somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায় - নিরাপদ গাড়ি চালনার কৌশল

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কারণ হতে পারে। যেমনঃ চালকের অদক্ষতা, খারাপ রাস্তা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি, মালিকের সচেতনতার অভাব ইত্যাদি। ব্যক্তিগত জীবনে আমরা খারাপ রাস্তার ব্যাপারে কিছু করতে না পারলেও, অন্যান্য বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বনের সুযোগ রয়েছে।

আজকাল সড়ক দুর্ঘটনা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এটা কী করে ঠেকানো যায় বা চালক/মালিক/আরোহীকে কীভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা যায় তা নিয়ে তেমন একটা আলোচনা/কর্মশালা কোথাও হতে দেখা যায় না। গাড়ির চালক/মালিক/আরোহীর সতর্কতার ফলে সকল প্রকার দুর্ঘটনা ১০০% প্রতিরোধ করা যায়। পেশাগত কারণে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আজ আলোচনা করবো।
প্রথম কথা হল, চালকেরা যেহেতু সাধারণত অল্পশিক্ষিত হয়ে থাকেন আর দুর্ঘটনার ফলে যেহেতু আমাদেরই জান-মাল-সম্মানের ক্ষতি হয়, তাই প্রতিটি দুর্ঘটনার দায়িত্ব আমাদেরকে (মানে গাড়ির মালিক, আরোহী বা সুপারভাইজারকে) নিতে হবে। বেশ কিছু শর্ত যদি আমরা মেনে চলি তবে দুর্ঘটনার সংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস করা যায়। শুধু চালকের উপর নির্ভর করবেন না, মনে রাখবেন আরোহী হিসাবে আপনারও উচিত চালককে সতর্ক করে দেওয়া।
চালকের উপযোগিতাঃ
চালককে অবশ্যই কাজ চালানোর উপযোগী লেখা-পড়া জানতে হবে। কারণ তাকে রাস্তার বিভিন্ন নির্দেশাবলী, পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন নিয়মাবলী জানতেই হবে। তার দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে হবে। নিয়োগ দেয়ার আগে তার জ্ঞান ও দক্ষতা যতদূর সম্ভব যাচাই করে নিতে হবে। তার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি বি,আর,টি,এ হতে যাচাই করে নিতে হবে।
চালনার আগে দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
একঃ চালকের স্বাস্থ্য
গতরাতে চালকের পর্যাপ্ত ঘুম হয়েছিল কিনা?
আগের ডিউটি থেকে যাবার পর এই ডিউটি পর্যন্ত চালক কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা বিরতি পেয়েছে কিনা?
গত ৭ দিনে অন্তত ২৪ ঘণ্টা সে বিশ্রাম পেয়েছে কিনা?
সে কোনো ওষুধ খেয়েছে কিনা যার ফলে তার ঘুম পেতে পারে?
প্রথম ৩টি প্রশ্নের কোনোটির উত্তর ‘না’ হলে বা শেষ প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হলে তাকে কোনোক্রমেই গাড়ি চালাতে দেওয়া যাবে না।
দুইঃ গাড়ির কন্ডিশন
গাড়ি ভালো করে পরীক্ষা করে, আগে থেকে ছাপানো একটি ফর্ম পূরণ করে চালক তার গাড়ির অবস্থা নিশ্চিত করবে। চালক এতে হেড-লাইট, ইন্ডিকেটর লাইট, হিট মিটার, ফুয়েল মিটার, ওয়াইপার, রিয়ার ভিউ মিরর, সাইড মিরর, হিট মিটার, সিট বেল্ট, চাকার প্রেসার, টায়ার থ্রেডের গভীরতা (যাতে চাকা স্লিপ না করে), অতিরিক্ত চাকা, ব্যাটারির পানি, লুব অয়েল, ব্রেক অয়েল, দরজা, ইত্যাদি ঠিক আছে কিনা তা সরেজমিনে দেখে টিক চিহ্ন দিবে। আরোহী/সুপারভাইজার নমুনা পরীক্ষা করে সব কিছু ঠিক ঠাক আছে মনে করলে তবেই গাড়ি রাস্তায় বের হবে।
এ প্রসঙ্গে বলি আজকাল গাড়িতে আরো কয়েকটি জিনিস যেমন, ফার্স্ট এইড বক্স, অগ্নি-নির্বাপক সিলিন্ডার, সেফটি কোন, সকল আরোহীর সিট বেল্ট, আলাদা যায়গায় মালিকের ফোন নম্বর ইত্যাদি জিনিসকেও অপরিহার্যরূপে বিবেচনা করা হয়। গাড়ির সকল কাগজ-পত্র হালনাগাদ আছে কিনা তা-ও দেখে নিতে হবে। যে এলাকায় গাড়ি যাবে, সেখানে কোনো ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি/হরতাল আছে কিনা তা জানতে দৈনিক পত্রিকা দেখে নিন।

