somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র ও আমাদের করণীয় (১ম কিস্তি)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উনবিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে মূলত আমাদের এই উপমহাদেশে বাম রাজনীতির গোড়া পত্তন ঘটে। কিন্তু কালের এই বিশাল ব্যাপ্তিতেও সেই অর্থে কিছুই করতে পারেনি আমাদের বাম দলগুলো। পৃথিবীজুড়ে যখন সমাজতন্ত্রেরই জয়গান চলছিলো তখনো তারা কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু কেন? কেনো এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যর্থ হলো? কেন বাম দলগুলো বার বার ভাংগনের শিকার হবে? কেনো বাংলাদেশের মত ছোট একটি দেশে তিরিশের অধিক (নিষিদ্ধসহ) শুধু বামপন্থী পার্টিই থাকবে? কেনো বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন আর ঐতিহ্যবাহী কমিউনিষ্ট পার্টি ‘সিপিবি’ ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবর রহমানের একনায়কতান্ত্রিক ফর্মুলা ‘বাকশালে’ যুক্ত হবে? কেনো ওয়ার্কাস পার্টিকে ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে হবে এবং আওয়ামী প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে সাংসদ হবার বাসনা মেটাতে হবে??

আমার এই লেখাটি বামপন্থী কিংবা বামদলগুলোর সমালোচনার করার প্রয়াসে নয়। আমি শুধু চেয়েছি বামদলগুলোর ভুল গুলো খুজে বের করতে আর আমাদের করনীয় কি হতে পারে সেই সম্পর্কে আমার নিজস্ব ভাবনা গুলো শেয়ার করতে।

বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি)
সিপিবি সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাম সংগঠন। স্বাধীনতা সংগ্রামে এই সংগঠন অনেক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। এই পার্টির নেতারা সোভিয়েট মুখাপেক্ষী না হয়ে যদি বিপ্লবের জন্য নিজস্ব স্থানীক ফর্মুলা (বিপ্লবের কৌশল একেক রাষ্ট্রে একেক রকম হয়; সব দেশে এক ফর্মুলা কাজে আসেনা) ব্যবহার করে বিচক্ষনতার পরিচয় দিতেন তাহলে হয়তো আমাদের দেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। ১৯৭৫ এ বাকশালে যুক্ত হয়েই পার্টি মূলত সমাজতন্ত্রের স্বপ্নে কবর রচনা করে। ১৯৯০ এ সোভিয়েট পতনে স্বাভাবিকভাবেই সিপিবি ভাঙ্গনের শিকার হয় এবং পার্টির শক্তি অনেকাংশে দূর্বল হয়ে পরে। ১৯৯১ এর নির্বাচনেও পার্টি আবার ভূল কৌশল গ্রহন করে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে (শুধু জোটবদ্ধ নির্বাচনই নয় নির্বাচনী মার্কা হিসেবে ‘নৌকা’ প্রতীক ব্যবহার করে) পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস! এই পাঁচ সাংসদ সিপিবির টিকিটে নির্বাচিত হয়েই আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর থেকেই বোধহয় পার্টি কিছুটা হলেও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ‘আওয়ামী লীগের বি-টিম’ খ্যাত লেবেল থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করে। এরপর সিপিবি’র উদ্দ্যোগে বামপন্থী, মধ্যপন্থী, সুবিধাপন্থী কিছু দল নিয়ে ১১ দলীয় জোট গঠিত হয়ে ২০০১ এর নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে। ২০০৬ (সম্ভবত, সালটা একটু আগে পিছে হতে পারে) এ এসে আওয়ামী লীগের প্রলোভনে ওয়ার্কাস পার্টিসহ ১১ দলের বেশিরভাগ পার্টিই আওয়ামী ‘মহাজোটে’ জোটভূক্ত হলে সিপিবি কার্যত একা হয়ে যায়। একলা চলো নীতি অনুসরন করে তারা সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ৪০ টির মত আসনে অংশ নিয়ে প্রায় সবগুলো আসনেই জামানত হারায়। নির্বাচনে মোট ভোটের 0.0৬% ভোট অর্জিত হয় তাদের।

সিপিবির রাজনৈতিক ইতিহাস ঘেটে দেখলে আমরা এটাই পাবো যে তারা আওয়ামী লীগের মত সুবিধাবাদী বুর্জোয়া পার্টির (সুবিধাবাদী এই কারনে যে আওয়ামী লীগ কখনও বাম, কখনও মধ্যপন্থী আবার কখনো পুরোপুরি ডানপন্থী হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করেছে) সাথে বারংবার হাত মিলিয়ে একই ভুল বারে বারে করেছে। মস্কো-পিকিং দ্বন্দ্বও পার্টিকে যথেষ্ঠ ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। কমরেড মনি সিং, কমরেড ফরহাদ এর মত নেতারা থাকা অবস্থায়ও পার্টি জনগনের মধ্যে তার অবস্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়। এটা ঠিক এসব অতীত ঘেটে কোনো লাভ নেই। কিন্তু তাদের এই অতীত থেকেই শিক্ষা নেয়া উচিত। অতীতের ভুলগুলো আর হতে দেয়া যাবেনা। আমার মতে (এগুলো সম্পূর্নই আমার নিজস্ব ভাবনা) সিপিবির উচিত তার রনকৌশলগত পরিবর্তন পূর্বক নতুনভাবে বাম আন্দোলন শুরু করা। শুধু নির্বাচনমুখী না হয়ে বরং গণ মানুষের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের দেশ এখনো আওয়ামী জোট-বিএনপি জোটের বলয়ে আবদ্ধ। সিপিবির উচিত আওয়ামী- বিএনপি মেরুর বাইরে একটা বৃহত্তর বাম অবস্থান গড়ে তুলতে সচেষ্ট হওয়া। এজন্য শুধু ইস্যু খুজে মিছিল-মিটিং-হরতাল এই ধরনের সস্তা টাইপের বাহ্যিক মুভমেন্ট না করে তৃনমূল পর্যায়ে কৃষক-শ্রমিকদের মাঝে কাজ করা। আমি শতভাগ আশাবাদী যে তৃনমূল পর্যায়ে কাজ করলে সাফল্য আসবেই। আমাদের দেশে গার্মেণ্টস শ্রমিকের সংখ্যাই কয়েক মিলিয়ন। তারা নানা ভাবে শোষিত-নির্যাতিত। ন্যুনতমভাবে বেচে থাকার মজুরীও তারা পায়না। এদের নিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু পল্টন কেন্দ্রিক মিছিল মিটিং আর কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে মানুষের সমবেদনা আদায় করালেই হবেনা। কাজ করতে হবে। গ্রামে গ্রামে কৃষকদের সংগঠিত করতে হবে। তাদের মৌলিক অধিকার আদায়ে তাদের সঙ্ঘবদ্ধ করাতে হবে। জনগনের মাঝে নিজেদের অবস্থান তৈরী করে নিতে হবে। আর এজন্য একটা জিনিষই দরকার সেটা হচ্ছে পরিকল্পনামাফিক কাজ যেটার আর কোনো বিকল্প নেই এখন।

(চলবে)

এই লেখাটি ধারাবাহিকভাবে চলবে। এই কিস্তিতে সিপিবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী কিস্তিতে ওয়ার্কাস পার্টি নিয়ে আলোচনা হবে।

২৬ জানুয়ারী, ২০০৯
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:৪৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×