somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী এবং আমার দৃষ্টিভঙ্গি

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফাঃ
১। সংবিধানে ‘আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরান-সুন্নাহ্ বিরোধী সকল আইন বাতিল করতে হবে।
২। আল্লাহ্, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩। কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-র শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। ব্যক্তি ও বাক-স্বাধীনতার নামে সকল বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫। ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৭। মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।

৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
৯। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে
১০। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তকরণসহ সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র এবং তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
১২। সারা দেশের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

এবার আসি এর সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি কি তা নিয়ে। ১ নং এর সাথে আমি একমত। অনুরূপ ২ এবং ৩ এর সাথেও। আমি শাস্তি দাবী করব ধর্ম বিদ্বেষীদের, ধর্ম নিয়ে কটূক্তি কারিদের। কোন নাস্তিকের নয়। নাস্তিকের মুখোশের আড়ালে থাকা ধর্ম বিদ্বেষীদের। নাস্তিকতা আর ধর্মবিদ্বেষ এক কথা নয়। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি কখনো বাক স্বাধীনতা হতে পারে না। কারণ, নাস্তিক হচ্ছে সে যার খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাস নেই। তার বিশ্বাস তার কাছে। তা নিয়ে কোন মাথা না ঘামালেও চলবে। কিন্তু কিছু নাস্তিক আছে যারা ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে। এরা নাস্তিক না। এরা ধর্ম বিদ্বেষী। অনেকে হয়তো বলবে এটা তাদের বাক স্বাধীনতা ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু আমি এতে একমত নই। কারণ কোন পুলিশ যদি হটাত আপনাকে বা আপনার প্রিয় কোন মানুষকে মারধর , গালিগালাজ করে এবং থানায় নিয়ে আপনাকে অপরাধী হিসেবে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে তখন আমি আপনি সবাই বলবো যে পুলিশটি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। সে এই ক্ষমতা ভোগের যোগ্য নয়। তেমনি কেউ যদি আপনার প্রিয় কিছু এবং বিশ্বাস নিয়ে যুক্তি না দেখিয়ে/বুঝিয়ে উল্টো কটূক্তি করে তাহলে সেটাও বাক স্বাধীনতার অপব্যবহার। সে বাক স্বাধীনতা ভোগ করার যোগ্য নয়।এটা একটা অপরাধ।

এবার একটু অন্যভাবে তাদের কর্মকাণ্ড ভেবে দেখুন। আপনি কোন Particular ধর্মের অনুসারী হবার দরকার নাই - একটু ভেবে দেখুন - এমনকি যদি নাস্তিক হন তবুও।
মনে করেন, আপনি বাসায় এসে শুনলেন আপনার আদরের ছোট বোনটাকে কিংবা শ্রদ্ধেয় মা কে কেউ অপমান অশ্রদ্ধা করেছেন - কিছু নিম্ন রুচির মানুষ এমন কোন ভাষা ব্যাবহার করেছে যা আপনি কিছু ব্লগ এ পড়ে থাকতে পারেন। না পড়লে লিঙ্ক দিব - শুধু ওই নোংরা - কুৎসিত বাক্যজালে আপনার বাবা - মা বা বোন ওয়ার্ড টা দিয়ে REPLACE করুন। পড়তে কেমন লাগে - আপনি বলবেন বাক স্বাধীনতা? - বললে আপনার জন্য করুনা হয়। আপনি বলবেন অন্যের অধিকার আছে আপনার মা বাবা বোন কে নিয়ে যা খুশি তা বলার? - আপনার তো নুন্নতম মনুষ্যত্ব ও নাই । প্রতিবাদ করার জন্য আপনার কি মুসলিম হিন্দু ইত্যাদি হতে হয়? মা কে রক্ষার জন্য কি নিজের জীবন বাজি রাখতে বুক কাঁপবে - দেশ কে মা হিসেবে - দেশের অপমান সহ্য হয় না - জীবন দিতে কি ভয় পাবেন। এক মাত্র কাপুরুষ আর নপুংশক (Impotent) হলে আপনি প্রতিবাদ করতে ভয় পাবেন। আপনার মা বা বোনের প্রতি নুন্নতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে আপনি অবশ্যই একটা ভাল Treatment এর ব্যবস্থা করবেন? এমন ব্যবস্থা করবেন যেন জীবনে কেউ আর দ্বিতীয়বার আপনার পরিবারের ওপর টোকা দিতে ভয় করে।

