somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাহাজডুবি - মাহবুবুন নূর মেহেদী

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ভোরের দিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শেলা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটারের ফার্নেল ওয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর জাহাজের তেল ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায়। অদক্ষতা, যথাযথ যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা এবং কালক্ষেপণের কারণে আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও এর জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে।

৬০১৭ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৪৫০ টির মত ছোট-বড় নদী আর খাল। প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা(সুন্দরী,গেওয়া, কেওড়া), ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণসহ ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভয়চর, ৩শ প্রজাতির পাখি। বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, কুমির, ২১০ প্রজাতির মাছ, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, ১ প্রজাতির লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির শামুক, ঝিনুক রয়েছে সুন্দরবনে। অযত্নে অবহেলায় সুন্দরবন থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ২ প্রজাতির পাখি, ৫ প্রজাতির মাছ এবং ৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি ও ৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (ক) তে প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করার কথা বলা হলেও তা সুন্দরবনের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৫ ধারা অনুযায়ী সুন্দরবনকে ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologically Critical Area) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও ৫ ধারা ভঙ্গের জন্য এই আইনের ১৫ ধারায় সর্বচ্চ ১০ বৎসর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।

যে স্থানে জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে সেটি ইরাবতী ডলফিন বা শুশুকের অভয়ারণ্য হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষিত। বিশ্বে ইরাবতী ডলফিনের সবচেয়ে বড় বিচরণ ক্ষেত্র এই সুন্দরবন। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা ১৫ তে অভয়ারণ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে কিভাবে জাহাজ চলাচল করে তা জনমনে প্রশ্নের উদ্বেগ করেছে।
জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন ১৯৯৭ সালে ৬ ডিসেম্বর সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করে। ইউনেস্কোর নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী সরকারিভাবে যথাযথ নিরাপত্তার কথা বলা থাকলেও তা না মানার দরুন আজ এত বড় পরিবেশ বিপর্যয়।

ইউনেস্কোর নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭ এ চুক্তির অধীন দেশগুলোর মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতার কথা লেখা থাকলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অর্থায়নে সুন্দরবন থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে বাংলাদেশ। যা ভবিষ্যতে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যের জন্য হুমকি।

১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটিতে স্বাক্ষর করে। এই কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৭ এ পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ এবং অনুচ্ছেদ ৮ এ যেসব স্থানে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন সেসব এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা থাকলেও সুন্দরবনের ক্ষেত্রে এসব অনুচ্ছেদ মানা হয়নি।

কোন সড়ক বা নদীতে যানবাহন চলাচল করলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। আজ যদি সবগুলো আইন মেনে সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকত তবে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্বলতা ও উদাসীনতা এই দুর্ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট।

সুন্দরবনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার পর সেভাবে সরকারী প্রচারনা না হলেও মওদুদুর রহমান জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৫ সালে হুইটলি পুরস্কার জেতেন। এভাবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সুন্দরবন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
শুধু আইন তৈরি করে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন না করলে মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় দিনকে দিন বেড়েই যাবে। এজন্য আইনের প্রয়োগের দিকটি নিশ্চিত করতে হবে।

মাহবুবুন নূর মেহেদী
কলাম লেখক
প্রকাশিতঃ ১৫ই ডিসেম্বর ২০১৪ ইং, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ।
Link:
http://www.alokitobangladesh.com/editorial/2014/12/15/112505
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×