নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর ফের সক্রিয় : রাতের আঁধারে মসজিদে, দেয়ালে পোস্টার গৃহশিক্ষক হয়ে সদস্য সংগ্রহের কৌশল
শরীফুল ইসলাম :
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজধানীতে। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এলাকা কুড়িলের বিভিন্ন দেয়ালজুড়ে গত কয়েক দিনে লেগেছে সংগঠনটির হাজার হাজার পোস্টার। নর্দা, মোহাম্মদপুরসহ অনেক এলাকার দেয়ালও ছেয়ে গেছে একই পোস্টারে। জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদে বিলি করা হয়েছে লিফলেট। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়-য়া যুবকদের নিয়ে কয়েকটি এলাকায় বৈঠকও হয়েছে। অথচ এসবের কিছুই জানে না পুলিশ।
জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ হওয়ার মাত্র ১০ মাসের মাথায় হিযবুত তাহরীরের এভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠাকে খুব একটা আমলে নেয়নি গোয়েন্দারাও।
সূত্র মতে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে মসজিদে মসজিদে লিফলেট বিতরণ, দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটোনো ও গোপনে মহল্লায় মহল্লায় গণসংযোগসহ বিভিন্ন কৌশলে সাংগঠনিক কার্যক্রম ইদানীং আবারো জোরদার করছে হিযবুত তাহরীর। গত বছরের ২২ অক্টোবর নিষিদ্ধ হওয়ার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে সংগঠনের প্রধান মহিউদ্দিনসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিল অন্যরা। তবে ভেতরে ভেতরে তাদের কার্যক্রম থেমে থাকেনি। মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের কয়েকদিন পর হঠাৎ একযোগে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের পর লিফলেট বিলি করে হিযবুত তাহরীর। এ সময় তাদের বেশ কয়েকজন কর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়। পরে মাস কয়েক প্রকাশ্য কার্যক্রম বন্ধ রেখে সম্প্রতি তারা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, রাজধানীর বাড্ডা থানার কুড়িল ও গুলশান থানার নর্দা এলাকা এখন হিযবুত তাহরীরের বড় আস্তানা। নর্দা সরকার বাড়ি জামে মসজিদে প্রতি জুমার পর এই সংগঠনের বৈঠক বসে। ওই এলাকার মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর হিযবুত তাহরীর লিফলেট বিতরণ করা হয়। আগে সংগঠনের যুবকরা হাতে হাতে এ লিফলেট বিলি করতো। তবে এখন কৌশল বদলে তারা মসজিদের কোনো একটি জায়গায় লিফলেটগুলো রেখে দিয়ে চলে যাচ্ছে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা কৌতূহলবশত সেই লিফলেট হাতে তুলে নিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিটি মহল্লার দেয়ালেও সংগঠনটির অসংখ্য পোস্টার দেখা গেছে। এলাকার কেউ কেউ এসব পোস্টার ছিঁড়ে ফেললে পরদিনই দেখা যায় সেখানে নতুন পোস্টার লাগানো হয়েছে। প্রতিদিন গভীর রাতে কে বা কারা এসব পোস্টার লাগিয়ে দিয়ে যায় তা নিয়ে স্থানীয়রা মুখ খোলেন না। এ নিয়ে এলাকায় এক ধরনের আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে।
সরজমিন রাজধানীর নর্দা ও কুড়িল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি পোস্টার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ মুখে যমুনা ফিউচার পার্কের পশ্চিম পাশের দেয়ালে। দক্ষিণ কুড়িলের মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান সরণির প্রায় প্রতিটি বাড়ির দেয়ালেই হিযবুত তাহরীরের পোস্টারে ঢাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক স্টেশনারি দোকানের মালিক জানান, কয়েক দিন পর পর দেয়ালে হিযবুত তাহরীরের নতুন নতুন পোস্টার লাগানো অবস্থায় দেখি। কিন্তু কারা তা লাগায় তা কখনো দেখিনি। সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত আমরা দোকানে থাকি। তবে মনে হচ্ছে ভোর রাতের দিকে কে বা কারা এসে এসব পোস্টার লাগিয়ে দিয়ে যায়।
