somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহমদ ছফা অগ্রন্থিত রচনা 'কর্ণফুলীর ধারে' (শেষ পর্ব)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব পাবেন এখানে


সূর্য না দেখা ভোরে ঠিকাদারদের মানুষদের ডাকে কুলিরা ঘুম থেকে উঠে সকলে প্রাতঃক্রিয়াদি সেরে নেয়। দু’ একজন শুকনো বাঁশ জোগাড় করে আগুন জ্বালায়। আর দু’ একজন পাহাড়ের পাথর-চোঁয়া বরফের মত ঠাণ্ডা জল ভরে। আগেই বলেছি, এ জলেই তাদের শৌচ, রান্না-বান্না, ধোঁওয়া-মোছা সবকিছু করতে হয়। মশুর ডালের পানি আর ফেন-মাখা ভাত খেয়ে ওদেরকে সাইট-এ ছুটতে হয়। সেদিনকার মত কাজ শুরু হয়। পাহাড়ের পাথুরে অঙ্গ গাঁইতির আঘাতে আঘাতে মসৃণ করবার শিক্ষা তাদের কই? বিরাট বিরাট শত শত গাছের গোড়া উৎপাটন করার কাজও দেয়া হয়েছে তাদের। কাউকে কাউকে পাথরে সুড়ঙ্গ করে বারুদ দিয়ে পাথর ফাটানোর কাজ শিখাবার জন্য নেওয়া হয়েছে। স্কুলের যেসব ছাত্র কেরানি-পিওন বনবার আশায় এসেছে রিজার্ভড ফরেস্টে, তাদের প্রতি একটু করুণা করা হয়। তার মানে অপেক্ষাকৃত কম পরিশ্রমের কাজ তারা করে। একটা চটের বস্তার দু’দিকে দুটো ডাণ্ডা লাগিয়ে মাটিভর্তি বস্তাগুলো পাহাড়ের পাশে পাশে ঢেলে দেয়। দুপুর বারটা বাজলে তারা ডেরায় এসে সেই মশুর ডালের পানি আর ফেন মাখা ভাত খেয়ে আবার কাজে যায়। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে তাদের ছুটি। এভাবেই কাজ চলে প্রতিদিন। মানুষগুলো অতীষ্ট হয় ওঠে। পালাবার কথা তাদের মনে আসে, কিন্তু কেমন করে পালাবে? সারারাত বন্দুক নিয়ে কুলিদের বাসা পাহারা দেয় ঠিকাদারের লোক। আর তাছাড়া এ বিশাল দুরধিগম্য অরণ্যের ওপাশে মানুষের বাসভূমি কোথায় তা কেমন করে খুঁজে নেবে? মানুষগুলো তো এক একজন এক এক জায়গার, বাঙলায় কথা বললেও ভাষার বিভিন্নতার জন্য একজন আরেক জনের সঙ্গে মন খুলে আলাপ করতে পারে না। ঠিকাদারের লোকেরা সব সময় তাদের ভেতর এ বিদ্বেষ জাগিয়ে রাখে। এসব ছাড়াও তাদের পালাতে হলে যে রাস্তা কাটছে সে রাস্তা বেয়েই ছড়িতে নামতে হবে। বিভিন্ন ঠিকাদারেরা এক আধমাইল ভাগাভাগী করে রাস্তার কন্ট্রাক্ট নেয়। রাতের বেলা রাস্তার উপরেও পাহারা বসায়। এক ঠিকাদারের লোক দুয়েকজন পাহারাদারকে ফাঁকি দিতে পারলেও একজন না একজনের হাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। ধরা পড়লে আবার ঠিকাদারদের কাছে পাঠান হয়। কাজ করলে তবু ক’দিন বাঁচার আশা আছে। কিন্তু পালান মানে সাক্ষাৎ মৃত্যু। তবু মুক্তি পিয়াসী মানুষকে আমি পালিয়ে যেতে দেখেছি। ধরা তারা পড়েছে, শাস্তিও পেয়েছে। দেখেছি কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মজলিশপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিনকে