somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৃষ্টিশীল মানুষের চিন্তা ভাবনা - ২ (শেষ)

১৩ ই জুন, ২০০৭ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আগের পর্বের পর)

আইডিয়া তৈরীর প্রথাগত পদ্ধতি
---------------------------
সৃজনশীলতা যে কিছু মানুষের কুক্ষিগত সম্পদ নয় বরং যে কেউ চর্চার করে সেটা আয়ত্ত্ব করতে পারে সেটা আবিষ্কার হয়েছে বেশ অনেকদিন হল। মার্টিন লেইথ নামে এক ভদ্রলোক চমৎকার একটি গবেষনা করেছেন এ বিষয়ে। তার মতে পৃথিবীকে তিনভাবে দেখা যায়: ১। মেশিন হিসেবে: যখন চিন্তা করা হয় অনেক বেশী আইডিয়া তৈরী করতে পারলে তার মধ্যে একটা ভাল আইডিয়া বের হবেই; ২। সিস্টেম হিসেবে: যখন চিন্তা করা হয় ছোট ছোট উন্নতি বড় উন্নতিকে সামগ্রিকভাবে সাহায্য করে; ৩। শক্তি এবং সত্ত্বার একটি ক্ষেত্র: যখন চিন্তা করা হয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সঠিক দিকে আগাতে হয়। এখানে পাওয়া পুরো লেখাটা তার নিজের যোগ্যতার পড়বার দাবী রাখে। এছাড়াও উইকিপিডিয়ার এই লেখাটিও এবিষয়ে ভাল একটি লেখা।

আমি সৃষ্টিশীলতার অন্যান্য অনেক দিক নিয়ে আলোচনা না করে বরং আইডিয়া তৈরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো সাধারন ভাবে আপনাদের লেখালেখি থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজে আসবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ বড় কোন কাজে কোন পদ্ধতি বেছে নেবার আগে আরেকটু গভীরে পড়াশোনা করতে। এজন্য উপরের লিংকদুটো ব্যবহার করুন - আর গুগলতো রয়েছেই।


ব্রেইনস্টর্মিং
----------
এটা বোধহয় আইডিয়া তৈরীর সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রচুর ভাল এবং খারাপ সমাধান আসে সমস্যার জন্য। কখনও সেটা গ্রহনযোগ্য হয় কখনও হয়না। কিন্তু একদল লোক একসাথে বসে দ্রুত বেশ অনেকগুলো আইডিয়া তৈরী করতে পারেন বলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই পদ্ধতি। এই পদ্ধতির কিছু বেসিক নিয়ম আছে:
১। সংখ্যাধিক্যে জোর দাও: ধরে নেয়া হয় প্রচুর আইডিয়া তৈরী করা হলে একটা না একটা ভাল আইডিয়া বের হবেই। তাই ভালো হোক খারাপ হোক প্রচুর আইডিয়া তৈরী করতে হবে।
২। কোন ক্রিটিসিজম চলবে না: প্রথম নিয়মকে গ্রহনযোগ্য করতে এই নিয়ম পালন করা দরকার।
৩। উদ্ভট আইডিয়া সুস্বাগতম
৪। ছোট আইডিয়া জোড়া লাগিয়ে ভাল আইডিয়া তৈরী করা যাবে

