somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্রগ্রাম শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড শিল্প না শ্রমিক মারার কূপ?

৩১ শে অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এ প্রতিনিয়তই শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে বিভিন্ন সময়। বিষাক্ত গ্যাসের বিস্ফোরণ কিংবা জাহাজ কাটার সময় ভারী পাতের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ অথবা চিরতরে পঙ্গুত্ব বরন করতে হয় এসব হতভাগ্য শ্রমিকদের। জাহাজ কাটা শিল্পে শ্রমিক হতাহত নতুন কোনো ঘটনা নয়। নিয়মিতই এই ঘটনা ঘটে চলছে। অথচ আমাদের সরকারের কোনোই মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয়না এই মৃত্যু কূপ নিয়ে।

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড শিল্প না মৃত্যু কূপ?
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গত ১২ বছরে নিহত হয়েছে কমপক্ষে এক হাজার তিনশ' বিভিন্ন স্তরের শ্রমিক। আহত হয়েছে আরো কয়েক হাজার। যাদের অনেকেই চলাচলে অক্ষম ও পঙ্গু হয়ে গেছে জীবনের জন্য। লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার পরও বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) প্রতিশ্রুত শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল চালু হয়নি ৯ বছরেও। সীতাকুন্ড সাগর উপকূলীয় এলাকায় বর্তমানে ৫০টি শিপইয়ার্ড রয়েছে। স্থাপনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ২০টি। চলমান ৫০টি শিপইয়ার্ডে সরাসরি কাজ করছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার শ্রমিক। পরোক্ষভাবে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হয়ে দেড় থেকে দুই লাখ লোক জীবিকা নির্বাহ করছে। ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই সীতাকুন্ডে জাহাজ ভাঙা শিল্প গড়ে ওঠে। বর্তমানে এই শিল্প পুরনো যন্ত্রপাতি, নানারকম মূল্যবান সামগ্রী ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য লাখ লাখ টন লোহা সরবরাহ করছে। দেশের লোহার চাহিদার ৮০ শতাংশই জোগান দিচ্ছে এই জাহাজ ভাঙা শিল্প। যা দেশের নির্মাণ শিল্পে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কিন্তু জাহাজ ভাঙার মতো কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিকের আর্থিক ও স্বাস্থ্য তো বটেই, জীবনের নিরাপত্তার জন্যও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই শিল্প মালিকদের। এই শিল্পে কাজ করা বেশির ভাগ শ্রমিক আসছে রংপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বগুড়া, বরিশাল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল থেকে। শ্রমিক হিসেবে এরা সম্পূর্ণ অদক্ষ; তাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ।

