somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

B-)জেনারেল আযমী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিনের প্রতি চ্যালেঞ্জ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী ‘আমাদের সময়' পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিগত ২৪ আগস্ট ‘আমাদের সময়' পত্রিকায় (১ম পৃষ্ঠা; ১ম কলামে), ‘ড. আলাউদ্দিন বললেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে হুমকি হওয়ায় গোলাম আজমের ছেলেকে বরখাস্ত করা হয়েছে' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে ড. আলাউদ্দিন কর্তৃক নিউইয়র্কের একটি সেমিনারে প্রদত্ত ভাষণের বিবরণ দেয়া হয়। সংবাদের তৃতীয় অনুচ্ছেদ এর অংশবিশেষ নিম্নরূপ:
‘‘জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজমের পুত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ আমান আজমীর সম্প্রতি এক ই-মেইল বিবৃতিতে সেনাবাহিনী থেকে তাকে বরখাস্তকারীদের ‘জালিম' হিসেবে অভিহিত করা প্রসঙ্গে ড. আলাউদ্দিন বলেন, উনি তো আদালতেও গিয়েছিলেন। কোথাও পাত্তা না পেয়ে এখন তার স্বরূপ উন্মোচিত হচ্ছে। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। এমন পদক্ষেপ এর আগের সরকারও নিয়েছে। ....’’
উপদেষ্টা সাহেবের বক্তব্যে উপস্থাপিত বিষয়সমূহ হচ্ছে :
১. আমি জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি ছিলাম। তাই, জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
২. জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
৩. আমি ই-মেইল বিবৃতি দিয়েছি।
৪. আমাকে বরখাস্তকারীদের আমি ‘জালিম' হিসেবে অভিহিত করেছি।
৫. আদালতসহ কোথাও পাত্তা না পেয়ে এখন আমার স্বরূপ উন্মোচিত হচ্ছে।
৬. এমন পদক্ষেপ এর আগের সরকারও নিয়েছে।
‘ড. সাহেব' এর বক্তব্যের জবাবে প্রথমেই বিনীতভাবে বলতে চাই যে, আমার পারিবারিক শিক্ষা ও শিষ্টাচার অনুযায়ী ‘অসত্য ভাষণ প্রদানকারী' ব্যক্তিদের সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়া আমার রুচিবিরুদ্ধ। তবে, ‘বিজ্ঞ উপদেষ্টা সাহেব' আমার কৃতিত্বপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য সাড়ে ঊনত্রিশ বৎসরের সামরিক জীবনের অর্জিত সম্মান ভূলুণ্ঠিত করার প্রয়াসে নির্জলা মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করার মাধ্যমে আমাকে যেভাবে কলঙ্কিত করতে চেষ্টা করেছেন এবং সকলকে বিভ্রান্তিতে ঠেলে দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন, তাতে করে আমার সারা জীবনের কষ্টার্জিত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ না করে পারছি না। আমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে, দ্ব্যর্থকণ্ঠে বলতে চাই যে, ‘ড. আলাউদ্দিনের উপরোক্ত সকল বক্তব্য (ক্রমিক ৪ ব্যতীত) মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধুমাত্র প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বিনা অপরাধে, বিনা অভিযোগে, কোনোরূপ তদন্ত ছাড়া, কোনো কারণ না দর্শীয়ে, আমার সংবিধান প্রদত্ত আত্মপক্ষ সমর্থন এর অধিকার কেড়ে নিয়ে, মানবাধিকারের কোনো রীতিনীতির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে, বিনা বিচারে, আমার কষ্টার্জিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল র্যাং ক হরণ করে, আমার প্রাপ্য পেনশনের অর্থ, গাড়ি, বাড়ি ও অন্যান্য সকল সুবিধাদি নির্দয়ভাবে কেড়ে নিয়ে আমাকে বঞ্চিত করে, অপমান করে সেনাবাহিনী থেকে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া (বরখাস্ত করা) হয়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সম্ভবত সভ্য পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। এখন মিথ্যা প্রচারণার দ্বারা তিনি ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা'র চেষ্টা করছেন'।
আমি এখন একে একে আপনার বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করছি।