পালিয়ে যেতে। সে চারজন প্রহরীকে ফাঁকি দিতে পেরেছিল। কিন্তু পঞ্চম জনের হাতে ধরা পড়ে আবার তাকে ঠিকাদারের বাথানে আসতে হয়েছিল। কত যে মেরেছিল ওকে। জোয়ান মানুষের তাজা রক্ত পিচকারির মত ছুটেছিল বেতের ছড়ির আঘাতে। উঃ! গত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও আমি দেখিছি। এদের তুলনায় ওরা আরও নৃশংস। আরও পিশাচ, এতে শেষ নেই, ঠিকাদার বিচার করে রায় দিল, মফিজুদ্দিনকে একটি বিরাট তেরপাল দিয়ে বেঁধে বস্তার মত করে মাচান ঘরের তলায় রাখা হবে প্রতি রাতে। শুধু নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য নাক-মুখ খোলা রাখা হবে। তাই-ই তারা করেছিল মফিজুদ্দিনকে। রাতে তেরপাল জড়িয়ে মাচান ঘরের তলায় রাখত আর দিনের বেলায় কিছু খাইয়ে কাজে নিয়ে যেত। এভাবে একমাস কেটেছে মফিজুদ্দিনের। তারপর একদিন যখন মফিজুদ্দিনের সারা গায়ে বিষাক্ত ঘা হল তখনই তাকে মাচান ঘরে শুতে দেয়া হয়েছিল। সেই সংক্রামক ঘায়ে আক্রান্ত হয়েছিল আরও অনেকে। আমি শুনেছি, আরও আগে নাকি পালাবার অপরাধে একজনের হাত পা গাছের সঙ্গে বেঁধে সারা গায়ে পেরেক মেরে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটা আমাকে যে লোকটি বলছিল সে ঠিকাদারের এক বিশ্বস্ত লোক। রিজার্ভড ফরেস্টে ফেরারি আসামিদের আড্ডা পাহাড়িয়া দুর্গম পথে কাপ্তাই হতে প্রায় দেড় শ’ দু’শ’ মাইল ওপরে। পুলিশের কি সাধ্য ওদের নাগাল পায়। এদেরই কেউ কেউ ঠিকাদারদের দক্ষিণ হস্ত। বছরের পর বছর এরা রিজার্ভেই থাকে। ঠিকাদারের তরফ থেকে ওদের জন্য সব রকমের সুখ-সুবিধার ব্যবস্থাও করা হয় ঘিয়ে ভাজা রুটি খেতে দেওয়া হয়। সকাল-বিকেল দু’বেলা চা খেতে পায়। রাতের বেলা তুলার বালিশে, লেপের ওমের তলে ঘুমোয়। ভুলিয়ে আনা কিশোরদেরকে প্রতিরাতে পালা করে এদের সঙ্গে ঘুমাতে হয়। এসব ব্যাপার রিজার্ভে অহরহ ঘটছে। ছেলেদের করুণ আর্তচিৎকারে কুলিরাও ঘুমোতে পারে না। কিন্তু কি করবে তারা? করবার কি আছে তাদের? এসব বিকৃত রুচির মানুষদের বীভৎস আচরণে রাজি না হলে অরণ্যের হাড় কাঁপানো শীতে তাদেরকে হাত-পা বেঁধে উদোম গায়ে বসিয়ে রাখা হয়। সব দেখে শুনে একবার আমি ঠিকাদারদের একজনকে বলেছিলাম, তোমরা এভাবে মানুষের উপর এবং বিশেষ করে তোমাদের নিজ সন্তানের মত ওই ছেলেদের ওপর এমনভাবে অত্যাচার কর কেন? এটা কি এমনি যাবে মনে কর? এর কি কোন প্রতিকার নেই? ঠিকাদার আমার কথা শুনে যে জবাব দিয়েছিল তার মানে—‘আমরা জঙ্গলকে মঙ্গল বানাচ্ছি। তোমার বয়স অল্প সেজন্য বুঝবে না। আমরা জঙ্গলকে মঙ্গল বানাচ্ছি, তা করতে হলে জীবন যৌবনের কিছু অপচয় অবশ্যই হবে।’
