somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত প্রথম অ্যালবাম 'আবার বছর কুড়ি পরে'

১১ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন গিয়াছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পরে। তাই ফিরে এলুম ...'মহীনের ঘোড়া' হয়েই ঝোলায় গান, বাঁশি, ভায়োলিন যেমন ছিল, আছে। আছে গীটার। কুড়ি বছর আগেকার পাগলা ঘোড়াদের এখন চোখে চশমা, দাড়ি শাদা, চুল পাতলা। বুড়ো হয়েছে নিশ্চয়ই তারা (পাঞ্জাবির পকেটে আর ডাল-ভাত থাকে না) বুড়িচাঁদটার মতো...তবে ঐ টুকুই! বুড়ো ঘোড়া কিন্তু বেতোঘোড়া নয়। বরং সেই নীল ঘোড়া চৈতকের মতো, এখনো জোর দৌড় তাদের, হে নীল ঘোড়া! কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে, বহতা নদীর ধার ঘেঁষে, আত্মীয় মানুষের পাশাপাশি এখনো গান গায় তারা। হয় তো গানই নয়, হয় তো বা হ্রেষাধ্বনি!



অ্যালবামের সাথে বের হওয়া বইতে শুরুটা হয়েছিল ঠিক এভাবেই। প্রয়াত দীপক মজুমদার ও বারীন সাহাকে উৎসর্গ করা অ্যালবাম, মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত প্রথম অ্যালবাম 'আবার বছর কুড়ি পরে' প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে কলকাতা বইমেলায়। বিশ বছর পর ফিরে এসে তাঁরা চলে যান গানের পিছনে, সামনে ঠেলে দেন একগাদা নতুন মুখকে। এ প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, "ওদের ইনফ্রা-বা আলট্রা দুঃখের স্বর নিয়ে ম্যাজিক দেখাক, শেষমেশ জিৎ ঐ চিরদিনের মাদারির দড়াবাজির, এই আমাদেরই। একটুখানি মন দিয়ে শুনবেন আমাদের মতো দামড়াদের সঙ্গে সর্বত্র গলার মিল রয়েছে ওদের। স্বরের মিল, সুরের মিল। তাই আমরা ঠিক করলুম এবারে আমরাই পিছনে যাই। ওরা উড়ুক হাওয়ার আগে। টরটরে আর টাটকাবাগানে, খাররা আর খাঁটি নীলে। আমরা চশমা পরে, গান বেছে যাই। ওরা আমাদের বাঁচিয়ে রাখল, গান না বেচেও আমরা ওদের মধ্যে বেঁচে গেলাম। আর হে সমালোচক, আপনার জন্য রইল খুরে খুরে নমস্কার।"

অ্যালবামে মোট গান ছিল আটটি। এই গানগুলোতে ছিলেন তখনকার একঝাক নতুন মুখ। তাঁরা আজ অনেকেই খুব পরিচিত। অনেক জায়গায় তাঁদের লেখাই পড়তে পারবেন, জানতে পারবেন। কিন্তু মহীনের ঘোড়াগুলি তাঁদের সম্পর্কে কি বলেছিলেন, কিভাবে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন? প্রকাশিত বইটি আমার কাছে আছে বিধায় আমি হুবুহু তুলে দিচ্ছি সকলের জন্য।

দিব্য মুখোপাধ্যায়ঃ মনের ডাক্তার, মানে সাইকিয়াট্রিস্ট। বহুদিন আগে লিখেছিলো এই গান...'আকাশে ছড়ানো মেঘের কাছাকাছি।' তখনকার মতো গলাটা এখনও একটু পাগলাটে...স্বর এবং সুর দুইয়েতেই। যখন গায়, "চিলেকোঠায় বসা বাদামী বেড়াল বোনে শূন্যে মায়াজাল," স্পষ্ট দেখা যায় সেই বাদামী বেড়ালটাকে- কাছেই একটা পাগল গান গাইছে।

সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়ঃ খুবই ধীর স্থির যুবক, গাড়ির স্পেয়ার পার্টস- এর ব্যবসা করে। হাইট, ছ ফুটের এদিক ওদিক, চেহারায় সাহেবি কেতা, গলাটা কিন্তু মিঠে দেশোয়ালী। সবসময়েই যেন পাশে খঞ্জনি বাজে। সুরজিৎ এর গানের কথাও তেমনি...কঠিন কথা সরল করে বলা..."আমি ডানদিকে রই না/ আমি বামদিকে রই না।"

অনুপ বিশ্বাস/ বাদল সরকারঃ ওদের গান, "কথা দিয়ে বন্ধু ফিরা না আইলা"। পুরুষালি গলা, ওঠা নামা করে সহজ অথচ খুবই চোস্ত ভাবে আর গানের শব্দে আছে অশ্রুবিন্দুর মতো নিটোল আবেগ... বুকের ব্যথা, আশার ছলনা, মালার ফুল...

