পর্ব-১
জয়ী দাড়িয়ে আছে মোকাররম ভবনের সামনে । বুঝতে পারছেনা কি করবে। বাসায় যাবেনা - বাসায় এখন কেউ নেইও! কোথায় যাওয়া যায়? আকাশটা কেমন গুমোট হয়ে আছে । বাতাসে বদ্ধ আটকা পড়া ভাব । ভাল লাগছেনা । হঠাৎ মনে হলো আজকের দিনটা ইচ্ছামতো কাটালে কেমন হয়? সারাদিন যা যা করতে ইচ্ছা হয় করবে - ঘুরবে -একা একা- বিকেল বেলা যথারীতি বাসায় ফিরে যাবে।
কথাটা ভাবতেই জয়ীর মনের খুশীর ভাবটা আবার ফিরে এলো । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এখন বাজছে ৭টা ২৯ । দারুন! পুরো দিনই তো পড়ে আছে সামনে ।
হাটতে হাটতে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর দিকে চললো জয়ী ।
শামসুন্নাহার হলের সামনে এত সকালেও দেখা যাচ্ছে কয়েকটি জোড়া । একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বসে আছে । দুজনেই মাথা নীচু । ওদেরকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে - সারা দুনিয়ার সব সমস্যার চাইতেও বড় সমস্যা হয়তো চলছে দুজনের এখন । উদাসীন - মনমরা ! আহারে!!
সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনেটা একদম ফাঁকা । কোনার দিকের চায়ের দোকানের ঝাপিটা খুলেছে মাত্র । তোড়জোড় চলছে নানারকম । বারান্দায় বসে জয়ী হাতের ইশারায় ডাকলো চায়ের দোকানের পিচ্চিটাকে ।
"একটা দুধ চা"
এখানে এর আগে একবার কি দুবার এসেছে জয়ী । এদিকটায় আসা হয়না তেমন । কিন্তু এ জায়গাটা বেশ ভাল লাগে জয়ীর । এখন আরাম করে এক কাপ চা খাবে । তারপর লাইব্রেরীতে বসে লতাকে চিঠি লিখবে। লতা পড়ছে সিলেট মেডিকেলে । ভাবছে পরীক্ষাটা শেষ হলে ঘুরে আসবে সিলেট থেকে । ও আর লতা ক্লাস ফাইভ থেকে একসাথে পড়েছে । কতদিন বেচারাকে চিঠি লেখা হয়নি ।
"আপা চা" পিচ্চিটা চা নিয়ে ফিরে এসেছে ।
জয়ী আরাম করে চুমুক দিলো চায়ের কাপে । দুপুরে এখানে নাকি পাতায় খিচুরী বিক্রি হয় শুনেছে । আজ এই খিচুরী খেতেই হবে । মাঝে মাঝে জয়ীর মনে হয় - ইউনিভার্সিটিতে অনেক অনেক খাবারের দোকান থাকা উচিত । ভ্রাম্যমান দোকান । ছেলেমেয়েরা রাস্তায় - গাছের নীচে - চত্বরে আড্ডা দিবে -- আর তাদের চারপাশে থাকবে প্রচুর ভ্রাম্যমান নানান খাবারের দোকান । মনে হবে মেলা হচ্ছে -- সবসময় -- আনন্দের মেলা!
চা শেষ করা মাত্রই পিচ্চিটা ভুতের মতো সামনে উদয় হলো । নিশ্চয়ই খেয়াল করছিলো কখন শেষ হয়!
"দুই টাকা আপা"
ব্যাগ থেকে পার্সটা খুলে চোখ রাখতেই জয়ীর কলজেটা হিম হয়ে গেলো! একটা একশ টাকার নোট হ্যা হ্যা হাসছে! একটাও খুচরা টাকা নেই! ইস! এখন কি হবে? আশপাশে টাকা ভাঙানোর মত কোন দোকানও নেই । ওতো এমনকি কাউকে চেনেওনা এখানে । খুব লজ্জা লাগছে ।
"মামা ভাঙতি নাই"
মোকাররমের চায়ের মামা ভাল করেই চেনে ওকে । কিন্তু এ মামাকে কোনওদিনও দেখেনি জয়ী । মামা কিছু বলছেনা দেখে জয়ী বললো "আচ্ছা একশ টাকা রেখে যাই । দুপুরে এসে বাকী টাকা নিয়ে যাবো!"
"দুই টাকা তো!! এই নেন মামা" পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো । জয়ী পিছন ফিরতেই দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে । ওদের সাবজেক্টেই ! মাষ্টার্সের থিসিস করছে এখন । কি যেন নাম!
"ও... ভাইয়া আপনি? না... না... দিতে হবেনা" । ও আপত্তি করার আগেই টাকা দেয়া হয়ে গেছে দেখলো জয়ী ।
"তুমি জয়িতা না? এখানে কি করছো? ক্লাস নেই আজ?"
"আছে! আমি ...এমনিই... একটা কাজে এসেছি" জয়ীর কিছুতেই মনে পড়ছেনা ছেলেটার নামটা। কি যেন? নিনিমেষ.... না না অনিমেষ..?
"ও"
"আপনাকেতো ইদানীং দেখিইনা" - জয়ী জিজ্ঞাসা করলো । ভাগ্যিস জুনিয়র না! তাহলে নাম ধরে ডাকতে হতো!
- "হ্যাঁ - আমি থিসিসের কাজ করছিতো - নিজের সময়মতো করি"
- "তাহলে আপনাকে কোথায় পাবো"
- "কেন বলতো?"
- "এই যে টাকাটা ফেরত দিতে হবেনা!"
একথায় ভাইয়াটা কেমন যেন বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
- "ও আচ্ছা এই দুই টাকা? একটা কাজ করলে কেমন হয়? - দুটাকা ফেরত নেয়া কেমন ব্যাপার না? তুমি বরং আরো কিছু টাকা ধার করো! - তারপর একসাথে পুরো টাকাটা ফেরত দিও কেমন? "
জয়ীর খুব মজা লাগলো। এখন আর থাকা যায়না । "ভাইয়া আমার কিন্তু কিছুতেই আপনার নামটা মনে পড়েছেনা! স্যরি"
" না... না... ঠিক আছে... আমি অনি... অনিকেত" ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৩:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




