আমি গত সাত মাসে প্রায় ২১ কেজি কমিয়েছি
ওজন কমানোটা পুরোপরি নির্ভর করে মনের উপর। মন যদি চায় “হ্যাঁ কমবো, কমতে হবে”, তাহলে অবশ্যই কমা সম্ভব। কিন্তু মন না চাইলে, হবে না ভাই। আমি ক্লাস সিক্স থেকেই অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যাই এবং কখনও কমানোর কথা চিন্তা করিনি। এমনকি আমার খারাপ/হীনমন্যতাবোধ লাগত না। আমি বরং ছোট ভাই/বোনদের শিখিয়ে দিতাম যাতে তারা আমাকে 'মোটু'
ওজন কমানোর ব্যাপারে সবচেয়ে সাহায্য করতে পারে লক্ষ্য নির্ধারন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ওজন...আমাকে সাহায্য করেছে, আমার এক বন্ধু। ছয় মাসে ষোল কেজি কমানোর ব্যাপারে আমরা বেট লাগি এবং আমি প্রায় আঠার কেজি কমিয়ে জিতে যাই
ধীরে ধীরে শুরু করুন। সবকিছুই। ব্যায়াম, খাওয়া দাওয়া নিয়ন্ত্রণ- সবকিছুই। অভিজ্ঞতা এবং আশেপাশের মানুষ(মোটা
প্রথমেই কমাতে হবে ভাতজাতীয় খাবার। রুটি, ভাত, আলু ইতায়দি কমাতে হবে। আমি আগে সকালে খেতাম চারটা রুটি। দুপুরে এবং রাতে ভাত। পরিমানে ব্যুফে স্টাইল। এখন সকালে দুটা রুটি, রাতে দুটা রুটি। দুপুরে ভাত। পরিমানমত, যত কম ভাত খাওয়া যায়। সবজী অনেক খাই। রুটি খেতাম আলুভাজি দিয়ে। আলুভাজি পুরা নিষেধ (আম্মার হাতের আলুভাজি
প্রথম মাসে ঠিকমত মেনে চললে তিনের মত কমার কথা। এই মাসে হবে হাঁটার মাস। প্রতিদিন হাঁটুন। ক্লাসে যাবার সময়, ক্লাস থেকে আসার সময়, অফিসে যাবার সময়, অফিস থেকে ফেরার সময়, যে যখন সময় পান। কোন অজুহাত নয়। যে কোন সময় হাঁটুন। সকালেই/বিকেলেই হাঁটতে হবে, এমন নয়। হাঁটার সময় এবং স্পীড বাড়ান। আমি প্রথমে ২০-৩০ মিনিট হাটতাম। প্রতিমাসে ধীরে ধীরে বাড়াতে এখন প্রতিদিন প্রায় ৬-৭ মাইল হাঁটি। ঘন্টায় ৬-৭ কি.মি. স্পীডে। অনেকেই বলবে হাঁটা খুব একটা কাজে দেয়না (আমি শুরুতে এমনটা শুনেছিলাম)... কিন্তু খুব হেল্প করে। এবং এই দ্বিতীয় মাসেই আরেকটি জিনিস বাদ দিন। আরেকটি জিনিস কমিয়ে নিয়ে আসুন। একটি হল দুধ চা- পুরোপুরী বাদ। আরেকটি হল- চিনি। ধরুন আপনি চায়ে চিনি খান দু চামচ। তাহলে খান এক চামচ। কিছুদিন কষ্ট হবে, কিন্তু সয়ে যাবে। চিনি কমানো খুব ইম্পর্ট্যান্ট।