গড়ের মাঠঃ এক কথায় এদের 'সখের প্রাণ গড়ের মাঠ'। এদের গান, "ধাঁধার থেকেও জটিল তুমি/ খিদের থেকেও স্পষ্ট।" দলের প্রধান পান্ডা সুব্রত ঘোষ আর জয়জিৎ লাহিড়ি। আর ওদের সঙ্গে আছে সুব্রত লোধ, সুমন্ত ঘোষ, সুখেন্দু ঘোষ। সুব্রত ঘোষ ইঞ্জিনিয়ার, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসে। আর জয়জিৎ, যে এখনো তার বাপ্তা ডাকনামের দুধগন্ধ কাটাতে পারেনি চেহারায়, সে এক আমলা, WBCS। এই সব কাজ আর গানের উল্টোসিধের মধ্যে ওদের আসল চেহারাটা চেনা বেশ কঠিন। ওরা অবশ্য গানের মধ্যেই বলে রেখেছে, "চিনতে যদি পেরেই থাকো...ঘেন্না করো/ ঘেন্না করো।"

অন্তরা চৌধুরীঃ অন্তরা সম্পর্কে নতুন করে কি বা বলার। সলিল চৌধুরীর কন্যা হওয়ার নিছক পরিচয় সে বহুকাল আগেই ডিঙিয়ে এসেছে। নিজে কম্পোজার, সুদক্ষ পিয়ানো বাদক, আর তার গলা? "এলো কি এ অসময়/ মনে শুধু জাগে ভয়" গানটিতে দুঃসময়ের অনুভবকে এত পরতে পরতে মেলে ধরেছে অন্তরা যে বিস্ময় জাগে।

ঋতুপর্ণা দাশ/ চন্দ্রিমা মিত্র/ পরমা ব্যানার্জীঃ এরা এখনো ছাত্রী... কেউ ইকনমিক্স, কেউ স্ট্যাটিস্টিক্‌স, কেউ বা ভূগোল। ওদের গাওয়া গান সব অর্থেই এই ক্যাসেটের এক বড় চমক- "ও গঙ্গা/ তুমি চলেছো ঢেউয়ে ঢেউয়ে কোথায়" অরণেন্দু দাশের লেখা ও সুরে। অরুণদা সেই কবেকার আগেকার এক নাগরিক চারণ। আমাদের সব্বার আগে, ঘোড়াদেরও আগে, এগিয়েছিলো তাঁর গান। পেশায় স্থপতি অরুণদা এখন ইংল্যান্ডবাসী, থাকেন কেন্ট-এ। যেখানেই যান না এ গান সেখানেই সত্যি। সেইখানেও বয়ে চলে গঙ্গা, জোয়ারে-ভাঁটায়, বনমাঝে কি মনমাঝে। সেই সত্যিকে তিনসত্যি করে তুলেছে এই কন্যারা। আর তাতে চতুর্থ মাত্রা দিয়েছেন প্রবীর দাশ, হারমোনিকের দোলায়, ঢেউয়ে ঢেউয়ে।

ক্রস উইন্ডসঃ স্বপ্ন বেচার কোনো চোরাকারবার নেই ওদের। গানের শুরুতেই প্রশ্ন..."পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে/ স্যাটেলাইট আর কেব্‌লের হাতে/ ড্রয়িংরুমে রাকা বোকা বাক্সতে বন্দী।" আরও বলে রাখা ভালো, ক্রস উইন্ডসদের জীবনের এটাই প্রথম বাংলা গান। ওরা পেশাদার রক্‌ মিউজিশিয়ান, নীল বনি টুকি চিরো রবিন ডোয়াইট কারও কারও পনিটেল, থাকলোই বা, তবু গানের জাত যে ওরা মানে না তার প্রমাণ তো এই গানেই।

লক্ষ্মীছাড়াঃ 'লক্ষ্মীছাড়া' এই পাঁচজন - সাম্য গোস্বামী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক আচার্য-চৌধুরী, অংশুমান সরকার আর গৌরব চট্টোপাধ্যায়- বয়স যাদের বারো থেকে সতেরোয়... এদের গান এই নেমন্তন্নের শেষপাতে দেওয়ার মতো চমকদার। আর সব অর্থেই প্রাপ্ত বয়স্ক, বাজনাটাও নিজেদেরই হাতে। সাম্য কী-বোর্ডস-এ। গৌরব ড্রামস-এ বাকি তিনজনাই, লক্ষ্মীছাড়ার ভাষায়ঃ "ভাল গায়ক, একটু আধটু গিটার বাজায়।" ওরা নিশ্চিত জানে কাক-বক পাখিকুল উড়ে যাবে ফের এই গানে! "পড়াশোনায় জলাঞ্জলি ভেবে মূর্খ বলছো কি? তোমরা বলছো আমাদের জীবনের চার আনাই ফাঁকি?" আর গানের শেষে নিখুঁত অঙ্কে দেখিয়ে দেয় পরিতৃপ্ত জীবনের হাড়হাভাতেপনা, যেখানে প্রম নেই। ভয় হয় গান শেষ বলেই এরা বুঝি দৌড়তে শুরু করবে। ছুটতে ছুটতে ছুটতে এক ঢেউ- ওথলানো সমুদ্রের ধারে। আর পালানোর পথা নেই। সেখানেই ছবি স্থির হয়ে যায়।


'আবার বছর কুড়ি পরে' অ্যালবামের গানগুলো হলঃ (লিংক এ গেলে লিরিক্স এবং ইউটিউব লিংক পাবেন। পোস্ট বড় হয়ে যাবে বিধায় এখানে দিলাম না)

১। পৃথিবীটা নাকি
২। আমি ডানদিকে রই না
৩। আকাশে ছড়ানো মেঘের কাছাকাছি
৪। ধাঁধার থেকেও জটিল তুমি
৫। গঙ্গা
৬। কথা দিয়া বন্ধু
৭। এলো কি এ অসময়
৮। পড়াশোনায় জলাঞ্জলি
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×