somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুখ্যাত জারজ! বিশ্বব্যাপী মানবতার অমর বাণী প্রচারক সাঈদা ওয়ার্সি, ব্র্যাড অ্যাডামস, নাভি পিল্লাই এন্ড গঙকে উৎসর্গীকৃত X( X(

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোমেনা বেগম একঘেয়ে স্বরে বলে যায়,
- আমার নাম মোমেনা বেগম, স্বামী হাবিবুর রহমান, আব্বা হযরত আলী লস্কর।
- সেইসময় আপনার বয়স কত ছিল?
- একাত্তরে আমার বয়স ছিল বার বা তের বছর। আমরা চার বোন, তিন ভাই। আমি সবার বড়। আমার মা ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে গর্ভবতী ছিলেন।
- কি হয়েছিল সেইদিন?
- ২৬ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় বেলা ডোবার আগেই ঘটনা। আব্বা দৌড়ায়ে ঘরে আসে এবং বলতে থাকে কাদের মোল্লা মেরে ফেলবে।
- কেন?
- তিনি আওয়ামী লীগ করতেন, বঙ্গবন্ধুর ভক্ত ছিলেন। মিছিলে যেতেন, নৌকা মার্কার পোস্টার লাগাতেন।
- তারপর?
-তখন আমার আব্বা ঘরে এসে দরজার খিল লাগায়ে দেয়। ঘরের মধ্যে আমার মা-বাবা, ভাই-বোনেরা সবাই ছিলেন। আব্বা বলেন, তোমরা খাটের নিচে লুকাও। তখন আমরা দুই বোন আমেনা ও আমি খাটের নিচে লুকাই।
-তারপর?
-কাদের মোল্লা ও বিহারীরা দরজার সামনে এসে বলে যে, “এই হারামিকা বাচ্চা দরজা খোল, বোমা মারদেঙ্গা”। দরজা না খোলায় তারা একটি বোমা মারে। আমার আম্মা হাতে একটা দা নিয়ে দরজাটা খোলে।
- তারপর?
- দরজা খোলার সাথে সাথে আম্মাকে তারা গুলি করে।
- মেরে ফেলে?
- মেরে ফেলত যদি না ...
- যদি না কি?
- যদি না এক সৈনিক চিঠি না নিয়ে আসতো।
- কিসের চিঠি?
- এক পাকিস্তানী সৈনিক দৌড়াতে দৌড়াতে এই সময় চিঠি নিয়ে আসে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচের পরিচালক ব্র্যাড এডামস এর চিঠি। তিনি গুলি করা স্থগিত করতে বলেছেন।
- এ ও কি সম্ভব?
- সম্ভব। চিঠিতে তিনি বলেন, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে গুলি করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। গুলি পর্যালোচনা করতে বলেন। চিঠি পড়ে কাদের আর তার সহযোগীরা তখন গুলি করা থামায়।
- তারপর?
- তারপর আমার আব্বা আমার আম্মাকে ধরতে গেলে কাদের মোল্লা পিছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরে বলে, এই শুয়ারের বাচ্চা, এখন আর আওয়ামী লীগ করবি না? বঙ্গবন্ধুর সাথে যাবি না? মিছিল করবি না? জয় বাংলা বলবি না।
- তখন?
- তখন আবার আরেকটা চিঠি আসে।
- কার?
- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর আব্বাস ফয়েজ। তিনি লিখে পাঠান, গালাগালি দেয়া মানবাধিকার পরিপন্থী। তখন কাদের মোল্লা গালি দেয়া থামিয়ে আব্বাকে জবাই করতে শুরু করে। অনেকটুকু জবাই করে ফেলে এমন সময় আবার আরেক সৈনিক চিঠি নিয়ে আসে।
- এবারে কার?