জাহাজ ভাঙা শিল্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কত শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা গেছে তার প্রকৃত তথ্য জানা না গেলেও ২০০৭ সাল পর্যন্ত এক দশকে কমপক্ষে ১ হাজার দু'শ' শ্রমিক নিহত হয়েছে। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা, সংবাদপত্রের রিপোর্ট এবং জাহাজ ভাঙা শিল্প শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশন কর্মরত শ্রমিকদের জন্য একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেয় ২০০০ সালে। এ জন্য ইয়ার্ড মালিকদের কাছ থেকে নেয়া হয় লাখ লাখ টাকা চাঁদা। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরেও এই হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়নি। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদ, অন্যান্য সূত্র এবং শ্রমিক নেতা এএম নাজিম উদ্দিনের বক্তব্য অনুসারে শিপ ইয়ার্ডে কাজ করার সময় নানামুখী দুর্ঘটনায় প্রতি সপ্তাহে গড়ে একজন শ্রমিক মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে দুই শ্রমিকের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। ২০০৭ সালের পর হিসাব ধরা হলে এ দু'বছরে অন্তত আরো একশ' শ্রমিক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকশ'। সব মিলিয়ে ১২ বছরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে এক হাজার ৩শ'তে। অভিযোগ রয়েছে, ইয়ার্ডের মালিকরা প্রায় সময় এসব দুর্ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেন। গোপন করেন নিহত ও আহত হওয়ার প্রকৃত তথ্য। সুযোগ বুঝে শ্রমিকের মৃতদেহ সাগরে ভাসিয়ে দিতেও দ্বিধা করেন না তারা। দুই-তিন একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠে এক-একটি শিপইয়ার্ড। বিশাল এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে থাকায় সাধারণ দুর্ঘটনা ঘটলে বাইরের সাধারণ মানুষের তা জানার কোনো সুযোগ থাকে না। তবে জাহাজ কাটার সময় ট্যাংকার বিসেফারণ, জাহাজে আগুন ধরে দুর্ঘটনা ঘটলে আশপাশের লোকজন দুর্ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়। এছাড়া লোহার ভারি প্লেটের চাপায়, আঘাতে, কালো তেলে পা পিছলে পড়ে, যন্ত্রপাতি ওঠানো-নামানো, বহন, গ্যাসের বিষক্রিয়া, জাহাজের উপর থেকে পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া জাহাজের বিভিন্ন রাসায়নিক বিষাক্ত তরল পদার্থের সংসপর্শে থাকতে থাকতে কর্মরত শ্রমিকরা ক্যান্সারসহ মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হয়েও মারা যাচ্ছে। দুর্ঘটনার বাইরে বিষাক্ত উপাদানের কারণে সৃষ্ট অসুখে মারা যাওয়া শ্রমিকদের পরিসংখ্যান পুরোপুরি অজানা। চট্টগ্রামের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কর্মরত অবস্থায় নিহত-আহত শ্রমিকদের পরিবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতিপূরণ পায় না। দেয়া হয় না আহতদের জন্য চিকিৎসা সুবিধাও। শ্রম আদালতে মামলা করে কেউ কেউ কিছু ক্ষতিপূরণ আদায়ে সক্ষম হলেও বেশির ভাগ শ্রমিক মামলা সংক্রান্ত ঝামেলায় যেতে চায় না। শ্রমিক নেতা এএম নাজিম উদ্দিন আমার দেশ'কে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও ২০০৩ সালে জাহাজ ভাঙা শিল্পকে ঝুঁকিপূর্ণ-বিপজ্জনক ও পরিশ্রমসাপেক্ষ পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছে। এ সময় সংস্থার পক্ষ থেকে এই শিল্পের জন্য একটি নির্দেশাবলী প্রণয়ন করা হয়। ওই নির্দেশাবলীর উদ্দেশ্য ছিল কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে শ্রমিকদের রক্ষা এবং দূষণের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য রোগ ও দুর্ঘটনা হ্রাসে অবদান রাখা। কিন্তুবে বাস্তবে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডসমূহে আইএলও'র এই নির্দেশনা কোনোভাবেই প্রতিপালন বা মানা হচ্ছে না। মূলত সরকারের ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচন করে দক্ষ ও বিশ্বস্ত শ্রম পরিদর্শন, দুর্ঘটনার পর কারণ অনুসন্ধানে নির্বাচিত শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে কার্যক্রম পরিচালনার দাবিসমূহ বাস্তবায়ন না করেই পার পেয়ে যাচ্ছেন শিপইয়ার্ড মালিকরা।

জাহাজ ভাঙার দৈনিক মজুরি ঘন্টা ৮ থেকে ১০ টাকা মাত্র!!
মরা হাতির দাম লাখ টাকা’- এই প্রবচনটি জাহাজ ভাঙা শিল্পের বেলায় আক্ষরিক অর্থেই সত্য। ভাঙা জাহাজের কোন কিছুই ফেলনা নয়। সবকিছু বিক্রি হয়। মালিকরা পান বিশাল মুনাফা। সরকার পায় ফিবছর প্রায় ৯শ’ কোটি টাকার রাজস্ব। এই শিল্পে যারা শ্রম দেন তারা কেমন আছেন ? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্য, এখানকার শ্রমিকেরা দৈনিক মজুরি ঘন্টা ৮ থেকে ১০ টাকা মাত্র।

জাহাজ ভাঙা শ্রমিকরা যেন ক্রীতদাস। পান নাম মাত্র মজুরি। ৭দিন কাজ করলে ৫দিনের টাকা পান। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম। সাপ্তাহিক ছুটি নেই। সরকারি ছুটি ভোগ করার অধিকার তাদের নেই। ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশায় কাজ করতে গিয়ে আহত হলে বা মৃত্যু হলে এক পয়সাও ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না।