এই-ই তো রিজার্ভড ফরেস্ট। দিনে দিনে মানুষগুলোর হাড়গুলো স্পষ্ট হতে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। মাসে একবারও গোসল করতে পারে না। গোসল করার পানি কই? পানির জন্য যেতে হয় বনপথে চার-পাঁচ মাইল। ঠিকাদারের জোরসে কাজ চলছে। সুতরাং তারা গোসল করবে কেন সময় নষ্ট করে? কাপড়ে চুলে একজাতীয় সাদা উকুন বাসা বাধে। রোদের তাতে ওসব উকুনের কামড় হয়ে ওঠে তীব্র। হাত পেছনে নিয়ে চুলকাবার সুযোগও পায় না। অমনি কয়েক বেত পিঠের ওপর সশব্দে আছড়ে পড়ে। ঠোঁটগুলো শীতের সময় কুষ্ঠরোগীর মত কেটে ফেটে ছিঁড়ে যায়। সারা শরীর পিচের মত নিকষ কাল হয়ে যায়। মুখম-লের মাংস চেপে বসে যায়, নরকঙ্কালের মত দেখায় ওসব মুখের আদল। মরণের ওপারের কোন প্রেতপুরীতে যেন হাওয়ার ঘায়ে এদিক থেকে ওদিকে হেলে যাচ্ছে। হাঁটতে পারে না। শরীরের রক্ত-মাংস-বল-বীর্য সব ঠিকাদারেরা শুষে নিয়েও তাদের নিষ্কৃতি দেয় না। সাইটের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ কঙ্কাল দিয়েই তারা মাটি কাটায়, পাথর কাটায়, গাছের গোড়া উপড়ায়, বারুদ দিয়ে বিরাট পাথুরে পাহাড় ফাটিয়ে মাঝখানে রাস্তা তৈরি করে। কিসের আশায়? কিসের নেশায়?


দিনে রাতে, রাতে দিনে সময় বয়ে যায়, কি বার, কোন মাস, সেকথা কি আর মনে আছে কুলিদের? ঠিকাদারের কাজ শেষ করতেই হবে, যেমন করেই হোক। প্রতিদিন সকালে জীবিত কঙ্কালগুলো সার বেঁধে মাটি কাঁটতে যায়। পাহাড়ের ধারে ধারে রাস্তা বাঁধার কাজ এগিয়ে চলে। কুলিদের বুকের রক্তঝরা মেহনতে রাস্তার কাজ এগিয়ে যায় তরতরিয়ে। ঠিকাদারের মুখে ধূর্ত শেয়ালের মত কেচকে হাসি ফোটে। কুলিরা হিসেব করে আর কত বাকি মরণের। হাঁ, কুলিরা ওখানে মারা যায়। রাত্রিতে মশার কামড় খেয়ে কম্প দিয়ে জ্বর আসে গায়ে। বাদুড়ের মত বিরাট বিরাট মশার কামড় খেয়ে যে জ্বরে তারা পড়ে অনেক সময়, তাতেই হৃৎপি-ের ধুকধুক কাঁপুনিটুকু স্তব্ধ করে দিয়ে যায়। এমনি বেঘোরে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেখেছি সন্দ্বীপের আউয়ালকে। উনিশ বছরের ডবকা ছেলে, কালীনাগের মত কাল গায়ের রং, এক মাথা কাল চুল। দাঁতগুলো ধুতরা ফুলের মত সাদা। শ্যামলা মুখের পেলব পেলব ভাবটুকু ছিল মায়াময়। মারা গেল। বেচারি একখানা কাফনও পায়নি। মাটির গর্ত করে তাকে সেখানে চিরদিনের মত শুইয়ে আবার উপরে মাটি চাপা দিয়েছে তার সাথীরা। যারা মরে তারা বেঁচে যায়। অমানুষিক অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু যারা বেচে থাকে? তাদের অবস্থা? সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে সন্ধ্যা দিন গড়ায়, আর এগিয়ে চলে রাস্তা বাঁধার কাজ। গতরের বলবীর্য শুষে নিয়ে পাহাড়ের কোল বেয়ে কাল নাগিনীর