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের চিঠি। চিঠিতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাই কাদের মোল্লা আব্বাকে ছেড়ে দেয়।
-এরপর?
- তখন তারা আব্বাকে ছেড়ে চাপাতি দিয়ে আমার বোন খোদেজাকে জবাই করতে থাকে, তাসলিমাকেও জবাই করতে থাকে।
- চিঠি, চিঠি আসে নাই?
- হ্যাঁ, জবাই এর মাঝপথে আবার চিঠি আসে। তারা জবাই থামায়।
- থাক কার চিঠি বলার দরকার নাই, এরপর কি হল বলেন বরং।
- বিলেতি মন্ত্রী সাঈদার চিঠি।
-আচ্ছা, এরপর?
- বাবু তখন মা মা করে চিৎকার করছিল। বাবুর বয়স ছিল ২ বছর। তাকে তুলে কয়েকবার সজোরে আছাড় দেয়।
- মারা গেল?
- নাহ, তখন আবার হঠাৎ এক পাকিস্তানী সৈনিক দৌড়াতে দৌড়াতে হাজির হয়।
- চিঠি নিয়ে?
- হ্যাঁ। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের দুই বিশেষজ্ঞ গাব্রিয়েলা নাউল ও ক্রিস্তফ হেইন্সের চিঠি। তারা তাড়াহুড়া করে বাবুকে আছাড় দিতে মানা করেছেন।
- হুম, তারপর?
- তারপর তারা বাবুকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু বাবুর চিৎকার শুনে খাটের নিচ থেকে আমেনাও চিৎকার দেয়। চিৎকার দেয়ার সাথে সাথে আমেনাকে তারা টেনে বের করে। টেনে বের করে তারা আমেনার সব কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে।
- আমেনার বয়স কত ছিল তখন?
- এগারো
- তারপর কি হল
- কাদের মোল্লা আর তার সহযোগীরা আমেনার উপর চড়ে বসে। আমেনা অনেক জোরে চিৎকার করতে থাকে। তখন হঠাৎ ...
- কি?
- তখন হঠাৎ হাঁপাতে হাঁপাতে আরও এক পাকিস্তানী সৈনিক হাজির হয়।
- আবারও চিঠি নিয়ে?
- হ্যাঁ
- জাতিসংঘ?
- হ্যাঁ
- তবে যে শুনেছিলাম বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছিল জাতিসংঘ তখন বসে বসে বাল ফালাচ্ছিল।
- ভুল শুনেছেন। যাই হোক সেই সৈনিক উর্দুতে চিৎকার করে বলল, আমি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই এর চিঠি নিয়ে এসেছি। আপনারা রেপ করা থামান। জাতিসংঘ যে কোনো ধর্ষণের বিরুদ্ধে, সেটা যে পরিস্থিতিতে হোক না কেন।
- সত্যি?
- হ্যাঁ।
- তারপর?
- তারপর কাদের মোল্লা আর তার সব সহযোগীরা তাদের নিজ নিজ লুঙ্গী তুলে নিয়ে পরে ফেলল। তারপর তারা আমেনাকে উঠিয়ে তার জামাকাপড় পরিয়ে দিল। বাবুর সেবা শুশ্রূষা করলো। তারা আব্বা, খোদেজা আর তাসলিমার গলা কেটে ফেলেছিল তাড়াহুড়ায়। সেটা সবাই মিলে সেলাই করে জোড়া দিয়ে দিল। আম্মার পেট থেকে গুলি বের করে দিল। আম্মার পেটের ভেতর যেই সন্তান ছিল, তার গায়েও একটা গুলি লেগেছিল। সব বের করে ঠিকমতো ব্যান্ডেজ দিয়ে দিল। তারপর তারা জয় মানবাধিকার বলে শ্লোগান দিতে দিতে চলে গেল।

[* কথোপকথনের বাস্তব অংশটুকু বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত মোমেনার সাক্ষ্য থেকে নেয়া।
* শিরোনাম Quentin Tarantino এর Inglorious Bastards থেকে অনুপ্রাণিত।]

বিঃ দ্রঃ লেখাটা সচল থেকে নেওয়া
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×