তৃতীয় মাস। ভাতে লবন খান? এখনও পুরী, সিঙ্গাড়া এইসব খাচ্ছেন? সিরিয়াসলি? আমি বাদ দিতে বলিনি তো কি হইছে? এইগুলানতো প্রথম মাসেই বাদ দিবেন। কোন কন্সিডার নাই। ফাস্টফুড বাদ। ভাই আবার খাইতে পারবেন। সাত আট মাস পর যখন শরীর ঠিক হয়ে যাবে, তখন খাইয়েন। এখন না। এই মাসেও সব আগের মত চলবে। হাঁটা বেড়ে যাবে অনেক। সময় এবং স্পীড, দু দিক থেকেই। চিনি আরো অর্ধেক কমে যাবে। আপনার যে খাবার দেখে মনে হবে যে, এইটাতে চিনি আছে, তাই কমিয়ে ফেলুন অথবা বাদ দিন। তৃতীয় এবং চতুর্থ মাস খুব কার্যকরী। অনেক কিছুই আয়ত্তে চলে আসছে এবং আপনি ফলও পাচ্ছেন। আশা করা যায় এখন আর মনের সাথে যুদ্ধ করতে হবে না। তবে সাবধান। নো ঢিলামী।
বাকি মাসগুলোর কাহিনিও এক। তেলজাতীয় খাবার, মিষ্টি, গরু, খাশি, পোলাও, কোক(পেপসিও
এতক্ষন খুব বাদ দিতে বললাম। সবাই ভাবতেছেন, কি আর আলাদা কিছু বললাম? যেই লাউ, সেই কদু...কিন্তু না, কিছু সুসংবাদ দিচ্ছি। প্রতিমাসে দু একবার খান। মন খুলে। যা খুশি। যেখানে খুশি। এতে আপনার মন হাঁপ ছাড়ার সুযোগ পাবে। তবে খাবার সময় মনকে একটু মনে করিয়ে দেবেন, আপনি ডায়েটে আছেন
কন্টিউনিটির ক্ষেত্রে কিছু বাঁধা আছে। সবচেয়ে বড় বাঁধা আপনার “মা”... আম্মাদের এত মায়া ক্যান? তার পোলা যে কত মোটা, সেইটা তারা চোখে দেখে না। ভাইরে, মায়েরা অনেক ঝামেলা করবে। তবে ভালোমত বুঝাইলে তারা হইতে পারে আবার সবচেয়ে সাহায্যকারী। আমি আম্মুরে পুরা পটাইয়া ফেলছি
একটা লিস্ট দেই হালকা পাতলা ভাবে।
কি কি পুরোপুরি বাদ দেবেন
* কোমল পানীয়
* মিষ্টি
* কেক
* চানাচুর, চিপস
* তেলজাতীয় ভাজাপোড়া খাবার
* ডিমের কুসুম
* চিংড়ির মাথা
কি কি কমিয়ে দেবেন
* ভাত
* ডাল (হ্যাঁ ডাল... প্রথমে এইটাও কম খান। পরে বাড়াইয়েন)
* চিনি
* আলু
কি কি সবসময় খাবেন এবং প্রচুর পরিমানে
* পানি (জী, ভুইলেন না...সবচেয়ে উপকারি)
* শসা
* কাঁচা পেপে
* ফল
* শাক-সব্জি
কি কি খাবেন (ভুল ধারনা আছে আমাদের যে ডায়েটের সময় এঁদের খাওয়া যাবে না :p)
* ডিমের সাদা অংশ
* চিংড়ির মাংশল অংশ
* মাছ
* মধু (অবশ্যই খাঁটি এবং প্রমানমত)
আর হাঁটতে হবে। প্রচুর। ভুইলেন না।
আশা করি পারবেন। খুব কষ্টের না। মন চাইলে সব সম্ভব। আমি আমার ক্ষেত্রে যা করছি, তা বললাম। সবাই যে এইভাবে করবে তার কোনো নিয়ম নাই। আপনার ইচ্ছেমত কমিয়ে দেখুন আপনি পারেন কিনা। কখনোই মনের অজুহাত মেনে নেবেন না। আগে কমান। তারপর ধুমসে খান
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




