somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ১৯৭২ এর ৬ই জানুয়ারী

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ ৬ই জানুয়ারী । দিনাজপুর বাসীর জন্য একটি শোকাবহ দিন । ১৯৭২ সনের এই দিনে স্বাধীনতার ২১ দিন পরে – দিনাজপুর শহরের পূর্বপ্রান্তে দার্জিলিং রোড সংলগ্ন মহারাজা গীরিজানাথ হাই স্কুলে এক ভয়াবহ আরটিলারী বাঙ্কার বিস্ফোরণ ঘটে ।

বাঙ্কারটি তৈরি করে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনী স্কুলের মাঠের পূর্ব প্রান্তে। ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের পরে এখানে প্রচুর গোলাবারুদ ও উদ্ধারকৃত ল্যান্ড মাইন এখানে মজুত করা হয় ।

কোন এক অজানা কারণে বিকালের দিকে এই বাঙ্কারে বিস্ফোরণ ঘটে । প্রায় ২৫০ জন লোক নিহত হয় ও অসংখ্য মানুষ আহত হয় । নিহতদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষ ছাড়াও ভারতীয় সেনা সদস্যও ছিলেন। শব্দের তীব্রতা এতটাই ছিল যে আশেপাশে প্রায় এক মাইল পর্যন্ত বাড়িঘরের বন্ধ থাকা দরজা – জানালা গুলো কব্জা কপাট থেকে আলগা হয়ে যায় । আর খোলা দরজা – জানালা গুলো প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খায় । দাড়ানো মানুষ দাড়িয়ে থাকতে পারেনি ।

নিহত মানুষগুলির ছিন্নভিন্ন লাস ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একত্রীত করে শহর থেকে চারমাইল দূরে *চেহেলগাজী কবর স্থানে গণকবর দেয়া হয় (উপরে ছবি)। এই ঘটনার উপরে যৌথ বাহিনীর তদন্ত কমিশন হয় । গণকবরটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে, স্মৃতি ফলক বসানো হয়েছে এবং দিনাজপুরে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে ।

বিস্ফোরনে দিনাজপুরের জমিদার মহারাজা গীরিজানাথ কর্তৃক তৈরি মূল স্কুলভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংশ হয়ে যায় এবং বাঙ্কারটি একটি পুকুরে পরিণত হয় – যা এখনো বর্তমান ।

তীব্র শব্দে সীমান্তবর্তী লোকজন পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে মনে করে বাড়িঘর ছেড়ে ভারতের দিকে পালাতে শুরু করে ।

স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে এটি একটি অন্যতম বিয়োগান্তক ঘটনা – যার স্মরণ এখন সামান্যই হয়।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ওয়েব সাইটে বলা হয়েছেঃ

"মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও তখনো দেশের সর্বত্র হানাদার বাহিনীর অসংখ্য নাশকতার চিহ্ন ছড়িয়ে ছিল। বিশেষ করে দিনাজপুরের পথে-ঘাটে মারাত্মক বিস্ফোরক অস্ত্র মাটির নিচে পুঁতে রাখা ছিল। এছাড়া শত্রুদের ফেলে যাওয়া অসংখ্য আগ্নেয়াস্ত্রও পড়ে ছিল যেখানে সেখানে। এসব অস্ত্রমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জেলার পথঘাটে চলাচল ছিল বিপজ্জনক। তাই এসব স্থান অস্ত্রমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা নিয়োজিত হয় এবং প্রতিদিন প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে প্রত্যন্ত এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র নির্ধারিত রক্ষণাগার মহারাজা হাইস্কুলে এনে জড়ো করা হয়। অস্ত্র সংগ্রহের এই কাজ চলার সময় ৬ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। ঐ দিন সন্ধ্যার সময় এক ভূমি মাইন বিস্ফোরণে গোটা শহরসহ আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। নিহিত হন মহারাজা হাইস্কুল ভবনে অবস্থানরত অনেক মুক্তিসেনা। বিশাল স্কুল ভবনটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশেপাশের বহু বাড়ীঘর ও সম্পদ।

পরের দিন উদ্ধারকৃত দেহাবশেষগুলি সামরিক মর্যাদায় পবিত্র ভূমি চেহেলগাজীর মাজার প্রাঙ্গনে সমাহিত করা হয়। অগণিত শোকার্ত মানুষ শোকমিছিলে যোগদান করে। এতো বড় শোক মিছিল দিনাজপুরে আর কখনো হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে অনুসন্ধান চালিয়েও সে সময় বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক নাম, পরিচয় ও সংখ্যা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৬-৯৭ সালে গভীর অনুসন্ধানের পর বিস্ফোরণের কারণ উদঘাটিত হয়। উদ্ধার করা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও ঠিকানা। "

শ্রদ্ধাঞ্জলিঃ সেই সব শহীদদের - যাঁদের প্রাণের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ ।

স্মরণঃ ইমন জুবায়ের ভাই – আমি ছিলাম যার নীরব পাঠক।

*চেহেলগাজী কবরস্থানঃ এখানে একটি ৩৬ হাত লম্বা গণ কবর থেকে এই নামের উৎপত্তি। অতীতে একদল সুফী দরবেশ এখানে স্থানীয় রাজার সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ হন, তাঁদেরকে এই ৩৬ হাত লম্বা কবরে গণ কবর দেয়া হয়। এখানে একটি প্রাচীন মসজিদ ভগ্নাবস্থায় আছে – ঐতিহাসিক মেহরাব আলীর মতে এই অঞ্চলের প্রথম মসজিদ ও বাংলার আদিমতম মসজিদের একটি। চেহেল একটি ফার্সি শব্দ – যার অর্থ চল্লিশ ।

**ছবি নেট থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৫৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×