মুসলিম দের কাছে নবীজী (স।) এর মর্যাদা নিজের মায়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি - হয়তো অন্য ধর্মের কাছে তার ধর্ম গুরুদের ও । আপানার মায়ের নামে যদি আপনি বিন্দুমাত্র কটু বাক্য শুনতে না পারেন তবে কিভাবে কিছু নিম্ন রুচির লোকের - (যারা সর্জেবজন স্বীকৃত - সর্ব ধর্মের প্রচারক দের নিয়ে MOCKING করে) এ যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম হারান। এদের তো কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত - দ্বিমত থাকলে তাদের লেখা গুলুতে আপনার মা, বোন বা বাবার নাম রিপ্লেস করে দেখেন। আপনার চিত্ত প্রশান্ত হয়েছে? আপনার মা বোন এর ক্ষেত্রে তো আপনি একই আচরণ করবেন? কি সাংঘাতিক !!!!!!! নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন - বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকা তর্কে জেতার চেয়ে ইম্পরট্যান্ট।

আসিফ মহিউদ্দিন তার ব্লগ , মুক্তমনা, এবং ধর্মকারি এই ৩ টা ব্লগে গেলে আপনি বুঝতে পারবেন তারা কতটুকু অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে যা পরলে আপনার বমি আসাটা স্বাভাবিক, আর রাগের কথা নাইবা বললাম। আমি তার সাথে যখনি তর্ক করেছি সে যুক্তিতে আটকে যাওয়ার চান্স দেখলেই এমন ভাবে অশ্লীল ভাষায় কোরআন মুহাম্মদ (সা) ইত্যাদি নিয়ে কটূক্তি সহ যুক্তি দেয়া শুরু করে যে আপনার তখন যুক্তি দেয়ার ইচ্ছা তো দূরে থাক তার কথাই পড়তে ইচ্ছে করবে না আর। আমি সামু ব্লগ, আমার ব্লগ, চতুরমাত্রিক, এ ৩ বছর ধরে তাদের সাথে যুক্তি তর্কে আছি। কিন্তু তারা কোন তর্কেই রাজি হয়না। তাদের ভুল স্বীকার করেনা। আটকে গেলে তারা অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় তেনা প্যাচাতে থাকে এবং একসময় ব্যাক্তিগত আক্রমণ। আর যারা কটূক্তি করে তাদের সাথে তো কোন বিষয়ে কথা বলাই যায়না। কারণ ক্রমাগত কতুক্তিতে কোন ভাবেই থাকা যায়না তর্কে। শুধু তাইনা, আমার সাথে কথায় না পেরে আমাকে মারার হুমকি থেকে শুরু করে ব্যাক্তিগত আক্রমণ এবং পরবর্তীতে মুক্তমনা এবং আমার ব্লগে ব্লক ই করে দিয়েছে সে ব্লগের এডমিন। আর আমি নাস্তিকদের কাছে একটা প্রশ্ন সবসময় করি। কিন্তু এই প্রশ্নের কোন উত্তর তারা দেয়না কখনোই। সেটা হচ্ছে " আপনি নাস্তিক। তার মানে আপনি ঈশ্বর/ খোদায় বিশ্বাস করেন না যা সব ধর্মের প্রথম এবং প্রধানতম বিশ্বাস। তাহলে আপনি যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসই করেন না, বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর বলে কিছু নেই তাহলে আপনি ধর্মের অন্যান্য বিষয় নিয়ে কেন বলতে যান? কেন সমালোচনায় যান যখন মূল কথাটাই নাকচ করে দিয়েছেন। একটা বস্তু যা অন্যেরা বলছে গাড়ি তাকে আপনি যখন বলছেন এটা গাড়িই নয় তখন আপনি কেন আবার এর পার্টস দেখতে যাবেন? সেটা কি যৌক্তিক হবে? তেমনি যখন আপনি বলছেন ঈশ্বর বলে কিছু নেই তখন ধর্মে কি আছে তা নিয়ে কেন গবেষণায় যাবেন, কেন সমালোচনায় যাবেন? তার মানে কি আপনি নিজেই নিশ্চিত নন ঈশ্বরের অস্তিত্বহীনতা নিয়ে? নাহয় তো আপনার যাওয়ার কোন দরকার নেই। যদি নিশ্চিত না হন তাহলে আপনার উচিত আগে আরও ভাল করে জেনে নিশ্চিত হওয়া।আপনি সিঁড়ির প্রথম ধাপ ছেড়ে অন্যগুলোতে কেন যাবেন? আপনি যে বিশ্বাসে আছেন সেটার ভেতর থেকে অন্যের বিশ্বাস বিচার করতে পারেননা। আমি বাংলাদেশী হয়ে চীনের সংস্কৃতি নিয়ে সমালোচনা করবো না যদি আমার মাথায় একটুও বুদ্ধি থাকে। কারণ আমি চীনের অধিবাসী নই। কোন কারনে আমি চীনে বসবাস করলেও তাদের সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলাতাম না। কারণ আমি তাদের কেউ নই, আমি চীনে জন্ম নেই নি। তাদের সংস্কৃতি আবেগ চিন্তা ভাবনা কখনোই আমার মত হবে না। এই সহজ বিষয়গুলো আপনাদের অতি জ্ঞানী মাথায় প্রবেশ করে না কখনো। তাই আপনাদের সাথে তর্ক করেও লাভ নেই।" ... বিশ্বাস করুন, আজ পর্যন্ত যত বড় বড় নাস্তিকের সাথে তর্ক হয়েছে তারা কেউ এই কথাগুলোর উত্তর দেয়নি। কারণ তাদের কাছে এর উত্তর নেই। তাদের নিজের কোন বিশ্বাস নেই। অন্যের বিশ্বাসের বিপরিতে থেকে তারা নিজের বিশ্বাস গড়তে চায়। আর এর মাধ্যমে শুরু করে হিংসা বিদ্বেষ হানা হানি ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও কিছু বেসিক প্রশ্ন আছে যা আমি তাদের করেছি কিন্তু তারা উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছে, পাশ কাটিয়ে গেছে, ত্যানা পেঁচিয়ে গেছে। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে বলা বা কটূক্তি করা থামায়নি। তেমন কোন নাস্তিককে আমি এর ব্যাতিক্রম দেখিনি। এতে একটা জিনিস বোঝা যায় তাদের বেশিরভাগই দ্বন্দ্ব সংঘাত, বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই এসব করে। তাই যারা খারাপ, কোন ভাবেই শোধরাবে না তাদের শাস্তি দেয়া ছাড়া কোন উপায়ও নেই। ইসলাম যেমন কোমল , ক্ষমাশীল, দয়াবান তেমনি প্রচণ্ড কঠোর এসব ক্ষেত্রে। কারণ এমন সব ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি ছাড়া শান্তি আনা অসম্ভব। কখন মানবতা দেখাতে হবে আর কখন কঠোর হতে হবে তা আপনাকে নিজের জ্ঞ্যান বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে ঠিক করতে হবে। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাকা করতেই হয়।


