somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যে নোবেল পেলেন মারিও ভার্গাস য়োসা

০৮ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাহিত্যে নোবেল পেলেন মারিও ভার্গাস য়োসা

লাতিন আমেরিকার ক্ষমতাকাঠামো আর দুর্নীতির বহুরূপী বৈশিষ্ট্য শব্দের বুননে প্রকাশ করতে সচেষ্ট মারিও ভার্গাস য়োসা চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। সুইডিশ একাডেমী গতকাল বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল জয়ীর নাম ঘোষণা করে। পেরুর লেখক য়োসার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে নোবেল কমিটি বলেছে, তাঁর লেখায় ক্ষমতার কাঠামো এবং ব্যক্তির প্রতিরোধ, বিদ্রোহ ও পরাজয়ের মর্মভেদী চিত্রের সুনিপুণ উপস্থাপন রয়েছে। ১৯৮২ সালের পর তিনিই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান।
৭৪ বছর বয়সী য়োসা লাতিন আমেরিকার একজন খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক। বিচিত্র তাঁর জীবন। ১৯৯০ সালে তিনি পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ইরাক যুদ্ধের একনিষ্ঠ সমর্থক মারিও ভার্গাস য়োসা একসময় ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোর অনুসারী। কিন্তু পরে কাস্ত্রোর মতাদর্শ ত্যাগ করে ঝুঁকে পড়েন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের আদর্শের দিকে। তিনি স্প্যানিশ ভাষার সবচেয়ে সম্মানজনক সেরভেন্তেজসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর প্রথম সফল উপন্যাস 'দ্য গ্রিনহাউস' প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে। অন্য সফল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে 'কনভারসেশন ইন দ্য ক্যাথিড্রাল' ও 'দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট'।
মারিও ভার্গাস য়োসা ১৯৩৬ সালের ২৮ মার্চ পেরুর আরেকুইপা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁকে লিওনসিও প্রাদো মিলিটারি একাডেমীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময়কার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাস 'দ্য টাইম অব দ্য হিরো' প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে।
১৯৫৫ সালে য়োসা তাঁর চেয়ে ১৩ বছরের বড় চাচি জুলিয়াকে উরকিদিকে বিয়ে করেন। তিনি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির হয়ে সাংবাদিকতা করেছেন। এ ছাড়া রেডিও-টেলিভিশন ফ্রঁসেতে কাজ করার জন্য ফ্রান্সে চলে যান ১৯৫৯ সালে। এর ছয় বছর পর য়োসা তাঁর ভাতিঝি প্যাট্রিসিয়া য়োসাকে বিয়ে করেন। এই স্ত্রীর ঘরে তাঁর তিন সন্তান রয়েছে।
য়োসার লেখা সাহিত্যমহলে সুনাম অর্জন করে। 'ক্যাপ্টেন পানতোহা অ্যান্ড স্পেশাল সার্ভিস', 'আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার' ইত্যাদি রচনা সাহিত্যজগতে তাঁকে স্থায়ী আসন দেয়।

সূত্র : এএফপি, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ও বিডিনিউজ অনলাইন।
========================================
সাহিত্য আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বৈসাদৃশ্য

