আমাদের বাসায় পানির লাইনের মিস্ত্রি কাজ করছে ।
তো প্রথমদিন কাজ শেষ করে বলে গেলো, আবার আগামীকাল আসবো ।
অথচ আসলো না । ৫টা মানুষের অতিরিক্ত খাবার নষ্ট হলো। খবার নষ্ট হওয়ার কারনে আম্মুর বেজায় রাগ। এরপর সে আমাকে নির্দেশ দিলো, আসবে কি না সেটা জিগ্যেস করে তারপর তাকে জানাতে।
পরদিন হেডমিস্ত্রিকে ফোন দিলাম, ভাই আজকে তো আসলেন না, কালকে কি আসবেন?
উনি বললেন, হ্যা ভাই, আজকে একটু সমস্যার জন্যে আসতে পারি নাই, কালকে আসবো ।
আম্মুকে বললাম, আজকে আসতে চাইসে, তুমি তাদের জন্যে খাবার বানাও !
আম্মু খাবার বানায়ে রেডী ! দুপুরে কল দিয়ে বলে আজকে আর আসতে পারবে না।
আবার খাবার নষ্ট !
পরের দুদিন তাদের কোনো খোজই নাই ! দু'দিন পরে আবার ফোন দিলাম, আজকে আসনেন কি না, শিওর বলেন!
সে বললো, ভাই, একদম শিওর, আজকে আসবোই !
আম্মুকে বললাম, আজকে তারা শিওর আসবে বলেছে !
আম্মু খাবার বানায়ে রেডী, তারা আসলো না ! আম্মু তো আমার উপরে সেই ক্ষ্যাপা ! সে বললো, আমিই নাকি ঠিকমতোন কথা বুঝতে পারি না ! নইলে শিওরিটি দিয়ে কেও না এসে থাকে !
পরেরদিন তারা নিজেরাই ফোন দিয়ে বললো, ভাই, আগামীকাল কসম আসবো, আসবো মানে আসবোই, একদম পাক্কা !
আম্মুকে কল রেকর্ড করে শোনাইলাম, আম্মু আবার খাবার বানালো, যথারীতি তারা অনুপস্থিত, সারাদিন ফোনটাও ধরে না !
রাগে গজগজ করতে করতে বললাম, আপনাদের শিওরিটি/কসম/পাক্কা, এই শব্দগুলার মানে কি কি না এসে থাকা?
ফাইজলামি পাইসেন !
পরেরদিন সে বলে, আজকে আসবোই ভাই !
ধুরু মিয়া, আগেরদিন শিওর/কসম/পাক্কা এগলান বইলাও আসেন নাই আর আজকে তো সামান্য একটা কিরিও কাটলেন না, আপনার কথায় তো ভরসাই নাই। তারপর ফোন রেখে দিয়ে আম্মুকে বললাম, তুমি অফিসে বেরিয়ে যাও, খাবার রান্নার দরকার নাই, আজকেও আসবে না, অথচ আম্মু অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই ৬ জন পানির মিস্ত্রি হাজির ৷ এসেই তরমুজের মতোন দাতগুলান আমার সামনে মেলে ধরে বলে,
দেখলেন তো ভাই, আসতে চেয়েই চলে আসলাম ! আমার কথার নড়চড় হয় না, আমি এক কথার মানুষ ! কথা দেওয়ার সময় আমার কোনো কিরিটিরি কাটা লাগে না, ওসব কাটে মিজানরা (আরেক পানির মিস্ত্রির গ্রুপ), ওরা তো এসেও চলে যায় !
বললাম, আপনার জাতকুলে কেও রাজনীতি করে নাকি ?
সে বলে, আমার ফামিলির সবডি *মি*গ করে, কিন্তু ক্যান ভাই ?
আমি বললাম, এমনিই ! যান কাজ করেন !
.
যাই হোক, তারপর থেকে তারা কথা রেখেছিলো, কাজ কামাই দেয় নি !
.
লকডাউনের ঘোষনাগুলান সেরকমই লাগসে । স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট-রেস্টুরেন্ট খোলা রাখা যাবে ! 'জাতীয়তাবাদী' করোনাকে নিজস্ব জেলায় আটকে রাখার জন্যে এক জেলার বাইরে অন্য জেলায় গাড়ি যেতে পারবে না !
প্রথমে লকডাউন,
পরে স্বাস্থবিধি মেনে লকডাউন
তারপর কঠোর লকডাউন
এরপর শিওর লকডাউন
দেন মাস্ট শিওর লকডাউন
তারপর খোদার কসম লকডাউন
তারপর.....
.
শ্রী হরিচরনের লেখা 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' অনুসারে 'তীর্থ' শব্দটার নাকি ৪২ টা অর্থ করা যায় (যেমন, নারী, রতিস্থান, ক্রীড়াস্থান, পাত্র, আগুন, মন্ত্রী.....ইত্যাদি, চিন্তা করেন, কোথায় আগুন আর কোথায় মন্ত্রী, অথচ তীর্থ বললে দুটোই বুঝায়) সুতরাং বাঙলা একাডেমীর উচিত, 'লকডাউন' শব্দটার আরো কয়েকটা অর্থ বের করা যেমন, (দোকান বন্ধ+গাড়ি বন্ধ=লকডাউন, দোকান খোলা+গাড়িবন্ধ=লকডাউন, গাড়ি চলবে কিন্তু জেলার বাইরে যাবে না=লকডাউন)। এতে একাডেমীও কয়েকটা নতুন শব্দ পাইলো, আবার লকডাউনটার অর্থটাও বাস্তবতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হলো ৷
.
ব্যাপার না, জেলার সীমান্ত পর্যন্ত গাড়ি চললেই হবে, পরের জেলায় গিয়ে জাস্ট নতুন একটা গাড়ি ধরে সেই জেলার শেষ মাথা পর্যন্ত যাওয়া লাগবে আর কি ! মাঝখানে একটা যমুনা সেতু পড়বে, ব্যাপার না সেটার উপরে গিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে অনিকেত প্রান্তর শুনতে শুনতে হাটতে থাকবো । আর সেতুর উপর দিয়ে হাটতে না দিলেই বা কি, পদ্মাপাড়ের মানুষ, অতটুকু দৈর্ঘ্য সাঁতরাতে আর কতটুকুই বা সময় লাগবে, কানে হেডফোন লাগিয়েই সাঁতার শুরু করে দিবো !
.
তবুও ইদে ঢাকায় থাকতে পারবো না, সরি !
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২১ রাত ১১:৪৫