পর্ব - ২
একরাশ বিরক্তি নিয়ে অনিকেতের সকাল হলো । দুদিন ধরে শেভ করা হচ্ছেনা - ৮টার মধ্যে ইউনিভার্সিটি পৌছানো দরকার । গত কদিন ধরে একটা রিয়্যাকশন করছে ল্যাবে । আজকে এটার রেজাল্ট এনালাইসিস করবে । সুপারভাইজার স্যার ৮টার মধ্যে হাজির থাকতে বলেছেন । অনিকেতকে কাজ দেখিয়ে ১২টার বাসে তার রাজশাহী যাবার কথা ।
বাথরুমে যেয়ে দেখে পানি নেই । কি অসহ্য! গত কদিন ধরে এমন পানির অসুবিধা হচ্ছে। শালা! ... শেভ ছাড়াই কোনমতে তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে এবটা সিএনজি নিয়ে ইউনিভার্সিটি ।
সজলের কাছে কিছু টাকা পাবার কথা আছে । সে আবার তার কয়েক ছাত্রীকে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে প্রাইভেট পড়ায় । ছাত্রী না বলে জুনিয়র বলা ভাল। এরা নাকি পড়া ঠিক মতো ধরতে পারছেনা! অনির হাসি আসে একথা শুনলে । মনে আছে প্রথম বছর আড্ডা আর টিউশানীতে প্রথম সাত মাস ও বইয়ের পাতা খুলেও দেখেনি । ওর ধারণা এইসব ছেলেপুলে এখনো স্কুল জীবনের প্রাইভেট পড়ার বন্দীজালে আটকে আছে মানসিকভাবে । সজল আছে মজায়! বিকেল বেলা একটি এ্যাডফার্মে কাজ করে আর সকাল বেলা টিউশানী ।
ক্লাসমেট হলেও মার্কেটিং থেকে বেরিয়ে গেছে প্রায় ১ বছর হলো । আর ওর এখনও থিসিসই শেষ হলোনা । মাঝে মাঝে সায়েন্স পড়ার জন্য হাত কামড়াতে ইচ্ছা করে। যাকগে! সাড়ে সাতটার সময় লাইব্রেরীর সামনে এসে সজলকে মোবাইলে কল দিল অনি । সে আটকে আছে পান্থপথে । সজলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বারান্দার দিকে চোখ পড়তেই মেয়েটিকে প্রথম দেখল ।
এর আগেও কয়েকবার দেখা হয়েছে ওর সাথে । কেমিষ্ট্রিতেই পড়ে ফার্স্ট ইয়ারে । এর আগে কখনো গভীরভাবে খেয়াল করেনি । দেখতে সুন্দর! আরও কয়েকটি ব্ন্ধবীর সাথে দলবেধে দেখেছে । মেয়েটা এসেই ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে আরাম করে বারান্দায় বসে পড়লো । একটু পড়ে চায়ের অর্ডার দিলো । অনির খুব মজা লাগছে । এমন একা একা পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে মগ্ন হয়ে চা খাবার মধ্যে কোথায় যেন একটা অন্যরকম সাবলীলতা আছে ।
একটা হালকা সবুজ রং এর জামা । চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কি যেন ভাবছে । ওর মনে আছে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এ মেয়েটা একটা কবিতা পড়েছিলো । রবিঠাকুরের একটা ছেলেমানুষী কবিতা । কি যেন নাম? "অন্য মা"। ওর কাছে ভালই লেগেছিল - অনেক... অনেক কাল পরে শোনা ছেলেমানুষী কবিতা । ও বসে আছে মেয়েটির উল্টো দিকে । রাস্তার পাশে আধা দেয়ালের উপরে । পিচ্চিটা চায়ের কাপ আনতে যাওয়ার পরের মুহুর্তগুলো অনি খেয়াল করেই বুঝতে পারলো কি ঘটছে!
- "নামটা কে রেখেছে আপনার?" জয়ীর সরল প্রশ্ন ।
- "বাবা । তুমি কি এখানে পড়ো কারও কাছে?"
- "মানে?"
-"মানে কিছুনা, বলতে গেলে অনেক কথা ব্যাখ্যা করতে হবে । "
- "ও! আচ্ছা আপনাকে কোথায় পাব বললেন নাতো?"
অনিকেত ভাবছে, ভালোইতো! মেয়েটার অকারণ কৌতুহল কম। এই ডায়লগ ওর এক বান্ধবীকে একবার দেয়ার পরে অর্ধেক দিন কতকিছু যে ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল ভাবতেই অনির হাসি পেল ।
-"উমম...! এক কাজ কর । তোমাকে আমি কিছু ভাংতি টাকা দেই ।" আরেকবার চাও খেতে পারবে চাইলে - আর কাজ শেষ করে আজিজ সুপার মার্কেটে একটা বই কিনবে । নাম হচ্ছে "জল পড়ে পাতা নড়ে" রবিঠাকুরের শিশু কবিতার সংকলন ।
এই বলে অনি ওর মানিব্যাগ খুলে দশটাকা রেখে আর সব টাকা না গুনেই জয়ীর দিকে এগিয়ে দিল ।
মেয়েটা প্রথমে একটু হতবুদ্ধি হয়ে গেলো! তারপরে হাসতে শুরু করলো । হাসতে শুরু করার পরই কানের সবুজ পাথর গুলো আলো লেগে ঝিক করে উঠলো ।
অনির কেমন মাথা ঝিম ঝিম করছে । এত সুন্দর হাসে মেয়েটা! অনি মনে মনে বলছে ... টাকাটা নাও প্লিজ...
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৩:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