শ্রমিকদের কাজের ধরন অনুযায়ী কয়েকটি গ্র“পে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে ফিটার গ্র“প, কাটার গ্র“প, লোডিং গ্র“প, ওয়্যার গ্র“প ইত্যাদি। এদের পরিচালনার দায়িত্বে থাকে ফোরম্যান। ফোরম্যানসহ পুরো শ্রমিক দলের দন্ড-মুন্ড কর্তা হচ্ছে কন্ট্রাক্টর। এরাই শ্রমিক জোগান দেন। যে যত বেশি শ্রমিক আনতে পারে, সে পায় ওই দলের ফোরম্যানের দায়িত্ব। যার কারণে শ্রমিকরাও অনেক সময় দেশ থেকে লোক আনতে আগ্রহী হন।
যেসব শ্রমিক জাহাজের ভেতরে কাজ করেন, তারা কাজ শুরু করেন সকাল ৭টায়। যারা ইয়ার্ডে কাজ করেন তাদের কাজ শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। একেক গ্র“পের কাজের মজুরী একেক রকম। সাধারণভাবে একজন শ্রমিককে এক দিনের মজুরী বাবদ গড়ে ঘন্টা ৮ থেকে ১০ টাকা দেয়া হয়। প্রতি ১৫দিন পরপর মজুরী দেয়া হয়। তবে ১৫দিন কাজ করলে ১০ দিনের মজুরী পাওয়া যায়, ৫ দিনের মজুরী জমা থাকে। পরিশ্রম সহ্য করতে না পেরে কেউ যাতে পালিয়ে না যায় তার জন্য এই ‘নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা। শ্রমিকরা দুপুরে ১ ঘন্টা বিরতি পান। এই সময়ের মধ্যে গোসল আর দুপুরের খাবার সেরে নিতে হয়। এরপর টানা কাজ চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে প্রত্যেক শ্রমিককে রাত ৮টা পর্যন্ত ওভারটাইম করতে হয়। সপ্তাহে একদিনও ছুটি নেই। শুক্রবার কাজ করতে হয় দিনের অর্ধেক সময় পর্যন্ত। সরকারি ছুটি তাদের জন্য নয়। জাহাজ ভাঙা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। প্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমে স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বিফল হলে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবশ্য শিপ ব্রেকিং এসোসিয়েশন শ্রমিকদের হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ভাটিয়ারীতে জমি নিয়েছে।

এখানে দুর্ঘটনায় শিকার শ্রমিকদের হাজিরার টাকা অর্থাৎ মজুরি দেয়া হয় না। যতদিন চিকিৎসাধীন থাকবে ততদিন ‘বিনা বেতনের ছুটি’। কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে গেলে যেনতেনভাবে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে অবশ্য দাফনের খরচ মিলে। ক্ষতিপূরণ মিলে না।

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড - পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি
জাহাজ ভাঙা কর্মকান্ডটি প্রথম থেকেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে। উন্নত বিশ্বে যেখানে পরিবেশবান্ধব উপায়ে জাহাজ ভাঙা হচ্ছে, সেখানে এদেশে জাহাজ ভাঙা হচ্ছে সনাতনী বিচিং পদ্ধতিতে। এটি মারাত্মক পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে চিহ্নিত। তবে বিচিং পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙাতে খরচ হয় অনেক কম। এই পদ্ধতিতে জোয়ারের সময় জাহাজে থাকা দূষিত পদার্থ সহজেই সমুদ্রের পানিতে মিশে যায়। কিছু কিছু ইয়ার্ড মালিক বেশি লাভের লোভে কমদামে কিনে আনে ‘ডার্টি শিপ’ বা বিপজ্জনক জাহাজ। গ্যাস ফ্রি করা ছাড়া এসব জাহাজ কাটার ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব জাহাজ থেকে নির্গত বর্জ্য, সব ধরনের পেট্রোলিয়াম ও বিষাক্ত তেল বঙ্গোপসাগরের মৎস্য সম্পদের ক্ষতিসহ মারাতœক পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। দুষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

