প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতকে ট্রানজিট দিলে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না বা বিপন্ন হবে- এমন জুজুর জয়ে আমরা ভীত নই। যারা ভিতরে ভিতরে দেশ বিক্রি করে এ ধরনের জুজুর ভয় তাদেরই থাকতে পারে। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের ওই ধরনের ভয় নেই। সার্বভৌমত্ব কিভাবে রক্ষা করতে হয় তা আমরা জানি। এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত না হলে আমরা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব। বিশ্ব নেটওয়ার্কের সাথে আমরা সংযুক্ত থাকতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত কথা বলেন। স্পীকার আব্দুল হামিদ এডভোকেটের সভাপতিত্বে গতকাল সকালে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর পর্বের প্রথম ৩০ মিনিট প্রধানমন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
মুজিবুল হক চুন্নু প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান যে, আমাদের স্বার্থে যদি ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হবে তাহলে আমাদের কি ক্ষতি হবে। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এ ব্যাপারে বাধা দিয়েছে তারাই ভাল বলতে পারবেন। আমাদের দেশপ্রেম অত ঠুনকো নয়। তিনি বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের আমাদের দেশের ভিতরের অংশের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতেই থাকবে। কাজেই কোন সমস্যা হলে তখন দেখা যাবে।
রাশেদ খান মেননের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের যে দুটি আন্তর্জাতিক রুট নির্ধারণ করা হয়েছে তা ভারতের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যাওয়ার রাস্তা নয়। এটা গোটা এশিয়া এবং ইউরোপ পর্যন্ত যোগাযোগের বিশ্বরোড। গোটা ম্যাপ ইন্টারনেটে গোগলে সার্স করলেই দেখা যাবে এটা আন্তর্জাতিক রুট। আঞ্চলিক রুট যেটা আছে সেটা মিয়ানমার বাস্তবায়ন করবে কিনা সেটা তাদের ওপর নির্ভর করবে।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, বিগত জোট সরকারের আমলে এশিয় অঞ্চলসহ ইউরোপীয় দেশসমূহের মধ্যে সহজ ও উন্নত যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব করা হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত করিডোর প্রাপ্তির সম্ভাবনার অজুহাতে জোট সরকার উক্ত প্রস্তাব বাতিল করে দেয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এ অঞ্চলের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের বিষয় বিবেচনা করে সরকার এশিয়ান হাইওয়ের সাথে বাংলাদেশকে যুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ১৫.০৬.২০০৯ তারিখে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করে। এশিয়ান হাইওয়ে সংক্রান্ত আন্তঃসরকার চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের এসকাপ এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে বাংলাদেশকে যুক্ত করার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে।
এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হলে যে সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশীয় অঞ্চলসহ ইউরোপীয় দেশসমূহের মধ্যে সহজ উন্নত ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। দ্বিতীয় এতদাঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধিত হবে। তৃতীয়ত বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। চতুর্থত বাংলাদেশের পরিবহন খাতের কার্যপরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত না হলে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
মোজাম্মেল হোসেনের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দরবন এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে। মংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুসের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের নতুন ডিজাইন করা হবে যাতে করে দুর্যোগের সময় তা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (খুলনা-২) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানান, বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে সোয়াইন ফ্লু রোগ দেখা দিয়েছে। যথাযথ সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
বেগম ফরিদুন্নাহার লাইলীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, ২১ আগস্ট ২০০৪ আ'লীগ কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ছিল। আদালতের নির্দেশে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে।
মেহের আফরোজের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের জন্য বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ৫০টি সড়ক নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করা হবে। সম্প্রতি গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে জাইকার ৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদানে তেজগাঁও (সাতরাস্তা) মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ বছরের পুরাতন গাড়ি রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্কুলের সময়সূচি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
নাজিম উদ্দিন আহম্মেদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বাজারে পণ্য সরবরাহ বেড়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমে এসেছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




