somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৫: অপরাজেয় বাংলা

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পাঁচ.

ঢাকায় ফিরে প্রথমেই ফোন করলাম সৈয়দ হামিদ মকসুদকে। বারংবার ফোন করার পরও কেউ ফোন ধরেন না ঐ প্রান্ত হতে। হতাশ হয়ে চিটাগাং এ খালিদ ভাইকে ফোন করি, তিনিও ফোন করে যান কোন উত্তর পান না। এই সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে হলেন অপরাজেয় বাংলার রাইফেল হাতে ছাত্র মূর্তির মডেল। ১৯৭৩ সালে ছাত্র ছিলেন, খালিদ ভাইয়ের অনুরোধে মডেল হয়ে ছিলেন অপরাজেয় বাংলার।

পর পর কয়েক দিন ফোন করে ক্ষান্ত দিলাম আপাতত। আবার ঐ দিকে মধ্যখানের কৃষক ফিগারের মডেল বদরুল আলম বেনু তার ও কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না খালিদ ভাই ঢাকা আসার আগ পর্য্যন্ত। ফোন ঘোরালাম সালেহ চৌধুরীর নাম্বারে। বার কয়েক চেষ্টার পর তাকে পাওয়া গেল। এপয়েন্টমেন্ট চাইতেই পেলাম।

রমজান শুরু হয়ে গেছে, নির্ধারিত দিনে দুপুরের আগে উত্তরায় হাজির হলাম। ছোট নাতনীকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের এক বীর সৈনিক। লিভিং রুমে বসে ক্যামেরা লাইট ঠিক করছি শান্ত চাপা স্বরে বলল, যাক এই মুক্তি যোদ্ধা অন্তত সুখে শান্তিতে ভালো আছে। ব্যাপারটা এমন দাড়িয়েছে যে একালে মুক্তি যোদ্ধা মানেই পঙ্গু অসহায় সম্বল হীন কিছু দুস্থ মনুস্য সম্প্রদায়! কখনোবা পত্রিকার শিরোনাম, মুক্তি যোদ্ধা রিক্সাচালক অথবা মুক্তি যোদ্ধা ভিক্ষুক! নিজের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা হাতড়ে ভেবে দেখলাম এই প্রজন্মের অনেকের কাছেই মুক্তি যুদ্ধ মানে মাঝ বয়সি কিছু মানুষের বোরিং কিছু আলাপ আর মুক্তি যোদ্ধা মানে হতদারিদ্র একটা কিছু। ব্যাপারটা আমার মাথায় একটা অস্বস্থি হয়ে খোঁচা দেয় সব সময়।


এতক্ষনে বলে নি কে এই সালে চৌধুরী। তিনি ১৯৭১ এর এক জন বীর মুক্তি যোদ্ধা। পেশায় সাংবাদিক, স্বাধীনতার আগে ও পরে কাজ করতেন দৈনিক বাংলায়। ১৯৭৩ তে সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ যখন এলিফেন্ট রোডের এ্যারোপ্লেন মসজিদের উল্টোদিকে কাম্পালা রেষ্টুরেন্টের দোতলায় অপরাজেয় বাংলার মডেল ভাষ্কর্য্যটি নির্মান করছিলেন তখন তিনি তার কাজটি দেখতে সাংবাদিক সালেহ্ চৌধুরীকে নিমন্ত্রন জানান। কাজটি দেখে বিমুগ্ধ সাংবাদিক দৈনিক বাংলায় একটি লেখা লিখেন। যার শিরোনাম ছিল অপরাজয় বাংলা, তরুণ শিল্পীর অনুপম ভাস্কর্য । লেখাটি ছাপা হয় ২২ জুলাই ১৯৭৩ এ। এর পর থেকেই লোক মুখে মুখে এ ভাস্কর্যটির নাম অপরাজেয় বাংলা হয়ে যায়।