কয়েকটি গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, জাহাজে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ সিসা, পারদ , ক্রোমাইটস ইত্যাদি বায়ু ও পানি দূষণ করছে। এছাড়া জাহাজে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান এসবেস্টস নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা ৫০ ভাগ বেশি থাকে। এখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলেরা। পানি দূষনে মাছ কমে গেছে। পানির তীব্র গন্ধে মাছেরা তাদের আবাস পরিবর্তন করেছে।

জাহাজ ভাঙার কারণে ধ্বংস হচ্ছে এখানকার জীববৈচিত্র্য। জাহাজগুলো যখন সমুদ্র থেকে বিচে প্রবেশ করে তখন পানির গভীরতা কম থাকায় ওই সময় প্রচুর পরিমান মাটি নিয়ে এসে সাগর পাড়ে জমা করে। আবার ক্রেন দিয়ে কাটা জাহাজের বড় টুকরোগুলো ইয়ার্ডে টেনে আনার সময় তা সাগর থেকে প্রচুর পরিমানে মাটি নিয়ে আসে। এর ফলে উপকুলে প্রচুর পরিমানে পলি জমছে এবং উপকুলভাগ ক্রমেই উঁচু হয়ে যাওয়ায় সাগরের পানি দূরে সরে যাচ্ছে। এভাবে জোয়ার-ভাটা প্রভাবিত অঞ্চল থেকে মাটি সরে আসায় ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। জাহাজ ভাঙ্গার পরিবেশগত সংকটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শব্দদুষণ ও কম্পন। এ শিল্পের বৈশিষ্ট্য বা ধরনই বলে দেয় এখানে শব্দদুষণ ও কম্পন নিয়মিত ঘটনা। প্রতিনিয়ত লোহার প্লেটগুলো কাটা, লোড-আনলোড এবং জাহাজের কাটা অংশ তীরে টেনে আনার সময় শব্দদুষণ সৃষ্ট করে প্রতিনিয়ত। যা এ এলাকার বাসিন্দারদের জন্য নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। শব্দদুষনে শিশু ও বৃদ্ধরা প্রায়ই আতঙ্কিত হন। ব্যাহত করে স্কুল- কলেজের পাঠদান। শব্দ দুষনের আরেকটি বড় সমস্যা হল পর্দা (লোহার বিশাল আকৃতির পাত) পড়া। কম্পন ও বিষ্ফোরনজনিত কারনে এলাকা কেঁপে উঠে। প্রায়ই শিপ ইয়ার্ডে প্রচন্ড বিষ্ফোরনের শব্দ হয়। এ শব্দে ভূকম্পন সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টি করে আতঙ্ক। ২০০৪ সালে এমন একটি শব্দ ও কম্পনে শীতলপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালের একাংশে ফাটল দেখা দেয়।

স্থানীয় সমাজ উন্নয়ন সংগঠন ইপসা এক জরিপ চালিয়ে দেখেছে, এখানে প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নেয়ার জন্য জাহাজ ভাঙার দুষণ বহুলাংশে দায়ী। ইপসার প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে শিপ ব্রেকিং গুরুত্ব ভূমিকা পালন করছে। তারপরও এটি এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্টানিক স্বীকৃতি পায়নি। নেই কোনো নীতিমালা। তিনি বলেন, আমরা শিপ ব্রেকিং চাই। কিন্তু তা কোনো অবস্থাতেই শ্রমিকদের অধিকার লংঘন ও পরিবেশ দুষণ করে নয়।

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড শিল্পের মাধ্যমে যদিও দেশে প্রচুর রাজস্ব আসছে কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। সনাতন পদ্ধতিতে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে জাহাজ কাটার ফলে দূর্ঘটনা ঘটে এক দিকে শ্রমিক মারা যাচ্ছে আবার অন্যদিকে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এসব এড়াতে এ শিল্পে শ্রমিকদের প্রশিক্ষনের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ এড়াতে আধূনিক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। পরিবেশ দূষণ ও দূর্ঘটনা এড়াতে এই শিল্পে সরকারের এখনই সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।



---------------
তথ্যসূত্রঃ
১। বিডিনিউজ২৪ডট কম
২। আমার দেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×