এ পদ্ধতিতে এক সাথে বেশ কয়েকজন বসেন। প্রথমে নেতা জাতীয় কেউ সমস্যাটা বলেন। সমস্যাটা বুঝার জন্য কেউ প্রশ্ন করলে তার আলোচনা করা হয়। তারপর কেউ কারো সাথে কথা না বলে একটা কাগজে নিজ নিজ সমাধানগুলো লিখে ফেলেন। তারপর একে একে সেই সমাধানগুলো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য ব্রেইনস্টর্মিংয়ের বিভিন্ন ধরনের ভার্সন আছে। যেমন প্রোডাক্ট ডিজাইনের ক্ষেত্রে ৬-৩-১ নামের একটা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেখানে ছয়জন লোক তিনটি করে আইডিয়া লিখে তার পাশের জনকে একবারের জন্য পড়তে দেন। তারপর সেটা রিভিউ করা হয়। কোলাবোরেটিভ স্কেচ নামে এক পদ্ধতিতে একেকজন একেকটি প্রোডাক্ট আইডিয়া স্কেচের মাধ্যমে প্রকাশ করে পাশের জনকে দেন, তিনি তা ইমপ্রুভ করে তার পাশের জনকে দেন এইভাবে অনেকগুলো আইডিয়ার একটা ইমপ্রুভড ভার্সন পাওয়া যায়।

এভাবে ব্রেইন স্টর্মিং দিয়ে তৈরী করতে পারেন আপনার পরবর্তী লেখার আউটলাইন, কিংবা পরবর্তী নাটকের স্ক্রীপ্ট।


মাইন্ড ম্যাপিং
-------------------
মাইন্ড ম্যাপ হচ্ছে কথা, আইডিয়া এসব ছবির মাধ্যমে একটি কেন্দ্রের চারিদিকে ছড়িয়ে প্রকাশ করার একটি পদ্ধতি। এটা ব্যবহার করে আইডিয়া তৈরী, দৃষ্টিনন্দনভাবে দেখতে, সমস্যাকে ভেঙ্গে টুকরো করতে এবং সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। ছবিতে দেখানো পদ্ধতিতে প্রথমে মূল সমস্যাটা লিখুন তারপর তার উপ সমস্যাগুলোকে চারপাশে জুড়ে দিন। এভাবে আস্তে আস্তে ভাঙ্গতে থাকুন যতক্ষন সমাধান না পাওয়া যায়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে মাইন্ড ম্যাপ তৈরী করার জন্য এখন ফ্রী সফটওয়্যার পাওয়া যায়। আমার সবচেয়ে পছন্দের হচ্ছে ফ্রি-মাইন্ড নামের একটি সফটওয়্যার।

মাইন্ডম্যাপ এমনকি আপনার নিত্যদিনের চিন্তা ভাবনাকেও অনেক সহজ করতে পারে। যেমন আপনার বাজারের লিস্টিও তৈরী করতে পারেন মাইন্ড ম্যাপ ব্যবহার করে। মূল উদ্দেশ্য বাজার, তার চারপাশে মাংসের দোকান, সবজীর দোকান, মুদি দোকান। তারপর মাংসের দোকানের চারপাশে গরুর গোশ, মুরগী ইত্যাদি। সবজীর দোকানের চারপাশে বাঁধাকপি, আলু ইত্যাদি। এভাবে কাজগুলোকে সহজে সাজিয়ে ফেলা যায়। মাইন্ড ম্যাপিং তাই নোট বুক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।


শেষ কথা
---------
এখানে উল্লেখিত দুটি পদ্ধতি ছাড়াও আরো অনেক পদ্ধতি আছে আইডিয়া তৈরীর এবং সৃষ্টিশীল হবার। বেশীরভাগ পদ্ধতি বিশেষ কিছু কাজের জন্য কাস্টোমাইজ করা বলে অনেক সময় অন্যান্যদের জন্য বুঝতে সমস্যা হতে পারে। আমার লেখার পাঠক গোষ্ঠী মূলত: ব্লগাররা বলে আমি অন্যান্য বিষয় আর টানলামনা এখানে। আশা করব এখান থেকে আপনার সৃষ্টিশীল পদ্ধতি খোঁজার যাত্রা শুরু হবে আর নিজের প্রয়োজনে সঠিক পদ্ধতি খুঁজে বার করে ব্যাবহার করতে পারবেন। সৃষ্টিশীল হবার এ পদযাত্রায় আপনাকে আমার সালাম।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×