বেলাল চৌধুরী

এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন মারিও ভার্গাস য়োসা। তিনি বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ শিল্প-প্রকরণের ভেতর দিয়ে বহুমুখী পেরুভীয় সাংবাদিক, রচনাকার ও ঔপন্যাসিক, যার দৃষ্টিভঙ্গি একটি তীক্ষ্ন সামাজিক চেতনা তাঁর রচনারীতি ও বাগধারায় অন্যতম বৈশিষ্ট্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বিগত শতাব্দীর আশির দশকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগে কাজ করতে এসেছিলেন কার্লোস আরানাগা নামের এক সপ্রতিভ যুবক। ঢাকায় আসার আগে তাঁর পোস্টিং ছিল কলকাতায়। ঈষৎ শ্যামলা রঙের আরানাগাকে দেখলে মনে হতো পাশের বাড়ির তরুণ। তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন এইভাবে। তাঁকে দেখলে বোঝার উপায়ই ছিল না, তিনি বাঙালি নন। আসলে তিনি ছিলেন পেরুর বংশোদ্ভূত। কিভাবে যেন তাঁর চেহারা-সুরতে বাঙালিয়ানার ছাপ বিভ্রম ঘটাতে সাহায্য করত।
গুলশান-২ নম্বরে ছিল তাঁর সরকারি আবাস। ঘরে ঢুকলেই প্রথমে দৃষ্টিতে যেটা চোখে পড়ত, ডিপ্লোমেটিক গৃহসজ্জার মাঝখানে একটা বিশাল বইয়ের র‌্যাক। কাছে গেলে দেখা যেত ওই শেলফ-ভর্তি বই শুধু একজন লেখকের, যাঁর নাম মারিও ভার্গাস য়োসা। পেরুভিয়ার অধিবাসী। একবার তো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে হেরে গিয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর লাতিন আমেরিকার বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত সামগ্রিক অবস্থার সর্বাগ্রগণ্য সাক্ষী তিনি। জন্মেছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিম পেরুর সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারে। এক বছর হতে না হতেই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কারণে মারিওকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলিভিয়ার কোচাবাম্বায়, যেখানে ১০ বছর পর্যন্ত তিনি মা এবং মাতামহ-মাতামহীর সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন; যত দিন না মা-বাবা তাঁদের পরস্পর ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়ে পুনর্বার পেরুতে ফিরে আসেন। তারপর স্বল্প বয়সে মিলিটারি একাডেমীতে পড়াশোনা করে য়োসা মাদ্রিদে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পেরুতেই সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
তারপর ১৯৫৯ সালে তাঁর প্যারিতে যাওয়া। আর কিছু ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশের মাধ্যমে য়োসার লেখক-জীবনের শুরু। এ পর্বে তাঁর প্রথম দিককার উপন্যাসগুলো ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী আত্মজীবনী_দুটি ভিন্ন পাঠের সমন্বয় আর বামঘেঁষা সামাজিক ধারাবাহিক ভাষ্য। সামরিক একাডেমিক অভিজ্ঞতা নিয়ে দ্য টাইম অব দ্য হিরো সর্বোৎকৃষ্ট রচনা।
এরপর ১৯৭০-এর দিকে য়োসা বার্সেলোনা ঘুরে পাঁচ বছরের মাথায় ফের পেরুতে চলে আসেন। এ সময় থেকেই তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিবর্তন সূচিত হতে শুরু করে। শুরুর দিকে য়োসা প্রবলভাবে কিউবার কাস্ত্রর উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। দ্য রিয়েল লাইফ অব আনেহান্দ্রো যেইতাতে মনে হচ্ছিল য়োসা তাঁর উপন্যাসে ওইরকম প্রকল্পের বৈধতা নিয়ে অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থেকে তাঁর মধ্যে অপ্রতুলতা দেখে হতাশ হলেন। ১৯৯৩ সালে পেরুর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রক্ষণশীল দলের প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন তিনি।
যেহেতু তাঁর উপন্যাসগুলো কৌতুককর আর পরাবাস্তব, মর্মন্তুদ আর আশাবাদী আর যেহেতু তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ এতই অন্ধকারাচ্ছন্ন আর বিষণ্ন; পূর্বপরিকল্পিত কোনো ধারণা নিয়েই য়োসাকে পড়া সবচেয়ে ভালো। তাঁর সেরা সাহিত্যকর্ম দ্য ফিস্ট অব গোট সম্ভবত রচিত বীজকোষের লেখক-জীবনে মহত্ত্বের পরিচায়ক। যেমন অনুসন্ধানমূলক, তেমনই লাতিন আমেরিকাকে তন্ন তন্ন করে বোঝার সহায়ক। কিন্তু যখন এর মানুষজনকে বিচার করতে গিয়ে তাঁদের দোষারূপ করতে একেবারেই নারাজ য়োসা।
ওই একই বিষয়ে তিন-তিনজন লাতিন আমেরিকার সমসাময়িক লেখক কলম্বিয়ার গার্ব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, পেরুর মারিও ভার্গাস য়োসা, প্যারাগুয়ের অগাস্তে রোয়বাস্তুর ঠিক করেছিলেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তিনজনই একটি করে একাডেমিক সন্ধর্ভ লিখবেন। তারই ফসল হিসেবে মার্কেজ লিখলেন দি অটম অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক, আর য়োসা লিখলেন ডমিনিকান রিপাবলিকের তুহিইতারুক নিয়ে দ্য ফিস্ট অব গোট। প্যারাগুয়ের অগাস্তে রোয়বাস্তুরয়ের আই দ্য সুপ্রিম। এর মধ্যে একমাত্র য়োসার রচনাতেই চেনা যায় যে মূল ডিক্টেটরটি কে?
একসময় মার্কেজ আর য়োসা খুবই বন্ধু ছিলেন। কিন্তু পরে সে বন্ধুত্বে চির ধরে যায় নেহাত ব্যক্তিগত কিছু কারণে। এ বছর লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের ২০০ বছর উদ্যাপন করা হচ্ছে। সুতরাং সেদিক থেকে দেখতে গেলে এ বছর মারিও ভার্গাস য়োসার নোবেল প্রাপ্তি খুবই ন্যায্য।
লেখক : কবি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×