পূর্ব-বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-লাল পতাকা) নেতা ডাঃ মিজানুর রহমান টুটুলকে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে বিচার বহির্ভূত ক্রসফায়ারে হত্যার প্রতিবাদে ৩০ জুলাই ঢাকায় রিপৌটার্স ইউনিটি লাউঞ্জে বিশিষ্ট নাগরিকদের এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা র্যাবের হাতে ডাঃ টুটুল নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন এটা রাষ্ট্র কর্তৃক ঠাণ্ডা মাথায় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণফ্রন্টের আহবায়ক টিপু বিশ্বাস, রাজনীতিক-লেখক বদর উদ্দিন উমর, বিপ্লবী ঐক্যফন্ট্রের আহবায়ক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার আহবায়ক শিবলী কাইয়ুম, কবি আবু বক্কর সিদ্দিকী, তেল-গ্যাস, খনিজ সমপদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটীর আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ শহিদুল্লাহ-সহ বিভিন্ন বাম গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মিজানুর রহমান টুটুলের প্রাণহানি প্রসঙ্গে বদর উদ্দিন উমর বলেন, 'এটা হত্যা কাণ্ড। স্রেফ হত্যা। তিনি একটি রাজনৈতিক দর্শন ও ক্ষমতা দখলের পথকে ঠিক মনে করতেন। যদি তার কর্মকাণ্ড দেশ ও জনগণের বিপক্ষে যায়, তবে তাকে আইনের মাধ্যমে বিচার করা যেতো।' উমর আরও বলেন, 'মৌলবাদী জেএমবির একজন ক্যাডার-লীডারতো ক্রসফায়ারে যায়নি। শায়ক রহমান-বাংলাভাই সারা দেশে এক সাথে বোমা ফাটিয়ে মানুষ মারার পরও যদি তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়, তবে ডাঃ টুটুলকে কেনো বিচারের মুখোমুখি করা যাবে না। উমর মনে করেন, বাংলাদেশে এখন যারা বাম প্রগতিশীল সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী শক্তি, তাদেরকে টার্গেট করে মারা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে বিপ্লবীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। দেশে এখন জরুরী অবস্থা চলছে বিধায় মানুষ কথা বলেতে পারছে না। এর জন্য দরকার সামাজিক প্রতিরোধ।' জাতীয় গণফ্রন্টের আহবায়ক টিপু বিশ্বাস বলেন, 'এ-রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এটা কিলিং। আমরা দেশব্যাপী ক্রসফায়ার-বিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো।' কবি আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, 'রাষ্ট্র তার নিজের আইন নিজেই মানছে না। এটা রাষ্ট্রের জন্য শুভ হতে পারে না। যে-কোনো শুভ বোধ সম্পূর্ণ মানুষ ক্রসফায়ারের বিরোধিতা করা উচিত। সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্টজনেরা অবিলম্বে র্যাব বিলুপ্তির দাবী জানান।
ডাঃ টুটলের হত্যা কাণ্ডের বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেছে ছাত্ররা। ২ আগস্ট মিছিল-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সাত সংগঠন।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকেও ডাঃ টুটুল হত্যার নিন্দা জানানো হয়েছে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ এর এক সভা মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশুর সভাপতিত্বে ২৯ জুলাই ঢাকার তোপখানা রোডস্থ বাসদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রস্তাবে বলা হয়, সন্ত্রাস দমনের কথা বলে এক-এগারোর সরকার এ-যাবৎ ১৯৭ জনকে ক্রসফায়ার, বন্দুক যুদ্ধ, এনকাউন্টারের নামে হত্যা করেছে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তার বিচার না করে এ-ধরণের হত্যাকে ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ড হিসাবে উল্লেখ করে সভায় অবিলম্বে তা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাসদ আহ্বায়ক কমরেড খালেকুজ্জামান, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির এডভোকেট আব্দুস সালাম, গণসংহতি আন্দোলনের জুলহাস বাবু, শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের বাবুল বিশ্বাস, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, সিপিবি (এমএল)-র বদরুল আলম ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, বজলুর রশীদ ফিরোজ, নাসির উদ্দিন নাসু, পাঠক লাল গোলদার, শামসুজ্জোহা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুলাই রাতে র্যাব ঢাকার উত্তরা থেকে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-লাল পতাকা) সম্পাদক ডাঃ মিজানুর রহমান টুটুলকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে ২৭ জুলাই ভোর রাতে নওগাঁতে র্যাবের হাত দিয়ে হত্যা করানো হয় ডাঃ টুটুলকে। এর আগে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টিরও সাধারণ সম্পাদক মোফাখার চৌধূরীকে ২০০৪ সালের ডিসেম্বর পুলিশ কর্তৃক ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। চৌধুরীকে হত্যা করার পর চারিদিকে নিন্দার ঝড় ওঠে। ফলে কিছুদিন এ-রকম হাই-প্রৌফাইল নেতাদের হত্যা থেকে বিরত থাকে তৎকালীন ৪-দলীয় জোট সরকার। ২০০৬ সালে আবার পুলিসের ক্রসফায়ারে নিহত হয় পূর্ব-বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-লাল পতাকা) কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল মাস্টার। বাংলাদেশের আণ্ডারগ্রাউন্ড বাম নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার ধারাবাহিকতায় বিচার বহির্ভূতভাবে তথাকথিত ক্রসফায়ারে সর্বশেষ হত্যা করা হলো ডাঃ টুটুলকে।
সূত্রঃ http://www.ukbengali.com
বাংলাদেশে গোপন বিপ্লবী দলের নেতাকে ক্রসফায়ারে হত্যার নিন্দা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?
সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন