‘গুরু’ বর্তমানে কতটা বাধ্যগত শব্দ? এখন ‘গুরু’ শব্দের মার্জিত রূপের অভাব ভালোই পরিলক্ষিত হয়। গুরুত্ব সেখানেই দেখা যায় যেখানে বাহুবলের অনধিকার ব্যবহার আছে অথবা রাজনীতির গড়ফাদারদের সম্মুখভাগের সম্মতিসূচক শ্রদ্ধা দেওয়ার জন্য কিংবা অসাধুদের সাধুত্বের দরজায় দাড়ঁ করার ছলে গুরু শব্দের ব্যবহার এখন খুবই পরিচিত। কিন্তু আজ অবধি পুরো বাংলাদেশে আমরা সবাই শ্রদ্ধাভরে একজনকে গুরু বলেই সম্বোধন করি-সে আর কে? আমাদের মুক্তিযোদ্ধা, দেশে পপ গানের বাহক আজম খান। আজ ৫ই জুন প্রিয় শিল্পীর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী।
আজম খানের প্রকৃত নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। ১৯৫০ সালে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুরে জন্ম এই মহান ব্যক্তির। মা জোবেদা বেগম সংগীত শিল্পী বলে হয়তো সংগীতকে এতো আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে সিদ্ধেশরী হাই স্কুল থেকে এস এস সি এবং ১৯৬৮ সালে টিঅ্যান্ডটি মহাবিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। কিন্তু তিনি দেশের প্রজন্মের জন্য নিজের পড়ালেখার চেয়ে দেশের স্বাধীনতাকে বড় করে দেখেন। জড়িয়ে পড়েন স্বাধীনতা যুদ্ধে। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে ছিলেন এক স্বাবলীল কর্মী। দেশ স্বাধীনের দৃঢ় প্রতয় নিয়ে যোগদেন আগরতলা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। তখনই নজরে পড়ে সবার। প্রশিক্ষণ ক্যাম্প মাতিয়ে তোলেন গানের ক্ষিপ্ততায়। তাকে শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা ও গায়ক বলে প্রশংসার পাত্র পূর্ণ করা যায় না; তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের এক উদীপ্তকারী সংগঠন ও। কি ভূল বললাম নাকি? তিনি কিভাবে একা সংগঠন হন? হ্যাঁ তিনি সংগঠন ও। কারন তিনি একাই ২ নং সেক্টর কে তার সৃজনশীল গানের মাধ্যমে উদ্দীপনা জোগিয়েছেন। তার সেই মানুষের প্রতি ভালবাসার গান আজও শ্রোতাপ্রিয়।
তিনি হয়তো রেললাইনের বস্তিবাসীদের নিয়ে আর গান গাইবেন না কিন্তু তার সেইসব সাম্যবাদীর গান তো এখনও বিরল। ‘‘একা একা চলিয়ে যাবে সবাই, তুমিও যাবে, আমিও যাব, মিছে ভাব তাই’’ এটা তার গাওয়া একটি গান। এই গানের বাস্তবতার নিমিত্তে হয়তো তিনি চলে গেলেন। কিন্তু তার স্মৃতি থাকবে তর্কের উর্ধ্বে। তিনি থাকবেন আমাদের অকাল স্মরণে। তার স্মৃতি ভূলার নয়। স্মৃতিই আজ থাকে স্মরণ করে দেয়।
উল্লেখ্য তার স্মৃতি রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে ঢাকার কমলাপুরে ‘আজম খান স্মৃতি সংসদ’ গঠন করা হয়েছে। তার যত্রতত্র স্মৃতি গুলো সংরক্ষণ করতেই এই উদ্যোগ। সংগঠন থেকে জানানো হয় যে কেউ [email protected] এই ঠিকানায় জীবন বৃত্তান্ত পাঠিয়ে সদস্য হতে পারবে।