কুড়িল ও নর্দার বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো হিযবুত তাহরীরের পোস্টারে লেখা আছে ‘১৯৭২-এর সংবিধানে ফেরত যাওয়া বা ৫ম সংশোধনী বহাল রাখার দাবি নয়, ইসলামি সংবিধান ও খিলাফতের দাবি তুলুন’, ‘হে মুসলিমগণ, পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে আমরা যেভাবে আল্লাহর আদেশ পালন করছি, ঠিক তেমনি ইসলামি সংবিধান ও খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফরজ দায়িত্ব পালন করুন’। পোস্টারের নিচে অপেক্ষাকৃত বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে হিযবুত তাহরীর এবং সবচেয়ে নিচে ছোট অক্ষরে লেখা রয়েছে উলাইয়াহ বাংলাদেশ।
এ ব্যাপারে গত সোমবার রাতে বাড্ডা থানার ওসিকে ফোন করা হলে ফোন রিসিভ করে এসআই মোঃ শাহজাহান বলেন, কুড়িল এলাকায় হিযবুত তাহরীর পোস্টার লাগিয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রতি আমরা সতর্ক রয়েছি। তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগেও আমরা এই সংগঠনের কয়েকজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছি।
পোস্টার লাগানোর বিষয়ে কিছুই জানেন না উল্লেখ করে গুলশান থানার ওসি কামাল উদ্দিন বলেন, আমার কোনো টহল দল আমাকে এ বিষয়টি অবগত করেনি। তবে মাস তিনেক আগে মহাখালী এলাকা থেকে পোস্টার ছাপানোর চেষ্টাকালে হিযবুত তাহরীরের ২ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। নর্দা সরকার বাড়ি মসজিদে বৈঠকের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
নর্দা এলাকার অধিবাসী দৈনিক আজকের বাণীর সম্পাদক ও শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাল্যশিক্ষার চেয়ারম্যান আলহাজ আতিকুল ইসলাম বলেন, এলাকায় কখন কিভাবে হিযবুত তাহরীর দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে যায় তা জানি না। তবে যেহেতু এটি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ সংগঠন তাই তাদের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, হিযবুত তাহরীর কিভাবে এলাকায় লিফলেট পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণা চালায় তা দেখার দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থারই।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে সম্প্রতি ইসলামী ছাত্রশিবির থেকে যারা পদত্যাগ করেছে তাদের দলে টানছে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর। দলের নেতাকর্মীদের অভিজাত প্রভাবশালী পরিবারে গৃহশিক্ষক নিয়োগ করে ওই পরিবারের সদস্যদের সমর্থন আদায় করে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধির কৌশল নিয়েছে তারা। প্রভাবশালী পরিবারের গৃহশিক্ষক হওয়ার সুবাদে তারা অবাধে এলাকায় সংগঠনের প্রচারণা চালাতে পারছে। এ ছাড়াও নতুন উদ্যমে বিভিন্ন এলাকায় টার্গেট করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দলে টানার চেষ্টা করছে সংগঠনের সিনিয়র নেতারা।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান লে. কর্নেল জিয়া উল আহসান বলেন, লিফলেট বিলি ও পোস্টার লাগানোর বিষয়টি তাদের গোচরে এসেছে। তবে এরা গোপনে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ায় এখনো তাদের ধরা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে তারা শিগগিরই পদক্ষেপ নেবেন।
ভোরের কাগজ - ১৮ আগস্ট ২০১০
নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর ফের সক্রিয় : রাতের আঁধারে মসজিদে, দেয়ালে পোস্টার গৃহশিক্ষক হয়ে সদস্য সংগ্রহের কৌশল
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।