সালে চৌধুরীর কাছে জানলাম আবদুল্লাহ খালিদের আরো কিছু শিল্প কর্মের নাম ও তারই দেয়া। এই মুহুর্তে চাঁদ পুরে করা স্টেনগান হাতে "অঙ্গিকার" ভাস্কর্যটির কথা মনে পড়ছে। এই নামটিও দিয়ে ছিলেন সালেহ চৌধুরী। মজার কথা হলো সৈরাচারী প্রেসিডেন্ট এরশাদ এই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করবেন এই কথা শুনতে পেয়ে শিল্পী সেই অনুষ্ঠান সেদিন শুধু বর্জনই করেন নাই কাজটির জন্য পাওনা পারিশ্রমিকও অভিমানী এই শিল্পী আর নেন নাই।

সালেহ চৌধুরীর স্বাক্ষাতকারের যে অংশটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো তা এই মুহুর্তে শেয়ার করছি। বাঙালি মুসলমানের মূর্তি সম্পর্ক নিয়ে তিনি বললেন, "বাঙালি মুসলমানদের শিল্পের অন্নান্য যায়গায় কিছুটা কদরদারিত্ব থাকলেও ভাস্কযেৃর সাথে কোনো কদরদারী নাই। আমাদের দেশে কোনো প্রাচীন ভাস্কর্য নাই। আমরা মূর্তি বিরোধী। যেখানে মিডলইষ্টের মত কট্টর দেশগুনাতেও সেই প্রাচীন কালের মূতিৃগুলোকেও ওরা অতী যত্নের সাথে রক্ষা করে চলেছে। আমরা সেটা করি নাই। যেভাবেই হউক আমাদের মধ্যে একটা মানসিক পরিবর্তন এসে গেছল। এখানে এই অপরাজেয় বাংলাটা তৈরী হবার পরে বাঙালি মুসলমানদের অথবা আমাদের এই বাংলাদেশীদের মনে মূর্তি বা ভাস্কর্যের প্রতি একটা মমত্ববোধ জন্মে। আজকের বাংলাদেশে মোটামুটি সাত আটটি জেলা বাদে বাদবাকী প্রতিটি শহরেই একটি করে মূর্তি বা ভাস্কর্য আছে মুক্তি যুদ্ধ বিষয়ক একটা কিছু নির্মান আছে। এটার কিছু্ই হতো না যদি অপরাজেয় বাংলা না হতো। "

উত্তরা থেকে ফিরে চিন্তা করতে থাকলাম হোয়াট ইজ নেক্সট্? অপরাজেয় বাংলার দুই মডেলকে খুজে না বার করা পর্য্যন্ত শান্তি নাই। লিখলাম একটা সাময়িক ব্লগ। অপরাজেয় বাংলার মাঝখানের কৃষক ফিগারটির মডেল শিল্পী বদরুল আলম বেনুর সন্ধান চেয়ে। সাথে খুজলাম অপরাজেয় বাংলা নির্মান সময়ের কোন ফিল্ম বা ভিডিও ফুটেজ যদি কোথাও পওয়া যায়। কেউ কেউ ব্লগটি পড়লেন কিন্তু তেমন কোন খোজ খবর দিতে পারলেন না। পোষ্টটি পরপর কয়েকবার রিপিট করে ক্ষান্ত দিলাম। অনেক ব্লগারই দেখলাম এ ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ পেলেন না। আমি মনে মনে হিসেব করে নিলাম এই খানে ডিম রান্নার রেসিপির খোজটা বরং ভালো পাওয়া যায় অপরাজেয় বাংলার ছবির খোজ পাওয়া যাবে না।

মন্ট্রিয়লে একই ইনিষ্টিটিউট থেকে প্রাফিক্স ডিজাইনে পাশ করে দীর্ঘ দিন যাবত বাংলাদেশে কাজ করছে আমার বন্ধু রবি খান । ফোন করলাম রবি মানে তুহিন কে। আমি ঢাকায় ফিরেছি মাত্র ক'সাপ্তাহ হলো এর মধ্যে কোন বন্ধুবান্ধব কারো সাথেই যোগাযোগ করি নাই। আমার আসার ঘবর তুহিনকে বলে ছিলাম ফেইস বুকে, তুহিন বলল বন্ধু আজকে বিকালে চলি আস চারুকলার উল্টাদিকের ছবির হাটে। আমি বললাম ঠিকাছে...

(চলিবেক)



মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ১: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ২: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৩: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৪: অপরাজেয় বাংলা

ওয়েব ঠিকানা, অপরাজেয় বাংলা
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৪
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×