এরপর তাদের যে দাবী আসলো ৪ , ৫, ৭, এবং ৯ নম্বার এ সেক্ষেত্রে বলছি। ইসলামের অনেক নিয়ম কানুন আছে যেসব আমি আপনি সঠিক ভাবে পালন করছিনা। কিন্তু তাই বলে আমি কিন্তু বলতে পারিনা সেসব নিয়ম সঠিক নয় বা এখনকার জন্য প্রযোজ্য নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ইসলাম সব সময়ের সব যুগের জন্য প্রযোজ্য একটি ধর্ম। যেমন আমি হিজাবের কথা বলতে পারি। হিজাব আপনার বা আপনার বোনের বা যে কোন মুসলিমের জন্য কোন আরোপিত বাধ্য বাধকতা নয়। এটা আল্লাহ্‌র কথা যা আমি আপনি সকলে মানা উচিত একজন মুসলিম হিশেবে। আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। কারণ মুসলিম মানে “ আল্লাহ্‌র কাছে আত্মসমর্পণকারী “। আপনি যখন আল্লাহ্‌র কাছে আত্মসমর্পণ করবেন তখন তার কোন নির্দেশ আপনার কাছে বাধ্য বাধকতা মনে হবে না, মনে হবে না এটা এই যুগের জন্য প্রয়োজন নয়, আদি কালের কথা, ইত্যাদি ইত্যাদি। কারণ আপনার মনে তাঁর উপর বিশ্বাস থাকবে, আপনার মনে থাকবে যেহেতু তিনি বলেছেন তার মানে এটাতেই আমার কল্যান নিহিত, এটাই আমার জন্য সর্বকৃষ্ট। আপনার লক্ষ্য কি তার উপর নির্ভর করছে আপনার চিন্তাভাবনা। যেমন ধরুন “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এই কথাটার মানে আমরা অনেকেই সঠিক করে জানিনা। আমরা জানি “ আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন রব বা উপাস্য বা সৃষ্টিকর্তা নেই” এর মানে কিন্তু আরও অনেক ব্যাপক। “ইলাহ” মানে হচ্ছে আপনার ধ্যান, ধারণা, লক্ষ্য উদ্দেশ্য , কাজ, কথা যে লক্ষ্যে পরিচালিত সেই লক্ষ্যটিকে বলে ইলাহ। তার মানে আপনি যখন মুসলমান হচ্ছেন তখন আপনি মুখে স্বীকার করে নিচ্ছেন আপনার ধ্যান ধারণা লক্ষ্য চিন্তা চেতনা কাজ ইত্যাদি সবকিছু আল্লাহ্‌র প্রতি, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতি, তাঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার প্রতি। সেটা যদি না প্রকাশ পায় আপনার কর্মকাণ্ড কথা চিন্তায় তাহলে আপনি বা আমি কেহই প্রকৃত মুসলিম নই। ইসলামে যা নিষেধ তা নিষেধই। সেটা আমি সঠিক বলতে পারবো না কখনোই। আমি জানি “ মিথ্যা বলা মহাপাপ” কিন্তু মাঝে মাঝে আমি ছোটখাট ২/১ টি মিথ্যা বলি দেখে বলতে পারবো না যে “ মাঝে মাঝে ছোট খাট মিথ্যা বলা পাপ নয়।“ what is right, is right… no matter what I obey it or not. তা ছাড়া ইসলাম শিক্ষা প্রবর্তন মানে কিন্তু অন্য ধর্মকে হেয় করে কিছু করা নয়, অন্য ধর্মের অনুসারিদের ইসলাম ধর্মের বই পড়তে বাধ্য করা নয়।

