মেডিকেল, আইডি – ভিসা রিনিউ এসব করতে যেয়ে বুঝলাম আমার প্রবাস জীবনের তিন বছর হতে যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী তিন বছর পর পর করতে হয়। ঘড়ির কাটা কত দ্রুত দৌড়ায়, ক্যালেন্ডারের পাতাও দ্রুত উল্টায় ! মনে হচ্ছে এইতো সেদিন দুই বার ফ্লাইট মিস করে তৃতীয় বারে ফ্লাইট ধরলাম সময় এক অদ্ভুত জিনিস। ছোটবেলায় মুখস্ত করা বাণী, সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। চলছে তো চলছেই। বিষয়টি নিয়ে যতই ভাবা যায় ততই মিশ্র অনুভূতির এক শিহরণ বয়ে যায় !!

তিন বছর আগে আজকের দিনেই প্রবাসের ফ্লাইট ধরেছিলাম। আসার দিনের গল্পটা একটু অন্যরকম । সকাল সাড়ে নয়টায় ফ্লাইট ধরতে সাড়ে সাত টায় এমিরাট এয়ারলাইন্স কাউন্টারে আসছি, সুরেলা কন্ঠী জানালো, সরি স্যার আপনার বোডিং পাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো থেকে আপনার ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স(স্মার্ট আইডি কার্ড) নিয়ে আসতে হবে। এই কার্ড করতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। কিভাবে , কোথায় যেয়ে করবো বিস্তারিত বলে দিলেন। জরুরি ভাবে করলে তিন দিনেই পেয়ে যেতে পারেন।তার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ফ্লাইট সময় সকাল সাড়ে নয়টার পরিবর্তে সন্ধ্যা সাত টায় করে মতিঝিলে জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো অফিসে যাচ্ছি। সকালের জ্যাম ঠেলে বিমানবন্দর থেকে মতিঝিলে যাওয়া আর ঢাকা টু দুবাই প্রায় সমান সময় দূরত্ব
মতিঝিল যেতে যেতে পাপ্প ভাইকে পেয়ে গেলাম। তিনি সব কিছু সেট করে রাখবেন বলে দ্রুত ব্যুরো অফিসে যেতে বললেন। অনেকটা পাসপোর্ট করার মতো, কোথায়ও ছবি তুলছি কোথায়ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে মতিঝিলের এক অফিস থেকে আরেক অফিস যাচ্ছি। নিজেই নিজের ফাইল নিয়ে এক রুম থেকে আরেক রুম স্বাক্ষর করে বেড়াচ্ছি। তিন দিনের কাজ তিন ঘন্টায় শেষ করে পাপ্প ভাই আইডি কার্ড দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, লিটন দৌঁড়াও তোমার স্যাটোল (ফ্লাইট) ছেড়ে দিবে। পাপ্প ভাইকে ধন্যবাদ দিয়ে মতিঝিল টু বিমানবন্দর , আসতে আসতে সন্ধ্যা ৬ টা। অবধারিত ভাবে সাত টার ফ্লাইট মিস করলাম। এবার ঠিক হলো রাত সাড়ে ৯ টার ফ্লাইটে আসবো, এটা নির্ভর করছিলো সিট প্রাপ্যতার উপর। দুবাই অফিস থেকে দ্বিতীয় বারের মত টিকিট কেটে রাত সাড়ে ৯ টার ফ্লাইট কনফার্ম করে জানালো।
দুবাই থেকে ফজলু ভাই বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছিলেন। ভাইকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না। অসম্ভব ভালো একজন মানুষ। ফজলু ভাইয়ের কাছে অনেক ঋনী । টাকা পয়সার ঋন না, ভালোবাসার ঋন। এই ঋনের বোঝা অনেক বেশি !!
সারাদিন ছুটোছুটিতে শরীর ,মন দুটোই বেশ ক্লান্ত । এবার কি মনে করে আইডি কার্ড হাতে নিয়ে দেখি আমার নামের বানান ভুল। পাপ্প ভাইকে বলতেই -লিটন কোনো সমস্যা নাই, তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে ভুল হয়ে গেছে। ইমিগ্রেশনে সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিও। দুরুদুরু বক্ষে কম্পিত চরণে প্রতীক্ষা করছি আর ভাবছি আমার কপালে হয়তো আরো নিগ্রহ আছে ।
বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় একটু টেনশন করছিলাম। ইমিগ্রেশন পুলিশ পাসপোর্ট, ভিসা পেপার উল্টেপাল্টে দেখল। বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ, আমি সেখানে কিভাবে যাচ্ছি এসব নিয়ে পেশাসংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন করলেন। ভিসা পেপারে ইঞ্জিনিয়ার ক্যাটাগরি দেখে একটু হেসে “ও আপনি তো ইঞ্জিনিয়ার , গুড লাক !” বলে আমার পাসপোর্ট বাড়িয়ে দিলেন। অজানাকে জানার আর অচেনাকে চেনার ইচ্ছা, জীবন-জীবিকার তাগিদ এবং সোনালী স্বপ্নের হাতছানিতে হয়ে যাই একজন প্রবাসী।
এর আগে পরে আরও অনেক কাহিনী। সেই কাহিনী আরেকটু লম্বা, সময় নিয়ে আরেকদিন লিখবো !! শুভ প্রবাস জীবন !!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