প্রথমে তিনি বলেছেন, ‘আমি জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হওয়ায় জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।' সাড়ে সাতাশ বৎসরের কমিশন চাকরিকালীন আমি অত্যন্ত পরিশ্রম করে দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, আত্মত্যাগ, দায়িত্ববোধ, আনুগত্য, শৃক্মখলা ইত্যাদিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছি। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সেনাপ্রধান থাকাকালীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত সকল সেনাপ্রধানসহ আমার সিনিয়র, জুনিয়র, সহকর্মী ও অধীনস্ত সকলেই একবাক্যে আমার দাবির স্বপক্ষে সাক্ষী দেবেন। ‘জনগণের নিরাপত্তার হুমকি' প্রসঙ্গে আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কর্তৃক গ্রেফতারকৃত বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় কৃষিমন্ত্রীকে হেয়ার রোডে (যেখানে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) আমার ‘নিরাপত্তা হেফাযতেই' রাখা হয়েছিল। আমার সমস্ত চাকরিজীবনের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য মোতায়েনকালীন স্বেচ্ছায়, স্বউদ্যোগে, স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে স্থানীয় জনগণের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানাবিধ কর্মকান্ড সুসম্পন্ন করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাড়ে পাঁচ বৎসরের চাকরিতে স্থানীয় উপজাতি/ অ-উপজাতি সকল শ্রেণীর জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কর্মকান্ড সম্পন্নের পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০৮ সালে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে প্রশাসন ও এনজিওদের মাঝে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ঐ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিজেকে সার্বক্ষণিক নিবেদিত করেছি। চাকরিচ্যুতির পূর্ব পর্যন্ত দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার অন্তর্গত বীর উত্তম শহীদ মাহবুব সেনানিবাসের কমান্ডার হিসেবে ঐ অঞ্চলের জনগণের জন্য কি করেছি, তা স্বশরীরে যাচাই করার আহবান রইল। এছাড়া, সামরিক বাহিনীতে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি সর্বজন সমাদৃত। বিগত ২০ বৎসরের ঊর্ধ্বে আমি এ সংক্রান্ত বিষয়াদিতে একজন সফল প্রশিক্ষক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। মেজর, লে: কর্নেল ও কর্নেল, এই তিন পদবীতেই আমি ‘ডিসটিংগুইশ্ড ইন্সট্রাক্টর' (Distinguished Instructor) ভূষণপ্রাপ্ত। নিরাপত্তা বিষয়াদিতে বহু গবেষণাকর্মে আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর একজন পরীক্ষক ছিলাম। এ বিষয়ে আমি বহু বক্তৃতাও দিয়েছি। ২০০৫ সালে সিঙ্গাপুরে জ্যেষ্ঠ সামরিক অফিসারদের আন্তর্জাতিক এক সেমিনারেও ‘বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি' (Defence Policy of Bangladesh) বিষয়ে আমি বক্তৃতা দিয়েছি। ডিফেন্স স্টাডিজ (Defence Studies) এ প্রায় ৭০% নম্বর পেয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছি। জাতীয় নিরাপত্তা (National Security Studies) বিষয়ে ৬৭%-এর উপরে নম্বর পেয়ে এমফিল (পার্ট-১) সম্পন্ন করেছি। সুতরাং, ‘নিরাপত্তা' ও ‘নিরাপত্তার প্রতি হুমকি' বিষয়ে একজন রসায়নবিদ এর সাথে আমার জ্ঞানের তুলনামূলক যাচাই করার দায়িত্ব পাঠকদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। তবে, আমার মতো একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক, নিবেদিতপ্রাণ, নিঃস্বার্থ, ‘জনগণের নিরাপত্তার অতন্দ্র প্রহরী সেনাকর্মকর্তাকে যিনি ‘জনগণের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি' মনে করেন, তিনি হয় ‘নিরাপত্তা' এবং ‘নিরাপত্তার প্রতি হুমকি' সম্পর্কে বুঝেন না, অথবা ভুল বুঝেন। আর যদি এ দুটোর কোনোটাই না হয়, তাহলে মাননীয় ড. সাহেব, আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ‘আপনি প্রমাণ করুন, হঠাৎ করে কি কারণে সাড়ে ঊনত্রিশ বৎসর পর আমি ‘জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি' হয়ে গেলাম?' আর আমি যদি নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়েই থাকি, তাহলে আমাকে বিচারের সৎ সাহস হলো না কেন আপনাদের? আমার তো সৎ সাহস ছিল বরখাস্তের পূর্বে, ২১ জুন তারিখে, মাননীয় সেনাপ্রধান এর সেনাসদরস্থ অফিসে উনার কাছে দাবি করার যে, ‘স্যার, আমার কোনো অপরাধ থাকলে আমার বিচার করুন!' আমার অপরাধ বিচার করার মতো কোন আইন কি সেনাবাহিনীতে/দেশে নেই? আসলে তো নেই'ই- ‘অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে হওয়া অপরাধ' এটা তো কোনো আইন বইয়ে লিখা নেই!