আর আরকটা ব্যাপার হচ্ছে কোরআনে একটা কথা আছে “ Don’t follow the footsteps of Shaytan” এখানে পদচিহ্ন বলতে সেসব কাজকে বুঝানো হচ্ছে যেসব কাজ আপাত দৃষ্টিতে আমার বা আপনার কাছে ইসলামের বিরুদ্ধে বা তেমন খুব একটা খারাপ মনে হচ্ছে না কিন্তু সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। যেমন, মোমবাতি প্রজ্জলন, শিখা অনির্বাণ, মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা গ্যাপন , কবরে ফুল দেয়া, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, মূর্তি স্থাপন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ছোট্ট একটা সত্য কাহিনী বলবো। আমার এক বন্ধুর বাবার মৃত্যুর পরের ঘটনা। আত্মীয় স্বজন সবাই একত্র হল, শোকের একটা পরিবেশ। দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। তখন বন্ধুর বড় ভাইয়ের ৪ বছরের ছেলে এসে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো “ বাবা, দাদুকে কে কখন পোড়ান হবে? “ বুঝেছেন তো? এখন সে হিন্দি সিরিয়ালে মরা ব্যাক্তিকে পোড়ান দেখতে দেখতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাই জিজ্ঞেস করছে। এমন চলতে থাকলে, ইসলামের পরিচিতি সে যদি ছোট থেকে না পেতে থাকে বা পাঠ্য না হয় তাহলে আর কিছু জেনারেশন পর তারা তাদের মৃত পিতাকে পোড়াতেই নিয়ে যাবে। এটাই হল footsteps of Shaytan যা আস্তে আস্তে ইসলাম থেকে দূরে নিয়ে যাবে আপনাকে। আশা করছি আমি বুঝাতে পেরেছি কি বলতে চেয়েছি তা। এসবে দাবীর সবগুলোই এখন একসাথে করা যাবে কিনা তা আলোচনা সাপেক্ষ্য। অন্ততঃ আমি বলবো দাবী গুলো উঠায় সবাই এটা নিয়ে ভাববে, ভেবে দেখবে ইসলাম এক্ষেত্রে কি বলে, এটা নিজের জন্য ভাল না খারাপ, আলোচনা হবে ইত্যদি ইত্যাদি। আশা করতে পারি যে এর মাধ্যমে একটি পজিটিভ একটা রেজাল্ট আসবে ইনশাআল্লাহ।

