লিখতে তো বসলাম, কিন্তু কি লেখা যায়? আজ ছুটি, পড়াশোনা-র জন্য পাওয়া সময়-টা নষ্ট করে বোধহয় ভালো কাজ করছি না। কিনতু কিছু করার নেই, পড়ায় মন বসার না হলে তো বসবে-ই না। আর নিজের ওপর জোর করতে আমার ভালো লাগে না। অতএব, পড়া - থুড়ি, লেখার চেষ্টা আপাততঃ করছি না। বাইরে ঠা-ঠা রোদ। বৃষ্টি ক'দিন আসব-আসব করে-ও শেষমেষ দিন দুয়েক ভোরবেলা-তে উঁকি দিয়ে-ই চলে গেল। তবে আমরা যারা আশুতোষ শিক্ষা প্রাংগণে ক্লাস করতে যাই, বৃষ্টি-র সংগে তাদের love-and-hate সম্পর্ক। জল-ছপছপ কলেজ স্ট্রীট-এ হেঁটে বেড়াতে প্রাণ বেরিয়ে যায়। ক্লাসের জানালা-র কাঁচ ঘষে গেছে - বয়স তো কম হল না - সেই কাঁচের মধ্যে দিয়ে বাইরে তাকালে মুহূর্তে কলেজ স্ট্রীট দার্জিলিং হয়ে যায় - বহু চেষ্টায়-ও তখন লেকচারে মন বসে না। কিনতু রাস্তায় বেরোলে-ই illusion খানখান - জমা জল, ভিড়ে ভরা ক্ষতবিক্ষত রাস্তা - দশ মিনিট হেঁটে বাস-স্টপে যাওয়া-টাও herculean task বলে মনে হয়। কলকাতা-কে শাপশাপান্ত করতে করতে গায়ে জলকাদা মেখে বাসে যুদ্ধ করে বাড়ী ফিরি। "ভাটের ক্যাম্পাস, এখানে মানুষে পড়তে আসে! কেন যে এখানে ভর্তি হতে গেলাম!" কিন তু এসব বেকার বকবকানি, জানি তো কলকাতা-কে কত ভালবাসি। আর ক্যাম্পাস, সে তো আরো নিজের, আরো আপন। ভাঙাচোরা, অপরিষ্কার - নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয় - আলিপুর ক্যাম্পাস কত সুন্দর দেখতে। তারপর নিজেরাই বলি, কিন্তু সে তো কালকের জিনিস, আমাদের মত কি আর দেড়শো বছর পুরনো! ডিপার্টমেন্ট-এর বয়স-ই বলে একশো হতে চলল! অলিতে-গলিতে ভরা ভুলভুলাইয়া সব আমাদের এখানে, আশুতোষ থেকে ফাঁকফোকর দিয়ে দ্্বারভাঙায় রোদ খেতে যেতাম শীতকালে। সে আরেক মজার জায়গা - তার বিশাল উঠোনে দেখি কাপড়জামা শুকোয়, কাদের ছেলে বসে স্লেলটে আঁকিবুকি কাটে। আবার সেখানে-ই অন্য তলায় চলে ক্লাস, নানা অফিসের নানা কাজকর্ম। আমাদের চারতলার ছাদের ওপর অদ্ভুত কায়দায় নেট লাগানো, বৃষ্টির ফোঁটাটুকু-ও আসে না, কিন্তু রোদ-ঝলমল আলো-য় আলো হয়ে থাকে।এসব আর কোথাও দেখিনি। আলিপুরে তো surely নেই! একটু অন্য কথায় যাই। এখানে বেশির ভাগ বন্ধুরাই (আমি কাউকে-ই চিনি না, কিন্তু বন্ধু-ই বললাম) বাংলাদেশী। বাংলাদেশ আমার না-দেখা দেশ। হয়তো না-দেখা-ই থেকে যাবে। দেশ ভাগের কিছুদিন পর ঠাকুরদা ঠাকুমা আর ছোটো ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে আসেন এখানে। পড়ে থাকে পৈত্রিক ভিটে-মাটি আর অনেক স্মৃতি। শুনেছি গ্রামের নাম ছিল বজ্রযোগিনী - অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থল। আমাদের বাড়ী নামকরা ছিল নাকি কবিরাজ-দের বাড়ী বলে। ঠাকুরদা অবশ্য শিক্ষক ছিলেন, আর এখনো বাড়ীতে প্রায় সবাই তাই। এখনো বড়দের কাছে পুরনো গল্প শুনি । দেশ কোথায় শুধোলে বলি ঢাকা-বিক্রমপুর। আমি আরো ফলাও করে বলি, গ্রাম ছিল বজ্রযোগিনী । এক জ্যেঠিমা বরিশাল, এক জামাইবাবু-র দেশ যশোর। বড়দের অনেকে দেশের ভাষায় কথা বলেন। আমাদের জেনারেশনের সবার জন্ম এ-দেশে, সবাই মনেপ্রাণে ভারতীয়। কিন্তু শেকড় যেন রয়ে গেছে বাংলাদেশের মাটিতে। আমরা দু'দেশের - কিন্তুএকটা দেশকে চোখের দেখা-ও দেখা হয়নি। ভেবেছি একবার গিয়ে ঘুরে আসব - কি আছে, কারা রয়ে গেছেন। হয়তো যাওয়া হবে, হয়তো হবে না। কে জানে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০০৬ ভোর ৫:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