এবারে আপনার দ্বিতীয় পয়েন্ট - ‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে'! আমি আত্মপ্রচার পছন্দ করি না। তবে, প্রসঙ্গক্রমে, আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও রেকর্ড ফলাফল অর্জন করে (সর্ববিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যাডেট হওয়ার জন্য ‘সোর্ড অব অনার', ডিগ্রি পরীক্ষায় কলা বিভাগ থেকে সম্মিলিতি মেধা তালিকায় ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অর্জন করায় ‘স্বর্ণপদক' এবং রণকৌশলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য ‘ট্যাকটিক্স প্ল্যাক') কমিশন্ড লাভ করি। এরপর থেকে চাকরিচ্যুতির পূর্ব পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে যত প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব সম্পন্ন করেছি সবখানেই আমি শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েছি। সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার পাশাপাশি শৃক্মখলা, পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, সবকিছু মিলিয়ে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অফিসারদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। আমার কৃতিত্ব ও সাফল্য ঈর্ষণীয়; অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আমি মনে করি, এবং যাঁরা আমাকে চেনেন-জানেন তাঁরাও সকলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, সেনাবাহিনী থেকে আমার প্রস্থান সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। যাচাই করে দেখতে পারেন। তাই, আমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ও দ্ব্যর্থকণ্ঠে দাবী করছি যে, ‘আমার মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষতিসাধন করে দেশের বৃহত্তর ক্ষতি করা হয়েছে, কোনো স্বার্থরক্ষা হয়নি'। আমি পুনরায় চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি প্রমাণ করুন যে, ‘কোনো অপরাধ ছাড়া, বিনা অভিযোগে, কোনো কারণ না দর্শীয়ে, বিনা তদন্তে, কোনোরূপ বিচার ছাড়া, আমার মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করে, আমার র্যাং ক ও পেনশনের সকল সুবিধাদি হরণ করে সেনাবাহিনী থেকে অপমানিত করে বের করে জাতির কোন্ ‘বৃহ্ত্তর স্বার্থ' উদ্ধার হয়েছে?'
তৃতীয় প্রসঙ্গ ‘আমার ই-মেইল বিবৃতি'! আমি আবার চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আপনি প্রমাণ করুন যে, ‘আমি ই-মেইল'এ বিবৃতি দিয়েছি।' প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, আমার ৫ ভাইসহ বিদেশে অবস্থানরত বহু নিকটাত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমার বরখাস্ত পরবর্তী দিনগুলোতে তাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা প্রকাশ করে বারবার ফোন করছিলেন। সে পরিস্থিতিতে, আমার বরখাস্তের সপ্তাহখানেক পর, আমি বিস্তারিত অবহিত করে তাদেরকে একটি ‘ব্যক্তিগত পত্র' ই-মেইল'এ পাঠিয়েছি। কে বা কারা অসৎ উদ্দেশ্যে এটা সার্ভার থেকে হ্যাক (hack) করে, অর্থাৎ চুরি করে, ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে। আর, এটা আমি পাঠিয়েছিলাম আদালতে যাওয়ার দু'মাস পূর্বে! আপনার ভাষায়, ‘আদালতসহ কোথাও পাত্তা না পেয়ে' নয়। না জেনে কথা বলে আপনি কি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন মাননীয় উপদেষ্টা?