মত এঁকে-বেঁকে সামনের দিয়ে বয়ে যায়। রাস্তা তৈরি হলে ঠিকাদারেরা লাখ লাখ টাকা পাবে। কিন্তু কুলিরা পাবে কি? আর কুলিরা কি খেয়েই বা এ রাস্তা বেঁধে যায়? আগেই তো বলেছি। ওরা ফেনমাখা ভাত খায়, আর খায় মশুর ডালের পানি। টমেটো, আলু ইত্যাদি তরি-তরকারিও ঠিকাদারেরা অনেক সময় বিলাইছড়ি বাজার থেকে কিনে নৌকায় করে এনে স্টোরে মজুদ করে রাখে। কুলিরা স্টোর থেকে বাকিতে চাল-ডালের সঙ্গে তরিতরকারিও খরিদ করে। সে আরেক কথা। বিলাইছড়ি বাজারের কেনাদরের পাঁচগুণ দাম আদায় করে নেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে। টমেটোর দাম নেয় কুলিদের কাছ থেকে এক টাকা চার আনা, কুলিরা কিছুই জানতে পায় না, ঠিকাদারের কেরানি খাতায় হিসেব করে রাখে। সব জিনিসের দাম এরকমই দ্বিগুণ, তিন গুণ, চার গুণ হয়ে থাকে। কুলিরা জানে না কিছু। যা লাগে দৈনিক স্টোর থেকে আনে। রান্না করে খেয়ে কোন রকমে হাড়সর্বস্ব শরীরগুলোকে সচল রাখে। পঁচিশ টাকা যে চালের মণ বিলাইছড়ি বাজারে, কুলিদের কাছে বাকি বিক্রি করার সময় তার দাম চল্লিশ টাকা, ছয় আনা সের আলুর দর এক টাকা দেড় টাকা, এমনি করে টাকার হিসেবে খাতা ভর্তি হয়। রিজার্ভড ফরেস্টের নির্বান্ধব অরণ্য। রাতে মশার কামড়। দিনে পোকা-মাকড়, অসহ্য হয়ে ওঠে দিন দিনে। একটু ধোঁয়া না হলে তাদের চলবে কেন? সেজন্য তারা স্টোর থেকে বিড়ি ম্যাচ খরিদ করে। চার আনা দামের বিড়ি প্যাকেটে নেট বার আনা লাভ করে। এক একজন মানুষের দৈনিক এক এক প্যাকেট বিড়ির প্রয়োজন হয়।
হাড়ভাঙা পরিশ্রম কোদালে পা কেটে যায়, আঙুল ছেঁচে যায়। বারুদের আগুনে ফাটানো পাথরের পাহাড়ে হরহামেশা পাগুলো গুরুতরভাবে জখম হয়, এভাবে জখম হয়ে পড়ে থাকলে কন্ট্রাক্টরের রাস্তা তৈরি হবে না। সেকথা তারা বেশ ভাল ভাবে জানে। এজন্য প্রত্যেক কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে একজন ইনজেকশন ফুঁরতে পারার মত হাতুড়ে ডাক্তার থাকে। আর থাকে নানাজাতীয় কিছু মিকশ্চার এবং ট্যাবলেট। এসব আহতদের প্রাথমিক শুশ্রুষার পরে আর বসে থাকতে দেয়া হয় না। দু’আনা দামের একটা ট্যাবলেট কেউ খেলে পরে ঠিকাদারের কেরানি তার নামে ডাক্তার খরচ লিখে রাখে এক টাকা। হরদম চোট লাগছে কুলিদের হাতে গায়ে আর ডাক্তার খরচও বেড়েই চলছে। এতেই শেষ নয়, যারা একটু সুস্থ সবল তাদেরকে কন্ট্রাক্টরের চেলারা তাস জুয়া ইত্যাদি শেখায়। নগদ টাকা ধার হাওলাত দেয়। খেলায় হারলে ক’বছর রিজার্ভে থাকবে তাই নিয়ে বাজি ধরে। নতুন লোকেরা খেলায় হেরে যায় এবং রিজার্ভে থাকতেও বাধ্য হয়।
