কবিতা বিযয়ক গদ্য কবিতা
চারবোন জড়াজড়ি করে বড় হয়েছিলাম
মধ্যবিত্ত বাবা /মায়ে,দের যে স্বপ্ন থাকে তার বাইরে
অন্যকোন সাধ ছিলো না তাদের (বাবা/মা)।
কলেজ শিক্ষক বাবার ছাত্রী ছিলেন লোকশিল্পী (ফরিদা পারভিন)
তার হাতেই বড়বোনের গানে হাতখড়ি, খু--উ--ব ছোটবেলায়
আমাকে নিয়ে চেষ্টার শুরুতেই কোন এক অনির্ধারিত কারনে
সে যাত্রায় আর এগনো যায়নি ।
এভাবেই বেশ কিছুটা সময়
আমরা কৈশর এর পর্বে।
কেমন করে , কোন কোন সুত্র ধরে
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে
আমরা ছায়ানটের একদল শিল্পীকে মামা ডাকতে শুরু করি ।
পড়ালেখা , গান, ছায়ানট , বটমুল , পহেলা বৈশাখ ,
এসবেই কেটে যায় লুকোচুরির নাইন / টেন/ইলেভেন
একদিন সবার অগোচরে বেড়ে উঠা সব ছোটবোনটির গলায়
ধরা পরে অনন্য সুরের ছোয়া
সময় ও সুযোগকে সাথে নিয়ে ও একসময় হয়ে
উঠে গুনী শিল্পী ।
খেলাচ্ছলে সেজটি একদিন হাতে তুলে নেয় তবলা
বেশ ভালোই বেজেছিলো ওর হাতে ।
বুঝতেই পারছেন,ব্যর্থতায় ভরা দৃষ্টি নিয়ে
আমাকে বসতে হয় দর্শক সারিতে
অনুষ্টান আলো করে বাকী তিনজন
দুপাশে ছোট আর বড়,তে দ্বৈত শিল্পী
মাঝে তবলায় সেজটি ।
অনুষ্ঠান শেষে আমার দিকে আংগুল উঠে অনেকের
”তুমি পারো না কিছুই , কিছুই না , গান কিংবা কবিতা ”
আমার নিরুত্তর ভুমিকা ।
এমনি ব্যর্থতায় ভরা আমার গোটা বাল্যকাল
ছায়ানটের শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ একদিন বললেন
”তোকে না চিনলে জানতে পারতাম না এমন সুরহীন গলাও কারো থাকে ”
হেসে উঠে আসর ।
এরও অনেক পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় শিল্পী মিতা হক পারিবারিক
বন্ধু হয়ে উঠেন , উনি একদিন বললেন , ”একি তোর গলায় তো গান হয় না , কেবলই
কথার মতো শোনায়”।
ভীষন অভিমানে কবিতা নিয়ে বসি
কবিতাকে সংগী করেছিলাম আরো আগেই
সেই ১৪/১৫ বছর বয়সে
এক ইদের দিনে বাবা বকেছিলেন খুব,সেদিন রাগ করে
দুই বিঘা জমি নিয়ে কেটেছিলো গোটা দিন, সকাল থেকে সন্ধ্যা
পুরো দুই বিঘা জমিকে চোখের সামনে নিয়ে এলাম ,
আজো প্রতিটা শব্দ ঠোটের আগায় ।
এবার ২৩ বছর বয়সে কবিতাকে ভালোবাসলাম
দিনের আলোতে , শুরু হলো ভালোবাসা ও চর্চা ।
সবাই যেভাবে শুরু করে , রবীন্দ্রনাথ , নজরুল , আলমাহমুদ,
অবাক হয়েছিলাম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পড়ে
এভাবেই খুড়ে খুড়ে চলা ।
বন্ধু মনজুর একদিন ধরিয়ে দিলো লোরকা ,নাজিম হিকমত আরো অনেক-কেই
ততদিনে ওপার বাংলার জয়গোস্বামী আমাকে জয় করেছে।
এবার আবৃত্তি শুনতে লাগলাম ,সেই ১৯৮৫ সালে হাতে এলো অডিও ক্যাসেট শিমুল মোস্তফার
তারপর রতœা,যুবরাজ,আজাদ ,নুরভাই, এ যেন অন্য এক আলোকিত ভুবন
কলেজ ফাংশনে আবৃত্তি করেছিলাম ”আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ি নদীর তীরে ”
সেখানেই পুরস্কার পেয়ে, উৎসাহের সোপান।
জীবনের নানান বাবে বাকে একাকী সময় কাটাতে গিয়েই
কবিতা হয়েছে নিলোর্ভ সংগী ।
ঢাকা থেকে টরোন্টো ,এতদিনে কবিতা পড়তে না পারলেও ভালোবাসতে
শিখেছি পুরোদস্তুর ।
একদিন এই শহরেই ব্রততি এলেন,ঘর আলো করলেন উদার গলায়,
শ্রোতারা অবাক হলেন আর আমি কবিতাকে আরো একবার,বহুবার এর মতো
সাথী করে ফিরে এলাম ।
কবিতা আমায় ছাড়ে না ,ক্লান্ত দুপুর ,নিঘুর্ম রাত
কিংবা অজানা পথে, ও চলে , পাশাপাশি আমিও
আকারহীন এই সংগী আমাকে দিচ্ছে সংগ
বিগত ২০ বছর ,আমি চলি, সেও চলে।
লুনা শিরীন, টরোন্টো।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