জালিম বলা প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই যে, ‘হ্যা, পূর্বোল্লিখিত ব্যক্তিগত পত্রে আমি যারা আমাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করেছে তাদেরকে ‘যালিম' আখ্যায়িত করেছি। আমি এখনো দৃঢ়ভাবে বলছি, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে, যে কোনো মানদন্ডে, আমার সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা যদি ‘যুলুম' না হয় তাহলে ‘যুলুম' শব্দের অর্থটাই পরিবর্তন হওয়া দরকার। আর, ‘চুরি' করলে যদি ‘চোর' বলা যায়, তাহলে যে ‘যুলুম' করলো তাকে ‘যালিম' আখ্যায়িত করায় সমস্যা কোথায়? আপনি প্রমাণ করুন যে, ‘যুলুম' করেননি।
রসায়ন শাস্ত্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তি বিদ্বান হওয়ার কথা। আর বিদ্বান ব্যক্তির ভাষ্য তথ্যনির্ভর, সত্য, মানসম্মত ও রুচিশীল হবে এটাই কাম্য। সর্বোপরি, দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহীর শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে আরো বিচক্ষণতাও বাঞ্ছনীয়। আপনার অজানা থাকার কথা নয় যে, আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করাটা রীতিবিরুদ্ধ। কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে সে বিষয়ে কথা না বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু আপনার বক্তব্যে, ‘উনি তো আদালতেও গিয়েছিলেন। কোথাও পাত্তা না পেয়ে এখন তার স্বরূপ উন্ডোচিত হচ্ছে' বলে আমি ‘আদালতেও পাত্তা পাইনি' বলে বুঝাতে চেয়ে আপনি আপনার অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আপনিসহ সকল অজ্ঞ ব্যক্তির জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, গত ৯ আগস্ট আমি আমার বরখাস্তের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ‘রিট পিটিশন' দাখিল করি। পরদিন, ১০ আগস্ট, দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। ১৬ আগস্ট প্রথম শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারপতি হাইকোর্টের অবকাশকালীন বিরতির পর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। পরদিন ১৭ আগস্ট এ খবরও কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এরপরও আমি ‘আদালতে পাত্তা পাইনি' বক্তব্যটি হাস্যকর বৈকি । একই বাক্যে, ‘কোথাও' বলতে কোন্ কোন্ জায়গা বুঝিয়েছেন, আর ‘পাত্তা না পাওয়া' বলতেই বা কি বুঝিয়েছেন, তা জানার আগ্রহ থাকল। এছাড়া, ‘স্বরূপ উন্মোচিত হচ্ছে' কথাটারও ব্যাখ্যা দাবি করছি। আমার সংস্পর্শে যারা এসেছেন, যারা আমাকে জানেন-চেনেন, সকলেই এক বাক্যে একথা বলবেন যে, আমি ‘বহুরূপী' নই। বরঞ্চ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ভাইস চ্যান্সেলর পদে ইস্তফা দিয়ে রাতারাতি রাজনীতিবিদ হওয়াকে রূপ পাল্টানো আখ্যা দেয়া যায়।
সবশেষে, ‘এমন পদক্ষেপ আগের সরকারও নিয়েছে' প্রসঙ্গে। জী হ্যাঁ, ‘বিজ্ঞ উপদেষ্টা সাহেব', আপনার বক্তব্য আংশিক সত্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমার চাকরি জীবনে বহু মেধাবী, যোগ্য, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান অফিসারকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার কর্তৃক বিনা অভিযোগে, বিনা তদন্তে ও কোনোরূপ বিচার ছাড়া চাকরিচ্যুত করতে দেখেছি। তবে, যা জানার বিষয় তা হলো, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ' থাকলে হয় ‘কোর্ট মার্শাল' এর মাধ্যমে বিচার করে কিংবা পত্রমারফত অপরাধের ধারা উল্লেখ করে ‘বরখাস্ত' করা হয়েছে। আর নইলে, সকল সুযোগ সুবিধাসহ শুধুমাত্র ‘বাধ্যতামূলক অকালীন অবসর' দেয়া হয়েছে। আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো কি কারণে? নিশ্চয়ই ‘অধ্যাপক গোলাম আযম এর ছেলে বলে'? না হলে, আমি পুনরায় আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি যে, ‘প্রমাণ করুন, কবে, কোন্ সরকারের সময়, কোন্ অফিসারকে বিনা অপরাধ/ অভিযোগে, কোনো কারণ না দর্শীয়ে, বিনা তদন্তে, কোনো বিচার না করে, র্যাং ক সহ পেনশনের সকল সুবিধাদি কেড়ে নিয়ে ‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থ' রক্ষার জন্য ‘বরখাস্ত' করা হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা নজিরবিহীন। আপনারাই ইতিহাস সৃষ্টিকারী!
পরিশেষে ‘মাননীয় উপদেষ্টা সাহেব' আমি পুনরায় উদাত্তকণ্ঠে আপনাকে আহবান জানাচ্ছি যে, ‘আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে, আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে আপনার বক্তব্যের স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করুন'। আমি ভুল বলে থাকলে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তাওবা করব। আর, যদি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সৎ সাহস না থাকে, কিংবা আপনার বক্তব্যের স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারেন, তাহলে আমার সম্মান ভূলুণ্ঠিত করার অপচেষ্টা করার কারণে আপনাকেও নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। আশা করি এই সৎ সাহসটা দেখাতে পারবেন। সেই সাথে তাওবা করুন, না জেনে কারো সম্পর্কে আর মিথ্যা অপবাদ দিবেন না । দোআ করি, আপনার শুভবুদ্ধির উদয় হোক, মৃত্যুর পরপারের চিন্তা মাথায় জাগ্রত থাকুক এবং তা আপনাকে এহেন গর্হিত কাজ করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করুক।

তারিখ: ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯। আব্দুল্লাহিল আমান আযমী
সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×