ইসলামে বিয়ের পূর্বে নারী ও পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক বা লিভ টুগেদার সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামে বিয়ের আগে পরস্পরকে জানার এবং বোঝার সুযোগ আছে, কিন্তু তা অবশ্যই শরীয়তসম্মত সীমার মধ্যে হতে হবে। নির্জনে সাক্ষাৎ, অবাধ মেলামেশা, এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
বর্তমান সমাজে লিভ টুগেদার, পরকীয়া (এক্সট্রা মেরিটাল রিলেশনশীপ), সমকামিতা ইত্যাদি যেভাবে বাড়ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে এসব অপকর্মকে প্রচার করা হচ্ছে, যা ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী।
পবিত্র কোরআন এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। নিচে কোরআনের আলোকে একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করা হলো:
ব্যভিচার ও অশ্লীলতার নিষিদ্ধ:
কোরআনে ব্যভিচার ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ।" (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২)
এই আয়াতে শুধু ব্যভিচার করতে নিষেধ করা হয়নি, বরং এর নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করা হয়েছে। লিভ টুগেদার, পরকীয়া, এগুলো মানুষকে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে।
বিবাহের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন:
ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র বৈধ পথ হলো বিবাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদেরও। যদি তারা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।" (সূরা আন-নূর: ৩২)
এই আয়াতে বিবাহের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপনের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে অভাব দূর হওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
সমকামিতার নিন্দা:
কোরআনে লুত (আঃ) এর কওমের ঘটনার মাধ্যমে সমকামিতার কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"আর লূতকে প্রেরণ করেছিলাম। যখন সে তার কওমকে বলল, ‘তোমরা কি এমন কুকর্ম করছ যা বিশ্বজগতের কেউ তোমাদের আগে করেনি? তোমরা তো নারীদেরকে ছেড়ে দিয়ে পুরুষদের কাছে কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে যাও। বরং তোমরাই সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।" (সূরা আল-আ’রাফ: ৮০-৮১)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে সমকামিতা একটি জঘন্য অপরাধ এবং এটি মানব প্রকৃতির পরিপন্থী।
সমাজ থেকে এই অবক্ষয় দূর করার উপায়:
ইসলামী শিক্ষার প্রসার: কোরআন ও সুন্নাহর সঠিক শিক্ষা সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দিতে হবে।
পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা: পরিবার হলো সমাজের ভিত্তি। পারিবারিক মূল্যবোধ ও বন্ধন মজবুত করার মাধ্যমে এই অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
সচেতনতা বৃদ্ধি: লিভ টুগেদার, পরকীয়া, সমকামিতা ইত্যাদির কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
আইনগত পদক্ষেপ: রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরিশেষে, আমাদের মনে রাখতে হবে যে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা অবশ্যই আছে, কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে ইসলামী মূল্যবোধ লঙ্ঘন করার কোনো সুযোগ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