চালক ইঞ্জিন স্টার্ট করার আগে মোবাইল বন্ধ করবেন বা নীরব করবেন। ফোন এমনকি ভাইব্রেশন মোডেও রাখা যাবে না। মোবাইল যেন কোনোভাবেই মনোযোগ নষ্ট না করে। গন্তব্যে পৌঁছে বা জ্যাম দীর্ঘ থাকলে কল লিস্ট দেখে কল ব্যাক করা যেতে পারে। যদি কারো কল করার কথা থাকে, তাকে আগেভাগেই জানিয়ে দিন যে আপনি গাড়ি চালাতে যাচ্ছেন, তাহলে সে আর ফোন করবে না। মনে রাখবেনঃ Ignoring a call will not kill you, receiving might. মদ্যপান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা যতটা কমায়, মোবাইলে কথা বলা মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে তার চেয়েও কমিয়ে দেয়। মোবাইল বন্ধ করার পর চালক সিটবেল্ট পরবেন, তবে গাড়ি স্টার্ট করবেন। সিটবেল্টকে, এর গুরুত্বের জন্য কখনও কখনও লাইফবেল্ট বলা হয়। সিটবেল্ট থাকলে দুর্ঘটনার ক্ষতি বহুলাংশে হ্রাস পায়। উন্নত দেশে, এমনকি, বাসগুলিতেও প্রতিটি সিটে সিটবেল্ট থাকে।

রক্ষণাত্মক চালনা কৌশল (Defensive Driving Rules)
রক্ষণাত্মক গাড়ি চালনার কিছু কৌশল চালককে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

