দ্যাশে এতো কারেন্ট(বিদ্যুৎ) উৎপাদন হইতেসে কিন্তু আমার পাড়ায় গত ৩ ঘন্টা ধইরা কারেন্ট(বিদ্যুৎ) নাই ! তাহলে কোথায় সেই উন্নয়নের কারেন্ট ?
আসেন, আপনার পাড়ার কারেন্টকে, হ্যারিকেনের আলোয় খুঁজে দেখি কোথায় পাওয়া যায় ! তাহলে আর 'কারেন্ট গ্যালো কিসেল্লাইগি' বলে চিল্লাবেন না !
আমাদের দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা-উৎপাদন-সাপ্লাই ব্যাবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্যে আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে! ধরেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে একটা প্রতিষ্ঠান, সেই বিদ্যুৎকে পটুয়াখালীর পায়রা থেকে ডিপজলের বাসা পর্যন্ত পৌছে দেওয়ার জন্যে আছে আরেকটা প্রতিষ্ঠান আবার বগুড়ার হিরো আলমের বাড়িতে দেওয়ার জন্যে আছে আরেক প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান এতোগুলা হলেও এগুলা কিন্তু রসুনের পশ্চাতদেশের মতো একটা কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় ! বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকান্ড 'জাতীয় গ্রীড' এর মাধ্যমে পরিচালিত হয় !
তাহলে বিশাল এই কর্মযজ্ঞ চলছে কিভাবে ?
আগামীকালকে সারাদেশে বিদ্যুতের কি রকম চাহিদা হতে পারে, সেটার একটা রাফ ক্যালকুলেশন করা হয়, সেটাও আবার টাইম টু টাইম হিসাব করে, যখন অনেক চাহিদা থাকে সেটাকে 'পিক আওয়ার' বলে, এটা মূলত বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত হয় ! তার জন্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সময়ে বেশী বিদ্যুৎ তৈরী করার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হয় !
তো বিদ্যুতের চাহিদাপত্র তো রেডী, এখন সেটা পাঠিয়ে দেওয়া হলো জেনারেশন কোম্পানীর কাছে যারা বিদ্যুৎটা উৎপাদন করে ! দেশের অনেক জায়গায় এরকম পাওয়ার প্লান্ট আছে, পটুয়াখালী, রামপাল, ভেড়ামারা, চট্টগ্রাম..... বিভিন্ন জায়গায় এরকম প্রচুর প্লান্ট আছে, যারা হিরো আলমের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার জন্যে প্রাথমিক কাজটা করে।
এরপর সেই চাহিদাপত্র অনুযায়ী সবগুলা প্লান্ট, আগামীকালকে কতটুকু বিদ্যুৎ তাকে উৎপাদন করতে হবে তার জন্যে প্রয়োজনীয় সয়াবিন তেল/মরিচ/নুন/আদা... ইত্যাদির প্রিপারেশন নিয়ে বসে (জাস্ট কিডিং, এগলাও বলে দিতে হয় নইলে আপনারা মজাটাও ঠিকঠাক নিতে পারেন না)। বিদ্যুৎয়ের উৎপাদন যেই করুক, তাকে সেটা পাঠিয়ে দিতে হয় জাতীয় গ্রিডে, অর্থাৎ বিল গেটস নিজে উৎপাদন করলেই সে মাতব্বরি করে ট্রাম্পের বাড়িতে বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ করতে পারবে না, করলে চাকরি নট !
তারপর সেই বিশাল বিশাল ক্ষমতাধারী বিদ্যুৎকে ট্রান্সফর্মারের সাহায্যে আরো বাড়িয়ে মোটা মোটা তার দিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেটাকে বলে ট্রান্সমিশন লাইন ! বিশাল পাহাড়, ভুট্টার ক্ষেত, মজিদ চাচার জমির মাঝখান দিয়ে এই ট্রান্সমিশন লাইন টানা হয় ! তারপর তেঁতুলিয়ায় গিয়ে আবার সেই বিশাল ভোল্টেজকে ট্রান্সফর্মার দিয়ে কমিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কাছে দেওয়া হয়, আপনি বিড়ি টানতে টানতে মাথার উপরে যে কারেন্টের তার দেখতে পান সেগুলা মূলত ডিস্ট্রিবিশন লাইনের তার।
ভাই, এসব ভংচং ছাড়েন, কারেন্ট ক্যান যায় সেটা বলেন !
ধরেন, আগামীকালের চাহিদা ৮ হাজার মেগাওয়াট । এখন NLDC(যারা পুরো দেশের জাতীয় লোড পরিমাপ করে দেশের সকল জেনারেশন প্রতিষ্ঠান সহ বিতরন প্রতিষ্ঠানকে জানায় এবং নিয়ন্ত্রন করে, ধরে নিতে পারেন এরাই বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ) সকল জেনারেশন কোম্পানীকে বললো, আগামীকালকে সবাই মিলে আমাকে ৮ হাজার মেগাওয়াট তৈরী করে দিবা, জোনারেশন কোম্পানীগুলোও সেই হিসাবে তেল/গ্যাস/পানি নিয়ে রেডী হয়ে গেলো এবং সরবরাহ করলো ! ওদের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে অসুবিধা নাই, দেশের মোট চাহিদার অনুপাতে প্রায় ডাবল পরিমান বিদ্যুৎ জেনারেশন করার ক্ষমতা বাঙলাদেশের আছে(ঢং মনে কইরেন না, এটা সিরিয়াস) !
কিন্তু সমস্যা হলো, আপনি যখন হুট করে আপনার বাসার ৫টা এসি বন্ধ করে ফেলেন, তখন তো আর NLDC কে জিগায়া বন্ধ করেন না, তাহলে আপনার এই পাচটা এসির চাহিদা আছে হিসাব করেই তো কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ তৈরী করছে, তাহলে আপনার এই পাচটা এসির জেনারেশন সে কাকে দিবে ? দেশে যদি এরকম ১০ লাখ এসি এক মুহুর্তে সবাই অফ করে দেয়, তাহলে? এদের জন্যে চাহিদা হিসাব করে উৎপাদন করা বিদ্যুৎ সে কাকে দিবে ?
মনে রাখা ভালো, এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ জমায়া রাখার কোনো উপায় নাই, যা তৈরী হবে যতটুকু তৈরী হবে ততটুকুই পূর্ন ঢেলে দিতে হবে, না দিলে যতটুকু দিবেন না ততটুকু লস ! আপনি উৎপাদন করবেন, ট্রান্সমিট করবেন, কিন্তু বেচতে না পারলে তা বাতিল মাল!
তো আপনার বন্ধ করে দেওয়া এসির কারনে তখন চাহিদার অনুপাতে জেনারেশন বেড়ে যায় ফলে ফ্রিকুয়েন্সীও ( স্বাভাবিক 50 HZ) বেড়ে 50.47 HZ(এক্সাক্ট এটাই হয় না, ধরে নেন) হয়ে যায়! তার মানে স্বাভাবিকের তুলনায় জাতীয় গ্রিডের ফ্রিকুয়েসী বেড়ে যায়! এটা ভালো কথা না! (এসি একটা উদাহরন মাত্র, এরকম শত শত ধরনের শত শত মেগাওয়াটের লোড সেকেন্ডেই অফ হয়ে গেলো এরকম ভাবেন) তখন NLDC পায়রা জেনারেশন কোম্পনীকে বলে দেয়, মিঃ পায়রা কোম্পানী, তুমি তোমার উৎপাদন বন্ধ করে দাও, ব্যাটা হিরো আলম এসি বন্ধ করে দিসে, ফাজিল ছেলে
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:১১