যারা এভাবে কাজ করে তাদের দৈনিক দেড় সের পরিমাণ চালের ভাত না হলে পেট ভরে না। সে অনুপাতে তরকারিরও প্রয়োজন। সারাদিন পাহাড় পাথর কেটে বাসায় বাসায় এলে পরে তখন তাদের দু’একটা ট্যাবলেটেরও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কুলিরা কিছুই জানে না, শুধু ঠিকাদারের স্টোর হতে প্রয়োজনের সময় কেরানিকে দিয়ে লিখিয়ে যা লাগে তাই নেয়। ঠিকাদারের হাতুড়ে ডাক্তারকে রোগির শরীরে ইনজেকশনের বিনিময়ে ডিস্টিল ওয়াটার ইনজেক্ট করে দিতে দেখেছি। এক একটা পেনিসিলিন ইনজেকশন যেগুলোর দাম বড়জোর এক টাকা কিংবা বার আনা সে রকম একটা ইনজেকশনের খরচ লিখে রাখে রোগির নামে কমসে কম চার পাঁচ টাকা। এমনি করে সুখে-দুঃখে সাইটের কাজ শেষ হয়ে আসে। ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের কর্মচারীকে কাজ বুঝিয়ে দেয়। কুলিরা হাড় জিরজিরে শরীরখানা নিয়ে হলেও দেশে যেতে পারবে ভেবে মনে মনে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তারপর বলে হিসেব নিকেশের পালা। ঠিকাদার মিথ্যা কথা বলে না। ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে যে হিসেবে রোজকার মাইনে দেওয়া কথা ছিল তাই দেয়। দিনে চার টাকা ধরে। সর্বমোট কোন কুলি যদি চারমাস কাজ করে সে ঠিকাদারের কাছে পাওনা হবে চারশ’ আশি টাকা। এরপরে ঠিকাদার নিজের পাওনার হিসেব করে। চালের দাম কাটে প্রতি মণ চল্লিশ টাকা করে। ডালের দাম কাটে সের আড়াই টাকা। বিড়ির দাম এক টাকা প্যাকেট। এছাড়া তেল, হলুদ, তরিতরকারি সবগুলোতে ইচ্ছামত দাম ধরে। হিসেবের পরে দেখা যায়, ঠিকাদারের কাছেই প্রত্যেক বিশ পঁচিশ টাকার বাকিদার হয়ে পড়েছে। ঠিকাদার দুর্বল অক্ষমদের অনেক সময় পথ ভাড়া দিয়ে দেয় দয়া করে। কি বিচিত্র দয়া! তারপরে শক্ত সবলদেরকে নিয়ে নতুন সাইটে লাগিয়ে দেয় কাজে। কুলির আড়কাঠিদেরকে প্রতিরোজ মাথা কিছু চার আনা করে কমিশন বুঝিয়ে দেয় ঠিকাদার। ঠিকাদার লাখ টাকা পেলে আড়কাঠি পায় হাজার টাকা। আবার তারা শহরে এসে বসে। ভাই বন্ধু ডেকে মানুষকে ভুলিয়ে আবার ঝুপড়ি ঘরে তোলে। আবার চালান দেয় লঞ্চে করে কর্ণফুলীর উজানে—যেখানে বন্য জন্তুরা বাস করে না, মগ মুরংয়েরা যায় না সেই নিভৃতিতে। মানুষগুলো কি হারিয়ে আসে সেকথা পূর্বোক্ত অধ্যায়গুলোতে খুবই সংক্ষেপে বলতে চেষ্টা করেছি।

সর্বশেষে দেশের মানুষের চোখের সামনে আমরা শুধু একটি প্রশ্ন তুলে ধরতে চাই—তাহল আর কতকাল চলবে এ বীভৎস অত্যাচার? আর কতকাল?

------
লেখাটি বিডিনিউজ আর্টস থেকে সংগৃহীত। পড়ে ভালো লাগায় আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। লেখাটি মূলত ১৯৬৫ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার ১০-৩০ জানুয়ারী সময়ের মধ্যে বিভিন্ন সংখ্যায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×