* Blind Point (যে জায়গাগুলি চালক দেখতে পান না) সম্পর্কে সতর্ক হোন।
* ১৫ সেকেন্ড দূরত্ব দেখুনঃ গাড়ি আগামী ১৫ সেকেন্ডে যতদূর যাবে তার পুরো রাস্তা যেন চালক দেখতে পান। তাই মোড়ের কাছে বা আঁকা-বাঁকা রাস্তায় গতি কমিয়ে দিতে হবে।
* ৪ সেকেন্ড ব্যবধানঃ সামনের গাড়ির সঙ্গে ৪ সেকেন্ড সময় ব্যবধান রাখতে হবে, যাতে সামনের গাড়ি হঠাৎ ব্রেক করলেও গাড়ি থামানোর সময় পাওয়া যায়।
* সারিবদ্ধ গাড়ি হতে দূরে থাকুন, কেননা একটি দূর্ঘটনা কবলিত হলে অন্যগুলিও দূর্ঘটনায় পরতে পারে।
* সর্ব অবস্থায় চারিদিকে পর্যাপ্ত যায়গা রাখুন, যেন প্রয়োজনে বেরিয়ে যেতে পারেন।
* খারাপ স্বভাব চালক চিহ্নিত করুন এবং এদের হতে দূরে থাকুন, প্রয়োজনে অন্য গাড়িকে মাঝে ঢুকতে দিন।
* প্রতি ৫ থেকে ৮ সেকেন্ড পরপর দুটি সাইড মিরর ও রিয়ার ভিউ মিরর দেখুন।
* ব্রেক করার সময় সব সময় রিয়ার ভিউ মিররে চোখ রাখুন।
* হার্ড ব্রেক করার আগে দু’একবার হাল্কা ব্রেক করে পিছনের চালককে সতর্ক করুন।
* সামনের গাড়ি হতে ৫ থেকে ৮ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ব্রেক করুন। তাহলে প্রয়োজনে গাড়ি ঘুড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবেন।
* সিগনাল ছাড়ার পরও ২ সেকেন্ড অপেক্ষা করুনঃ সিগনাল পরার পরেও দেখা যায় কিছু গাড়ি যেতেই থাকে, এজন্যই এই সতর্কতা। এতে সামনের গাড়ির সঙ্গেও ৪ সেকেন্ড দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে।
* নিজের অবস্থান জানানঃ অন্য গাড়ি আপনার গাড়িকে যেন দেখতে পায় বা আপনার গাড়ির অবস্থান বুঝতে পারে, সে জন্যে প্রয়োজনে হর্ন দিন।
* পিছনে নিজে ভালোভাবে না দেখে কখনও গাড়ি ব্যাক করবেন না। পার্কিং বা গ্যারেজ করার সময় গাড়ির সামনের দিকটি রাস্তার দিকে রাখুন, যেন প্রয়োজনে দ্রুত গাড়ি বের করতে পারেন।
* ২ সেকেন্ডের বেশি কোনো নির্দিষ্ট দিকে (যেমন টিভি, বিজ্ঞাপন) তাকিয়ে থাকবেন না, কারণ এতে চোখে ধাঁধাঁ লেগে যেতে পারে।

গাড়ির গতিঃ
কারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গতিসীমাঃ ৮০ কিমি/ঘণ্টা আর পিক আপের ক্ষেত্রে ৬০ কিমি/ঘণ্টা

ড্রাইভিং আওয়ার/ডিউটি আওয়ার
* চালকের ডিউটি আওয়ার (ডিউটিতে থাকা মোট সময়) কোনো অবস্থাতেই সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টার বেশি হতে পারবে না।
* চালকের ডিউটি আওয়ার (ডিউটিতে থাকা মোট সময়) কোনো অবস্থাতেই দিনে ১৪ ঘণ্টার বেশি হতে পারবে না।
* চালকের ড্রাইভিং আওয়ার (কেবল গাড়ি চালনার সময়) কোনো অবস্থাতেই দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি হতে পারবে না।
* ৩ ঘণ্টা একটানা চালনার পরে চালককে ১৫ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে।
* যেহেতু বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিকাল ৩টা থেকে ৫টা আর ভোর ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে হয়ে থাকে, তাই এসময় চালনা হতে বিরত থাকা যায় কিনা তার চেষ্টা করতে হবে।
* ঘুম পেলেঃ চালকের যদি এমন ঘুম পায় যে তার পক্ষে জেগে থাকা সম্ভব হচ্ছে না, তবে তাকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিতে হবে। Fatigue kills – never fight fatigue. অনেকে দেখা যায়, ঘুম পেলে গাড়ি হতে নেমে হাঁটা-হাঁটি করেন, চা নাস্তা খান। কিন্তু এসবে আসলে কোনো লাভ হয় না। ঘুমের বিকল্প কেবল ঘুম।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এধরনের নিয়ম মেনে চলা হয়। এগুলি সবই আলোচনা মাত্র, নিরাপদ গাড়ি চালনার চূড়ান্ত কিছু নয়। আমাদের চালকরা এবং আমরা যদি এসব মেনে চলি তবে দূর্ঘটনার সংখ্যা যে অনেক কমে যাবে তা বলাই বাহূল্য। মনে রাখবেনঃ রাস্তায় তাড়াহুড়া করবেন না, তাতে আপনি গন্তব্যে আদৌ না-ও পৌঁছতে পারেন।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×