এবার আসি ৬ নাম্বার দাবী, কাদিয়ানীদের নিয়ে। কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের পরিচয় দেয় ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ বলে। কাদিয়ানী মতবাদের সাথে ইসলামের বিরোধ কোথায় এবং কেন সচেতন মুসলিম সমাজ কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি করে-এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা মানব জাতির যোগ্যতা ও উপযোগিতা হিসাবে কালক্রমে তাদের বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন বা অবকাশ নেই তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল প্রেরণের ধারা চিরতরের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, (অর্থ) ‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছি, আর আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছি।’’ (সূরা মায়েদা : ৩) পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, (অর্থ) ‘‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো বয়স্ক পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।’’-সূরা আহযাব : ৪০। এছাড়াও আরও অনেক কোরআনের আয়াত এবং সহিহ হাদিস আছে যা মুহাম্মদ (সা) কে সর্বশেষ নবী বলা হয়েছে। কিন্তু কাদিয়ানি রা এটাই মানে না। তাদের মতে তিনি সর্বশেষ নবী নন। তাদের মতে গোলাম আহমদ হল সর্বশেষ নবী। এর মাধ্যমে তারা কোরআনের কথা তথা আল্লাহ্‌র কথা অমান্য করছে। অমান্য করছে হাদিসকে যা মুসলমান হওয়ার অন্যতম ২ পূর্বশর্ত। তাহলে তাদের নিশ্চয়ই মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা চলে না। চার খলিফার আমলেও কয়েকজন এমন ভণ্ড নবীর আগমন ঘটেছিল যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দমন করা হয়েছে বা কতল করা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর জন্ম হবে। তাদের প্রত্যেকে নিজেকে নবী বলে দাবি করবে। অথচ আমি হলাম সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোনো নবীর আগমন হবে না।’’-আবু দাউদ, ফিতান, পৃ. ৫৮৪; তিরিমিযী, খন্ড ২, পৃ.৪৫। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসেবে বিশ্বাস করা মুসলমানের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যার এ বিশ্বাসে ত্রুটি রয়েছে, তার ঈমান বহাল থাকার কোনো অবকাশ নেই। এছাড়াও আরও অনেকগুলো কারণ বলতে পারি আমি তাদের বিরুদ্ধে। তবে মনে হয় না কোরআন আর হাদিসের পর কিছু বলার থাকে। এক্ষেত্রে কাদিয়ানীদের কেউ কেউ বলে যে কাদিয়ানীদের একটা গ্রুপ শুধু গোলাম রহমান কে নবী হিশেবে মনে করে বাকিরা নয়। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কোরআন, মুহাম্মদ (সা) এর পর ইমাম মাহাদি কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আমার মনে হয় ইমাম মাহাদি কে নিয়ে যেসব মত দ্বিমত রয়েছে তা সময়ের সাথে ফয়সালা হয়ে যাবে। এটা এমন কোন বিষয় নয় যা মুসলমানদের ইসলাম পরিপূর্ণ ভাবে ফলো করতে সমস্যা হবে। তাই একে সময়ের হাতেই ছেড়ে দেয়া ভাল। মুসলমানদের জন্য কোরআন এবং মুহাম্মদ (সা) অর্থাৎ সুন্নাহ ই যথেষ্ট। তবে তাদের একটা গ্রুপ যদি গোলাম রহমান বা অন্য কাউকে শেষ নবী হিশেবে মনে করে তাহলে আমি ঐ গ্রুপটিকে ইসলামের বা মুসলিমদের দলের বাহীরে রাখতেই দাবী করব। এটা চেক করে দেখতে হবে সরকারকে।

১০,১১,১২, ১৩ এর ব্যাপারে আমার মত সরকারের উচিত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয় গুলো চেক করে দেখা এবং দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তি আর নির্দোষী দের মুক্ত করা।

অনেকে হয়তো আমার উপরের কথা গুলো পড়ে বলবে আমি গোঁড়া মুসলিম, মৌলবাদী, ধর্মান্ধ, আধুনিক মুসলিম নই ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের জন্য আমার বক্তব্য হচ্ছে যদি সত্য কে সত্যা এবং ইসলামের নিয়ম নীতি সঠিক বলে বিশ্বাস করলে আমাকে মৌলবাদী হতে হয় তাহলে তা হতে আমি রাজি আছি। কোরআনে বলা আছে “ তোমারা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর” তাই মুসলিম হতে হলে ইসলামের সকল নিয়ম পরিপূর্ণভাবে মানতে হবে। কিছু মানলাম কিছু মানলাম না এমন কোন পথ নেই। Islam is Islam, There is no term in Islam like moderate muslim or modern muslim etc etc. প্রশ্ন শুধু আপনি ইসলাম মেনে চলছেন অর্থাৎ মুসলিম কিনা। আর কিছুই না। আমি নিজের সুবিধা অনুযায়ী ইসলামের কিছু নিয়ম মেনে চলব কিছু মানবনা, এমন কোন কিছু ইসলামে নেই। ইসলাম কে মানতে হলে, মুসলিম হতে হলে ইসলামের সকল কিছু মেনে চলতে হবে অক্ষরে অক্ষরে। আর কোন ২য় পথ নেই।
২০টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×