ণ কিংবা আংশিক নিশ্চিহ্ন করা। আর যুদ্ধাপরাধের মধ্যে রয়েছে_বাংলদেশ রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে যুদ্ধের আইন কিংবা প্রথা ভঙ্গ করে বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা নির্যাতন, জবরদসত্মি করে অন্যত্র স্থানানত্মর করা।
এখন পর্যনত্ম যে ৫ জনের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো তাদের মধ্যে রয়েছে। তদনত্মকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বার বার যাচাই-বাছাই করেই নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারম্নজ্জামান এবং কাদের মোলস্নার বিরদ্ধে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। আগামীতে যাদের বিরম্নদ্ধে রিপোর্ট দেয়া হবে সেগুলোও যাচাই-বাছাই করেই দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেনারেল গুল হাসানের স্মৃতিকথা থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। শীঘ্রই গোলাম আযমসহ আরও ৫ জনের বিষয়ে রিপোর্ট দেয়া হবে। যেহেতু এখন ট্রাইবু্যনালে ৫ জনের বিরম্নদ্ধে বিচার চলছে, তাই কয়েক দিন অপেৰা করছি। সময় হলেই সবকিছু দেখতে পারবেন।
জনকন্ঠ ৮ আগস্ট ২০১০
আলোচিত ব্লগ
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।